মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর

  1. প্রথমবার চুয়াড় বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন— 

(A) বিরসা 

(B) দুর্জন সিংহ 

(C) মাধো সিং 

(D) বুদ্ধ ভগৎ 

Ans: (B) দুর্জন সিংহ

 

  1. দামিন – ই – কোহ শব্দের অর্থ কী— 

(A) পাহাড়ের প্রান্তদেশ 

(B) পাহাড়ের চূড়া 

(C) সাঁওতাল গ্রাম

(D) বিদ্রোহ 

Ans: (A) পাহাড়ের প্রান্তদেশ

 

  1. ওয়াহাবি আন্দোলনের সমসাময়িক বাংলায় তিতুমির – এর নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছিল তার নাম 

(A) ওয়াহাবি 

(B) পাগল পাখি 

(C) তারিকা – ই – মহম্মদিয়া 

(D) ফরাজি 

Ans: (C) তারিকা – ই – মহম্মদিয়া

 

  1. সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল— 

(A) ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে 

(B) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে 

(D) ১৮৬৫ খ্রিঃ

Ans: (B) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে

 

  1. ‘ ধরতি আবা ’ শব্দের অর্থ হলো— 

(A) জলের ঈশ্বর 

(B) পৃথিবীর ঈশ্বর বা পিতা

(C) সমুদ্রের দেবতা 

(D) আকাশের দেবতা

Ans: (B) পৃথিবীর ঈশ্বর বা পিতা

 

  1. বারাসত বিদ্রোহের নেতা ছিলেন— 

(A) গোলাম মাসুম 

(B) মৈনুদ্দিন 

(C) তিতুমির

(D) সৈয়দ আহমেদ 

Ans: (C) তিতুমির

 

  1. খুৎকাঠি প্রথা প্রচলিত ছিল কোন সমাজে ? 

(A) কোল 

(B) ভিল 

(C) সাঁওতাল 

(D) মুন্ডা 

Ans: (D) মুন্ডা

 

  1. মুন্ডা বিদ্রোহের সূচনা হয় ? 

(A) 1859 

(B) 1899

(C) 1900 

(D) 1905

Ans: (B) 1899

 

  1. হুল শব্দের অর্থ কী ? 

(A) ঠান্ডা 

(B) ধারালো 

(C) বিপ্লব

(D) বিদ্রোহ 

Ans: (D) বিদ্রোহ

 

  1. সাঁওতাল বিদ্রোহ কী নামে পরিচিত ? 

(A) উলঘুলান 

(B) হুল

(C) দার – উল – হারব 

(D) দিকু

Ans: (B) হুল

 

  1. দামিন – ই – কোহ – তে বসবাস করত – 

(A) ওয়াহাবিরা 

(B) ফরাজিরা 

(C) সাঁওতালরা

(D) সন্ন্যাসী ও ফকিররা 

Ans: (C) সাঁওতালরা

  1. রংপুর বিদ্রোহের নেতা ছিলেন— 

(A) দেবীসিংহ 

(B) দুর্জন সিং

(C) নুরুলউদ্দিন 

(D) বীরসিংহ

Ans: (C) নুরুলউদ্দিন

  1. চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা ছিলেন— 

(A) কানু 

(B) বিরসা 

(C) দুর্জন সিং

(D) জোয়া ভগত 

Ans: (C) দুর্জন সিং

  1. দ্বিতীয় অরণ্য আইন কবে পাশ হয়েছিল ? 

(A) 1855 

(B) 1864 

(C) 1865 

(D) 1878 

Ans: (D) 1878

  1. 1878 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য আইনে অরণ্যকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ? 

(A) দু’টি স্তরে 

(B) তিনটি স্তরে 

(C) চারটি স্তরে

(D) পাঁচটি স্তরে 

Ans: (B) তিনটি স্তরে

  1. ফরাজি শব্দটির অর্থ হলো 

(A) ইসলাম নির্দেশিত কর্তব্য 

(B) নবজাগরণ 

(C) পথ

(D) বাদশাহ 

Ans: (A) ইসলাম নির্দেশিত কর্তব্য

  1. বাংলায় ফরাজি আন্দোলন শুরু হয় 

(A) 1817 

(B) 1819

(C) 1818 

(D) 1827 

Ans: (B) 1819

  1. নীল কমিশন গঠিত হয়— 

(A) 1860 

(B) 1862 

(C) 1864

(D) 1870

Ans: (A) 1860

  1. দার – উল – হারব শব্দটির অর্থ হলো— 

(A) দরিদ্রদের দেশ 

(B) মিত্রর দেশ

(C) ধনীর দেশ 

(D) শত্রুর দেশ

Ans: (D) শত্রুর দেশ

  1. মুন্ডা বিদ্রোহ কী নামে পরিচিত— 

(A) কানু 

(B) ভৈরত

(C) বিরসা মুন্ডা 

(D) সিধু

Ans: (C) বিরসা মুন্ডা

(B) দার – উল – হারব (D) দিকু 

  1. বাংলার নানা সাহেব ‘ কাকে বলা হয় ? 

(A) রামরতন মল্লিক 

(B) দীববন্ধু মিত্র

(C) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

(D) দিগম্বর বিশ্বাস

Ans: (A) রামরতন মল্লিক

  1. বাংলার ‘ ওয়াট টাইটেলার ‘ কাদের বলা হয় ? 

(A) দুর্জন সিংহ 

(B) বিশ্বনাথ সর্দার ও বৈদ্যনাথ সর্দার

(C) সিধু – কানু

(D) দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস

Ans: (D) দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. উলগুলান বলতে কী বোঝো ? 

Ans: উলগুলান বলতে বোঝায় চরম বিশৃঙ্খলা বা বিরাট তোলপাড় । 

  1. চাইবাসার যুদ্ধ কবে হয়েছিল ? 

Ans: ১৮২০-২১ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল । 

  1. বিরসা মুন্ডা কবে মারা গিয়েছিলেন ? / কত খ্রিস্টাব্দে বিরসা মুন্ডার মৃত্যু হয় । 

Ans: ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ৯ জুন বিরসা মুন্ডা মারা যান । 

  1. ফরাজি কথার অর্থ কী ? 

Ans: ঈশ্বর নির্ধারিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য । 

  1. ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে অরণ্যকে কয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ? 

Ans: তিনটি স্তরে । 

  1. সুই মুন্ডা কোন বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন ? 

Ans: কোল বিদ্রোহ । 

  1. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন ?

Ans: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । 

  1. সন্ন্যাসী বিদ্রোহের দু’জন নেতার নাম লেখো ।

Ans: ভবানী পাঠক , এবং দেবী চৌধুরাণী ।  

  1. ওয়াহাবি কথার অর্থ কী ? 

Ans: নবজাগরণ । 

  1. পাগলপন্থী বিদ্রোহে কে নেতৃত্ব দেন ?

Ans: ফকির করম শাহের পুত্র টিপু শাহ । 

  1. দাদন কথার অর্থ কী ? 

Ans: অগ্রিম অর্থ । 

  1. নীলদর্পণ নাটক কে রচনা করেন ? 

Ans: দীনবন্ধু মিত্র । 

  1. ভারতে প্রথম অরণ্য আইন কবে পাশ হয়েছিল ? 

Ans: 1865 খ্রিস্টাব্দে । 

  1. রুম্পা / রামপা বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল ? Ans: অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী অঞ্চলে । 
  2. তিতুমিরের আসল নাম কী ? 

Ans: মির নিশার আলি । 

  1. ফরাজি কথাটি এসেছে কোন শব্দ থেকে ?

Ans: এর ফরাজ শব্দ থেকে । 

  1. ফরাজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?

Ans: হাজি শরিয়ত উল্লাহ । 

  1. রংপুরের বিদ্রোহীরা কাকে ‘ নবাব ’ উপাধিতে ভূষিত করে ? 

Ans: নুরুলউদ্দিনকে । 

  1. বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন কবে পাশ হয়েছিল ?

Ans: ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে । 

  1. নীল চাষিদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কোন কমিশন গঠিত হয়েছিল ? 

Ans: নীল কমিশন ( ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ) । 

  1. কবে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয় ? 

Ans: ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয় । 

  1. গোলাম মাসুম কে ? 

Ans: গোলাম মাসুম ছিলেন তিতুমিরের প্রধান সেনাপতি । 

  1. কে ভিল বিদ্রোহ দমন করেন ? 

Ans: ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে আউট্রাম ভিল বিদ্রোহ দমন করেন । 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. বিপ্লব বলতে কী বোঝো ? 

Ans: বিপ্লব শব্দের অর্থ আমূল পরিবর্তন । মানুষ যখন আর্থ – সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্যস্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ করে তখন তাকে বিপ্লব বলে । 

  1. ব্রিটিশ সরকার কেন অরণ্য আইন চালু করেছিল ? 

Ans: ঔপনিবেশিক অঞ্চলে নিজেদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্যে 1865 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য আইন প্রবর্তন করা হয় । 

  1. সাঁওতাল বিদ্রোহের দু’টি বৈশিষ্ট্য লেখো । 

Ans: 1) এই বিদ্রোহের একটি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী চরিত্র ছিল । 2) সাঁওতাল ছাড়াও কর্মকার , চর্মকার , তেলি , ডোম , মুসলিম প্রভৃতি শ্রেণির মানুষ যোগ দেওয়ায় এই বিদ্রোেহ গণবিদ্রোহে পরিণত হয় । 

  1. কোল বিদ্রোহের দু’টি গুরুত্ব লেখো । 

Ans: 1) কোল বিদ্রোহ হতে অন্যান্য উপজাতিদের বিদ্রোহী হতে উৎসাহিত করেছিল । 2) কোম্পানি বাধ্য হয়ে দক্ষিণ – পশ্চিম সীমান্তে এজেন্সি আইন গঠন করেছিল । 

  1. মুন্ডা বিদ্রোহের দু’টি গুরুত্ব লেখো । 

Ans: 1) এই বিদ্রোহের পর উপজাতি এলাকায় ভূমি বন্দোবস্তের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । 2) এই বিদ্রোহ দ্বারা বেগার শ্রম প্রথা নিষিদ্ধ হয় । 

  1. কবে , কোথায় , কার নেতৃত্বে নীলবিদ্রোহ শুরু হয় ? 

Ans: 1859 খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে কৃয়নগরের চৌগাছা গ্রামে এই বিদ্রোহ শুরু হয় । 

  1. কোম্পানির আমলে দু’টি ভূমিরাজস্ব নীতি কী ? 

Ans: 1793 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং মহলওয়ারি বন্দোবস্ত । 

  1. কোল বিদ্রোহের দু’টি কারণ কী ? 

Ans: 1) তাদের নগদ করদানে বাধ্য করা হয়েছিল । 2) তাদের স্থায়ী বিচার পদ্ধতিতে আঘাত করা হয়েছিল । 

  1. দামিন – ই কোহ ও হুল শব্দের অর্থ কী ? Ans: দামিনীকোহ – এর অর্থ পাহাড়ের প্রাস্তদেশ এবং হুল শব্দের অর্থ বিদ্রোহ । 
  2. আলি ভ্রাতৃদ্বয় কাদের বলে ? 

Ans: ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা এনায়েৎ আলি এবং উলায়েৎ আলিকে । 

  1. ভারতে দ্বিতীয় অরণ্য আইন কবে পাশ হয় ? উদ্দেশ্য কী ছিল ?

Ans: 1878 খ্রিস্টাব্দে । এর উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের কাছ থেকে অরণ্য কেড়ে নেওয়া । 

  1. কবে , কোন আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে ? 

Ans: 1858 খ্রিস্টাব্দের 2 আগস্ট ‘ Govt . of India Act’- এর মাধ্যমে । 

  1. ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাস কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ?

Ans: ‘ আনন্দমঠ ‘ – এ উল্লিখিত ‘ বন্দেমাতরম ‘ মন্ত্র দেশবাসীকে মুক্তি আন্দোলনে উদ্‌বুৰ করেছিল । এখানে সত্যানন্দের মাধ্যমে আসুরিক ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে ধর্ম আন্দোলন জাগানোর ডাক দেওয়া হয়েছিল । এভাবেই এই উপন্যাস জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল । 

  1. কোন আইনের মাধ্যমে ‘ নীলচুক্তি আইন ‘ রদ করা হয় ? এই আইনে কী বলা হয়েছে ? 

Ans: Act – VIII of 1868 নামে এক আইনের মাধ্যমে নীলচুক্তি আইন রদ করা হয় । 

এখানে বলা হয় , নীলচাষ সম্পূর্ণভাবে চাষিদের ইচ্ছাধীন । 

  1. বাংলায় ধর্মীয় প্রভাবযুক্ত কৃষক বিদ্রোহের নাম লেখো । 

Ans: চুয়াড় বিদ্রোহ , রংপুর বিদ্রোহ , কোল বিদ্রোহ ও নীলবিদ্রোহ । 

  1. ওয়াহাবি শব্দের অর্থ কী ? ভারত ও বাংলায় কাদের নেতৃত্বে প্রথম ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় ? 

Ans: নবজাগরণ । সৈয়দ আহমেদ এবং মহম্মদ মহসিন বা তিতুমির ।

বিশ্লেষণ ধর্মী প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে উপজাতি বিদ্রোহগুলির কারণ কী ছিল ? 

অথবা , ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংগঠিত বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের কারণগুলি কী ছিল ? 

Ans: সূচনা : ব্রিটিশ শাসনকালে সমকালীন বণিক , জমিদার , অভিজাত শ্রেণি , নীলকর ও কোম্পানি ভারতকে শোষণের বদ্ধভূমিতে পরিণত করেছিল । এর পরিণতি স্বরূপ ভারতে দেখা যায় একের পর এক উপজাতি ও কৃষক বিদ্রোহ । এর কারণে বলা যায়— 

ভূমিরাজস্ব নীতি : ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর থেকেই নতুন ভূমিরাজস্ব নীতি , কোম্পানির আমলাদার ও ইজারাদারদের অত্যাচারে কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে , যার ফলাফল ছিল বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ । 

ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থা : ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইংরেজরা ভারতের চিরাচরিত আইনকানুন ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে তাদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করে যা ভারতীয় সাধারণ মানুষদের ক্ষুদ্ধ করে তোলে । 

বহুমুখী শোষণ : কোম্পানির আমলে ভূমিরাজস্বের চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকার , জমিদার , মধ্যস্বত্বভোগী ও মহাজনদের মাধ্যমে বহুমুখী শোষণ কৃষক ও উপজাতিদের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে । 

মূল্যায়ন : উপরোক্ত কারণ ছাড়াও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তর নীতি ও ভারতীয় উপজাতিদের অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা , জঙ্গল কেটে বাঁধ দেওয়া প্রভৃতি কারণেও কৃষক ও উপজাতি মানুষেরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় । 

  1. পাগলপন্থী বিদ্রোহের বিবরণ দাও । 

অথবা , পাগলপন্থী বিদ্রোহের কারণ , প্রসার ও গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো । 

Ans: উনিশ শতকের একটি উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন ছিল ১৮২৪ সালের পাগলপন্থী বিদ্রোহ । 

বিদ্রোহের কারণ : ব্রিটিশ সরকার ইঙ্গ – ব্রহ্ম যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যয় নির্বাহের জন্য ময়মনসিংহের কৃষকদের খাজনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় । জমিদাররাও বেশি পরিমাণে খাজনা আদায়ের জন্য কৃষকদের শোষণ চালায় । এছাড়াও ব্রিটিশ শাসনে ময়মনসিংহের বৃহত্তর এলাকার গ্রামীণ পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে । 

বিদ্রোহের প্রসার : শেরপুর পরগনার হাজং , মুসলিম , রাজবংশী ও অন্য জাতিগোষ্ঠী ফকির করম শাহের নেতৃত্বে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে । পরে করম শাহের পুত্র টিপু শাহের নেতৃত্বে এটি সশস্ত্র ও শক্তিশালী বিদ্রোহের রূপ নেয় । পাঁচ হাজার অনুগামী সহ টিপু শেরপুরের জমিদারকে আক্রমণ , থানায় আগুন , শহর জুড়ে লুঠপাট ও ময়মনসিংহের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘেরাও করেন । 

বিদ্রোহীদের ঘোষণা : পাগলপন্থীরা ঘোষণা করে 1) ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কোনোরূপ সম্পর্ক রাখবে না , 2) সামরিক রাস্তা তৈরির কাজ বা একাজে কোনোরূপ সহায়তা করবে না , 3) জমিদারদের আধিপত্য মানবে না । 

গুরুত্ব : ব্রিটিশ সরকারের দমনপীড়নের মুখে পাগলপন্থীরা পেরে উঠেনি । তবুও এই বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল— 1) ভবিষ্যতে বড়ো বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত হয় , 2) কৃষকদের ক্ষোভ , আশা – আকাঙ্ক্ষা – অসন্তোষের প্রকাশ ঘটায় প্রশাসন সচেতন হয় । 

  1. সাঁতাল বিদ্রোহের কারণ লেখো । অথবা , ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ? 

Ans: সূচনা : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসূত জমিদার ও কোম্পানির শোষণ ও অত্যাচারে জমিহারা সাঁওতাল উপজাতির মানুষেরা বাঁকুড়া , মেদিনীপুর , ধলভূম , ভাগলপুর অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে । কিন্তু এর পরেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনে | ও শোষণে তারা নির্মমভাবে শোষিত , নিষ্পেষিত ও সর্বস্বান্ত হতে থাকে । এর বিরুদ্ধে আদিবাসীরা ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিল । এর কারণগুলি হলো 

বিদ্রোহের কারণ : 

  1. জমিদারের অত্যাচার : সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণ বলা যায় জমিদারের অত্যাচারকে । এই জমিদারেরা সাঁওতালদের উপর চড়া হারে কর ধার্য করত । তা না দিতে পারলে তাদের জমি থেকে উৎখাত করত । 
  2. রাজস্ব আরোপ : এই উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বন – জঙ্গলের জমিকে চাষযোগ্য করে তুললেও তার উপর কোম্পানি ও সরকার নিযুক্ত জমিদাররা রাজস্ব চাপাত যা ছিল এই বিদ্রোহের অপর একটি কারণ । 
  3. মহাজনি প্রকোপ : জমিদারদের খাজনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই সাঁওতালরা চড়া হারে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিতে বাধ্য হতো । এই ঋণের দায়ে তাদের জমি , ফসল , গোরু – বাছুর , ঘর – বাড়ি , এমনকী মা – বোনেদের ইজ্জত পর্যন্ত হারাতে হতো । এটি ছিল বিদ্রোহের একটি কারণ । 
  4. কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার : কোম্পানির কর্মচারীরা সাঁওতালদের বেগার খাটাত । নানারকম উপঢৌকন দিতে বাধ্য করত ও হয়রানি করত । এই ক্রমাগত উৎপীড়ন তাদের বিদ্রোহী করে তোলে । 

মূল্যায়ন : উপরের আলোচনায় স্পষ্ট , সাঁওতাল বিদ্রোহ বাংলার কৃষক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ বিস্ফোরণ । এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের জমি তৈরির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অসামান্য। 

  1. সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের চরিত্র বিশ্লেষণ করো । অথবা , সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা করো । 

Ans: সূচনা : ১৭৬৩-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল পূর্ববঙ্গের সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহীরা । যদিও এই বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে , যেমন — উইলিয়াম হান্টার , গ্রিকস প্রমুখ ইংরেজ ঐতিহাসিক সন্ন্যাসী ও ফকিরদের দস্যু বা ডাকাত বলে অভিহিত করেছেন । 

  1. কৃষক বিদ্রোহ : সন্ন্যাসী ও ফকির সম্প্রদায় ধর্মচর্চার সাথে যুক্ত থাকলেও কৃষিকাজই ছিল তাদের প্রধান জীবিকা । তাই উইলিয়াম হান্টার , এডওয়ার্ড ও গ্যারাট এই বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলেছেন ৷ 
  2. স্বাধীনতা সংগ্রাম : কিছু ঐতিহাসিকের মতে , কোম্পানি বিরোধী এই বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন । লেস্টার হ্যাচিনসন মনে করেন যে বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে নিজ দেশ ও ধর্মকে রক্ষা করা । 
  3. দুর্বল বিদ্রোহ : কিছু ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে দুর্বল কৃষক বিদ্রোহ বলেছেন । কারণ সন্ন্যাসী ও ফকিরদের সাথে সমাজের বৃহত্তর অংশের সাধারণ মানুষ এই বিদ্রোহে সামিল হয়নি । 
  4. ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন কেন প্রনয়ন করা হয় ?

Ans: সূচনা : ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনকালে কৃষিজমির প্রসার , প্রচুর বনজ সম্পদ সংগ্রহ এবং রাজস্বখাতে আয় বৃদ্ধি — এই সকল কারণে অরণ্যে বসবাসকারী মানুষের সাথে শুরু হয় কোম্পানির ক্ষোভ – বিক্ষোভ । এর অবসানের জন্য প্রয়োজন ছিল ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন । এই আইন প্রণয়ন হয়েছিল 1865 খ্রিস্টাব্দে । 

অরণ্য আইন প্রণয়নের কারণ : ভারতে ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণয়নের কারণ ছিল- নৌবাহিনী তথা নৌশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর কাঠের জোগান ; কাগজশিল্পের জন্য প্রচুর কাঠ এবং ভারতে রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঠের প্রয়োজন । তাই বনজ সম্পদের ওপর ব্রিটিশ সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজন ছিল অরণ্য আইনের । 

লর্ড ডালহৌসির উদ্যোগ : 1855 খ্রিস্টাব্দে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি ‘ ভারতীয় বনজ সম্পদের সনদ ‘ নামে একটি আইন পাশ করে ভারতীয় অরণ্যের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ জারি করেন । 

প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন : বনবিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল ডায়াট্রিক ব্রান্ডিসের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার 1865 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় অরণ্য ‘ আইন পাশ করে । 

আইনের বিভিন্ন দিক : 1865 খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইন বাস্তবায়নের জন্য 1878 খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত হয় দ্বিতীয় অরণ্য আইন । এই আইনের দু’টি দিক ছিল—

 ( ক ) সংরক্ষিত : এর দ্বারা বনজ সম্পদের ওপর পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় ।

 ( খ ) সুরক্ষিত : এর দ্বারা আদিবাসীরা বন থেকে শুধু জ্বালানি সংগ্রহ ও বনে পশুচারণের অধিকার পায় । 

মূল্যায়ন : ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে অরণ্য আইন পাশ করে অরণ্য অঞ্চলগুলিতে ঔপনিবেশিক কর্তৃত্বকে আরও দৃঢ় করে তোলা হয় । তবে পরবর্তীতে এই অরণ্য আইনকে কেন্দ্র করেই উপজাতি ও জনজাতিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । 

রচনা ধর্মী প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ?

Ans: ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আরম্ভ করে । যা পরবর্তীকালে সিপাহি বিদ্রোহের পথ প্রশস্থ করেছিল । এই বিদ্রোহগুলির প্রধান কারণগুলি হলো 

  1. খাজনা বৃদ্ধি : ব্রিটিশ শাসনকালে উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব ধার্য হয়েছিল । এই উচ্চহারে ভূমিরাজস্বের বোঝা আদিবাসী কৃষকদের উপর চাপিয়ে দিলে তারা নিঃস্ব হয়ে যায় । 
  2. ঔপনিবেশিক আইন ও বিচার ব্যবস্থা : ভারতের এইসব প্রাচীন উপজাতি সমাজ নিজেদের আইন ও বিচার ব্যবস্থা দ্বারা চালিত হতো । কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে তাদের আইনগুলিকে বাতিল করে তাদের উপর ব্রিটিশদের আইন চাপিয়ে দেওয়া হয় । এতে তারা ক্ষুদ্ধ হয়েছিল । 
  3. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : এইসময় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে জমির মালিকানা কৃষকদের পরিবর্তে নতুন জমিদার শ্রেণির হাতে চলে যায় । 
  4. জমিদারদের অত্যাচার : উচ্চহারে কর আদায়ের জন্য জমিদার ও জমিদারের কর্মচারীরা আদিবাসীদের উপর প্রভূত পরিমাণে অত্যাচার চালাত । তাদের জমি থেকে উৎখাত করে দিত । 
  5. অনাহার : দারিদ্র্য ও অনাহার ছিল এদের নিত্যসঙ্গী । তার উপর ব্রিটিশ সরকার খাদ্যশস্যের পরিবর্তে জোরপূর্বক নীল , পাট , তুলো প্রভৃতি চাষ করাতে শুরু করে । ফলে আদিবাসীদের অবস্থা আরো সঙ্গীন হয় । 
  6. মহাজনি প্রথা : গ্রামে বহিরাগত মহাজনরা নানা অছিলায় আদিবাসীদের ঋণজালে জড়িয়ে ফেলে । একবার ঋণ নিলে সারা জীবন তার থেকে নিস্তার পাওয়া যেত না । 
  7. শিল্প ধ্বংস : ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবের উৎপাদিত পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতের কুটির শিল্পকে ধ্বংস করে দেয় । তার ফলে শিল্পের কারিগররা বেকার হয়ে পড়ে । 
  8. নীলবিদ্রোহের কারণ ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো । 

Ans: সূচনা : বাংলায় ১৯ শতকে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম ছিল ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দের নীলবিদ্রোহ । এই বিদ্রোহে বাংলার সাধারণ কৃষকশ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল । এই বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল এইরকম 

  1. নীলচাষের পদ্ধতি : নীলকর সাহেবরা নিজেদের খাস জমিতে সস্তায় শ্রমিক এনে নীলচাষ করত যা এলাকা চাষ নামে পরিচিত । আবার কৃষকের নিজস্ব জমিতে অগ্রিম অর্থ ঋণ দিয়ে কৃষককে নীলচাষ করতে বাধ্য করত । এই দুই প্রকার পদ্ধতিতেই সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষক সম্প্রদায় , যা নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল বলে মনে করা হয় । 
  2. দাদন প্রথা : নীলকর সাহেবরা কৃষকদের বিঘাপ্রতি ২ টাকা দাদন দিত যা কৃষকরা শোধ করলেও নীলকর সাহেবের খাতায় কৃষকদের ঋণ থেকেই যেত । এই ভয়ানক তুলেছিল । শোষিত প্ৰথা কৃষক সম্প্রদায়কে নীলকর সাহেবদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্ধ করে 
  3. জমির মাপে কারচুপি : নীলকর সাহেবরা দাদনপ্রথা অনুযায়ী জমির মাপেও ব্যাপক কারচুপি চালাত । ফলে চাষিকে নীলচাষে নিজের প্রচুর জমি ব্যবহার করতে হতো । 
  4. নীলচাষে বাধ্য করা : ঋণগ্রস্ত কৃষকদের বর্বর ও নির্মম প্রকৃতির নীলকর সাহেবরা জোর করে ধান ও অন্যান্য শস্যের চাষ বন্ধ করে নীলচাষে বাধ্য করত । এর ফলে চাষিদের খাওয়ার জন্য ধান উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায় , যা নীলবিদ্রোহের অন্যতম কারণ । ফরিদপুরের ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট নীল কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন— “ ইংল্যান্ডে নীলের যে সকল বাক্স পৌঁছায় তা বাংলার চাষির রক্তে রঞ্জিত । ” 
  5. ইংরেজ শাসকদের অবিচার : অত্যাচারিত কৃষকরা সামান্য বিচারের আশায় আদালতের দারস্থ হয়েও ন্যায়বিচার পেতেন না । কারণ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য শেতাঙ্গরা বিচারের ক্ষেত্রে স্বজাতীয় নীলকর সাহেবদের দিকেই পক্ষপাতিত্ব করতেন । 

নীলবিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : 

  1. সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতি : এই বিদ্রোহে কোনো একটি বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায় নয় , হিন্দু – মুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত কৃষক নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সামিল হয় । 
  2. জমিদারদের অংশগ্রহণ : বাংলার কিছু জমিদার এই বিদ্রোহে কৃষকদের সাথে যোগদান করে নীলচাষের বিরোধিতা করেছিল । এদের মধ্যে রানাঘাটের শ্রীগোপাল পাল চৌধুরী , চণ্ডীপুরের শ্রীহরি রায় , নড়াইলের রামরতন রায় উল্লেখযোগ্য । 
  3. সংবাদপত্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা : কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে সংবাদপত্রগুলি সোচ্চার হয়েছিল সেগুলির মধ্যে হিন্দু প্যাট্রিয়ট , গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা , বামাবোধিনী পত্রিকা , সমাচার দর্পণ উল্লেখযোগ্য । এই সংবাদপত্রগুলির মাধ্যমে বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি নীলচাষিদের দুর্দশা সম্বন্ধে অবহিত হয়ে নীলবিদ্রোহকে সমর্থন করে। 

মন্তব্য : ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্র বলেছেন – “ এই বিদ্রোহ স্থানিক বা সাময়িক নয় , উহার নিমিত্ত যে কত গ্রাম্য বীর ও নেতাদের উদয় হইয়াছিল ইতিহাসের পাতায় তাহাদের নাম নাই । ”