শ্রেণী | দশম শ্রেণী (মাধ্যমিক) |
বিষয় | মাধ্যমিক বাংলা |
গল্প | বহুরূপী |
লেখক | সুবোধ ঘোষ |
সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন –
(A) সাত দিন
(B) সাত মাস
(C) সাত সপ্তাহ
(D) সাত বছর
Ans: (A) সাত দিন
- সন্ন্যাসী থাকেন –
(A) হিমালয়ের চূড়াতে
(B) মরুভূমিতে
(C) হিমালয়ের গুহাতে
(D) বনভূমিতে
- জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর বয়স –
(A) একশো বছর
(B) হাজার বছরের বেশি
(C) একশো বছরের বেশি
(D) হাজার বছর
Ans: (B) হাজার বছরের বেশি
- জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে যা লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরলেন , তা হল –
(A) সোনার বোল
(B) সোনার মল
(C) সোনার আংটি
(D) সোনার ঘুঙুর
Ans: (A) সোনার বোল
- সন্ন্যাসীকে বিদায় দেওয়ার সময় জগদীশবাবু তাকে জোর করে দিয়েছিলেন—
(A) একটা দশ টাকার নোট
(B) একটা পঞ্চাশ টাকার নোট
(C) একটা কুড়ি টাকার নোট
(D) একটা একশো টাকার নোট
Ans: (D) একটা একশো টাকার নোট
- হরিদার ঘরে আড্ডা দিত—
(A) পাঁচ জন
(B) চার জন
(C) তিন জন
(D) ছ – জন
Ans: (B) চার জন
- লেখক ও তার বন্ধুরা কোন কোন সময়ে আড্ডা দিতেন ?
(A) রাত্রে
(B) সকাল – দুপুরে
(C) রাতদিন
(D) সকালসন্ধে
Ans: (D) সকালসন্ধে
- হরিদার কাছে যা অসম্ভব , তা হল –
(A) রোজই ভাত রান্না করা
(B) রোজ চা তৈরি করা
(C) রোজ বহুরূপী সাজা
(D) রোজই একটা চাকরির কাজ করে যাওয়া
Ans: (D) রোজই একটা চাকরির কাজ করে যাওয়া
- হরিদার ছোট্ট ঘরটির অবস্থান –
(A) শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে
(B) চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে
(C) দয়ালবাবুর লিচু বাগানে
(D) জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানে
Ans: (A) শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে
- হরিদার জীবনজুড়ে ছিল –
(A) ভয়ানক আপত্তি
(B) বিচিত্র ছদ্মবেশ
(C) করুণ আবেদন
(D) নাটকীয় বৈচিত্র্য
Ans: (D) নাটকীয় বৈচিত্র্য
- মাঝে মাঝে সত্যিই হরিদা যা করতেন , তা হল –
(A) রোজগার
(B) বিরাগ
(C) উপোস
(D) সন্দেহ
Ans: (C) উপোস
- যারা বহুরুপীর সাজে হরিদাকে চিনতে পারে তারা বকশিশ দেয় –
(A) এক আনা
(B) এক পয়সা
(C) এক টাকা
(D) এক আনা দু – আনা
Ans: (D) এক আনা দু – আনা
- দুপুরবেলায় আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল-
(A) শহরের সবচেয়ে সরু গলিটিতে
(B) জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানে
(C) দয়ালবাবুর লিচু বাগানে
(D) চাকের বাস স্ট্যান্ডে
Ans: (D) চাকের বাস স্ট্যান্ডে
- চাকর বাস স্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা বেজে ওঠার কারণ ছিল –
(A) একজন বাইজি
(B) একটি উন্মাদ পাগল
(C) একজন সন্ন্যাসী
(D) একজন কাপালিক
Ans: (B) একটি উন্মাদ পাগল
- পাগলটা যা হাতে তুলে নিয়ে বাসের যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল , তা হল –
(A) একটা পাথর
(B) একটা থান ইট
(C) একটা লাঠি
(D) একটা ঢিল
Ans: (B) একটা থান ইট
- বাসের ড্রাইভারের নাম ছিল –
(A) ভবতোষ
(B) অনাদি
(C) কাশীনাথ
(D) জগদীশ
Ans: (C) কাশীনাথ
- ‘ খুব হয়েছে হরি , এইবার সরে পড়ো । অন্যদিকে যাও ।’ কথা বলেছে –
(A) ভবতোষ
(B) অনাদি
(C) কাশীনাথ
(D) জনৈক বাসযাত্রী
Ans: (C) কাশীনাথ
- প্রায় নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছিল—
(A) একজন কাপালিক
(B) একজন সন্ন্যাসী
(C) একজন বাইজি
(D) একটি পাগল
Ans: (C) একজন বাইজি
- শহরে যারা নতুন এসেছে , তারা –
(A) বেশ বিরক্ত হয়
(B) ভয়ে কেঁদে ফেলে
(C) দু – চোখ বড়ো করে তাকিয়ে থাকে
(D) হতাশ স্বরে প্রশ্ন করে ওঠে
Ans: (C) দু – চোখ বড়ো করে তাকিয়ে থাকে
- বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয়েছিল—
(A) আট টাকা দশ আনা
(B) আট টাকা তিন আনা
(C) দশ টাকা আট আনা
(D) তিন টাকা আট আনা
Ans: (A) আট টাকা দশ আনা
- দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে হরিদা দাঁড়িয়েছিল—
(A) ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব সেজে
(B) পুলিশ সেজে
(C) স্কুলের মাস্টারমশাই সেজে
(D) বাউল সেজে
Ans: (B) পুলিশ সেজে
- হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিলেন—
(A) লিচু বাগানে
(B) দালানে
(C) বাস স্ট্যান্ডে
Ans: (A) লিচু বাগানে
- লিচু বাগানে নকল পুলিশ স্কুলের যে ক – টি ছেলেকে ধরেছিলেন , তার সংখ্যা হল –
(A) পাঁচ
(B) চার
(C) আট
(D) ছয়
Ans: (B) চার
- নকল পুলিশকে ঘুষ দিয়েছিলেন—
(A) জগদীশবাবু
(B) ড্রাইভার কাশীনাথ
(C) হরিদা
(D) স্কুলের মাস্টারমশাই
Ans: (D) স্কুলের মাস্টারমশাই
- জগদীশবাবু কেমন স্বভাবের মানুষ ছিলেন ?
(A) উদার
(B) কৃপণ
(C) কপট
(D) বিকৃত
Ans: (B) কৃপণ
- বড়ো চমৎকার ছিল কোন সময়ের চেহারা ?
(A) রাতের
(B) সকালের
(C) সন্ধ্যার
(D) ভোরের
Ans: (C) সন্ধ্যার
- বিরাগীরুপী হরিদার গায়ে ছিল কেবলমাত্র একটি—
(A) জামা
(B) পাঞ্জাবি
(C) শাল
(D) উত্তরীয়
Ans: (D) উত্তরীয়
- বিরাগীর ঝোলার ভিতর যে – বইটি ছিল , সেটি হল—
(A) গীতা
(B) কোরান
(C) মহাভারত
(D) উপনিষদ
Ans: (A) গীতা
- জগদীশবাবুর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল—
(A) বারো লক্ষ টাকার
(B) কুড়ি লক্ষ টাকার
(C) আঠারো লক্ষ টাকার
(D) এগারো লক্ষ টাকার
Ans: (D) এগারো লক্ষ টাকার
- রাগ হল এক ধরনের—
(A) অনুভূতি
(B) প্রবৃত্তি
(C) রিপু
(D) আচরণ
Ans: (C) রিপু
- লেখকের কানের কাছে ফিশফিশ করে যে – বলেছিল — ‘ না না , হরিদা নয় । হতেই পারে না । ‘ তার নাম হল –
(A) ভবতোষ
(B) জগদীশ
(C) সুবোধ
(D) অনাদি
Ans: (A) ভবতোষ
- জগদীশবাবু বিরাগীজিকে প্রণামী দিয়েছিলেন—
(A) পঞ্চাশ টাকা
(B) পঁচিশ টাকা
(C) একশো টাকা
(D) দেড়শো টাকা
Ans: (C) একশো টাকা
- বিরাগী আসলে ছিলেন –
(A) হরিদা
(B) জগদীশবাবু
(C) সন্ন্যাসী
(D) পাগল
Ans: (A) হরিদা
- ভবতোষ ভেবেছিল জগদীশবাবু হরিদাকে বকশিশ হিসেবে দেবেন –
(A) আট আনা বা দশ আনা
(B) দশ আনা বা বারো আনা
(C) ছ – আনা বা আট আনা
(D) পাঁচ আনা
Ans: (A) আট আনা বা দশ আনা
- সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান—
(A) একদিন
(B) দু – দিন
(C) চার দিন
(D) পাঁচ দিন
Ans: (A) একদিন
- সন্ন্যাসী সারাবছর খেতেন—
(A) একটি বেল
(B) একটি আমলকী
(C) একটি বহেড়া
(D) একটি হরীতকী
Ans: (D) একটি হরীতকী
- ‘ বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে , কেউ বা বেশ বিরক্ত হয় কেউ আবার বেশ বিস্মিত ।’— বাসযাত্রীদের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ –
(A) বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ বহুরূপী হরিদাকে ধমক দিয়েছে
(B) বহুরূপী হরিদার পাগলের সাজটা চমৎকার
(C) হরিদা আজ একজন বাউল সেজে এসেছেন
(D) কাপালিক সেজে এলেও হরিদা কোনো পয়সা নেন না
Ans: (B) বহুরূপী হরিদার পাগলের সাজটা চমৎকার
- ‘ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ‘ — দুর্লভ জিনিসটি হল—
(A) সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ
(B) সন্ন্যাসীর সান্নিধ্য
(C) সন্ন্যাসীর উপদেশ
(D) সন্ন্যাসীর পদধূলি
Ans: (D) সন্ন্যাসীর পদধূলি
- হরিদার শীর্ণ শরীরটা দেখে মনে হয়েছিল –
(A) মহাপুরুষ
(B) অশরীরী
(C) অতিমানব
(D) বহুরূপী
Ans: (B) অশরীরী
- হরিদার মতে সব তীর্থ—
(A) মানুষের বুকের ভিতর
(B) গভীর অরণ্যে
(C) শূন্য আকাশে
(D) হিমালয়ের চূড়ায়
Ans: (A) মানুষের বুকের ভিতর
- ভবতোষ চেঁচিয়ে উঠেছিল—
(A) হরিদার বাঘ সাজা দেখে
(B) জগদীশবাবুর টাকার পরিমাণ শুনে
(C) বকশিশের কথা শুনে
(D) হরিদার টাকা ত্যাগ করার কথায়
Ans: (C) বকশিশের কথা শুনে
- ‘ ঘুষ নিয়ে তারপর মাস্টারের অনুরোধে রক্ষা করেছিলেন সেই নকল – পুলিশ হরিদা’— ঘুষের পরিমাণ কত ?
(A) চার আনা
(B) আট আনা
(C) আট টাকা
(D) পঁচিশ টাকা
Ans: (B) আট আনা;
- বিরাগীর চোখ থেকে ঝরে পড়েছিল –
(A) ক্ষমা
(B) অশ্রু
(C) জ্যোৎস্না
(D) ক্রোধ
Ans: (C) জ্যোৎস্না
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বহুরূপী (গল্প) সুবোধ ঘোষ – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bohurupi Question and Answer :
- ‘ হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম , ‘ আমরা ‘ বলতে এখানে কাদের বোঝানো হয়েছে ?
Ans: উদ্ধৃতিটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের অংশ । এখানে ‘ আমরা ‘ বলতে স্বয়ং গল্পকার ও তাঁর বন্ধু ভবতোষ , অনাদি ছাড়াও অন্যদের বোঝানো হয়েছে ।
- হরিদার কাছে লেখক ও তাঁর বন্ধুরা কী গল্প করেছিলেন ?
Ans: হিমালয়ের এক উঁচুদরের সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর বাড়িতে সাত দিন ছিলেন । তাঁর বয়স হাজার বছরেরও বেশি । তিনি বছরে একটি মাত্র হরীতকী খান । সেই গল্পই লেখক ও তাঁর বন্ধুরা করেছিলেন ।
- ‘ আক্ষেপ করেন হরিদা – হরিদার এই আক্ষেপের কারণ কী ছিল ?
Ans: হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর মাহাত্ম্যের কথা শুনে তাঁর পায়ের ধুলো নিতে চান । কিন্তু সন্ন্যাসী চলে যাওয়ায় হরিদার সেই ইচ্ছা আক্ষেপে পরিণত হয় ।
- ‘ বাঃ , এ তো বেশ মজার ব্যাপার ! ‘ — মজার ব্যাপারটি কী ?
Ans: মজার ব্যাপারটি হল সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো দুর্লভ হলেও কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ধরতেই তিনি পা বাড়িয়ে দিলেন । সেই ফাঁকে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন ।
- ‘ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা । – হরিদার গম্ভীর হওয়ার কারণ কী ?
Ans: সর্বস্বত্যাগী সন্ন্যাসী সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো এক টাকা পেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন । এ কথা শুনে হরিদার বিশ্বাস । টলে যায় । তিনি গম্ভীর হয়ে যান ।
- ‘ কিন্তু ওই ধরনের কাজ হরিদার জীবনের পছন্দই নয় । — কোন ধরনের কাজের কথা বলা হয়েছে ?
Ans: অভাবী হরিদা ইচ্ছে করলেই কোনো অফিসে বা দোকানে একটা কাজ পেতে পারতেন । কিন্তু ঘড়ি ধরে নিয়ম করে রোজ একটা চাকরি করা , হরিদার না – পসন্দ ছিল ।
- চকের বাস স্ট্যান্ডে বহুরূপী হরিদা কী রূপে হাজির হয় ?
Ans: কটকটে লাল চোখ , মুখ থেকে লালা ঝরছে , কোমরে ছেঁড়া কম্বল , গলায় টিনের কৌটোর মালা ঝোলানো এক পাগলের ছদ্মবেশে চকের বাস স্ট্যান্ডে হাজির হন হরিদা ।
- ‘ খুব হয়েছে হরি , এইবার সরে পড়ো । অন্যদিকে যাও / – কে , কেন কথাটি বলেছেন ?
Ans: একদিন দুপুরে চাকের বাস স্ট্যান্ডে হরিদা পাগলের ছদ্মবেশে হাতে থান ইঁট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন । সেই প্রেক্ষিতেই বাস ড্রাইভার কাশীনাথের এই উক্তি ।
- কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে – হরির কাণ্ড ! -হরির কোন্ কাণ্ড দেখে দোকানদার হেসে ফেলেছিলেন ?
Ans: এক সন্ধ্যায় বাইজির ছদ্মবেশে হরি শহরের পথে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ করে হেঁটে চলে । নতুনরা অবাক হলেও দোকানদার হরিকে চিনতে পেরে হেসে ফেলে ।
- ‘ এবারের মতো মাপ করে দিন ওদের – এ কথা কে , কাকে বলেছিলেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে যখন পুলিশের ছদ্মবেশে হরিদা স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিলেন , তখন স্কুলের মাস্টারমশাই এ কথা বলেছিলেন ।
- ‘বা , সত্যি , খুব চমৎকার পুলিশ সেজেছিল হরি ! —কে , কখন এ কথা বলেছিলেন ?
Ans: দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের মাস্টারমশাই পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে আট আনা ঘুষ দিয়ে ছেলেদের ছাড়িয়ে আনার পরে পুলিশের আসল পরিচয় জানতে পেরে তখনই এই প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন ।
- জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাবার জন্য হরিদার এত উৎসাহ জেগে উঠেছিল কেন ?
Ans: হরিদার সারাদিন নানান ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়েও দু – তিন টাকার বেশি রোজগার হয় না । তাই মোটা টাকা আদায়ের জন্য হরিদার মধ্যে এই উৎসাহ জেগেছিল ।
- ‘ আমাদের সন্দেহ মিথ্যে নয় ।’— কোন্ সন্দেহ মিথ্যে নয় বলে মনে করেছেন বক্তা ?
Ans: সন্ন্যাসীর খবর শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে যাওয়ায় কথক ও তাঁর বন্ধুরা বুঝেছিলেন যে , হরিদার মাথায় কোনো মতলব এসেছে । এই প্রসঙ্গেই কথকের এই উক্তিটির অবতারণা ।
- ‘ বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা । সন্ধ্যার চেহারাটির বর্ণনা দাও ।
Ans: সেই সন্ধ্যায় চাঁদের আলোর একটা স্নিগ্ধ ও শান্ত উজ্জ্বলতা চারদিকে ফুটে উঠেছিল । ফুরফুর করে বাতাস বইছিল । জগদীশবাবুর বাগানের গাছের পাতাগুলো ঝিরঝির শব্দ করছিল ।
- চমকে উঠলেন জগদীশবাবু / – জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ কী ?
Ans: আদুড় গায়ে , সাদা উত্তরীয় জড়ানো , ছোটো সাদা থান , মাথায় সাদা চুল , পায়ে ধুলো মাখা বিরাগীকে দেখে জগদীশবাবু চমকে উঠলেন ।
- ‘ আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ? —কথাটি বন্ধা কেন বলেছেন ।
Ans: বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এলে জগদীশবাবু বিরাগীকে দূর থেকে অভ্যর্থনা জানান । এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিরাগী উত্ত মন্তব্যটি করেছেন ।
- ‘ আমার অপরাধ হয়েছে । কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে ?
Ans: বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদাকে দেখে মুগ্ধ জগদীশবাবু নেমে এসে বিরাগীকে অভ্যর্থনা না জানানোয় বিরাগী অসন্তুষ্ট হন । সেই অসন্তোষকে শান্ত করতেই জগদীশবাবুর এমন উক্তি ।
- ‘ না না , হরিদা নয় । হতেই পারে না । বস্তুা ও তার সঙ্গীদের এই বিশ্বাসের কারণ কী ?
Ans: বিরাগীর গলার স্বর , মুখের ভাষা ও চোখের দৃষ্টির সঙ্গে হরিদার কোনো মিল না থাকায় বিরাগীকে বক্তা ও তার বন্ধুদের হরিদা বলে মনে হয়নি ।
- পরমসুখ বলতে বিরাগী কী বুঝিয়েছেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে বিরাগীর মতানুসারে , সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তের সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারলেই ‘ পরমসুখ ’ লাভ করা যায় ।
- জগদীশবাবুকে বিরাগী কী উপদেশ দেন ?
Ans: বিরাগী জগদীশবাবুকে বলেন , ধন – জন – যৌবন আসলে মোহময় বঞ্চনা । মন – প্রাণ দিয়ে একজনের আপন হতে চেষ্টা করলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্যই লাভ করা যায় ।
- তীর্থযাত্রা সম্পর্কে বিরাগীর অভিমত কী ছিল ?
Ans: জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য বিরাগীকে একশো টাকা দিতে চাইলে বিরাগী বলেন , মানুষের অন্তরেই ঈশ্বরের বাস , সকল তীর্থের মিলনস্থল । তাই আলাদাভাবে তীর্থদর্শনের প্রয়োজনীয়তা নেই ।
- ‘ চমকে ওঠে ভবতোষ । — ভবতোষের চমকে ওঠার কারণ কী ?
Ans: হরিদার বাড়িতে ঢুকে তার পোশাক ইত্যাদি দেখে ভবতোষরা বুঝতে পারল যে , হরিদাই আসলে বিরাগী । তখন তারা চমকে ওঠে ।
- ‘ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে । -বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন ?
Ans: এক্ষেত্রে বক্তা হলেন হরিদা । জগদীশবাবু বিরাগী – বেশী হরিদাকে প্রণামী দিতে গেলে তিনি তা নেন না । কারণ সে বিরাগীর ছদ্মবেশে টাকা নিলে তাতে অভিনয়ের ঢং নষ্ট হয় ।
- ‘ অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না । হরিদার কোন ভুলের কথা এখানে বলা হয়েছে ?
Ans: জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকা অবলীলায় ফেরত দিয়ে দেন বিরাগী – রূপী হরিদা । অভাবের সংসারে হঠাৎ পাওয়া এই টাকা ফেরত দেওয়াকেই হরিদার ভুল বলা হয়েছে ।
- জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসীটি কত দিন ছিলেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে , উঁচু দরের সন্ন্যাসীটি জগদীশবাবুর বাড়িতে সাত দিন ছিলেন ।
- জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা ‘ উঁচু দরের সন্ন্যাসী ‘ – টি কোথায় থাকেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা উঁচু দরের সন্ন্যাসী ‘ টি হিমালয়ের গুহাতে থাকেন ।
- ‘ একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধমক দেয় । -কেন ধমক দিয়েছিল ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের হরিদা একদিন চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে পাগল সেজে , হাতে থান ইট তুলে নিয়ে যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন । তখন ভীত ও আতঙ্কিত যাত্রীরা চেঁচিয়ে ওঠায় বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ তাঁকে থামতে বলে ধমক দিয়েছিল ।
- ‘ একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধর্মকে দেয় । – ধমক দিয়ে কী বলেছিল ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ হরিদার পাগলামি দেখে বাসযাত্রীরা ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় ড্রাইভার কাশীনাথ বলেছিল , ‘ খুব হয়েছে হরি , এই বার সরে পড়ো । অন্যদিকে যাও ।
- ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে লেখা সারাবছর সন্ন্যাসী কী খান ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ’ গল্পের জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসী সারাবছরে শুধু একটি হরীতকী খান , তা ছাড়া আর কিছুই খান না ।
- নইলে আমি শান্তি পাব না- বক্তা কী না – হলে শান্তি পাবেন না ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পে জগদীশবাবু বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে বলেছিলেন যে , না হলে তিনি শান্তি পাবেন না ।
- ‘ অনাদি বলে— এটা কী কাণ্ড করলেন হরিদা ? ‘ এখানে কোন কাণ্ডের কথা বলা হয়েছে ।
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে জগদীশবাবু তাকে খাঁটি সন্ন্যাসী ভেবে একশো এক টাকা দিতে চাইলে বিরাগী – রূপী হরিদা তা হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । এখানে সেই কাণ্ডের কথাই বলা হয়েছে ।
- কিন্তু সেটাই যে হরিদার জীবনের পেশা / – হরিদার পেশা কী ছিল ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের নায়ক হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগার করে ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন । এটাই তার পেশা ।
- ‘ চমৎকার পাগল সাজতে পেরেছে তো লোকটা —’লোকটা কে ?
Ans: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে ‘ লোকটা ‘ বলতে সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের নায়ক হরিদাকে বোঝানো হয়েছে ।
- জগদীশবাবু কীভাবে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরলেন । তখন সন্ন্যাসী নতুন খড়ম পরার জন্য বাধ্য হয়ে পা এগিয়ে দিয়ে তা পরলেন ; আর সেই ফাঁকে জগদীশবাবু পায়ের ধুলো নিয়ে নিলেন ।
- পুলিশ সেজে হরিদা কী করেছিল ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে হরিদা একবার পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিলেন । তারপর স্কুলের মাস্টারমশাই এসে ক্ষমা চেয়ে আট আনা ঘুষ দেওয়ায় নকল পুলিশ হরিদা তাদের ছেড়ে দেন ।
- ‘ হরিদার জীবন এইরকম বহু রূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে ।’— কীরকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ?
Ans: হরিদা পেশায় ছিলেন বহুরূপী । তিনি কখনও পাগল সাজতেন , কখনও বাউল , কখনও কাপালিক , আর কখনও – বা বোঁচকা কাঁধে কাবুলিওয়ালা । এইরকম বহুরূপীর খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ।
- ‘ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস— সেই বস্তুটিকে দুর্লভ বলার কারণ কী ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের সন্ন্যাসী , জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকেই পায়ের ধুলো নিতে দেননি । তাই সেই বস্তুটিকে দুর্লভ বলা হয়েছে ।
- ‘ কী অদ্ভুত কথা বললেন’— অদ্ভুত কথাটি কী ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে বিরাগী – রূপী হরিদা , জগদীশবাবুর কাছে টাকা না – নেওয়ার প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে , সন্ন্যাসী সেজে টাকা নিলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে । এখানে এ কথাটিকেই অদ্ভুত বলা হয়েছে ।
- হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পের নায়ক হরিদার পেশাই হল । বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগারকে সম্বল করে অম্লের সংস্থান করা । এটাই তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য ।
- হরিদা কোথায় থাকেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা শহরের সবচেয়ে সবু গলির ভিতরে একটি ছোট্ট ঘরে থাকেন ।
- ‘ আমি বিরাগী , রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই – বক্তার এ কথা বলার কারণ কী ?
Ans: এক প্রকৃত সন্ন্যাসী আসলে সমস্ত জৈবিক প্রবৃত্তিকে জয় করে । তখন সে কাম – ক্রোধ – লোভ ইত্যাদি ষড়রিপুর আর বশবর্তী থাকে না । বিরাগী রূপী হরিদা সে কথাই বলেছেন ।
- ‘ সেদিকে ভূলেও একবার তাকালেন না বিরাগী – কোন দিকে না তাকাবার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকার থলিটি সিঁড়ির ওপরেই পড়ে রইল । বিরাগী – রূপী হরিদা সেদিকে ভুলেও আর একবার ; ফিরে তাকালেন না ।
- ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের হরিদা কোন সাজ সেজে সবচেয়ে বেশি আয় করেছিলেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা রূপসি বাইজি সেজে সবচেয়ে বেশি ; মোট আট টাকা দশ আনা রোজগার করেছিলেন ।
- বিরাগীর উদ্দেশ্যে জগদীশবাবুর প্রাণের অনুরোধ কী ছিল ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবু , বিরাগী – রূপী হরিদার পায়ের কাছে একশো এক টাকার থলিটি রেখে , তা গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ।
- হরিদার কয়েকটি বহুরূপী রূপের উল্লেখ করো ।
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদার কয়েকটি বহুরুপী রূপ হল— পাগল , রূপসি বাইজি , বাউল , কাপালিক , কাবুলিওয়ালা , ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব , পুলিশ ও বিরাগী ।
- ‘ সত্যিই যে বিশ্বাস করতে পারছি না’— কী বিশ্বাস করতে পারছে না ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী – রুপী হরিদাকে দেখে লেখকের সত্যিই বিশ্বাস হয় না যে , এই ব্যক্তিটি আসলে হরিদা ।
- জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবু বিরাগী – রূপী হরিদাকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | বহুরূপী (গল্প) সুবোধ ঘোষ – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bohurupi Question and Answer :
- ‘ হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম , – হরিদা কে ? তাঁর কাছে বক্তা কী গল্প করেছিল ?
Ans: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র হল হরিদা । হরিদার পরিচয় তিনি পেশায় একজন বহুরূপী । তাঁর জীবনে অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজের পেশার প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিল ।
বক্তা ও তাঁর বন্ধুরা হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর কথা জানিয়েছিলেন । হিমালয় থেকে আসা সেই সন্ন্যাসী সারাবছরে শুধু একটা হরীতকী খান । সন্ন্যাসী হলেও তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো এক টাকা দক্ষিণা গ্রহণ করেছিলেন ।
- ‘ খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী । — সন্ন্যাসীর পরিচয় দাও ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আমরা এক সন্ন্যাসীর পরিচয় পাই । পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সেই সন্ন্যাসী সাত দিন ছিলেন । তিনি সন্ন্যাসীর পরিচয় হিমালয়ের গুহায় থাকতেন । তাঁর সারাবছরের খাদ্য একটি মাত্র হরীতকী , বয়স হাজারেরও বেশি । তাঁর পদধুলি দুর্লভ , জগদীশবাবু ছাড়া কেউ পাননি । তবে এহেন সর্বস্বত্যাগীর প্রকৃত স্বরূপ বোঝা যায় তখন , যখন জগদীশবাবুর দেওয়া সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো টাকার নোট সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন ।
- ‘ বাঃ , এ তো বেশ মজার ব্যাপার ! —কোন ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে ? ঘটনাটি মজার কেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয় থেকে যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন , তিনি এতই উঁচু দরের যে , কাউকে পদধূলি গ্রহণের ঘটনার পরিচয় অনুমতি পর্যন্ত দিতেন না । শেষপর্যন্ত জগদীশবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন । এভাবে একমাত্র জগদীশবাবুই তাঁর পদধূলি পেতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
মুখ্য চরিত্র হরিদার মতে , ঘটনাটি মজার । কারণ , সর্বস্বত্যাগী হিমালয়বাসী সন্ন্যাসী ও সোনার আকর্ষণ অগ্রাহ্য করতে পারেননি ।
- ঘটনাটি মজার কেন ‘ কিন্তু কাজ করতে হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে ? — কোন কাজের কথা বলা হয়েছে ? ‘ হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে ? —বাক্যটির অর্থ পরিস্ফুট করো ।
Ans: ‘ বহুরূপী ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে ‘ কাজ ‘ বলতে যে – কোনো নিয়মমাফিক ঘড়িধরা সময়ের চাকরির কথা বলা হয়েছে । হরিদা নিজের খুশিমতো বহুরূপী সাজেন ; যখন ইচ্ছা , যেদিন ইচ্ছা । প্রশ্নোদৃত বাক্যের কিন্তু যে কাজে বাধ্যবাধকতা রয়েছে , সে – কাজ অর্থ পরিস্ফুটন করার মতো মানসিকতা তাঁর নেই । তিনি মুক্ত পুরুষ । সংসারে যেমন তাঁর কোনো বন্ধন নেই , তেমনি আর্থিক বন্ধনেও জড়িয়ে পড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । হরিদার শিল্পীস্বভাব এবং অন্তর্মনের বৈরাগ্যই এর প্রধান কারণ ।
- ‘ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে ? —জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝ ? হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ?
Ans: ‘ নাটকীয় ‘ শব্দটির অর্থ হল যা নাটকের মতো , অর্থাৎ ঘটনাবহুল বৈচিত্র্যময় দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মানুষের জীবনে । নাটকীয় বৈচিত্র্য নাটকীয়তা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন । তবেই জীবন উপভোগ্য হয়ে ওঠে । এখানে সেই ব্যতিক্রমকেই নাটকীয় বৈচিত্র্য বলা হয়েছে । হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল তাঁর বৃত্তি অর্থাৎ বহুরূপী সেঙে মানুষকে চমকে দেওয়ার পেশা । এতে তাঁর রোজগার সামান্য হলেও তাঁর জীবনে বৈচিত্রা এনে দেয় এই পেশা ।
- ‘ একদিন চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল ।’— ‘ আতঙ্কের হল্লা ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে কী ঘটনা ঘটেছিল ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পে ঠিক দুপুরবেলা চকের বাস স্ট্যান্ডে বহুরূপী হরিদাকে পাগলের বেশে দেখে সকলে চমকে উঠে ভয়ে চ্যাঁচামেচি শুরু করে । দিয়েছিল । একেই ‘ আতঙ্কের হল্লা ‘ বলা হয়েছে । চক্রে বাস স্ট্যান্ডে ঘটা ঘটনা ● চকের বাস স্ট্যান্ডে দুপুরবেলা এক পাগলের আবির্ভাবে সকলে ভীত হয়ে পড়ে । সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল , চোখ ছিল কটকটে লাল , কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো , গলায় টিনের কৌটোর মালা । হাতে থান ইট নিয়ে সে বাসের যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল ।
- হরিদার জীবন এইরকম বহু রূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে । – হরিদার জীবনের ‘ বহু রূপের খেলা ” -র পরিচয় দাও ।
Ans: গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা মাঝে মাঝে বিভিন্ন সাজে সেজে রাস্তায় বেরোতেন- কখনও পাগল , কখনও – বা রুপসি বাইজি , কখনও বাউল , কাপালিক ; কোনো দিন বুড়ো কাবুলিওয়ালা , কোনো দিন – বা হ্যাট – কোট – প্যান্ট পরা ফিরিঙ্গি সাহেব । একবার তিনি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশাই ও তাঁর ছাত্রদের চোখে ধুলো দিয়েছিল । বাইজির সাজেই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বেশি উপার্জন হয়েছিল । তবে হরিদার সেরা রূপ ছিল জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশ ।
- মোট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিলেন।— কে পেয়েছিলেন । কী কারণে তিনি টাকাটা পেয়েছিলেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র বহুরূপী হরিদা | মোট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিলেন । টাকা পাওয়ার কারণ হরিদা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ছদ্মবেশে সকলকে চমকে দিতেন । একদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ এক সুন্দরী বাইজির ঘুঙুরের শব্দে মানুষজন সচকিত হয়ে । ওঠে । সে এক একটি দোকানের সামনে যায় এবং একটি ফুলসাজি এগিয়ে দেয় । দোকানদার সাজিতে একটি সিকি ফেলে দেয় । এই দৃশ্য দেখে নতুন লোকেরা অবাক ও চেনা লোকেরা মুগ্ধ হয়ে যায় । অনেকেই টাকা দেয় । এভাবেই হরিদা টাকাটা পেয়েছিলেন ।
- পরদিন অবশ্য স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের জানতে বাকি থাকেনি , — কোন ঘটনা জানতে স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের বাকি থাকেনি । এতে মাস্টারমশাইয়ের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা একদিন পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের চারজন ছাত্রকে হাতেনাতে ধরেছিলেন । স্কুলের মাস্টারমশাই স্বয়ৎ এসে ক্ষমা চেয়ে ও আট আনা ঘুষ দিয়ে ছাত্রদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান । হরিদার পুলিশ সাজার ও তাঁর কাছ থেকে আট আনা ঘুষের গোপন কাহিনি জানতে স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের আর বাকি থাকেনি । → সব কিছু জানার পর মাস্টারমশাই এতটুকুও রাগ করেননি । বরং হরিদার মাস্টারমশাই – এর অসম্ভব সুন্দর অভিনয় ও সাজের জন্য তাঁর প্রশংসা প্রতিক্রিয়া করেছিলেন ।
- ‘ আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো।- ‘ আমি ‘ ও “ তোমরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? শ্রোতাদের সেখানে থাকার কথা কেন বলা হয়েছে ?
Ans: আলোচ্য অংশে ‘ আমি ’ বলতে সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ ‘ বহুরূপী ‘ ‘ আমি ‘ ও ‘ তোমারা গল্পের মুখ্য চরিত্র হরিদাকে এবং ‘ তোমরা ’ বলতে কথক ও তার বন্ধু ভবতোষ , অনাদি প্রমুখকে বোঝানো হয়েছে । শ্রোতাদের থাকতে বলার কারণ → সেদিন সন্ধ্যাবেলায় হরিদা পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে কথক ও তাঁর বন্ধুদের থাকার কথা বলেছিলেন । কারণ হরিদা সেদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে সর্বস্বত্যাগী সন্ন্যাসী সেজে , এক জবর খেলা দেখানোর মতলব করেছিলেন । কিন্তু দর্শক না থাকলে বহুরূপীর সাজ বৃথা হবে । তাই তাদের সেদিন হরিদা সেখানে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন ।
- বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা / -সন্ধ্যার চেহারার বর্ণনা দাও ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা কথক ও তাঁর বন্ধুদের এক অত্যাশ্চর্য খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানান পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে । সেদিনের সন্ধ্যায় প্রকৃতিও যেন হরিদাকে সঙ্গ দিয়েছিল । স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল চাঁদের আলো দীর্ঘকাল পরে শহরের পরিবেশকে সুন্দর করে তুলেছিল । ফুরফুরে বাতাসে জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানের গাছের পাতা ঝিরিঝিরি করে যেন কিছু বলতে চাইছিল । এমন মায়াময় পরিবেশেই আবির্ভাব হয়েছিল বিরাগী – রূপী হরিদার ।
- ‘ আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ? কাকে এ কথা বলা হয়েছে ? তাঁকে এ কথা বলা হয়েছে কেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে বিরাগী – বেশী হরিদা জগদীশবাবুকে কথাগুলি বলেছিলেন ।
এক সন্ধ্যায় হরিদা বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হন । জগদীশবাবু তখন বারান্দায় চেয়ারের ওপর বসেছিলেন । বিরাগীকে দেখতে প্রশ্নোস্তৃত কথাটি । পেয়ে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান । বলার কারণ । তখন বিরাগী আলোচ্য উক্তিটি করে জগদীশবাবুকে জানান , জগদীশবাবু নিশ্চয়ই সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো মনে করেন । তা না হলে তিনি অবশ্যই বিরাগীকে অভ্যর্থনা জানাতে বারান্দা থেকে নেমে আসতেন ।
- ‘ বিরাগীর পায়ের কাছে থলিটাকে রেখে দিয়ে ব্যাকুল স্বরে প্রার্থনা করে জগদীশবাবু— বিরাগী কে ? তার কাছে জগদীশবাবুর প্রার্থনার কারণ কী ?
Ans: ‘ বিরাগী ‘ হলেন সর্বত্যাগী সাধুবেশী বহুরূপী হরিদা । । ধনী ও কৃপণ জগদীশবাবু সাধুসঙ্গ করে পুণ্য অর্জন করতে চান । ছদ্মবেশী বিরাগীকে দেখে ও তাঁর মুখে দার্শনিক উক্তি শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান । বিরাগীকে নিজের বাড়িতে কয়েকদিন থাকতে জগদীশবাবুর প্রার্থনা অনুরোধ জানিয়েও যখন লাভ হয় না , তখন জগদীশবাবু তাঁকে একশো এক টাকা প্রণামী দিতে চান । এই প্রণামী যাতে বিরাগী তীর্থ ভ্রমণের খরচ হিসেবে গ্রহণ করেন , তাই তিনি ব্যাকুল মনে প্রার্থনা করতে থাকেন ।
- ‘ অনাদি বলে — এটা কী কাণ্ড করলেন , হরিদা ? -কোন্ কার্ডের কথা বলা হয়েছে ? কাণ্ডটি বিস্ময়কর কেন ?
Ans: কাণ্ডটি হল জগদীশবাবু হরিদাকে সত্যি সত্যিই বিরাগী ভেবে একশো এক টাকা প্রণামী দিতে চাইলেও বিরাগী – বেশী হরিদা তা নিতে অস্বীকার করেন ।
হরিদা ছিলেন মূলত একজন গরিব মানুষ , উপোস যাঁর প্রায় নিত্যসঙ্গী । বহুরূপীর পেশার অতিসামান্য রোজগারে তাঁর দিন কাঙটি বিস্ময়কর চলত । তবুও হাতের কাছে একশো এক টাকা পেয়ে কেন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন কেবলমাত্র তাঁর সাজা চরিত্রের সঙ্গে অর্থলোলুপতা মানায় না বলে । শুধুমাত্র পেশার মানরক্ষার জন্য এই ত্যাগ সত্যিই বিস্ময়কর ।
- ‘ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । —ঢং বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ?
Ans: উদ্ধৃতাংশে বিরাগী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে হরিদাকে তাঁর যে আচরণ আত্মস্থ করতে হয়েছিল , তাকেই ঢং বলা হয়েছে । হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এমন একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে গিয়েছিলেন , যিনি সমস্ত পার্থিব বস্তুর প্রতি উদাসীন । এহেন সন্ন্যাসী যদি সামান্য একশো এক টাকার লোভ সংবরণ করতে না পারেন , তবে বিরাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের কোনো সাদৃশ্য থাকবে না । সম্পূর্ণ অভিনয়টিই মাঠে মারা যাবে । একেই ঢং নষ্ট হয়ে যাওয়া বলা হয়েছে । আসলে এক্ষেত্রে বহুরুপী হরিদার আচরণে তাঁর স্বরূপটি প্রকাশ পেয়েছিল ।
- যাবই তো । না গিয়ে উপায় কী ? ‘ — কোথায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ? না গিয়ে উপায় নেই কেন ?
Ans: ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুর কাছে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে । না – গিয়ে উপায় → হরিদা বহুরূপী । নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে মানুষের মনোরঞ্জন করাই তাঁর পেশা । মানুষ খুশি হয়ে যা টাকাপয়সা দেয় , তাতেই তাঁর দিন চলে । জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে গেলেও তাঁর দেওয়া প্রণামীর টাকা তিনি নেন না । কারণ , তাতে হরিদাকৃত বিরাগী চরিত্রের মান যেত । কিন্তু বহুরূপী হিসেবে হরিদার যে পারিশ্রমিক প্রাপ্য , তা নিতে তাঁকে একবার জগদীশবাবুর কাছে যেতেই হবে ।
- ‘ কী অদ্ভুত কথা বললেন হরিদা ! ‘ — বক্তা কে ? বক্তার কাছে হরিদার কথা অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে কেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা লেখক ।
বিরাগী – বেশধারী হরিদাকে দেখে কৃতার্থ হয়ে জগদীশবাবু তাকে একশো এক টাকা প্রণামী দেন । কিন্তু হরিদা খাঁটি সন্ন্যাসীর মতোই তা হেলায় ফেলে বক্তার কাছে হরিদার দিয়ে চলে আসেন । দরিদ্র হরিদাকে এমন কাণ্ড করতে দেখে ভবতোষ অনাদিরা অবাক হয়ে এর কারণ জানতে চায় । যে – মানুষের বাড়িতে অধিকাংশ দিন ভাতের হাঁড়িতে শুধু জল ফোটে , সে যখন বলে , সন্ন্যাসী সেজে টাকা নিলে ঢং নষ্ট হয়ে যেত ; তাই ইচ্ছেই হয়নি । তখন উপস্থিত সকলের কাছে তা অদ্ভুত বলে মনে হয় ।
- ‘ হরির কাণ্ড । – হরি কে ? হরির কান্ড বলতে কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র পেশায় বহুরূপী হরিদার কথা এখানে বলা হয়েছে ।
হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য লুকিয়ে ছিল তাঁর পেশায় । তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধরে খেলা দেখিয়ে নিজের জীবিকানির্বাহ করতেন । ফলে শহরের জীবনেও মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা তৈরি হত । একদিন সন্ধের আলোয় দোকানে দোকানে সবে লোকজনের ব্যস্ততা ও মুখরতা জমে উঠেছে , সেইসময় পথের ওপর ঘুঙুরের মিষ্টি আওয়াজ ভেসে আসে । দেখা যায় এক রূপসি বাইজি নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে । নতুনেরা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে । কিন্তু একজন দোকানদার তাকে চিনতে পেরে হেসে ফেলে প্রশ্নোত মন্তব্যটি করে । এখানে সেই ঘটনার কথা বলা হয়েছে ।
- ‘ অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না। ‘ অদৃষ্ট ‘ বলতে কী বোঝ ? হরিদার সম্পর্কে এমন উক্তি কেন করা হয়েছে ?
Ans: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে নেওয়া । এখানে ‘ অদৃষ্ট ‘ বলতে ভাগ্য , কপাল বা বিধির কথা বলা হয়েছে । ”
বহুরূপী হরিদার বিরাগী – রূপ দেখে মুগ্ধ ও কৃতার্থ জগদীশবাবু তাঁকে একশো এক টাকা প্রণামী দেন । কিন্তু খাঁটি সন্ন্যাসীর মতোই হরিদা তা প্রশ্নোত উক্তির অবলীলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । কারণ টাকা নিলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত । অথচ হরিদা নিতান্ত কারণ দরিদ্র মানুষ । বহু রূপ দেখিয়ে তাঁর যৎসামান্য রোজগারে হরিদার দিন চলে । বেশিরভাগ দিন চাল না থাকায় তাঁর হাঁড়িতে শুধু জলই ফুটে যায় । এমন মানুষের পক্ষে অতগুলো টাকা পেয়েও না – নেওয়ার বিলাসিতা ; ভবিষ্যতে তাঁর দুর্ভোগ বাড়াবে । এ কথা বোঝাতেই উপরোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে ।
- ‘ হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে , ভাত ফোটে না । – হরিদার উপার্জনের উপায় কী ছিল ? অনেক সময় তাঁর হাঁড়িতে ভাত না – ফুটে কেবল জল ফোটে কেন ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা পেশায় ছিলেন বহুরূপী । মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে খেলা দেখিয়ে যা রোজগার হত ; তা দিয়েই তিনি জীবিকানির্বাহ করতেন ।
হরিদার উপার্জনের উপায় হরিদার বাস্তব জীবন
হরিদা খুব গরিব মানুষ হলেও , গতে বাঁধা কাজ করায় তাঁর প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা ছিল । মনে করলে তিনি কোনো অফিসে বা দোকানে বিক্রিওয়ালার কাজ পেয়ে যেতেন । কিন্তু এ ধরনের কাজ তাঁর পছন্দ ছিল না । ঘড়ির কাঁটার সময় ধরে নিয়মমাফিক রোজ একটা চাকরি করতে যাওয়া হরিদার পক্ষে অসম্ভব ছিল । তাই তাঁর উনানের হাঁড়িতে অনেক সময়েই শুধু জল ফুটলেও ; ভাত ফুটত না ।
- ‘ একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধমক দেয় । — বাসের ড্রাইভার কাকে , কী বলে ধমক দিয়েছিল ? তাকে ধমক দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল কেন ?
Ans: প্রথম অংশের উত্তরের জন্য 28 নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো । একদিন দুপুরবেলা চকের বাস স্ট্যান্ডে এক পাগলের আবির্ভাব ঘটে ।
তার মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছে , চোখ কটকটে লাল , কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো আর গলায় টিনের কৌটোর কাশীনাথের ধমকের মালা । সে হাতে একটা থান ইট নিয়ে বাসযাত্রীদের কারণ দিকে তেড়ে যাচ্ছে । ফলে পাগলের কাণ্ড – কারখানায় চারপাশে ভীতি আর আতঙ্কের একটা হল্লা ওঠে । এই পরিস্থিতিতে পাগল – রূপী হরিদাকে থামাতে এবং বাকিদের আশ্বস্ত করতে কাশীনাথ ধমক দিয়েছিল ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | বহুরূপী (গল্প) সুবোধ ঘোষ – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Bohurupi Question and Answer :
৪.১ ‘ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা / -কোন্ 2 গল্পের কথা বলা হয়েছে ? গল্প শুনে হরিদার গম্ভীর হয়ে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো ।
Ans: উদ্ধৃতাংশটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্পের অংশ – বিশেষ । গল্পকথক ও তাঁর চার বন্ধু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর গল্প বলেছিলেন । সেই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহায় বাস করতেন । তাঁর সারাবছরের খাদ্য বলতে একটি মাত্র হরীতকী । বয়স হাজারেরও বেশি । তাঁর পদধূলি পাওয়া দুর্লভ একমাত্র জগদীশবাবুরই সেই পদধূলি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল । তাও আবার জগদীশবাবু যখন তাঁকে সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম পরাতে গিয়েছিলেন সেই ফাঁকে তা সংগ্রহ করতে হয়েছিল । সেই সন্ন্যাসী বিদায় নেওয়ার সময় জগদীশবাবুর জোর করে দেওয়া একশো টাকার নোট সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেছিলেন । হওয়ার কারণ কথক ও তাঁর বন্ধুদের মুখে গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে যান । হরিদার এই গাম্ভীর্যের কারণ কথকরা বুঝে উঠতে পারেননি । তাঁদের সন্দেহ হয়েছিল হরিদার মাথায় নিশ্চয় নতুন কিছু মতলব এসেছে । তাঁদের এই ভাবনা বাস্তবায়িত হয় যখন হরিদা তাঁদের সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানান । তাঁর গম্ভীর হওয়ার পিছনে দুটি কারণ উঠে আসে । প্রথমত , জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখিয়ে কিছু হাতাবার চিন্তায় নির্লোভ হরিদার মানবিক বিচ্যুতি । দ্বিতীয়ত , বিষয়সম্পদে নিরাসক্ত সন্ন্যাসীর দান গ্রহণের ব্যাপারটাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।
2. ‘ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে । – হরিদা কে ? তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে যে – নাটকীয় বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে তা গল্প অনুসারে লেখো ।
Ans: প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেন হরিদা । গল্পে আমরা তাকে ‘ বহুরূপী হরিদার পরিচয় হিসেবেই দেখতে পাই । বহুরূপীর চরিত্র বর্ণময় । সেখানে নাটকীয়তা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক । জীবনে নাটকীয় কিন্তু হরিদার ব্যক্তিগত জীবন ও জীবিকা উভয় বৈচিত্র্য ক্ষেত্রই নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরপুর । ব্যক্তি হরিদা খুবই গরিব মানুষ । ইচ্ছে করলে তিনি ছোটোখাটো কাজ জোগাড় করে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেই পারতেন । কিন্তু বাঁধাধরা গণ্ডিবদ্ধ জীবন হরিদার পছন্দ নয় । তাই উনানের হাঁড়িতে ভাতের বদলে জল ফুটলেও হরিদার সেই একঘেয়ে অভাবকে সহ্য করতে আপত্তি নেই ।
হরিদার পেশাগত জীবনও নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা । তিনি পাগলের ছদ্মবেশে কখনও আতঙ্কের হল্লা সৃষ্টি করেছেন , কখনও আবার রূপসি বাইজির ছদ্মবেশে মানুষের হৃদয়ে দোলা লাগিয়েছেন কিংবা নকল পুলিশ সেজে ছাত্রদের আটকে রেখে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেছেন । হরিদার নাটকীয়তার চরম নিদর্শন মেলে জগদীশবাবুর বাড়িতে । সেখানে বিরাগীর ছদ্মবেশে তিনি সকলকে বিস্মিত জীবিকায় নাটকীয় বৈচিত্র্য করেছিলেন । নাটকীয়তার শেষ এখানেই নয় । ছদ্মবেশী বিরাগী অভিনয়ের অহংকারে ও ঢং নষ্ট হওয়ার ভয়ে জগদীশবাবুর দান গ্রহণ করেননি । তবে সেই তিনিই আবার অভিনয়ের পরে বকশিশ নেওয়ার চিন্তা থেকে কিন্তু সরে আসেননি ।
3. ‘ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু / – জগদীশবাবুর পরিচয় দাও । তাঁর চমকে ওঠার কারণ আলোচনা করো ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবু একটি পার্শ্বচরিত্র । জগদীশবাবুর পরিচয় তিনি শিক্ষিত , মার্জিত ও ভদ্র , সৌম্য – শাস্ত চেহারার অধিকারী , ধনী হলেও কৃপণ । তাঁর জীবনের দুর্বলতা হল তাঁর অন্ধভক্তি । সুখশান্তির আশায় সাধুসন্ন্যাসী দেখলেই তাদের তিনি তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন । এর জন্য অবশ্য তিনি মাঝেমধ্যেই ঠকেছেন ।
এক স্নিগ্ধ ও শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর চোখের পাতা পড়ছিল না । কারণ সিঁড়ির কাছে এমন একজন দাঁড়িয়েছিলেন যিনি জটাজুটধারী , চমকে ওঠার কারণ হাতে কমণ্ডলু , চিমটে , মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোনো সন্ন্যাসী নয় , তিনি একজন বিরাগী , যাঁর আদুড় গা , তার ওপরে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোটো বহরের থান । তার মাথার শুকনো চুলগুলো বাতাসে উড়ছে , হাত – পা ধুলো মাখা , কাঁধে একটা ঝোলা , যার মধ্যে একটি মাত্র বই গীতা । জগদীশবাবুর তাঁকে দেখে । মনে হয়েছিল তিনি যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে চলে এসেছেন । তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তাঁর চোখ থেকে .. ঝরে পড়ছিল উদাও শান্ত এক উজ্জ্বল দৃষ্টি ।
4. ‘ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ।’— বস্তুা কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্রবিশ্লেষণ করো ।
Ans: উদ্ধৃতিটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে গৃহীত । বক্তা হলেন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বহুরূপী হরিদা । হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে প্রণামীর টাকা না নিয়ে ফিরে এসেছিলেন । অবাক হয়েছিলেন গল্পের কথক ও তাঁর বন্ধু অনাদি , ভবতোষরা অভাবী হরিদাকে টাকা না নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে , হরিদা অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং একজন আদর্শ শিল্পীর মর্যাদার প্রসঙ্গ তুলে কথাটি বলেছেন । হরিদা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে বহুরূপী নন , তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা । আপাতদৃষ্টিতে সমাজে অবহেলিত এই পেশায় নিযুক্ত মানুষের মধ্যেও যে – সততা , নিষ্ঠা , শ্রদ্ধার মতো গুণগুলি বেঁচে বক্তার চরিত্রবিশ্লেষণ আছে তা লেখক দেখাতে চেয়েছেন এই গল্পে । অভাব হরিদার নিত্যসঙ্গী । হরিদা কিন্তু সেই অভাবকে দূরে সরিয়ে দিতে গতে বাঁধা জীবনের পথে পা বাড়াননি । এসব সম্ভব হয় একমাত্র তাঁর নির্লোভ ও সংযমী জীবনযাপনের জন্যই । তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে অভাবী হরিদা তাঁর দেওয়া সমস্ত সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন । কথক ও তাঁর বন্ধুরা যখন অভাবী হরিদাকে প্রণামী না – নেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন , হরিদা তখন শিল্প ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্লিপ্তভাবে বলেছেন , ‘ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ।
5. ‘ আমি বিরাগী , রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই ।’— বক্তা কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ? এই উক্তির প্রেক্ষিতে বক্তার চরিত্র গল্পে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করো ।
Ans: প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ছদ্মবেশী বিরাগী । হরিদা যখন বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন , জগদীশবাবু প্রশ্নোধৃত অংশের তখন এগিয়ে এসে তাঁকে অভ্যর্থনা না – জানালে বিরাগী রুষ্ট হন । ভয় পেয়ে জগদীশবাবু অপরাধ স্বীকার করে নেন এবং বিরাগীকে অনুরোধ করেন তাঁর ওপর রাগ না করার জন্য । ছদ্মবেশী বিরাগী এই প্রসঙ্গেই উক্তিটি করেছেন ।
সন্ন্যাসীর চরিত্র প্রকৃতপক্ষে কেমন হওয়া উচিত এ কথা পাঠকদের বোঝাতেই লেখক যেন চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন । জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয় থেকে আসা সন্ন্যাসীর পাশাপাশি বিরাগীর বস্তার চরিত্রবিশ্লেষণ চরিত্রটি রাখলে তা সহজেই অনুমান করা যায় । বিরাগী প্রথমে জগদীশবাবুর অহংকারে আঘাত করেছেন , তাঁকে অপরাধ স্বীকার করিয়েছেন । আবার সত্যিকার বিরাগীর মতো তাঁকে ক্ষমাও করেছেন । ভান্তের সেবার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রহণ করেছেন মাত্র এক গ্লাস জল । থাকার ও দানগ্রহণের অনুরোধ সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন । তিনি । জগদীশবাবু উপদেশ শুনতে চাইলে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বলেছেন পরমেশ্বরের দেখা পেলেই সমস্ত ঐশ্বর্য পাওয়া যায় । তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী দিতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন হৃদয়ের মধ্যেই তো সব তীর্থ । বিরাগী চরিত্রটি পূর্ণতা পায় তারই উক্তিতে , ‘ আমি যেমন আনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনি সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ‘ সত্যিই তা করতে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকার থলিটা সিঁড়িতে পড়ে থাকলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি চলে যান ।
6. বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবুর চরিত্রটি ব্যাখ্যা করো ।
Ans: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের একটি পার্শ্বচরিত্র হল জগদীশবাবুর চরিত্রটি । চরিত্রটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য রচনা মধ্যে পাওয়া না – গেলেও হরিদা চরিত্রের পরিস্ফুটনে জগদীশবাবুর চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ।
বাবুর কাহিনি থেকে জানা যায় যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ধনী ব্যক্তি তিনি । বয়সে বেশ প্রবীণ । সাদা চুল , সাদা দাড়ি , সৌম্য , শান্ত চেহারা । তিনি ধনী মানুষ বটে , তবে বেশ কৃপণও । সাধুসন্ন্যাসীতে তাঁর ভক্তিভাব প্রবল । যদিও এই ভক্তিভাবের অন্তরালে কোথাও না কোথাও তাঁর ঐশ্বর্যের অহংকার কখনো কখনো দেখা মেলে । তাই কাহিনির মধ্যে আমরা দেখতে পাই , হিমালয় থেকে আগত সন্ন্যাসী যিনি কাউকে পায়ের ধুলো দিতে চান না , তাঁর পায়ের ধুলো সংগ্রহ করতে জগদীশবাবু কৌশল অবলম্বন করেন , সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম নিজ হাতে এগিয়ে দিতে যান । জগদীশবাবু ঈশ্বর বিশ্বাসী , সেইজন্যই সাধুসন্ন্যাসীর সেবা তাঁর কাছে ঈশ্বরসেবার সমতুল্য । অবশ্য নিষ্কাম ঈশ্বরসেবার মনোবৃত্তি তাঁর নেই । নিজ সুখশান্তির সন্ধানেই বস্তুত তিনি ঈশ্বরবিশ্বাসী । সন্ন্যাসী – গোছের লোক দেখলেই তাকে খুশি করার চেষ্টা করেন , প্রয়োজনে কৌশলও অবলম্বন করেন । তাঁর এই মানসিকতার জন্যই ভণ্ড সন্ন্যাসীর পাল্লায় পড়ে তাঁকে বোকাও বনতে হয় । তাই বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার কাছেও তিনি নতজানু হয়েছেন আশীর্বাদের অভিলাষে । ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের কাহিনির নিয়ন্ত্রণে জগদীশবাবু চরিত্রের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই । এই সংসারের সব কিছুই যে ‘ সং ‘ তা হরিদার বিরাগী সাজেই প্রকাশ পায় ; আর সেই বিরাগীকে কাহিনির গতি নিয়ন্ত্রক প্রকৃত সত্যে পরিণত করিয়েছেন জগদীশবাবু । মিথ্যে বহুরূপী বেশধারণকারী হরিদার বিরাগী রূপকে নতমস্তকে প্রণাম জানিয়ে কাহিনির ভাবসত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জগদীশবাবু । তাই জগদীশবাবু চরিত্রটি কাহিনির পার্শ্বচরিত্র হয়েও কাহিনির এক গুরুত্বপূর্ণ । চরিত্রে পরিণত হয়েছে ।
7. ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে যে – হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর প্রসঙ্গ আছে , তার চরিত্রবিশ্লেষণ করো ।
Ans: ছোটোগল্পকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আশ্রিত এক হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর কথা জানা যায় পাড়ার কিছু যুবকের মুখ থেকে । বড়োলোক জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী সাত দিন অবস্থান করেন । এই সন্ন্যাসী নাকি হিমালয়ের গুহাতে থাকেন । সারা বছরে একটি হরীতকী ছাড়া তিনি আর কিছু খান না । সন্ন্যাসীর বয়স নাকি হাজার বছরেরও বেশি । নিজের সম্পর্কে তাঁর উচ্চ ধারণা তাঁর ভিতরে এক ধরনের গৃহীসুলভ অহংবোধের জন্ম দিয়েছিল । তাই সাধারণ মানুষকে তাঁর পদধূলি নেওয়ারও অনুমতি তিনি দিতেন না । অথচ যে – সন্ন্যাসী সর্বস্বত্যাগী , তিনি কাঠের খড়মে লাগানো সোনার বোল দেখে আপ্লুত হয়ে পা বাড়িয়ে দেন জগদীশবাবুর দিকে । আবার হিমালয়বাসী সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর দেওয়া একশো টাকা প্রণামীও প্রত্যাখ্যান করেন না , বরং মুচকি হাসির মধ্য দিয়ে তা গ্রহণ করে জগদীশবাবুকে বাধিত করেছেন । মোটের ওপর , সন্ন্যাসীর আচরণ ও তাঁর সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যাবলির মধ্যে যে – বৈপরীত্য ও অসংগতি খুঁজে পাওয়া যায় , তার নিরিখে এ কথা স্পষ্ট যে , তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসী ছিলেন না ।
8. ‘ এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা – হরিদার সৃষ্ট চমৎকার ঘটনাগুলির বিবরণ দাও ।
Ans: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক সুবোধ ঘোষের জীবন ছিল বর্ণময় । তাঁর লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পটি যেন তাঁর বর্ণময় চরিত্রের ফসল । হরিদার চরিত্রের মধ্যে লেখকের কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ছায়া পড়েছে । বাঁধাধরা জীবন পছন্দ নয় বলেই হরিদা বহুরুপীর জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন । তাঁর চরিত্রে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্রা ছিল । এই বৈচিত্র্যই তাঁর পেশা । এই বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়েই হরিদা এই শহুরে জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করতেন । তিনি একদিন দুপুরে চকের বাস স্ট্যান্ডে পাগলের ছদ্মবেশে আতঙ্কের হল্লা তুলেছিলেন । তাঁর মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল , দু – চোখ কটকটে লাল । কোমরে জড়ানো ছেঁড়া কম্বল , গলায় টিনের কৌটোর মালা , হাতে একটা থান ইট তুলে তিনি যাত্রীদের দিকে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিলেন । পরে বাস ড্রাইভার কাশীনাথের ধর্মকে অবশ্য পাগলের স্বরূপ সকলের কাছে পরিষ্কার হয়েছিল । আর – এক কর্মব্যস্ত সন্ধ্যার উজ্জ্বল আলোকে রূপসি বাইজির ছদ্মবেশে হরিদা তো সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন । সেদিনই হরিদা সবচেয়ে বেশি উপার্জন করেছিলেন । শুধু এখানেই শেষ নয় , দয়ালবাবুর লিচু বাগানে নকল পুলিশের বেশে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে ঘুষ আদায় ও পরে তাঁর প্রশংসা ছিল হরিদার জীবনে এক বড়ো প্রাপ্তি ।
9. ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।
Ans: নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো ।
10. ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা বহুরূপী হিসেবে কতখানি সফল ছিলেন , এবং তার ছদ্মবেশ বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও ।
Ans: বাঁধাধরা জীবন পছন্দ নয় বলেই হরিদা বহুরুপীর জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন । তাঁর চরিত্রে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল । এই বৈচিত্র্যই তাঁর পেশা । এই বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়েই হরিদা এই শহুরে জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনার সৃষ্টি করতেন । তিনি একদিন দুপুরে চকের বাস স্ট্যান্ডে পাগলের ছদ্মবেশে আতঙ্কের হল্লা তুলেছিলেন । তাঁর মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল , দু – চোখ কটকটে লাল । কোমরে জড়ানো ছেঁড়া কম্বল , গলায় টিনের কৌটোর মালা , হাতে একটা থান ইট তুলে সে যাত্রীদের দিকে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিলেন । পরে বাস ড্রাইভার কাশীনাথের ধমকে অবশ্য পাগলের স্বরূপ সকলের কাছে পরিষ্কার হয়েছিল । আর – এক কর্মব্যস্ত সন্ধ্যার উজ্জ্বল আলোকে রূপসি বাইজির ছদ্মবেশে হরিদা তো সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন । সেদিনই হরিদা সবচেয়ে বেশি উপার্জন করেছিলেন । শুধু এখানেই শেষ নয় , দয়ালবাবুর লিচু বাগানে নকল পুলিশের বেশে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে ঘুষ আদায় ও পরে তাঁর প্রশংসা ছিল হরিদার জীবনে এক বড়ো প্রাপ্তি । হরিদার নাটকীয়তার চরম নিদর্শন মেলে জগদীশবাবুর বাড়িতে । সেখানে বিরাগীর ছদ্মবেশে তিনি সকলকে বিস্মিত করেছিলেন । জগদীশবাবুর মনে হয়েছিল চন্দ্রালোকিত এই রাতে বিরাগী যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । এমনকি অনাদি – ভবতোষরাও বিরাগী – রূপী হরিদার বেশভূষা ও কথাবার্তায় তাঁকে চিনতে ভুল করেছিলেন । আর জগদীশবাবুর দেওয়া টাকা প্রত্যাখ্যান করে ‘ বহুরূপী ‘ হরিদা বিরাগীর রূপকে দেন দেবতার পূর্ণতা এবং সর্বত্যাগীর প্রকৃত ঐশ্বর্য । তাই পাঠ্য গঙ্গে হরিদা বহুরূপী হিসেবে শুধু সফল নন , অন্যতম শ্রেষ্ঠ ।
11. আজ তোমাদের একট জবর খেলা দেখার / – বক্তার এই জবর খেলা দেখানোর উদ্দেশ্য কী ছিল ? শেষপর্যন্ত এই খেলার পরিণতিই বা কী হয়েছিল ?
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরুপী ‘ গল্প থেকে উপরের উদ্ধৃতিটি নেওয়া । পাঠ্য কাহিনি অনুসারে গ্রামের বিখ্যাত ধনী , জনৈক জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহা থেকে এক উঁচু দরের সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে । বহুরূপী হরিদা পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা শুনে টের পান যে , তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসী নন । সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর প্রকৃত স্বরূপ কেমন হওয়া উচিত তা বোঝাতেই , এরপর হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন । বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা সকলকে বিস্মিত করেছিলেন । জ্যোৎস্নালোকিত রাতের স্নিগ্ধ পরিবেশে তাঁর আদুড় গায়ের ওপর সাদা উত্তরীয় এবং পরনে ছোটো বহরের থান আর হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল ও কাঁধে ঝোলার মধ্যে থাকা গীতা— সব মিলিয়ে মনে হয়েছিল যেন তিনি জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । হরিদার চোখের উদাত্ত উজ্জ্বল দৃষ্টি , কণ্ঠস্বর ও মুখের ভাষায় ; জগদীশবাবুর হৃদয় করুণাময় সজল হয়ে উঠেছিল । তিনি এই সর্বত্যাগী বিরাগীকে তুষ্ট করতে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী হিসেবে একশো এক টাকা নিবেদন করেন । কিন্তু বহুরূপী হরিদার অন্তরের বৈরাগ্য এবং নিজ শিল্পের প্রতি আন্তরিক সততার কারণে তিনি , সেই টাকার থলি হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । তাতে যে তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত । তবে সত্যিকারের বিরাগী সন্ন্যাসী দর্শন করানোর জন্য জগদীশবাবুর কাছ থেকে সামান্য বকশিশ আদায়ের দাবিটুকুকেই হরিদা , পাথেয় বলে স্থির করেছিলেন ।
12. “ বহুরূপী কেবল বহুরূপের কারবারী নয় , তাঁর এই বহুরুপের সাজ তাকে কখনো কখনো দেবত্বে উন্নীত করেছে ।’— মন্তব্যটি বিচার করো ?
Ans: 10. নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো ।
13. বহুরুপীর জীবনের যে – মর্মান্তিক বেদনার কথা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের মাধ্যমে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে , তা নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করো ।
অথবা , “ খাঁটি মানুষ তো নয় , এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ? — বহুরূপী জীবনের এই ট্র্যাজেডি পাঠ্য ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা এক আশ্চর্য মানুষ । তিনি গরিব হলেও কেবল পেটের দায়ে গতে বাঁধা কাজ করতে চান না । নির্লোভ , চিন্তাশীল , স্বাধীনচেতা ও শিল্পীমনের অধিকারী হরিদা , দৈনন্দিন অভাবের সঙ্গে অভ্যস্ত হলেও কাজ নামক দিনগত পাপক্ষয়ের থেকে শতহাত দূরে থাকতেই ভালোবাসেন । তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হল , তিনি বহুরূপের কারবারি । মাঝে মাঝে তাকে কেমন উপোস করে কাটাতে হয় , তেমনই হঠাৎ একদিন তিনি বিচিত্র ছদ্মবেশে অপরুপ হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন । কখনও পাগল সেজে হরিদা চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে আতঙ্কের হল্লা তোলেন , আবার কখনও সন্ধ্যার মায়াময় আলোয় রূপসি বাইজি সেজে উপস্থিত সকলকে স্তম্ভিত করে দেন । নিজের পেশায় হরিদা এতটাই পারদর্শী যে , স্থানীয় স্কুলের মাস্টারমশাইও তাঁকে নকল পুলিশ বলে চিনতেই পারেন না । এ হেন হরিদা পাড়ার ছেলেদের মুখে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা ভণ্ড সন্ন্যাসীর গল্প শুনে , তাদের সত্যিকারের বিরাগী সন্ন্যাসী দর্শন করানোর কথা ভাবেন । সেই চন্দ্রালোকিত রাতে জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হয় এক অন্য হরিদা । তিনি সাজহীন – অলংকারহীন এক সামান্য বিরাগী । তবে তাঁর আচরণ , মুখের ভাষা , তত্ত্বজ্ঞান এবং উদাত্ত উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি সবাইকে মুগ্ধ ও উর্দুবেল করে তোলে । প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতোই জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা তিনি হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । কারণ প্রকৃত বৈরাগ্যের অধিকারী হরিদার কাছে তখন শিল্প ও জীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । আসলে তিনি শুধু নিছক বহুরূপের কারবারি মাত্র নন , সততা – শিল্পীস্বভাব ও জীবনদর্শনে একজন অসামান্য মানুষ । কিন্তু সমাজে সামান্য হরি বহুরূপীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা এমন দেবতাসুলভ অসামান্যতা কোনোদিন তার প্রাপ্য মর্যাদা পায় না । জীবনের এই মর্মান্তিক বেদনা – যন্ত্রণা ও ট্র্যাজেডিকে মেনে নিয়েই , তাই নির্লিপ্তভাবে তিনি কেবল বকশিশটুকুই আশা করেন ।
14. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল , তা বর্ণনা করো ।
Ans: সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে এক স্নিগ্ধ ও শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । কারণ সিঁড়ির কাছে এমন একজন দাঁড়িয়েছিলেন যিনি জটাজুটধারী , হাতে কমণ্ডলু , চিমটে , মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোনো সন্ন্যাসী নয় , তিনি একজন বিরাগী , যার আদুড় গা , তার উপরে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোটো বহরের থান । তার শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক উজ্জ্বল দৃষ্টি । ভক্তের সেবার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রহণ করেছেন মাত্র এক গ্লাস জল । থাকার ও দান গ্রহণের অনুরোধ সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন তিনি । জগদীশবাবু উপদেশ শুনতে চাইলে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বলেছেন । পরমেশ্বরের দেখা পেলেই সমস্ত ঐশ্বর্য পাওয়া যায় । তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী দিতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন হৃদয়ের মধ্যেই তো সব তীর্থ । বিরাগী চরিত্রটি পূর্ণতা পায় তাঁরই উক্তিতে , ‘ আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ‘ সত্যিই তা করতে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকার থলিটা সিঁড়িতে পড়ে থাকলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি চলে যান ।