MCQ | নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া – প্রথম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Nodi Question and Answer :
- প্রায় কত শতাংশ অঞ্চলে ভূমিরূপ পরিবর্তনে নদী ভূমিকা নেয় ?
(A) ১০ শতাংশ
(B) ৩০ শতাংশ
(C) ৫০ শতাংশ
(D) ৭০ শতাংশ
Ans: (D) ৭০ শতাংশ
- নদীর জলপ্রবাহ পরিমাপ করা হয় কোন্ এককে ?
(A) মিলিবার – এ
(B) কিউসেক – এ
(C) নট – এ
(D) কিলোমিটার – এ
Ans: (B) কিউসেক – এ
- উচ্চগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি হয় ইংরেজি কোন্ অক্ষরের মতো ?
(A) U- এর মতো
(B) W- এর মতো
(C) Z- এর মতো
(D) V- এর মতো
Ans: (D) V- এর মতো
- নদী যে – খাতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে , তাকে বলে—
(A) অববাহিকা
(B) নদীখাত
(C) দোয়াব
(D) জলবিভাজিকা
Ans: (B) নদীখাত
- ক্ষয়কার্য সর্বাধিক হয় নদীর –
(A) উচ্চগতিতে
(B) মধ্যগতিতে
(C) মধ্য ও নিম্নগতিতে
(D) নিম্নগতিতে
Ans: (A) উচ্চগতিতে
- নিম্নলিখিত কোন্টি ভারতের নিত্যবহ নদী ?
(A) গঙ্গা
(B) অজয়
(C) দামোদর
(D) তাপ্তি
Ans: (A) গঙ্গা
- সঞ্চয়কার্য সর্বাধিক পরিমাণে হয় নদীর কোন্ গতিতে ?
(A) উচ্চগতিতে
(B) মধ্যগতিতে
(C) নিম্নগতিতে
(D) উচ্চ ও মধ্যগতিতে
Ans: (C) নিম্নগতিতে
- দুটি নদীর মধ্যবর্তী ভূমিকে বলে –
(A) দোয়াব
(B) ধারণ অববাহিকা
(C) অববাহিকা
(D) বদ্বীপ
Ans: (A) দোয়াব
- যে – উচ্চভূমি দুটি নদী অববাহিকাকে পৃথক করে , তাকে বলে—
(A) দোয়াব
(B) জলবিভাজিকা
(C) উপত্যকা
(D) বদ্বীপ
Ans: (B) জলবিভাজিকা
- নদী তার শাখা ও উপনদী – সহ যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবহমান হয় , তাকে বলে নদীর—
(A) দোয়াব
(B) অববাহিকা
(C) বদ্বীপ
(D) নদী প্রবাহপথ
Ans: (B) অববাহিকা
- মূলনদী থেকে যে – জলধারা নির্গত হয় , তাকে বলে –
(A) উপনদী
(B) যুগ্মনদী
(C) শাখানদী
(D) প্রধান নদী
- পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নদী যখন প্রধান নদীতে এসে মেশে তাকে বলে –
(A) যুগ্মনদী
(B) অন্তর্বাহিনী নদী
(C) উপনদী
(D) শাখানদী
Ans: (C) উপনদী
- আদর্শ নদীর ক – টি গতি থাকে ?
(A) ২ টি
(B) ৩ টি
(C) ৪ টি
(D) ৫ টি
Ans: (B) ৩ টি
- নিম্নলিখিত কোন্ নদীটি সবচেয়ে বেশি জলবহন করে ? (
(A) আমাজন
(B) নীলনদ
(C) রাইন
(D) কলোরাডো
Ans: (B) নীলনদ
- ভারতে কোন্টি আদর্শ নদীর উদাহরণ ?
(A) তাপ্তি
(B) নর্মদা
(C) গঙ্গা
(D) কাবেরী
Ans: (C) গঙ্গা
- গঙ্গানদীর উৎসভূমি হল –
(A) সিয়াচেন হিমবাহ
(B) চেমায়ুৎ দুং হিমবাহ
(C) গঙ্গোত্রী হিমবাহ
(D) সিন – কা – বাব হিমবাহ
Ans: (C) গঙ্গোত্রী হিমবাহ
- কোন্টি প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন নদী ।
(A) সিন্ধু
(B) ব্রহ্মপুত্র
(C) বিতস্তা
(D) দামোদর
Ans: (C) বিতস্তা
- এশিয়ার একটি অন্তর্বাহিনী নদী হল—
(A) আমুদরিয়া
(B) লেনা
(C) সিকিয়াং
(D) ইরাবতী
Ans: (D) ইরাবতী
- নদীর বহনকার্যের উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া কোনটি ?
(A) অবঘর্ষ
(B) ঘর্ষণ
(C) লম্ফদান
(D) উৎপাটন
Ans: C) লম্ফদান
- নদীর ক্ষয়কার্যের উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া কোনটি ?
(A) লম্ফদান
(B) উৎপাটন
(C) আকর্ষণ
(D) অবঘর্ষ
Ans: (D) অবঘর্ষ
- নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা কতগুণ বাড়ে ?
(A) ৪ গুণ
(B) ৮ গুণ
(C) ১৬ গুণ
(D) ৬৪ গুণ
Ans: (D) ৬৪ গুণ
- যে স্থানে নদী পরস্পর মিলিত হয় , তা হল –
(A) নদীমোহানা
(B) নদীসংগম
(C) নদীদোয়ার
(D) নদীদ্বীপ
Ans: (B) নদীসংগম
- পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ কোন্ নদীতে দেখা যায় ?
(A) নীলনদ
(B) আমাজন
(C) গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র
(D) মিসিসিপি – মিসৌরি
Ans:
- পৃথিবীর বৃহত্তম নদী গিরিখাত দেখা যায় কোন্ নদীতে ?
(A) সিন্ধু
(B) হয়ারলুং সাংপো
(C) কলোরাডো
(D) সেন্ট লরেন্স
Ans: (B) হয়ারলুং সাংপো
- আল ক্যানন দ্যা কলকা গিরিখাতটি কোন্ মহাদেশে অবস্থিত ?
(A) উত্তর আমেরিকা
(B) দক্ষিণ আমেরিকা
(C) আফ্রিকা
(D) এশিয়া
Ans:
- গেরসোপ্পা জলপ্রপাত কোন্ নদীতে অবস্থিত ?
(A) কৃষ্ণা
(B) গোদাবরী
(C) সরাবতী
(D) নর্মদা
Ans: (C) সরাবতী
- নদী তার গতিপথে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নীচে নেমে এলে , তাকে বলে-
(A) র্যাপিডস
(B) ক্যাসকেড
(C) ক্যাটারাক্ট
(D) খরস্রোত
Ans: (B) ক্যাসকেড
- পলল ব্যজনী গড়ে ওঠে –
(A) পর্বত পাদদেশে
(B) পার্বত্য উচ্চভূমিতে
(C) নিম্নগতিতে
(D) বদ্বীপ অঞ্চলে
Ans: (A) পর্বত পাদদেশে
- বদ্বীপ গঠিত হয় নদীর –
(A) মোহানায়
(B) মধ্যগতিতে
(C) উৎসস্থলে
(D) পার্বত্য গতিতে
Ans: (A) মোহানায়
- জলপ্রপাতের নীচে বিশালাকার গর্তকে কী বলে ?
(A) আর্টেজীয় কূপ
(B) প্রপাতকুপ
(C) খরস্রোতা
(D) মন্থকুপ
Ans: (B) প্রপাতকুপ
- মাজুলি নদীদ্বীপ গড়ে উঠেছে কোন্ নদীতে ?
(A) গঙ্গানদীতে
(B) মহানদী নদীতে
(C) গোদাবরী নদীতে
(D) ব্রহ্মপুত্র নদীতে
Ans: (D) ব্রহ্মপুত্র নদীতে
- নদীর মধ্যগতিতে প্রধান কাজ হল—
(A) ক্ষয়
(B) ক্ষয় ও বহন
(C) বহন
(D) বহন সঞ্চয়
Ans: (B) ক্ষয় ও বহন
- মধ্যগতিতে নদী উপত্যকার আকৃতি হয় ইংরেজি –
(A) O অক্ষরের মতো
(B) U অক্ষরের মতো
(C) V অক্ষরের মতো
(D) W অক্ষরের মতো
Ans: (B) U অক্ষরের মতো
- ডেল্টা অক্ষরটি –
(A) বাংলা বর্ণমালার
(B) গ্রিক বর্ণমালার
(C) ইংরেজি বর্ণমালার
(D) সংস্কৃত বর্ণমালার
Ans: (B) গ্রিক বর্ণমালার
- প্লাবনভূমির সন্নিহিত ভূমিরূপ হল –
(A) পলল ব্যজনী
(B) স্বাভাবিক বাঁধ
(C) জলপ্রপাত
(D) পলল ব্যজনী
Ans: (B) স্বাভাবিক বাঁধ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া – প্রথম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Nodi Question and Answer :
- নিত্যবহ নদী কাকে বলে ?
Ans: যে – নদীতে সারাবছর জল প্রবাহিত হয় ।
- ভারতের একটি নিত্যবহ নদীর উদাহরণ দাও ।
Ans: গঙ্গানদী ।
- নদী কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয়সাধন করে ?
Ans: অবঘর্ষ , ঘর্ষণ , জলপ্রবাহ ক্ষয় , বুদ্বুদ ক্ষয় , দ্রবণ প্রক্রিয়ায় ।
- নদী কী কী প্রক্রিয়ায় বহনকার্য করে ।
Ans: লম্ফদান , ভাসমান , দ্রবণ ও আকর্ষণ প্রক্রিয়ায় ।
- নদী দ্বারা প্রবাহিত পদার্থকে কী বলে ?
Ans: নদীর ভার বা বোঝা ।
- চওড়া নদীর মোহানা কী নামে পরিচিত ?
Ans: খাঁড়ি ।
- পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের নদীগুলিতে জলের প্রধান উৎস কোনটি ?
Ans: বৃষ্টির জল ।
- ভূপৃষ্ঠে প্রবহমান জলরাশির পরিমাণ কত শতাংশ ?
Ans: পৃথিবীতে পৃষ্ঠজলের শতকরা পরিমাণ মিষ্টি জলের মাত্র ১.৩ % ।
- নদীতে জলের বহমানতা বজায় থাকে কীভাবে ?
Ans: জলচক্রের মাধ্যমে ।
- নদীর কোন গতিতে জলপ্রপাত দেখা যায় ?
Ans: উচ্চগতিতে ।
- জলপ্রপাতের তলদেশে সৃষ্ট গর্তকে কী বলে ?
Ans: প্লাঞ্জপুল বা প্রপাতকূপ ।
- নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ড নদীতে আঘাত করে যে ক্ষয় করে সেই ক্ষয়পদ্ধতির নাম কী ?
Ans: অবঘর্ষ ক্ষয় ।
- নদীর জলের প্রবাহ পরিমাপের একককে কী বলে ?
Ans: কিউসেক ও কিউমেক ।
- ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত একটি নিমজ্জমান দ্বীপের নাম করো ।
Ans: নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি ।
- নদীর মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত ঘনফুট জলকে কী বলে ?
Ans: কিউসেক ।
- পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নাম কী ?
Ans: সুন্দরবন ।
- গঙ্গা কেন আদর্শ নদী ?
Ans: গঙ্গানদীতে উচ্চ বা পার্বত্য , মধ্য বা সমভূমি , নিম্ন বা বদ্বীপ প্রবাহ সুস্পষ্ট , তাই একে আদর্শ নদী বলে ।
- সুন্দরবন এলাকার কয়েকটি দ্বীপের নাম লেখো যেগুলি ক্রমশ নিমজ্জিত হচ্ছে ।
Ans: ঘোড়ামারা , লোহাচড়া ও নিউমুর ।
- নিউমুর দ্বীপ বাংলাদেশে কী নামে পরিচিত ?
Ans: দক্ষিণ তালপট্টি ।
- নদীর ক্ষয়সীমা ধারণার প্রবর্তক কে ?
Ans: JW Powell .
- নদীর নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘন আয়তন জল প্রবাহিত হয় , তাকে কী বলে ?
Ans: নদীর জলক্ষরণ ।
- নদীর ‘ ষষ্ঠঘাত সুত্র ’ – এর প্রবর্তক কে ?
Ans: W. Hopkins .
- শুষ্ক অঞ্চলে গঠিত গিরিখাতকে কী বলা হয় ?
Ans: ক্যানিয়ন ।
- অসংখ্য পটহোল একসঙ্গে গড়ে উঠলে তাকে কী বলে ?
Ans: পটহোল কলোনি ।
- ভারতের কোন ভূপ্রাকৃতিক অংশের নদীগুলিতে গিরিখাত দেখা যায় ?
Ans: হিমালয় ।
- কোন্ গতিতে নদী তার সৃষ্ট পদার্থের সবটাই বহন করে ?
Ans: উচ্চগতিতে ।
- অসংখ্য ছোটো ছোটো র্যাপিডস পাশাপাশি অবস্থান করলে তা কী নামে পরিচিত ?
Ans: ক্যাসকেড ।
- পর্বতের পাদদেশে নদীসঞ্চয়কার্যে সৃষ্ট হাতপাখার মতো ভূমিরূপটির নাম কী ?
Ans: পলল ব্যজনী বা পলল পাখা ।
- পশ্চিমবঙ্গের কোন অঞ্চলের নদীতে খাঁড়ি দেখা যায় ?
Ans: সুন্দরবন বা সক্রিয় বদ্বীপ ।
- পৃথিবীর বৃহত্তম কোন্ নদীটির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি ?
Ans: আমাজন ।
- নদী ক্ষয়কার্যের কোন্ প্রক্রিয়ায় মন্থকুপ গড়ে ওঠে ।
Ans: অবঘর্ষ ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া – প্রথম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Nodi Question and Answer :
- নদী ( River ) কাকে বলে ?
Ans: নদী হল এক স্বাভাবিক জলধারা যা উচ্চভূমি থেকে তুষারগলা জল বা বৃষ্টির জলে পুষ্ট হয়ে বা প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে ভূমির ঢাল অনুসারে ভূপৃষ্ঠের নির্দিষ্ট খাত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগর , হ্রদ বা অন্য কোনো জলধারায় এসে মিলিত হয় । যেমন – গঙ্গা , সিন্ধু , ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি ।
- জলচক্র ( Hydrological cycle ) কাকে বলে ?
Ans: বাষ্পীভবন , ঘনীভবন , অধঃক্ষেপণ , পৃষ্ঠপ্রবাহ প্রভৃতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বারিমণ্ডল , বায়ুমণ্ডল ও স্থলভাগের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে জলের বিরামহীন চক্রাকার পরিবর্তন হল জলচক্র ।
- জলচক্রের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি কী কী ?
Ans: জলচক্রের প্রধান প্রক্রিয়াগুলি হল — বাষ্পীভবন ( Evaporation ) , ঘনীভবন ( Condensation ) , অধঃক্ষেপণ ( Precipitation ) , পৃষ্ঠপ্রবাহ ( Surface runoff ) , অনুস্রাবণ ( Infiltration ) ইত্যাদি ।
- নদীর জলের উৎসগুলি কী কী ? বা , নদীর জল কোথা থেকে আসে ?
Ans: বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির জল , তুষার , বরফ ও হিমবাহ গলা জল , প্রস্রবণ দিয়ে বেরিয়ে আসা ভৌমজল ইত্যাদি হল নদীর জলের উৎস ।
- উপনদী ও শাখানদী কাকে বলে ?
Ans: উপনদী ( Tributaries ) : প্রধান নদীর গতিপথের অনেক স্থানে ছোটো নদী এসে মূলনদীতে মিলিত হয় , এইসব ছোটো ছোটো নদীকে প্রধান নদীর উপনদী বলা হয় । যেমন — যমুনা হল গঙ্গার উপনদী ।
শাখানদী ( Distributeries ) : কোনো বড়ো নদী থেকে অন্য কোনো নদী বেরিয়ে এসে সাগরে বা অন্য কোনো নদীতে বা সেই নদীতেই এসে পড়লে তাকে শাখানদী বলে । যেমন — গঙ্গার প্রধান শাখানদী হল ভাগীরথী – হুগলি ।
- নদী অববাহিকা ( River Basin ) কাকে বলে ?
Ans: যে – সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্য দিয়ে মূলনদী , তার শাখানদী ও উপনদী – সহ প্রবাহিত হয় , তাকে বলা হয় নদী অববাহিকা ।
- নদীর ধারণ অববাহিকা ( Catchment Basin ) বলতে কী বোঝ ?
Ans: নদী অববাহিকার মধ্যে পার্বত্য বা উচ্চভূমি অংশে নদী যতটুকু অঞ্চল অধিকার করে আছে , তাকে বলা হয় নদীর ধারণ অববাহিকা ।
- ধারণ অববাহিকা নদীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
Ans: নদীর গতিবেগ ও ঢাল , নদীতে উপস্থিত পলির | অবহি পরিমাণ ও তার গুণাগুণ , জলের পরিমাণ ইত্যাদি অনেকটাই নদীর ধারণ অববাহিকার চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল । তাই ধারণ অববাহিকা নদীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ।
- নদীর ধারণ অববাহিকা নদী উপত্যকা ( River Valley ) কাকে বলে ?
Ans: উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদীর উভয় পাশের উচ্চভূমির মধ্যে সংকীর্ণ ও দীর্ঘ ভূমি হল নদী উপত্যকা ।
- নদীখাত কী ?
Ans: নদী উপত্যকার নির্দিষ্ট যে – অংশ দিয়ে জল বাহিত হয় , তা হল নদীখাত ।
- নদীখাত ও নদী উপত্যকার মধ্যে তফাত কী ?
Ans: নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর উভয় পাশের উচ্চভূমির মধ্যে সংকীর্ণ ও দীর্ঘ ভূমি হল নদী উপত্যকা । অপরদিকে নদী উপত্যকার যে – নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে জল প্রবাহিত হয় , তা হল নদীখাত । অতএব নদী উপত্যকার মধ্যেই নদীখাত অবস্থান করে ।
- নদীবর্তন ( River Regime ) কী ?
Ans: নদীর জলের পরিমাণ সারাবছর সমান থাকে না । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কখনও কম বা কখনও বেশি হয় । নদীর জলধারার এই পর্যায়ক্রমিক ও ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনকেই নদীবর্তন বলে ।
- জলবিভাজিকা ( Watershed ) বলতে কী বোঝ ?
Ans: যে – উচ্চভূমি দুই বা ততোধিক নদীগোষ্ঠী বা নদী অববাহিকাকে পৃথক করে , তাকে জলবিভাজিকা বলে । পর্বত , পাহাড় , উচ্চ মালভূমি ইত্যাদি ভূমিরূপ জলবিভাজিকা হিসেবে অবস্থান করে ।
- ভারতের বিখ্যাত দুটি জলবিভাজিকার নাম লেখো ।
Ans: ভারতের বিখ্যাত দুটি জলবিভাজিকা হল – হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং পশ্চিমঘাট পর্বত ।
- নদী কী কী কারণে নিত্যবহ হয় ?
Ans: নদী অববাহিকায় সারাবছর বৃষ্টি হলে কিংবা নদী বৃষ্টি ও বরফগলা জলে পুষ্ট হলে নিত্যবহ বা চিরপ্রবাহী হয় ।
- দোয়াব ( Doab ) কাকে বলে ?
Ans: দুটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে দোয়ার বলা হয় ।
- নদীসংগম বলতে কী বোঝ ?
Ans: দুটি নদী যেখানে মিলিত হয় , সেই স্থানকে বলা হয় নদীসংগম । যেমন — গঙ্গা ও যমুনার সংগমস্থল হল এলাহাবাদ ।
- বিনুনি নদী কাকে বলে ?
Ans: নদীখাতে অসংখ্য চড়ার সৃষ্টি হলে নদী অসংখ্য খাতে ভাগ হয়ে এঁকেবেঁকে বিনুনির ন্যায় প্রবাহিত হয় । একেই বিনুনি নদী বলে । পর্বতের পাদদেশে , মোহানায় বদ্বীপ থাকলে বিনুনি নদী দেখা যায় ।
- নদীর কাজ কী কী ?
Ans: উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদীর কাজ হল ক্ষয় , বহন ও সঞ্জয় । এই তিনটি প্রক্রিয়ায় ভূমিরূপের পরিবর্তন হয় ।
- নদী কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে ক্ষয়কাজ করে ?
Ans: নদী প্রধানত চারভাবে ক্ষয়কাজ করে । যেমন ( i ) জলপ্রবাহ ক্ষয় , ( ii ) অবঘর্ষ , ( iii ) ঘর্ষণ ক্ষয় এবং ( iv ) দ্রবণ ক্ষয় ।
- নদী কোন্ কোন্ প্রক্রিয়ায় বহন করে ?
Ans: নদী প্রধানত চাররকম প্রক্রিয়ায় বহন করে । যেমন— ( i ) দ্রবণ প্রক্রিয়া , ( ii ) ভাসমান প্রক্রিয়া , ( iii ) লম্ফদান প্রক্রিয়া , ( iv ) আকর্ষণ প্রক্রিয়া ।
- ‘ ষষ্ঠ ঘাত ’ – এর সূত্র ( Sixth Power Law ) কী ?
Ans: নদীর গতিবেগের সঙ্গে বহন ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক আছে । দেখা গেছে নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা বাড়ে ৬৪ গুণ বা ২ ⁶ হারে । এটি হল ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র , যার ব্যাখ্যা দেন ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে W Hopkins ।
- কিউসেক ও কিউমেক কী ?
Ans: কিউসেক ( Cusec ) : কোনো নদীতে একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট ( Cubic feet per second ) জল প্রবাহিত হয় , তা হল কিউসেক । * কিউমেক ( Cumec ) : নদীর একটি নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার ( Cubic meter per second ) জল প্রবাহিত । হয় , তাকে বলে কিউমেক ।
- নদীর গতি ক – টি ও কী কী ?
Ans: নদীর তিনটি গতি ; যথা — উচ্চগতি , মধ্যগতি ও নিম্নগতি ।
- আদর্শ নদী ( Ideal river ) বলতে কী বোঝ ও উদাহরণ দাও ।
Ans: উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত অংশে যে – নদীর তিনটি গতি – প্রবাহই ( উচ্চগতি , মধ্যগতি , নিম্নগতি ) সুস্পষ্ট থাকে , তাকে বলে আদর্শ নদী । যেমন – গঙ্গা হল একটি আদর্শ নদী ।
- গঙ্গানদীর উচ্চগতি , মধ্যগতি ও নিম্নগতির সীমানা নির্ধারণ করো ।
Ans: গঙ্গার উচ্চগতি হল গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি , মধ্যগতি হল হরিদ্বার থেকে ধূলিয়ান পর্যন্ত এবং ধূলিয়ান থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত হল গঙ্গার বদ্বীপ প্রবাহ ।
- উচ্চগতিতে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক কেন ?
Ans: উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ঢাল অনেক বেশি থাকে । ফলে নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় । এই অংশে অবস্থিত ছোটো – বড়ো প্রস্তরখণ্ড নদীর সঙ্গে বাহিত হওয়ার সময় অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নীচের দিকে ক্ষয় করে , ফলে উচ্চগতিতে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অনেক বেশি হয় ।
- গিরিখাত ( Gorge ) কাকে বলে ?
Ans: বৃষ্টিবহুল অতি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নদীর নিম্নক্ষয়ের মাত্রা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও অতি গভীর হয় । এই ধরনের অতি গভীর ও সংকীর্ণ নদী উপত্যকাকেই গিরিখাত বলে ।
- গিরিখাত অত্যন্ত সুগভীর হয় কেন ?
Ans: উচ্চপর্বতের খাড়া ঢাল বেয়ে নদী যখন তীব্র গতিতে নীচে নেমে আসে তখন তার গতিবেগ অনেক বেশি থাকে । নদীর তীব্র জলস্রোত ও জলস্রোতের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ডের আঘাতে নদীর নিম্নক্ষয় বেশি হয় । এই কারণে গিরিখাত অত্যন্ত সুগভীর হয় । নবীন ভঙ্গিল পর্বত উচ্চ বলেই এখানে গিরিখাত সৃষ্টি হয় ।
- ক্যানিয়ন ( Canyon ) কাকে বলে ?
Ans: শুষ্ক অঞ্চলে নদী উচ্চগতিতে শুধুমাত্র নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে ‘ I ’ আকৃতির গিরিখাত সৃষ্টি করলে , তাকে ক্যানিয়ন বলে ।
- ক্যানিয়ন অত্যন্ত গভীর হয় কেন ?
Ans: ক্যানিয়ন প্রধানত উচ্চ শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায় । এখানে প্রবাহিত চিরপ্রবাহী নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে গভীরতা বাড়ায় কিন্তু বৃষ্টির অভাবে পার্শ্বক্ষয় তেমন হয় না বলে উপত্যকাটি অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ হয় ।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখাধর্মী প্রশ্নোত্তর | নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া – প্রথম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Nodi Question and Answer :
- জলচক্রের অংশ হিসেবে নদীর ভূমিকা কীরূপ ?
Ans: সাগর , মহাসাগর , হ্রদ , অন্যান্য জলাশয় এবং মৃত্তিকার কৈশিক জল বাষ্পীভবন ( Evaporation ) প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়ে ওপরে ওঠে এবং ঘনীভূত ( Condensation ) হয়ে সৃষ্টি হয় মেঘ । এই মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায় এবং বায়ু সম্পৃক্ত হলে এই মেঘ থেকেই অধঃক্ষেপণ ( Precipitation ) ঘটে , ( যেমন — বৃষ্টি , শিলাবৃষ্টি , তুষারপাত ) , যা ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে । *** এই বৃষ্টি , শিলাবৃষ্টি , হিমবাহ ও তুষারগলা জলের কিছুটা অংশ মাটি টুইয়ে ভূঅভ্যন্তরে প্রবেশ করে ( একে বলে অনুস্রাবণ বা Infiltration ) এবং বাকি অংশ পৃষ্ঠপ্রবাহ ( Surface runoff ) হিসেবে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে স্থানীয় প্রবাহ রুপে নদীখাত সাগরে গিয়ে মেশে । জলের এই চক্রাকার আবর্তন হল জলচক্র এবং এটি বলাই যায় যে , এই জলচক্রের অংশ হিসেবে নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
- নদীর ক্ষয় প্রক্রিয়া কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল ?
Ans: নদীর ক্ষয়কাজ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ( i ) নদীর গতিবেগ নদীর গতিবেগ নির্ভর করে নদীর ঢালের ওপর । পার্বত্য অঞ্চলে তাই অধিক ঢালের জন্য গতিবেগ অনেক বেশি হয় । ফলে জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়ও বৃদ্ধি পায় । নদীর গতিবেগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীবাহিত পদার্থ ও গতিবেগ প্রাপ্ত হয় । সেই সকল পদার্থসমূহই তখন অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ ক্ষয় প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে । ( ii ) জলের পরিমাণ বর্ষাকালে নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । তাই অন্যান্য ঋতু অপেক্ষা এই ঋতুতে নদীর ক্ষয় বেশি হয় । ( iii ) শিলাস্তরের প্রকৃতি : নদীর তলদেশে ও পার্শ্বদেশে নরম শিলাস্তর থাকলে , তা কঠিন শিলাস্তর অপেক্ষা দ্রুত ক্ষয় পায় । ( iv ) প্রবাহিত পদার্থের আয়তন ও পরিমাণ নদীবাহিত পদার্থের আয়তন ও পরিমাণ যত বাড়ে ততই নদীর অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ ক্ষয় পদ্ধতিতে ক্ষয় বাড়ে ।
- নদীর ক্ষয়কার্যের প্রক্রিয়াগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো ।
Ans: নদী চারভাবে ক্ষয় করে— ( 1 ) জলপ্রবাহ ক্ষয় : জলস্রোতের প্রবল আঘাতে নদীখাত ও নদীপাড়ের অপেক্ষাকৃত কোমল শিলা খুলে বেরিয়ে আসে । এটি জলপ্রবাহ ক্ষয় । ( ii ) অবঘর্ষ : নদীবাহিত নুড়ি , বোল্ডার ও অন্যান্য পাথরের খন্ড নদীর গতির সঙ্গে গতিপ্রাপ্ত হয়ে নদীর তলদেশ ও পার্শ্বদেশে জবাহ ঘর্ষণ ক্ষা अ আঘাত করে নদীর অব গভীরতা বাড়ায় । এটি অবঘর্ষ । ( iii ) ঘর্ষণ ক্ষয় : নদীক্ষয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়া নদীবাহিত বিভিন্ন আকারের প্রস্তরখণ্ড পরস্পরের সঙ্গে আঘাতে ভেঙে অবশেষে নুড়ি , বালি ও পলিকণায় পরিণত হয় । ( iv ) দ্রবণ ক্ষয় : জলের সঙ্গে দ্রবীভূত অঙ্গের প্রভাবে লবণ ও ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট যুক্ত শিলাস্তর রাসায়নিকভাবে বিয়োজিত হয় । এটি হল দ্রবণ ক্ষয় ।
- নদীর বহন ক্ষমতা কোন কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ?
Ans: নদীর বহন ক্ষমতা নির্ভর করে— ( i ) নদীর গতিবেগ : নদীর গতিবেগ বাড়লে নদীর বহন ক্ষমতাও বাড়ে । তাই সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে নদীর বহন ক্ষমতা বেশি থাকে । কোনো কারণে নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি । পেলে তার বহন ক্ষমতা ৬৪ গুণ বাড়ে ( নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র ) ।
- নদীর বহন প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
Ans: নদী পদার্থকে চারভাবে বহন করে— ( i ) দ্রবণ প্রক্রিয়ায় আকর্ষণ প্রক্রিয়া বহন : নদীর জলে দ্রবীভূত প্রভাবে শিলাস্তর বিয়োজিত ও দ্রবীভূত হয়ে লম্ফদান প্রক্রিয়া অসমান প্রক্রিয়া দ্রবণ প্রক্রিয়া বাহিত হয় । ( ii ) ভাসমান প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি নদীর জলে ভেসে ভেসে বাহিত হয় । ( iii ) লম্ফদান প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত বড়ো খণ্ডগুলি নদীর তলায় ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে নদীর বিভিন্ন বহন প্রক্রিয়া চলে । ( iv ) আকর্ষণ প্রক্রিয়া : নদীর তলদেশ দিয়ে স্রোতের টানে ছোটো ছোটো নুড়ি নীচের দিকে নেমে এলে তা আকর্ষণ প্রক্রিয়া ।
- উচ্চগতিতে নদীকার্যের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?
Ans: উচ্চগতিতে নদীকার্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ( i ) ভূমির ঢাল বেশি হয় বলে নদীর বেগও খুব বেশি থাকে । ( ii ) নদীতে বোল্ডার ও নুড়ির পরিমাণ বেশি থাকে বলে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে প্রবল নিম্নক্ষয় হয় । ( iii ) প্রবল স্রোতে নদী প্রায় সব পদার্থই বহন করে । ( iv ) সঞ্জয় প্রায় হয়ই না । ( v ) উচ্চগতিতে নদীর গভীরতা বেশি থাকে কিন্তু বিস্তৃতি খুব কম হয় ।
- উচ্চগতিতে নদীর প্রধান কাজ কী কী ও কেন ?
Ans: উচ্চগতিতে নদীর প্রধান কাজ হল ( i ) নিম্নক্ষয় : কারণ নদীর ঢাল বেশি হওয়ায় নদীর গতিবেগ বেশি থাকে । ফলে নদীর দ্রুত ও অনেক বেশি নিম্নক্ষয় করে । ( ii ) পার্শ্বক্ষয় : নদীর প্রবল গতিবেগ ও পার্শ্বদেশে নরম শিলাস্তর থাকলে নদীর পার্শ্বক্ষয়ও হয় । ( iii ) বহন : নদীতে জলের অধিক পরিমাণ ও নদীর ঢাল বেশি হওয়ায় বহন কাজও বেশি । তবে উচ্চগতিতে সঞ্চয় একেবারেই হয় না ।
- ‘ I ’ আকৃতির উপত্যকা কীভাবে ‘ V ‘ আকৃতিতে পরিণত হয় , তা চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: উচ্চগতিতে ভূমির উচ্চতা ও ঢাল খুব বেশি হওয়ায় নদী অতি প্রবলবেগে নিম্নক্ষয় করে । ফলে উপত্যকার আকৃতি হয় । ‘ I’- এর মতো । গভীর । আকৃতি উপভা আবহবিকার ও গাড়ক্ষয় V আকৃতি উপত্যকা । আকৃতি উপত্যকা এবং থেকে V আকৃতি উপত্যকার উৎপত্তি ( ii ) পরবর্তীকালে নদী উপত্যকার পার্শ্বদেশ বৃষ্টির জল , আবহবিকার বা ধসের ফলে ক্ষয় পেতে থাকলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার আকৃতি সংকীর্ণ ‘ V’- এর মতো হয় ।
- কী কী ভাবে জলপ্রপাত গঠিত হতে পারে ?
Ans: পার্বত্য অংশে উপত্যকার ঢাল অসম হলে নদীর জল উপর থেকে নীচের দিকে প্রবল বেগে পড়ে । এটি হল জলপ্রপাত । জলপ্রপাত বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হয় – ( i ) নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা অনুভূমিক , উল্লম্ব বা তির্যকভাবে অবস্থান করলে কঠিন অপেক্ষা নরম শিলা বেশি ক্ষয় হয়ে জলপ্রপাত গঠিত হয় । অধিকাংশ জলপ্রপাত এভাবেই সৃষ্টি । ( ii ) নদীর গতিপথে আড়াআড়ি চ্যুতি নদী ঘটলে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয় । যেমন — জাম্বেসি নদীর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত , ভারতের নর্মদা নদীর কপিলধারা জলপ্রপাত । ( iii ) হিমবাহ সৃষ্ট ঝুলন্ত নিক্বিন্দুতে উপত্যকায় জলপ্রপাত গঠিত জলপ্রপাত নিপয়েন্ট যেমন — লাডাকের পার্কচাক জলপ্রপাত । ( iv ) ভূমির পুনর্যৌবন লাভের সৃষ্ট নিক্বিন্দুতে জলপ্রপাত গঠিত হয় । যেমন — সুবর্ণরেখা নদীর জনা ও দশম জলপ্রপাত ।
- জলপ্রপাত পশ্চাদ্দ অপসারণ করে কেন ? বা জলপ্রপাত নদীর উৎসের দিকে সরে যায় কেন ?
Ans: উচ্চগতিতে নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিক ও উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে কোমল শিলা বেশি ক্ষয় হয়ে জলপ্রপাত গঠিত হয় । জলপ্রপাতের নীচে গভীর গর্ভ ( পাপুল ) গঠিত হয় বলে উপরের কঠিন শিলাস্তরটি বর্তমান অবস্থান অবস্থান 441 ঝুলতে থাকে এবং একসময় তা পড়ে এবং অনুপাতের পূর্বের অবস্থান জলপ্রপাতটি নদীর উৎসের সাথে শিলাস্তর দিকে সরে যায় । একেই 280 জলপ্রপাতের পশ্চাদ অপসারণ বলে । পৃথিবীর বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এইভাবেই একটু একটু করে সরে গেছে ।
- উচ্চগতিতে নদী উপত্যকা ‘ T ‘ বা ‘ V ‘ আকৃতির কিন্তু মধ্যগতিতে অগভীর ‘ U ’ আকৃতির হয় কেন ?
Ans: উচ্চগতিতে নদীর ঢাল খুব বেশি থাকায় নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় । তাই পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতিতে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় অধিক হয় । এর ফলস্বরূপ নদী উপত্যকা ‘ T ’ ও ‘ V ‘ আকৃতির হয় । অপরদিকে পার্বত্য প্রবাহ ছেড়ে নদী যখন সমভূমি বা মধ্যগতিতে প্রবেশ করে , তখন ভূমির ঢাল কমে যায় ও নদীর গতিবেগও কমে যায় ও নদীর সঞ্চয়কাজ বেড়ে যায় । মধ্যগতিতে নদীর জলের পরিমাণ বাড়ে বলে নদীর পার্শ্বক্ষয় ঘটে কিন্তু নিম্নক্ষয় ঘটে না । পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় বলে নদী উপত্যকা ক্রমশ চওড়া হতে থাকে । এই কারণে মধ্যগতিতে অগভীর ‘ U ’ আকৃতির উপত্যকা দেখা যায় ।
- মধ্যগতি ও নিম্ন গতিতে নদী সঞ্জয়কাজ করে কেন ?
Ans: নদী তার মধ্য ও নিম্ন গতিতে সঞ্চয়কাজ করে । কারণ— ( i ) মধ্য ও নিম্ন গতিতে জলের গতিবেগ মাঝারি ও খুব কম । ( ii ) এই দুই গতিতে নদীর ঢাল ক্রমশই কমতে থাকে । ( iii ) এখানে নদীর বহন ক্ষমতাও অনেক বেশি । ( iv ) এই কারণেই নদী তার বয়ে আনা পলি – বালি আর বইতে না – পেরে এখানেই সঞ্চয় করে ।
- চিত্রসহ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের উৎপত্তি লেখো ।
Ans: মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে নদীর ঢাল কমে যাওয়ায় নদীর শক্তিও অনেকাংশে হ্রাস পায় । তাই এই পর্যায়ে নদীর সামনে কোনো কঠিন বাধা এসে পৌঁছোলে নদী এই বাধা এড়িয়ে কিছুটা এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় । নদীবাকের অবতল অংশে জলপ্রবাহ ক্ষয় এবং উত্তল অংশে পলিসঞ্চয়ে নদীবাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং এক সময় বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হয়ে যুক্ত হয় । এই অবস্থায় নদীটি সোজা হয়ে চলতে থাকে এবং পরিত্যক্ত বিচ্ছিন্ন বাঁকটি হ্রদের আকারে অবস্থান করে । এই হ্রদ দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো বলেই একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | নদী (বহির্জাত প্রক্রিয়া – প্রথম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Nodi Question and Answer :
1. নদীর সঞ্চয়কার্যে বা নিম্নগতিতে গঠিত ভূমিরূপের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও ।
অথবা , নদীর সঞ্চয়কার্যে গঠিত যে – কোনো তিনটি ভূমিরূপের ব্যাখ্যা দাও ?
Ans: নদীর সঞ্চয়কার্যের দ্বারা গঠিত ভূমিরূপসমূহ নিম্নরূপ ( ক ) প্লাবনভূমি ( Flood plain ) সমভূমিতে অগভীর নদীর গর্ভে বর্ষার অতিরিক্ত জল সংযোজনে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হলে দুপাড়ের নীচু ভূমি নতুন পলির আবরণে ঢাকা পড়ে । এই ভরাট ভূমিকে পাবনভূমি বলে ।
উৎপত্তির কারণ : মধ্য ও নিম্ন গতিতে নদীগর্ভে পলি ভরাট হয়ে নদীগর্ভ অগভীর হয় । ফলে নদীতে জলের পরিমাণ বাড়লে নদী দু – কুল ছাপিয়ে নদী অববাহিকায় বন্যার সৃষ্টি করে । বন্যার প্রভাবে নদীর দু – পাশে অববাহিকা বরাবর পলি , বালি , নুড়ি সঞ্চিত হয় । বারংবার বন্যার প্রভাবে অববাহিকায় পলি , বালি , নুড়ি ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে তা সমভূমির রূপ নেয় । বন্যার প্রভাবে সৃষ্ট এই সমভূমি প্লাবন সমভূমি নামে পরিচিত । ভারতে অসমের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সমভূমি , মিশরে নীলনদ অববাহিকার সমভূমি প্লাবন সমভূমির উদাহরণ ।
উদাহরণ : গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , নীলনদ , সিন্ধুনদের অববাহিকায় দেখা যায় । ( খ ) স্বাভাবিক বাঁধ ( Natural leeve ) : নদীর দুই তীরের পার্শ্ববর্তী সমভূমি অপেক্ষা উঁচু প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট বাঁধকে বলে – স্বাভাবিক বাঁধ ।
উৎপত্তির কারণ : প্লাবনের সময় নদীবাহিত পলিরাশি নদী- ব তীরের দু – পাড়ে নীচু ভূমিতে ছাপিয়ে যায় । পলিরাশি দু – পাড়ে গ বেশি পরিমাণে জমা হয় । নদীর দুই তীরে পলিসঞ্জয় ভূমি বাঁধের দিন আকারে অবস্থান করে । একেই প্লাবনভূমি বলে । সা ↑ বৈশিষ্ট্য : ( i ) এই বাঁধ ২-৩ মিটার উঁচু হয় । ( ii ) বাঁধ ১ % -২ ব কিমি চওড়া হয় । ( iii ) বাঁধের ঢাল প্লাবনভূমির দিকে থাকে । ( ( iv ) বাঁধ নদীর গতিপথের সমান্তরালে অবস্থান করে । • উদাহরণ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কলোরাডো নদীর উপনদী খা সেতুর উদাহরণ । ক্রিকের ওপর অবস্থিত রেনবো ব্রিজ হল স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক প ( গ ) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ( Ox bow lake ) : নদীর মধ্য ও নিম্ন খ গতিতে ঘোড়ার খুরের ন্যায় যে পরিত্যক্ত নদীখাত বা হ্রদ দেখা । যায় , তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে ।
উৎপত্তির কারণ : মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে নদীর ঢাল কমে যাওয়ায় নদীর শক্তিও অনেকাংশে হ্রাস পায় । তাই এই পর্যায়ে নদীর নদ সামনে কোনো কঠিন বাধা এসে পৌঁছোলে নদী এই বাধা এড়িয়ে ও কিছুটা এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় । নদীবাকের অবতল অংশে জলপ্রবাহ ক্ষয় এবং উত্তল অংশে পলিসঞ্চয়ে নদীবাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে কি এবং একসময় বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হয়ে যুক্ত হয় । এই ( i ) অবস্থায় নদীটি সোজা হয়ে চলতে থাকে এবং পরিত্যক্ত বিচ্ছিন্ন বাঁকটি হ্রদের আকারে অবস্থান করে । এই হ্রদ দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো বলেই একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয় । ( 8 ) নদীর প্রবাহপথ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ নদী অবক্ষেপ ( ১-৪ ) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ গঠন ( ঘ ) বদ্বীপ ( Delta ) নিম্নপ্রবাহে নদীমোহানায় অগভীর সমুদ্রে নদীবাহিত ও উপকূলের পলি জমা হয়ে যে ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় , তাকে বলে বদ্বীপ । পরিণত বদ্বীপ O নদীর নিম্নগতি ( ১-৭ ) বদ্বীপ সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়
উৎপত্তির কারণ : নদীর প্রবাহপথের শেষে সমুদ্রের কাছাকাছি স্থানে ভূমির উচ্চতা কমে যাওয়ায় [ < ৫ মিটার ] নদী সঞ্চয়কার্য করে ; তখন নদীর বস্তুভার সমুদ্রের নোনা জলের স্পর্শে জমাট বাঁধে । ফলে নদী তার বোঝা অবক্ষেপিত করে নতুন পলল ভূমি গড়ে তোলা । নদী নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে ওই নতুন ভূমির পাশ দিয়ে বইতে থাকে । এইভাবে বদ্বীপ সৃষ্টি হয় ।
উদাহরণ : গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র সুন্দরবন অঞ্চলে প্রায় ৭৫০০০ বর্গকিমি জুড়ে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ গড়ে তুলেছে । ( ঙ ) খাঁড়ি ( Estuary ) : শেষপ্রান্তে মোহানায় নদী যেখানে সাগরে সেখানে ফানেল আকৃতির নদীমোহানাকে খাঁড়ি বলে । বিপরীত দিক থেকে আসা প্রবল জোয়ারে নরম পলিমাটি গঠিত পাড় ভেঙে গিয়ে খাঁড়ি সৃষ্টি হয় । সুন্দরবনের খাঁড়িগুলি মৎস্যজীবীদের কাছে সম্পদ । টেমস , লা প্লাটা নদীর খাঁড়ি অত্যন্ত চওড়া ।
2. মধ্যগতিতে ও নিম্নগতিতে নদীকার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ ব্যাখ্যা করো ।
Ans: মধ্য ও নিম্ন গতিতে নদীকার্যে গঠিত ভূমিরূপ : মধ্য ও নিম্ন গতিতে নদীর প্রধান কাজ সঞ্চয় । নিম্নক্ষয় এখানে হয় না । কিন্তু পার্শ্বক্ষয় ঘটে ।
( i ) পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী : পর্বতের পাদদেশে ভূমির ঢাল | হঠাৎ কমে বলে নদীবাহিত নুড়ি , পাথর , কাঁকর , বালি , পলি সব শঙ্কুর আকারে সঞ্চিত হয় । এটি হল পলল শঙ্কু । পরবর্তী সময়ে পলল শঙ্কুর ওপর দিয়ে নদী বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হলে ( বিনুনী নদী ) তা অর্ধগোলাকার আকৃতিতে ভাগ হয়ে পড়ে । হাতপাখার মতো দেখতে প্রায় গোলাকার এই ভূমি হল পলল ব্যজনী বা পলল পাখা । ( ii ) নদীবাঁক ও মিয়েন্ডার : এটি ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের মিলিত ভূমিরূপ । নদী প্রবাহপথে বাধা পেলে তা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় । বাঁকের অবতল অংশে ঘুর্ণি জলস্রোতের আঘাতে -পাঁ মুক্তি সম্ব মিয়েল্ডার এবং খাড়া পাড় ও ঢালু পাড় ক্ষয় হয়ে নদীপাড় হয় খাড়া ( River Cliff ) এবং বিপরীত উত্তল অংশে পলি সঞ্চিত হয়ে পাড় হয় মৃদুঢালু ( Slip of Slope ) । নদী পাড়ের এই সঞ্জয়কে বিন্দুবার বলে । এইভাবে পার্শ্বক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে নদীতে যে বাঁকের সৃষ্টি হয় তা হল মিয়েন্ডার । তুরস্কের ‘ মিয়েন্ডারেস ‘ নদীর নামানুসারে এই ভূমির নামকরণ হয় মিয়েন্ডার ।
( iii ) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : এটিও ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের মিলিত ভূমিরূপ । নদী যদি খুব এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় এবং খাড়াপাড় ( Clips ) অংশে পার্শ্বক্ষয় এবং মৃদুঢালু ( slip of slope ) অংশে সঞ্চয় চলতে থাকে তাহলে একসময় বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হয়ে যুক্ত হয় এবং নদী সোজাপথে চলতে থাকে । এই অবস্থায় ওই পরিত্যক্ত বা বিচ্ছিন্ন অবশিষ্ট বাঁকটি তখন হ্রদের আকারে অবস্থান করে । এই ধরনের হ্রদ দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো বলেই এটি হল অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ । নদী প্রবাহের দিক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের উৎপত্তি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ
( iv ) নদীচর ও নদীদ্বীপ : নদীগর্ভে পলি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট ভূমিরূপ হল চর । চর অংশে আরও পলি সঞ্চিত হয়ে তা জলের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকলে তা নদীদ্বীপ । অসমে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ‘ মাজুলি ‘ ( ক্ষেত্রফল একসময় ছিল ১২৫০ বর্গকিমি । ক্ষয়ের কারণে এখন মাত্র ৪২২ বর্গকিমি ) ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ এবং আমাজনের মোহানায় ‘ ইলহা – দ্য – মারাজো ‘ ( ক্ষেত্রফল ৪০ , ১০০ বর্গকিমি ) পৃথিবীর বৃহত্তম নদীদ্বীপ ।
( v ) প্লাবনভূমি : মধ্য ও নিম্ন প্রবাহে ঢাল কমে বলে নদীগর্ভ পলি ভরাট হয়ে অগভীর হয়ে পড়ে । দীর্ঘকাল পলিসায়ের কারণে নদীগর্ভ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা উঁচু হয় । নদীতে জল বাড়লে নদী দু – কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে । বারংবার বন্যার প্রকোপে উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশে পলি থিতিয়ে এবং প্রলেপ পড়ে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তা হল প্লাবনভূমি । প্লাবনভূমির মধ্যে স্বাভাবিক বাঁধ ( লিভি ) , ঢালু স্তূপ , অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ , ঝিল , বিল ( জলাভূমি ) ইত্যাদি গড়ে ওঠে । পাবন সমভূমি বিল অশ্বক্ষুরাকৃতি হাওড় স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ ( লিভি )
( vi ) স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি : নদীর কিনারে তটরেখার সমান্তরালে বালি ও পলি গঠিত বাঁধ হল স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি । বন্যায় নদীখাতের জল যখন প্লাবনভূমিতে প্রবেশ করে তখন নদীবাহিত পলিরাশি কিনারা বরাবর সঞ্চিত হয়ে লিভি বা স্বাভাবিক বাঁধ গঠিত হয় । লিভির ঢাল কিনারা থেকে বিপরীতমুখী হয় ।
( vii ) খাঁড়ি শেষপ্রান্তে মোহানায় নদী যেখানে সাগরে মেশে সেখানে ফানেল আকৃতির নদীমোহানাকে খাঁড়ি বলে । বিপরীত দিক থেকে আসা প্রবল জোয়ারে নরম পলিমাটি গঠিত পাড় ভেঙে গিয়ে খাঁড়ি সৃষ্টি হয় । সুন্দরবনের খাঁড়িগুলি মৎস্যজীবীদের কাছে সম্পদ । টেমস , লা প্লাটা নদীর খাঁড়ি অত্যন্ত চওড়া ।
( viii ) বদ্বীপ : প্রবাহের শেষপ্রান্তে মোহানায় নদী যেখানে সাগর বা হ্রদে মেশে সেখানে নদীবাহিত কাদা , পলি , বালি স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়ে মাত্রাহীন ‘ ব ’ বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার ( 4 ) মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় , তা হল বদ্বীপ । পৃথিবীর অধিকাংশ বড়ো বড়ো নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়েছে । গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ ।
2. সুন্দরবনের উপর পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাখ্যা করো ।
Ans: বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাবে সুন্দরবন অঞ্চলের উন্নতা প্রতি দশকে গড়ে ৫ ° সে . করে বাড়ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে সুন্দরবন অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র ও জনজীবনের উপর ।
( i ) জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : World Bank- এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব সুন্দরবন অঞ্চলের সমুদ্রজলতল প্রতিবছর ৩-৪ মিলিমিটার বাড়ছে । এর প্রভাবে লোহাচড়া , নিউমুর , বেডফোর্ড প্রভৃতি দ্বীপ ধীরে ধীরে জলের তলায় তলিয়ে যাচ্ছে । এবং অবলুপ্ত হচ্ছে ।
( ii ) বনভূমি ধ্বংস : যদি ভবিষ্যতে সমুদ্রজলতল ১ মিটার বাড়ে তাহলে সুন্দরবনের ৭৫ ভাগ অংশটি প্লাবিত হবে এবং ধ্বংস হওয়ার দিকে এগোবে । এতে ওই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হবে ।
( iii ) ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি : সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত কারণে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে , নদী পাড় ভাঙছে সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ঘটছে এবং বন্যার প্রকোপ বাড়ছে ।
( iv ) বন্যা : ঘূর্ণিঝড় ভরা কটালের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বন্যার প্রকোপ সুন্দরবনে দ্রুত হারে বাড়ছে । বাঁধ ভেঙে সামুদ্রিক লবণাক্ত জল কৃষি জমিতে প্রবেশ করে কৃষিজমিকে অনুর্বর করে তুলছে । বন্যার প্রকোপে এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটছে ।
( v ) মানুষের দুর্ভোগ : সমুদ্রজলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমিক্ষয় বৃদ্ধির কারণে লোহাচড়া , ঘোড়ামারা দ্বীপের বসবাসকারী মানুষদের নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে অন্যস্থানে সরতে হচ্ছে । প্রলব বন্যায় বাড়িঘর , কৃষিজফসল , গবাদি পশু ধ্বংস হচ্ছে । বন্যার প্রকোপে কৃষিজমি লবণাক্ত হওয়ায় বেশ কয়েকবছর তা চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে । ফলে মানুষ কাজ হারাচ্ছে প্রায় প্রতিবছর বাঁধ ভাঙার ফলে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করতে হচ্ছে — সরকারের খরচ বাড়ছে ।