দশম শ্রেণী ভূগোল | বায়ুমণ্ডল – বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. উত্তর গােলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পেছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের থেকে বাঁদিকের বায়তে কম চাপ থাকে। একে বলে-
[A] ফেরেলের সূত্র [B] কোরিওলিস বল [C] বাইস ব্যালটসূত্র [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] বাইস ব্যালটসূত্র
2. কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে বায়ুর –
[A] দিক বিক্ষেপ হয়। [B] গতিবেগের পরিবর্তন হয় [C] চাপের পরিবর্তন হয় [D] কোনােটিই হয় না
উত্তরঃ [A] দিক বিক্ষেপ হয়
3. ‘লু’বাতাস প্রবাহিত হয় যে ঋতুতে
[A] বর্ষাকালে [B] শীতকালে [c] বসন্তকালে [D] গ্রীষ্মকালে
উত্তরঃ [D] গ্রীষ্মকালে
4. ‘লু’ একটি
[A] স্থানীয় বায়ু [B] অনিয়মিত বায়ু [C] নিয়মিত বায়ু [D] সাময়িক বায়ু
উত্তরঃ [A] স্থানীয় বায়ু
5. উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 10 কিমি [B] 15 কিমি [C] 16 কিমি [D] 40 কিমি
উত্তরঃ [C] 16 কিমি
6. দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 12 কিমি [B] 22 কিমি [C] 32 কিমি [D] 42 কিমি।
উত্তরঃ [B] 22 কিমি
7. দিনেরবেলা উম্ন ও হালকা বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠলে তাকে বলে—
[A] ‘লু বায়ু। [B] ক্যাটাবেটিক বায়ু [C] অ্যানাবেটিক বায়ু [D] হ্যারিকেন বায়ু
উত্তর : অ্যানাবেটিক বায়ু
8. বৃষ্টিপাত পরিমাপের একক হল—
[A] মিটার-ফুট [B] সেমি বা ইঞি [C] গ্রাম [D] কিলােগ্রাম
উত্তরঃ [B] সেমি বা ইঞি
9. মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠের জলকণা ও বরফকণার পতনকে বলে—
[A] তুষারপাত [B] শিলাবৃষ্টি [C] বৃষ্টিপাত [D] অধঃক্ষেপণ
উত্তরঃ [D] অধঃক্ষেপণ
10. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম—
[A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র [B] ব্যারােমিটার [C] হাইগ্রোমিটার [D] থার্মোমিটার
উত্তরঃ [A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্
11. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি হল—
[A] কালিম্পং [B] চেন্নাই [C] শিলং [D] দন্ডকারণ্য
উত্তরঃ [C] শিলং
দশম শ্রেণী ভূগোল | বায়ুমণ্ডল – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. কীভাবে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়?
উত্তর : বায়ু যেদিক থেকে আসে সেই দিক অনুসারে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়।
2. হ্যারিকেন কী?
উত্তর : পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত।
3. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কী বলে?
উত্তর : টর্নেডাে।
4. বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রর্তা 100% হলে সেই বায়ুকে কী বলে?
উত্তর : পরিপৃক্ত বায়ু।
5. নিরক্ষীয় অঞলে কী জাতীয় বৃষ্টি হয়?
উত্তর : পরিচলন বৃষ্টি।
6. কোন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না?
উত্তর : শীতকালীন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না।
7. বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর : বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম রেনগজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র।
৪. বায়ুতে ভাসমান জলীয়বাষ্প যখন শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে জলকণায় পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : শিশির।
9. কোন বায়ু স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ ?
উত্তর : মৌসুমি বায়ু।
10. লু’ বাতাস কোন্ সময় প্রবাহিত হয় ?
উত্তর : ‘লু’ বাতাস গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়।
11. একটি স্থানীয় বায়ুর নাম করাে।
উত্তর : ‘লু।
12. বায়ুর আদ্রর্তা কোন যন্ত্রের সাহায্যে নিরূপণ করা হয়?
উত্তর : শুষ্ক ও আর্দ্র কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে।
13. সিসিলিতে প্রবাহিত এক ধরনের উন্ন স্থানীয় বায়ু কী নামে পরিচিত?
উত্তর : সিরােক্কো।
দশম শ্রেণী ভূগোল | বায়ুমণ্ডল – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘অ্যারােসল’ কী?
উত্তর : অ্যারােসেল : ‘অ্যারাে’ শব্দের অর্থ বাতাস, ‘সল’ শব্দের অর্থ ভাসমান ধূলিকণা। বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কঠিন উপাদানকে (ধূলিকণা, লবণকণা, কয়লা গুঁড়াে, কাঠের গুঁড়াে প্রভৃতি) বলা হয় অ্যারােসল।
2. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ধূলিকণার গুরুত্বের কারণগুলি হল—(i) ভাসমান ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং তার ফলে মেঘ, কুয়াশা, তুহিন, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। (i) বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সরাসরি সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি করে। (iii) বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার আধিক্য বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে। তােলে অর্থাৎ দৃষ্টি স্বচ্ছতা কমায় এবং পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি করে
3. Lapse rate’ বা ‘উয়তা হ্রাসের হার’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ট্রপােপজ পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6:45°C (6.5°C) হারে উষ্মতা হ্রাস পেতে থাকে। এইভাবে উয়তা হ্রাস পাওয়ার বায়ুর স্বাভাবিক উম্লতা হ্রাস হার বলে।
4. ট্রপােপজ কী?
উত্তর : টুপােপজ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্তন্ধ যে স্তর’, অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী 2-3 কিমি বিস্তৃত অঞলে বায়ুপ্রবাহ ও উয়তার পরিবর্তন তেমন হয় না তাই একে ট্রলােপজ বলে। এখানে বায়ুর গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় –58°C থেকে –60°c।
5. অ্যাপলটন স্তর কাকে বলে?
উত্তর : ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় 300 কিমি ওপরে আয়নােস্ফিয়ারের একটি স্তরকে অ্যাপলটন স্তর বলে। এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে উৎপন্ন হ্রস্ব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ ভূ-পৃষ্ঠে আবার ফিরে আসে বলে ভূ-পৃষ্ঠে দূরবর্তী এবং অতি দূরবর্তী অঞ্জলগুলি মধ্যে বেতার যােগাযােগ সম্ভব।
6. ফেরেলসূত্রটি কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তনজনিত বলের প্রভাবে বায়ু সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহের দিক সংক্রান্ত এই নিয়মটি বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এটি ‘ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত।
7. বাইস ব্যালস সূত্র কী?
উত্তর : বায়ুচাপের অবস্থানের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের সম্পর্কে সম্বন্ধে 1857 খ্রিস্টাব্দে ডাচ আবহবিদ বাইস ব্যালট একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। সূত্রটি হল উত্তর গােলার্ধে বায়ুর গতির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকের বায়ু চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকের তুলনায় ডানদিকে বায়ু চাপ কম অনুভূত হয়। এই সূত্রটি বাইসব্যালট সূত্র নামে পরিচিত।
৪. কোরিওলিস শক্তি বা বল কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ুপ্রবাহের ওপর যে শক্তি প্রযুক্ত হয় তাকে কোরিওলিস বল বলে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ড. De. Coriolis এই শক্তি প্রথম আবিষ্কার করেন।
9. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ কী?
উত্তর : দক্ষিণ গােলার্ধে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমাবায়ু বাধাহীনভাবে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখা বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বে এই প্রবল পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ বলে।
10. প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?
উত্তর : হিমমণ্ডল বা নাতিশীতােষ মণ্ডলের কোনাে স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে তখন ওই উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও শীতল বায়ু কুণ্ডলী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
11. রসবি তরঙ্গ কী?
উত্তর : ঊর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে বায়ুচাপের অবক্ৰমজনিত শক্তি ও কোরিওলিস শক্তির পরিমাণ সমান এবং তারা পরস্পরের বিপরীতে ক্রিয়া করে। ফলে উর্ধ বায়ুতে সমচাপ রেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে জিওট্রোফিক বায়ু প্রবাহিত হয়। C. G. Rossby- 1930 এর দশকে গাণিতিক পদ্ধতিতে এই ধরনের তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিলেন। তাই এই তরঙ্গায়িত প্রবাহকে ‘রসবি তরঙ্গা’ বলা। হয়।
12. হ্যাডলী সেল কী?
উত্তর : নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের দরুণ উর্ধ্বগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ওই বায় ওপরে উঠে শীতল হয়ে উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায় এবং তা ক্রমশ সংকুচিত ও ভারী হয়ে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি অঞ্চলে নেমে আসে, বায়ুর এই চক্রাকার আবর্তনকে হ্যাডলী কক্ষ বলা হয়।
13. সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) কাকে বলে?
উত্তর : সূর্য থেকে পৃথিবী ক্রমাগত ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে সূর্যের তাপীয় ফল লাভ করে চলেছে। তবে সূর্য থেকে পৃথিবী প্রতিদিনি ও প্রতিবছর প্রায় কেই পরিমাণ সৌরতাপীয় ফল লাভ করে। একেই সৌর ধ্রুবক বলা হয়।
14. ITCz কী?
উত্তর : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5 থেকে 10° অক্ষরেখার মধ্যে যে নিম্নচাপদ্রোণী আছে সেখানে উত্তর পূর্ব আয়নবায়ু এবং দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু পরস্পর এসে মিলিত হয়। তাই এই মিলন অঞ্চলকে অন্তক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল বা Intertropical Convergence Zone (ITCz) বলে। এই অঞ্চলে বায়ুচাপীয় ঢাল প্রায় না থাকায়। অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ নেই। তাই এই অঙুলকে শান্তবলয় বলা হয়।
15. লীনাপ কী?
উত্তর : যে তাপ পদার্থের উন্নতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে পদার্থের অবস্থার (যেমন—কঠিন থেকে তরলে এবং তরল থেকে গ্যাসীয় অথবা গ্যাসীয় থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন ইত্যাদি) পরিবর্তন ঘটায় তাকে লীনতাপ বলে।
16. চরম আদ্রর্তা কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প বর্তমান। থাকে তাকে ওই বায়ুর নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তা বলা হয়। নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তার পরিমাণ সাধারণত গ্রামে প্রকাশ করা হয়। যেমন—10 গ্রাম/ঘনসেমি।
17. শিলাবৃষ্টি কী?
উত্তর : নাতিশীতােয় মণ্ডলে গ্রীষ্মকালে জলকণা ও বরকণা একত্রে অধঃক্ষেপন রূপে পতিত হলে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবলবায়ুর প্রভাবে জলকণাগুলি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে শীতল হয়ে বরফকণায় পরিণত হয়। অবশেষে ধীরে ধীরে আয়তনে বেড়ে গিয়ে এই কণাগুলি বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে।
18. ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু-কাকে বলে?
উত্তর : কুণ্ডলাকারে ঘূর্ণমান ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাতের কেন্দ্ৰাঞ্চলটিতে বায়ু শান্ত থাকে এবং ঘূর্ণবাতের উপরিভাগ পর্যন্ত শান্ত বায়ুর একটি স্তম্ভ রচিত হয়। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলা হয়। এই অলটি প্রায়বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস 20-40 কিমি। এখানে বায়ু অত্যন্ত হালকা ও পরিবর্তনশীল।
19. টর্নেডাে কী?
উত্তর : টর্নেডাে হল অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অতি মারাত্মক শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত। এদের আকৃতি অনেকটা চোঙের মতাে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ওপর এদের ব্যাস 100-500 মিটার। এই ঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুচাপ 900mb এর নীচে নেমে যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতের পূর্বদিকে এই ঝড় বেশি হয়।।
20. আশ্বিনের ঝড় কী?
উত্তর : শরৎকালে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে জীবনহানি ও ধনসম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত ‘আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয় বলে একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলা হয়।
21. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ক্রান্তীয় পুবালি জেটের প্রভাবে মধ্যভারত ও বঙ্গোপসাগরে গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট একাধিক নিম্নচাপজনিত গােলযােগকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু ত্বরান্বিত হয়। এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ আকস্মিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই ‘মৌসুমি বিস্ফোরণ’ বা Burst of Monsoon বলে।
দশম শ্রেণী ভূগোল | বায়ুমণ্ডল – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে?
উত্তর : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে বিক্ষিপ্ত ও উর্ধ্বগামী উয় বায়ু শীতল হয়ে ভারি হয়ে উভয় গােলার্ধের 25-35° অক্ষাংশে সৃষ্ট কৰ্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে নেমে আসে ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর কোনাে পার্শ্ব প্রবাহ থাকে না, শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। উত্তর গােলার্ধে এই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্তবলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে। প্রাচীনকালে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিকগণ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে পালতােলা জাহাজে অশ্ব বােঝাই করে আনার সময় এই অণ্ডলে বাতাসের অভাবে আটকে যেত। পানীয় জল অপচয় রােধ করার জন্য নাবিকরা জাহাজের রুগ্ন অশ্বগুলিকে জলে ফেলে দিত। তাই এই কর্কটীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
2. ওজোন স্তরের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : স্ট্রাট্রোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্বযুক্ত যে গ্যাসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ওজোনস্তর নামে পরিচিত। গুরুত্ব : (i) এই স্তর সূর্য থেকে আসা তিনটি (UV-A, B, C) ক্ষতিকারক রশ্মিকে শােষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। (ii) এই স্তর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের অবলােহিত রশ্মির বিকিরণে বাধা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্মতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
3. ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি হলাে—(i) CFC বা ক্লোরােফ্লুরােকার্বন হল ওজোন স্তর বিনাশের অন্যতম কারণ। (i) নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস ওজোনস্তর বিনাশ ত্বরান্বিত করছে। (ii) হলােন যৌগের বিশেষত হ্যালােন। 1211 ও হ্যালােন 1301 যৌগদুটি ওজোনস্তর বিনাশে বিশেষ ভূমিকা নেয়। (iv) ট্রাইরাে ব্রোমাে কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতি ওজোনস্তর বিনাশ করে। (v) কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া (vi) সুপারসনিক জেট বিমান কর্তৃক পরিত্যক্ত জলীয় বাষ্প ওজোন বিনাশ ঘটায়।
4. গ্রিন হাউস এফেক্ট বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : বর্তমানে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে co, CH No প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে। এই সমস্ত গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের উধ্বস্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করেছে যার ফলে সূর্যরশ্মি সহজে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকিরিত সূর্যরশ্মি সম্পূর্ণরূপে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের উয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত।
5. বৈপরীত্য উয়তা (Inversion of Temperature) কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে প্রতি 1000 মি. উচ্চতা বৃদ্ধিতে 45°C হারে উয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উয়তা হ্রাস না পেয়ে বরং বাড়তে থাকে। এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উয়তা বা উয়তার উক্ৰম বলে। উয়তার উক্ৰম ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে কিংবা ট্রপােস্ফিয়ারে উর্ধ্ববায়ুস্তরে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্য উয়তা হলাে বায়ু তাপের অস্থায়ী অবস্থা।
6. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল কেন?
উত্তর : দিনের বেলায় মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে আগত সৌরকিরণ বাধাহীনভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের উম্লতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি রাত্রে পার্থিব বিকিরণ বাধাহীনভাবে হয় ও রাত্রে উয়তা কমে যায়। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলায় আগত সৌরকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না তাই দিনে উয়তা কম হয়। এবং রাতে পার্থিব বিকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠেই ফিরে আসে, তাই রাতে উয়তা বৃদ্ধি পায়। এই জন্যই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা বেশি উয় হয়।
7. ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমির সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি হল—(i) আয়নবায়ু মহাদেশের পশ্চিমদিক থেকে এসে সমুদ্রের শীতল বায়ুর সাথে মেশে। (ii) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে যত যায় জলীয় বাষ্পধারণ ক্ষমতা তত বাড়ে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে। (ii) মরুভূমি অঞ্চলের ওপর থেকে শুষ্ক বায়ুস্রোত নেমে আসে—ফলে দীর্ঘকাল এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
8. জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে।
উত্তর : জেট বায়ু হল একটি দ্রুতগামী বায়ুস্রোত। যা মূলত 30° উত্তর অক্ষাংশে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের 7-13 কিমি ঊর্ধ্বে ট্রপােস্ফিয়ারে একটি সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা পথে প্রবল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য—(i) এই বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 10-12 কিমি উর্ধ্বে সংকীর্ণ স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সময় | (i) জেট বায়ুর গতিবেগ 350-450km/ঘণ্টা (ii) শীতের প্রারম্ভে এই বায়ু প্রবাহ শুরু হয় এবং চলে মার্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
9. নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় কেন ?
উত্তর : (i) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার দরুণ প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি হয়। (ii) এই অঞ্চলে জলভাগ বেশি। (iii) জলভাগ বেশি তাই প্রচুর জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। (iv) উভয় গােলার্ধ থেকে আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞলে মিলিত হয়। উয়—আর্দ্র বায়ু উর্ধ্বগামী পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে। ও ঘনীভূত হয়ে শীতল হয় ও মেঘে পরিণত হয়। (v) পরে এই মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি হয় ও বিকেলের দিকে হয় বলে 40 Clock Rain বলা হয়।
দশম শ্রেণী ভূগোল | বায়ুমণ্ডল – চনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ সমূহ আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ :
(i) অক্ষাংশ : পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা 66%° কোণে হেলে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে। আবার মেরুর দিকে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সূর্যের তাপীয় ফল কম হয়। তাই উচ্চ অক্ষাংশ অপেক্ষা নিম্ন অক্ষাংশের গড় উয়তা অধিক হয়।
(ii) ভূমির উচ্চতা : ট্রপােস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কিমিতে গড়ে প্রায় 6.4° সেলসিয়াস | sIL ৪০০০ মি হারে উষ্মতা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের উম্লতা তত কম হয়।
(iii) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উঃ বা শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্র থেকে কম দূরবর্তী স্থান গ্রীষ্মকালে অধিক। উম্ন ও শীতকালে অধিক শীতল হয়।
(iv) বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মতােই উয় বায়ু প্রবাহিত অঞল উয় এবং শীতলবায়ু প্রবাহিত অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়।
(v) সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের যে উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর উয় সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় |সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উয় এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। সেখানকার বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
(vi) ভূমির ঢাল : ভূমির ঢালের দিক অনুযায়ী সৌরশক্তি প্রাপ্তির তারতম্য ঘটে। উত্তর গােলার্ধে উত্তরমুখী ভূমির ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক লম্বভাবে সৌরকিরণ পড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা অধিক হয়।
(vii) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপন : দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সৌররশ্মির তাপীয়। ফল হ্রাস পায় কিন্তু রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘদ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। ফলে উয়তা বৃদ্ধি পায়। উয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের। উয়তা সামান্য হ্রাস পায়।
(viii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ : সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তি ও co, শােষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সংযােজন ঘটায়। তাই অধিক উদ্ভিদ আবৃত অঙুল তুলনামূলকভাবে কম উয় হয়; কিন্তু উদ্ভিদ কম থাকলে উয়তা চরম প্রকৃতির
2. জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর বিশ্ব উন্নয়নের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : পরিবেশের ওপর বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাব : বিশ্ব উয়ায়ণ বা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। যেমন—
(i) মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন : বিয় উয়ায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের সঞ্চিত বরফ স্তুপের গলন শুরু হয়েছে এবং পার্বত্য হিমবাহগুলির বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে।
(ii) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি : গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিজনিত কারণে মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরং বেশি মাত্রায় গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলে উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উয়তায়। প্রায় 1:5° c বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
(iii) অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন উৎসের জল অধিকতর দ্রুত ও বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে তার ফলে বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপনের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্পীভবন বেশি হওয়ার ফলে কোথাও প্রবল বর্ষণ অন্যত্র খরা আবার উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(iv) শস্য উৎপাদনে হ্রাসবৃদ্ধি : বিশ্ব উম্নয়নের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগােলিক অবস্থান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, c0, বৃদ্ধির পরিমাণ, মৃত্তিকার আদ্রর্তা বা শুষ্কতা, ফসলের ধরণ প্রকৃতির উপর শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে।
(v) কৃষি পদধতির পরিবর্তন : গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি পেলে কৃষিকাজের ওপর ভার প্রভাব পড়লে। যেমন—কৃষি বলয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। আবার চাষযােগ্য জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, আগাছা ও রেশম পােকার উপদ্রব বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিকাজের পরিবর্তে শিল্প, বসতি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে।
3. পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়তবায়ু প্রবাহের সম্পর্ক সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ। ভূ-পৃষ্ঠে সাতটি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় অবস্থান করছে। যথা—(i) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ শান্তবলয়, (i) ও (ii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপযুক্ত বলয়, (iv) ও (v) সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (vi) ও (vii) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়। স্থায়ী চালবলয়গুলির প্রভাবে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত বায়ুকেই নিয়তবায়ু বলে। নিয়তবায়ু প্রধানত তিন প্রকার (i) আয়ন বায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু ও (iii) মেরু বায়ু।
(1) আয়ন বায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে 25°-30° অক্ষরেখা থেকে 5-10° অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী আয়নবায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়নবায়রূপে প্রবাহিত হয়। এই দুই প্রকার আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে উর্ধ্বগামী হয়। তাই এই অঞ্চলে বায়ুর পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না। এই অঞ্জলকেই নিরক্ষীয় শান্তবলয় বলে।
(2) পশ্চিমাবায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ায়, একে পশ্চিমাবায়। বলে। ফেরেলের সূত্রানুসারে, এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে দক্ষিণ পশ্চিমা পশ্চিমাবায়ু ও উত্তরপশ্চিম পশ্চিমাবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে সাধারণত 30°-60° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয়।
(3) মেরু ও বায়ুচাপ বলয় : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু। অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে মেরুবলয় বলে। সাধারণভাবে এই বায়ু উভয় গােলার্ধে 70-80° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব মেরুবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু যেখানে মিলিত হয় সেই অঞ্চলকে Inter Tropical Convergence Zone বা ITCZ বলে। এবং পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু সেখানে মিলিত হয়, সেই অঞ্জলকে মেরুসীমান্ত অঞ্চল বলে। চাপবলয়গুলি স্থায়ী এবং বায়ুপ্রবাহগুলি নিয়মিত হলেও সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাপবলয়গুলিও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়। চাপবলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহগুলিও উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়।
4. বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হলাে বায়ুর ঘনত্বের তারতম্য। বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হলাে-
(i) উচ্চতা : ভূমিভাগের উচ্চতা, বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ওপরের বায়ুস্তরের প্রবল চাপে বায়ুর অণুগুলি ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে বেশি পরিমাণে থাকে। একারণেই সমুদ্রতল সংলগ্ন বায়ুস্তরে বায়ুচাপ বেশি হয়। আবার ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন কমতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায়। দেখা গেছে, সমুদ্রতল থেকে প্রতি 110 মিটার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে 1 cm পারদস্তম্ভের সমান বায়ুচাপ (1:34 mb হারে) কমতে থাকে।
(ii) উয়তা : বায়ুর উয়তার পরিবর্তন হলে বায়ুর আয়তন ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ চাপেরও পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ুর অনুগুলি গতিশীল হয়ে পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। ওই উয় বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং এর চাপও কমে যায়। আবার উত্মতা কম হলে বা বায়ু শীতল হলে সংকুচিত হয় বলে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং চাপও বেশি হয়।
(iii) জলীয়বাষ্প : বায়ুতে উপস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্প হল অধিক হালকা উপাদান। বেশি জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ু নিম্নচাপবিশিষ্ট হয় এবং কম জলীয়বাষ্পযুক্ত বায়ু উচ্চচাপবিশিষ্ট হয়।
(iv) পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর আবর্তনগতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের (Centrifugal force) প্রভাবে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে। ফলে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব উভয়ই হ্রাস পায়। নিরীক্ষয় অঞলে আবর্তনের বেগ বেশি থাকায় বায়ুর বেশি গতিবিক্ষেপ ঘটে বলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
(v) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : পৃথিবীপৃষ্ঠে জলভাগ ও স্থলভাগের বিন্যাস বা বণ্টন তথা উভয়ের মধ্যেকার তাপগ্রাহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্যও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তা আর্দ্রও হালকা হয় এবং চাপও কম হয়। কিন্তু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তা শুষ্ক, ভারি হয় এবং চাপও অধিক হয়।