উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিজ্ঞান – শিখন (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর

 সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো | উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিজ্ঞান

  1. পরিণমন হলো – 

(A) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া /

(B) আদেশ নির্ভর প্রক্রিয়া / 

(C) গুণগত প্রক্রিয়া / 

(D) শর্ত নির্ভর প্রক্রিয়া । 

Ans: (A) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া /

 

  1. শিখন কী ধরনের প্রক্রিয়া ? 

(A) কৃত্রিম / 

(B) স্বাভাবিক / 

(C) সহজাত / 

(D) স্বতঃপ্রণোদিত । 

Ans: (A) কৃত্রিম /

 

  1. ম্যাকডুগাল মনে করেন …….. হলো সুপ্ত মনোযোগ— 

(A) তাড়না / 

(B) আগ্রহ / 

(C) প্রেষণা / 

(D) শিখন । 

Ans: (B) আগ্রহ /

 

  1. শিখনের প্রথম স্তর- 

(A) গ্রহণ / 

(B) ধারণ বা সংরক্ষণ / 

(C) পুনরুদ্রেক / 

(D) অনুশীলন । 

Ans: (B) ধারণ বা সংরক্ষণ /

 

  1. প্রত্যভিজ্ঞা ‘ কথাটির আক্ষরিক অর্থ কী ? 

(A) দেখা / 

(B) শোনা / 

(C) মনে করা / 

(D) চিনে নেওয়া । 

Ans: (D) চিনে নেওয়া ।

 

  1. যে মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে মানুষ পূর্ব অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে রাখে , সেটি হলো- 

(A) গ্রহণ / 

(B) পুনরুদ্রেক / 

(C) সংরক্ষণ / 

(D) পুনঃপরিজ্ঞান । 

Ans: (C) সংরক্ষণ /

 

  1. পরিবর্তিত পরিবেশের উপযোগী নতুন আচরণ আয়ত্ত করাকে বলে– 

(A) ক্ষমতা / 

(B) শিখন / 

(C) পরিণমন / 

(D) সংরক্ষণ । 

Ans: (B) শিখন /

 

  1. প্রেষণার উদ্ভব হয়— 

(A) মনোযোগ থেকে / 

(B) দুঃখ থেকে / 

(C) অভাববোধ থেকে / 

(D) শৃঙ্খলাবোধ থেকে । 

Ans: (C) অভাববোধ থেকে / 

 

  1. শিখনের দ্বিতীয় স্তর – 

(A) গ্রহণ / 

(B) ধারণ / 

(C) পুনরুদ্রেক / 

(D) প্রত্যভিজ্ঞা । 

Ans: (C) পুনরুদ্রেক / 

 

  1. যে প্রক্রিয়ায় শিশুরা নতুন নতুন আচরণ করে , তাকে বলে– 

(A) পরিণমন / 

(B) সঞ্চালন / 

(C) শিখন / 

(D) অভিভাবন । 

Ans: (C) শিখন /

 

  1. সহগতির সহগাঙ্ককে যে ইংরেজি অক্ষরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় – 

(A) b / 

(B) s / 

(C) r / 

(D) q /

Ans: (C) r / 

 

  1. দ্বি – উপাদান তত্ত্বের প্রবক্তা – 

(A) ফ্রয়েড / 

(B) স্পিয়ারম্যান / 

(C) থার্স্টোন / 

(D) থর্নডাইক । 

Ans: (B) স্পিয়ারম্যান /

 

  1. ‘ পুনরুদ্রেক ‘ কথাটির অর্থ – 

(A) দেখা / 

(B) শোনা / 

(C) মনে করা / 

(D) চিনে নেওয়া । 

Ans: (C) মনে করা /

 

  1. অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন অভিজ্ঞতার অনুশীলনকে বলে– 

(A) পরিণমন / 

(B) শিখন / 

(C) মনোযোগ / 

(D) প্রেষণা । 

Ans: (B) শিখন / 

 

  1. শিখন , স্মৃতি , প্রত্যক্ষণ এগুলি আসলে কী ? 

(A) দৈহিক প্ৰক্ৰিয়া / 

(B) মানসিক প্রক্রিয়া /

(C) দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া / 

(D) প্রাক্ষোভিক প্রক্রিয়া । 

Ans: (B) মানসিক প্রক্রিয়া /

 

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিজ্ঞান – শিখন (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Education Question and Answer : 

  1. মনোযোগের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের উল্লেখ করো । 

Ans: মনোযোগের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকের নাম দুশ্চিন্তা । 

  1. শিখনের কার্যকরী বিষয়গুলির যেকোনো দু’টি উল্লেখ করো । 

Ans: শিখনের প্রধান দু’টি কার্যকরী বিষয় হলো— 1. উপযুক্ত পরিবেশ । 2. উপযুক্ত পদ্ধতি । 

  1. শিখন প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলি কী ? 

Ans: শিখন প্রক্রিয়ার স্তরগুলি এইরূপ — 1. অভিজ্ঞতা অর্জন , 2. সংরক্ষণ ধারন 3. পুনরুদ্রেক বা মনে করা , 4. প্রত্যভিজ্ঞা বা চেনা 

  1. শিখনের দু’টি বৈশিষ্ট্য লেখো । 

Ans: শিখনের দু’টি বৈশিষ্ট্য : 1. শিখন আচরণের পরিবর্তন আনে । 2. শিখন অনুশীলন ভিত্তিক । 

  1. পরিণমন কী ? 

Ans: পরিণমন এমন একটি চর্চা যা অনুশীলন ও শিখন নিরপেক্ষ স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া , এটি আপনা – আপনি ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে তার অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

  1. SMA- এর পুরো কথাটি কী ? 

Ans: পুরো নাম Special Mental Ability . 

  1. GMA- এর পুরো কথাটি কী ? 

Ans: পুরো শব্দটি হলো : General Mental Ability . 

  1. শিখন ও পরিণমনের একটি সাদৃশ্য লেখো । Ans: প্রথমত : দু’টিই ব্যক্তির জীবনবিকাশের প্রক্রিয়া বা বিকাশমূলক প্রক্রিয়া । 

দ্বিতীয়ত : দু’টি প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতেই ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন লক্ষণীয় ৷ 

  1. গ্যাগনির মতে সব থেকে উচ্চ পর্যায়ের শিখন কোনটি ?

Ans: গ্যাগনিনের মত অনুসারে সব থেকে উচ্চ পর্যায়ের শিখন হলো ‘ সমস্যা সমাধানমূলক শিখন ’ । 

  1. থার্স্টোনের তত্ত্ব অনুসারে যেকোনো দু’টি প্রাথমিক মানসিক ক্ষমতার উল্লেখ করো । 

Ans: থার্স্টোনের তত্ত্ব অনুসারে দু’টি প্রাথমিক মানসিক ক্ষমতা হলো সংখ্যাগত উপাদান N এবং বাচনিক উপাদান V। 

  1. সাধারণ মানসিক ক্ষমতা কাকে বলে ? 

Ans: এটি এমন একটি ক্ষমতা যা যে কোনো বৌদ্ধিক কাজে অল্পবিস্তর প্রয়োজন হয় । শিশু জিনগতসূত্রে এই ক্ষমতা অর্জন করে অর্থাৎ এটা সহজাত ও জন্মগত । স্পিয়ারম্যান এটাকেই বলেছেন ‘ G -ক্ষমতা ’ । 

  1. মনোযোগের দু’টি বস্তুগত নির্ধারক কী ? 

Ans: মনোযোগের দু’টি বস্তুগত নির্ধারকের নাম হলো তীব্রতা ও রং । 

  1. বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বলতে কী বোঝো ?

Ans: কোনো বিশেষ কাজের জন্য সাধারণ ক্ষমতার পাশাপাশি একটি বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োজন হয় এবং ক্ষমতা ওই কাজটি ব্যতীত অন্য কোনো কাজে দরকার হয় না , তাকেই বলে বিশেষ ক্ষমতা । স্পিয়ারম্যান এই ক্ষমতাকে বলেছেন ‘ S ‘ ক্ষমতা 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিজ্ঞান – শিখন (প্রথম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Education Question and Answer : 

  1. পরিনমন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করো । অথবা , পরিণমন বলতে কী বোঝো ? শিখন ও পরিণমন কীভাবে সম্পর্কিত লেখো । 

অথবা , শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী তা সংক্ষেপে আলোচনা করো । শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব লেখো । 

Ans: পরিণমন : পরিণমন একটি চর্চা যা অনুশীলন ও শিখন নিরপেক্ষ স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া , এটি আপনা – আপনি ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে তার অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

শিখনও পরিণমনের সম্পর্ক : 

  1. শিখন ও পরিণমন উভয়েই বিকাশমূলক প্রক্রিয়া । মানুষের জীবন বিকাশে উভয় প্রক্রিয়ার গুরুত্ব রয়েছে । তবুও এদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। 
  2. পরিণমন একটি স্বতঃস্ফূর্ত , স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া সহজাত ও অভ্যন্তরীণ বলে বাহ্যিক পরিবেশ একে বিশেষ প্রভাবিত করতে পারে না। 
  3. শিখন এক ধরনের শর্তসাপেক্ষ বিকাশমূলক মানসিক প্রক্রিয়া । শিখনের সাহায্যে শিশুরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে । 
  4. শিখন ও পরিণমন উভয়েই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল । সঠিক পরিণমন ছাড়া শিখন সম্ভব হয় না । এটি শিখনের সীমারেখা নির্ধারণ করে । কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিখনও পরিণমনকে তরান্বিত করে । ফলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং উভয়েই শিশুর বিকাশের সহায়ক । 

শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা গুরুত্ব : শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব নিম্নরূপ— 

  1. পরিশীলিত আচরণ : পরিণমনের মাধ্যমে পরিবর্তিত আচরণগুলিকে যথাযথ শিখনের দ্বারা পরিশীলিত করা যায় । 
  2. শিক্ষা পরিকল্পনায় পরিণমন : যথাযথ পরিণমনের অভাবে শিশু সঠিকভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারে না । ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক পরিণমনের দিকে খেয়াল রেখে নানা স্তরে শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হয় । 
  3. পরিণমন অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা : মানবজীবনে শৈশব ও কৈশোরে পরিণমনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায় । তখন পরিণমন অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবসা করা জরুরি । কারণ এইসময় শিশুর জীবনে সঠিকভাবে পরিণমন খুবই প্রয়োজন । 
  4. মনোযোগ বলতে কী বোঝো ? শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকার মূল্যায়ন করো । 

অথবা , মনোযোগ কাকে বলে ? শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা লেখো । 

Ans: মনোযোগ : শিখন প্রক্রিয়ার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মনোযোগ । বিভিন্ন মনোবিদ নিজস্ব ভঙ্গিতে মনোযোগের সংজ্ঞা দিয়েছেন । রস বলেছেন , এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি চিন্তার বিষয়কে স্পষ্টভাবে মনের সম্মুখে এনে দেয় , তাকেই বলে মনোযোগ । ম্যাকডুগালের মতে , মনের যে সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তা – ই মনোযোগ । উডওয়ার্থ – এর ভাষায় পাশাপাশি অবস্থিত অসংখ্য উদ্দীপকের মধ্য থেকে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার পদ্ধতিই মনোযোগ । এককথায় , যে কোনো বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের জন্য মনকে নিবেশিত করার দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় মনোযোগ । 

শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা : শিক্ষার সঙ্গে মনোযোগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা জরুরি । মনোযোগ আকর্ষণের এই কৌশলগুলি নিম্নরূপ : 

  1. মনোযোগ আকর্ষী কৌশল : জীবনবিকাশের নানা স্তরে মনোযোগের রূপভেদ ঘটে । শৈশবে ব্যক্তিনিরপেক্ষ মনোযোগের প্রাধান্য থাকে বলে তখন বস্তুর বৈশিষ্ট্য মনোযোগ নির্ধারণ করে । শৈশবে শিশু খেলাধুলার প্রতি স্বত : স্ফুর্তভাবে মনোযোগী হয় । তাই এইসময়ে শিশুর পাঠক্রম হবে খেলাভিত্তিক । ফলে তার মনোযোগ বাড়বে পাঠক্রমে । 
  2. ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল : শৈশব পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় ইচ্ছাসাপেক্ষ মনোযোগ । এইসময় শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে শিখনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা , উপদেশ প্রদান , লঘু শাসন ইত্যাদির প্রয়োগ করতে হয় ।
  3. পরিসর অতিক্রম না করা : শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষককে খেয়াল রাখতে হবে বিষয়বস্তু যেন তাদের মনোযোগের পরিসরকে ছাপিয়ে না যায় । এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয়বস্তু সহজ ও বোধগম্য করে উপস্থাপন করতে হবে । 
  4. নির্ধারক প্রয়োগ : তীব্রতা , স্পষ্টতা , নতুনত্ব ইত্যাদি নির্ধারক প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে । 
  5. বিষয় – বৈচিত্র্য প্রয়োগ : মনোযোগ সদা চঞ্চল । কোমলমতি শিশুদের কোনো বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগী করা যায় না । ফলে শিক্ষককে একটি বিষয় ছেড়ে অন্য বিষয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে মনোযোগী করে তুলতে হবে । 

  সবশেষে , পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মনোযোগ প্রধান শর্ত বলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের বিষয়ে শিক্ষককে সচেতন হতেই হবে । 

  1. গ্যাগনির মত অনুসারে শিখনের প্রকারভেদ করো । 

Ans: শিক্ষামনোবিদ গ্যাগনি ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়াগুলির জটিলতার স্তর অনুসারে শিখনের প্রকারভেদ সম্পর্কে তার মতবাদ প্রকাশ করেন । শিখনের আটটি প্রকার তিনি চিহ্নিত করেন । একটি বিশেষ সজ্জাক্রম অনুযায়ী তিনি সেগুলিকে বিন্যস্তও করেছেন । গ্যাগনির মত অনুসারে শিখনের প্রকারভেদ নিম্নরূপ — 

  1. সংকেত শিখন : সর্বাধিক সরল প্রকৃতির এই শিখনের প্রথম বর্ণনা করেন মনোবিদ প্যাভলভ । এটি প্রাচীন অনুবর্তনজনিত শিখন । বর্ণ , শব্দ , নামতার মতো শিখনে সংকেত শিখনের প্রভাব লক্ষ করা যায় । 
  2. উদ্দীপক – প্রতিক্রিয়া শিখন : সক্রিয় অনুবর্তন নামে পরিচিত এই শিখন কৌশল আসলে একটি উন্নত শিখন । এখানে প্রাণীর প্রতিক্রিয়ার পর শক্তিদায়ী উদ্দীপকের ব্যবহার হয় । এখানে প্রেষণা ও পুরস্কারের গুরুত্ব বেশি । 
  3. শৃঙ্খলিতকরণ শিখন : শৃঙ্খলিতকরণ উন্নত মানের শিখন কৌশল । এতে অতি জটিল চিত্তন কর্মসমন্বয় দক্ষতা অর্জিত হয় । 
  4. বাচনিক সংযোগসাধনমূলক শিখন : প্রকৃতপক্ষে এটিও একপ্রকার শৃঙ্খলিতকরণ । এখানে নানা উপাদানের মধ্যে সংযোগসাধন করা হয় । 
  5. বিনিশ্চয় শিখন : এটি খুবই জটিল ও কঠিন শিখন প্রক্রিয়া । এর দ্বারা শিক্ষার্থীদের সেই সব দক্ষতা গড়ে তোলা হয় , যার দ্বারা তারা একইরকম একগুচ্ছ উদ্দীপকের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে । 
  6. ধারণা শিখন : ধারণা শিখনে কোনো বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষক সেগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব দেন । 
  7. নিয়ম শিখন নিয়ম শিখন : আসলে খুব উচ্চমানের প্রজ্ঞামূলক শিখন । শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধারণার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক খুঁজে পায় এবং সাধারণ নিয়মাবলি সম্পর্কে অবহিত হয় । 
  8. সমস্যা সমাধানমূলক শিখন : এটি বিশেষ এক ধরনের শিখন প্রক্রিয়া । এর দ্বারা শিক্ষার্থীরা প্রয়োজন মতো প্রতিক্রিয়া জানানোর ধরন আবিষ্কার করে । প্রকৃতপক্ষে এটি সবচেয়ে জটিল শিখন কৌশল । 
  9. শিক্ষাক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা আলোচনা করো । 

অথবা , শিখনে প্রেষণার ভূমিকা লেখো । 

Ans: ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হলো শিখন । তাই শিখনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রেষণা । শিখনে প্রেষণার এই ভূমিকা আলোচিত হলো – 

  1. উদ্যম সৃষ্টি : কোনো ব্যক্তির কর্মসম্পাদনের জন্য সবার আগে দরকার উদ্যম । প্রেষণা ব্যক্তির মধ্যে সেই উদ্যম সৃষ্টি করে ব্যক্তিকে কর্মে ঝাপিয়ে পড়ার শক্তি জোগায় । 
  2. আচরণের প্রবণতা নির্ধারণ : শিক্ষার্থীর আচরণের প্রবণতা নির্ণয়ে প্রেষণার বড়ো ভূমিকা রয়েছে । একজন শিক্ষার্থীর আচরণ কতটা উদ্দেশ্যমুখী হবে , কোন বিষয়ে কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত বা সাড়া না দেওয়া উচিত ইত্যাদি স্থির করে প্রেষণা 
  3. যথাযথ কর্মসম্পাদন : প্রেষণার তাড়নায় কোনো কাজ যথাযথ উপায়ে সম্পাদিত হয় , শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টাতেই অনেক কিছু শিখে ফেলে ও জটিল বিষয়কেও আয়ত্ত করে । 
  4. মনোযোগ বৃদ্ধি ও শিখন কৌশলে প্রভাব : প্রেষণার দ্বারা শিক্ষার্থী কোনো একটি বিষয়ে অধিক মনোযোগী হয় । এতে শিখন প্রক্রিয়া সহজ হয় । শিক্ষার্থী যেকোনো পাঠ অর্থপূর্ণভাবে শিখতে পারে । এভাবে প্রেষণার তাড়নায় শিখন কৌশলও প্রভাবিত হয়। 
  5. আচরণের গতিপথ নির্ণয় : শিক্ষার্থীর আচরণের গতিপথ নির্ণয় করাও প্রেষণার কাজের অন্তর্ভুক্ত । আচরণ সম্পাদনই শিক্ষার লক্ষ্য নয় , সেই আচরণকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে । শিক্ষার্থীর আচরণের সঠিক গতিপথ নির্ণয় করার পরই প্রেষণার পরিতৃপ্তি সম্ভব হয় । 
  6. শিখনের তিনটি স্তর উল্লেখ করো । স্তরগুলির পরিচয় দাও । 

Ans: শিখনের স্তর শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো – 1. সংরক্ষণ বা ধারণ , 2. পুনরুদ্রেক / মনে করা , 3. প্রত্যভিজ্ঞা / চেনা । নীচে স্তরগুলির পরিচয় দেওয়া হলো । 

  1. সংরক্ষণ : সংরক্ষণ আদতে একটি প্রক্রিয়া , যার মাধ্যমে নানা অভিজ্ঞতা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয় । একেই বলে সংরক্ষণ । বাস্তবে মানুষ শিখনের মাধ্যমে যা কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে , তার অনেকটাই ভুলে যায় । তবুও কিছু অংশ স্মৃতির মণিকোঠায় সংরক্ষিত হয় , মনোবিজ্ঞানে এরই নাম সংরক্ষণক্রিয়া । এক্ষেত্রে কতকগুলি বিষয় গুরুত্ব পায় । বিষয়গুলি এইরূপ— 

( ক ) বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং পুন : পুন : অনুশীলন । 

( খ ) বিষয়টি যত বেশি সাম্প্রতিক হবে , ততই মনে রাখার সুবিধা হবে । 

( গ ) বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকলে সংরক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে । 

  1. পুনরুদ্রেক : শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর । কারণ সংরক্ষিত বিষয়টি যদি ঠিক সময় , ঠিক জায়গায় পুনরুদ্রেক করা না যায় তা হলে শিখন সম্পূর্ণতা পায় না । পূর্ব অভিজ্ঞতাকে পুনরায় মনে করাকে বলে পুনরুদ্রেক । এটি দু’প্রকার । 

( ক ) প্রত্যক্ষ পুনরুদ্ৰেক : যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার সময় তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয় তখন তাকে বলে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক । ( খ ) পরোক্ষ পুনরুদ্রেক : যখন কোনো অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয় তখন তাকে বলে পরোক্ষ পুনরুদ্রেক । পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়ায় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ । এগুলি হলো – ( ১ ) সান্নিধ্যের সূত্র , ( ২ ) সাদৃশ্যের সূত্র , ( ৩ ) বৈসাদৃশ্যের সূত্র । 

  1. প্রত্যভিজ্ঞা : শিখনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তর প্রত্যভিজ্ঞা প্রত্যভিজ্ঞা বলতে বোঝায় একটি পরিচিতির বোধ , যা না থাকলে শিখন সফল হয় না । ‘ প্রত্যভিজ্ঞা ‘ কথার অর্থ ‘ চিনে নেওয়া ’ । পূর্বেকার অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে নেওয়ার ক্রিয়াই হলো প্রত্যভিজ্ঞা । মনোবিজ্ঞানীদের মতে , প্রত্যভিজ্ঞা বলতে বোঝায় একটি পরিচিতির বোধ , যা না থাকলে স্মরণক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না । 
  2. শিক্ষাক্ষেত্রে স্পিয়ারম্যানের দ্বি – উপাদান তত্ত্বের গুরুত্ব লেখো । 

Ans: যেকোনো বৌদ্ধিক কাজে দু’টি উপাদান কার্যকরী হয় সাধারণ উপাদান ( G ) এবং বিশেষ উপাদান ( S ) । সব ধরনের কাজে সাধারণ উপাদানটি কম – বেশি প্রয়োজন । অন্যদিকে , বিশেষ ধরনের কাজে বা কোনো নির্দিষ্ট কাজে বিশেষ উপাদানটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । এটিই স্পিয়ারম্যানের দ্বি – উপাদান তত্ত্ব । নিম্নে এই তত্ত্বের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো। 

  শিক্ষাক্ষেত্রে স্পিয়ারম্যানের দ্বি – উপাদান তত্ত্বটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । ছাত্র – ছাত্রীদের সঠিক শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষক – শিক্ষিকারা এই তত্ত্বের সাহায্য নেন । ছাত্র – ছাত্রীদের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই তত্ত্বটি বিশেষ সহায়ক হয় । কোনো বিষয়ে সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে সেই বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা প্রয়োজন । ছাত্র – ছাত্রীদের ক্ষমতার বিষয়ে জানার পর শিক্ষক – শিক্ষিকারা বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ দেন । সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দ্বি – উপাদান তত্ত্ব সহায়ক হয় । ছাত্র – ছাত্রীদের বিশেষ ক্ষমতার সঙ্গে সংগতি না রেখে পাঠক্রম নির্ধারিত হয় । তাই এক্ষেত্রেও দ্বি – উপাদান তত্ত্বটির গুরুত্ব ছাত্র – ছাত্রী ও শিক্ষকদের কাছে যথেষ্টই রয়েছে । 

  1. স্পিয়ারম্যানের মতে মানসিক ক্ষমতার দু’টি উপাদান স্পারম্যাে দ্বি – উপাদান তত্ত্ব ও থাস্টোনের বহু উপাদান তত্ত্বের পার্থক্য লেখো ।

Ans: স্পিয়ারম্যানের মতে মানসিক ক্ষমতার দু’টি উপাদান হলো মানসিক ক্ষমতা ও বিশেষ মানসিক ক্ষমতা । সাধারণ স্পিয়ারম্যানের দ্বি – উপাদান তত্ত্বের সঙ্গে থাস্টোনের বহু উপাদান তত্ত্বের বেশ কয়েকটি সাদৃশ্য সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও রয়েছে । এই পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ— 

 

Lস্পিয়ারম্যানের দ্বি – উপাদান তত্ত্ব 

( 1 ) এই তত্ত্ব অনুযায়ী মানসিক ক্ষমতায় দু’টি উপাদান রয়েছে । 

( 2 ) এখানে দু’টি উপাদান G ( সাধারণ ক্ষমতা ) ও S ( বিশেষ ক্ষমতা ) দ্বারা সূচিত হয় । 

( 3 ) এই তত্ত্ব মতে কোনো কাজ করার জন্য সাধারণ ও বিশেষ উপাদানের থাস্টোনের বহু উপাদান তত্ত্ব 

( 4 ) এই তত্ত্বটি ‘ ইলেকট্রিক থিয়োরি ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে ।

( 5 ) এখানে সব কাজে সাধারণ উপাদান ব্যবহৃত হয় । অন্যদিকে , নির্দিষ্ট কাজে বিশেষ উপাদান ব্যবহৃত হয় ।

( 6 ) এই তত্ত্বে বিশেষ উপাদানগুলি সহজাত – উভয় ধরেনের হতে পারে ।

থাস্টোনের বহুউপাদান সমুহ 

( 1 ) এই তত্ত্বে বলা হয়েছে মানসিক ক্ষমতা সাতটি প্রাথমিক বা মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত । 

( 2 ) এই তত্ত্বের উপাদানগুলি M , N. , S , R , V এবং W দ্বারা সূচিত হয় । 

( 3 ) এই তত্ত্ব অনুযায়ী , প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতি রেখে 7 টি উপাদানের কয়েকটি একত্রে ব্যবহৃত হয় । 

( 4 ) এটি ‘ প্রাথমিক মানসিক তত্ত্ব ‘ নামেও পরিচিত । 

( 5 ) এখানে সব কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তি সাতটি মৌলিক উপাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ । 

( 6 ) এখানে সাতটি উপাদানই মৌলিক সহজাত বা অর্জিত – উভয় ধরনের হতে এবং বংশগত । পারে । 

  1. আগ্রহ কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য লেখো । শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহের ভূমিকা লেখো । 

Ans: আগ্রহের সংজ্ঞা : আগ্রহ বা অনুরাগ প্রকৃতপক্ষে একটি স্বাধীন প্রবণতা বা জৈব – মানসিক সংগঠন । প্রখ্যাত মনোবিদ জোন্স , ড্রেভার , ম্যাকডুগাল , লোভেল সকলেই নিজের মতো করে আগ্রহের সংজ্ঞা দিয়েছেন । তার ভিত্তিতে বলা যায় , “ আগ্রহ বলতে সেই মানসিক প্রক্রিয়াকে বোঝায় যা ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ কাজে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি সেই কাজে একনিষ্ঠ হওয়া এবং সেই কাজ সম্পন্ন করার প্রেরণা দেয় । ” প্রসঙ্গত , এই প্রবণতা সহজাত নয় , অর্জিত । 

আগ্রহের বৈশিষ্ট্য : আগ্রহের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে যা একে অন্যান্য মানসিক প্রক্রিয়া থেকে পৃথক করে । 

প্রথমত : আগ্রহ একটি স্থায়ী মানসিক প্রক্রিয়া বা সংগঠন । 

দ্বিতীয়ত : ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিবেশভেদে আগ্রহের রকমফের দেখা যায় । 

তৃতীয়ত : ব্যক্তিভেদে আগ্রহের চরিত্র বা ধরন আলাদা হয় । 

চতুর্থত : আগ্রহের ধরন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায় । 

পঞ্চমত : আগ্রহ চাহিদার উপর নির্ভরশীল । চাহিদার অনুভূতি আগ্রহ সৃষ্টি করে । 

ষষ্ঠত : এটি মনোযোগের প্রাথমিক ধাপ । 

সপ্তমত : কোনো কাজে সাফল্য ব্যক্তির আগ্রহ বাড়াতে ভূমিকা নেয় । 

শিক্ষাক্ষেত্রে ভূমিকা : শিক্ষা এবং আগ্রহ দ্বিমুখী সম্পর্কে জড়িত । কারণ শিক্ষা কর্মসূচির লক্ষ্যই হলো স্কুলে নানাবিধ কর্মসূচি পালন ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পাঠের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা । শিক্ষায় আগ্রহের ভূমিকাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়– শিশুর সার্বিক বিকাশের পাশাপাশি পাঠের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করে শিক্ষা । ও পাঠ্য বিষয় নির্বাচনে শিশুকে স্বাধীনতা দিতে হবে । এর মাধ্যমে বিষয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। 

  1. শিশুর মেধা ও পছন্দের দিকে লক্ষ রেখে সহ – পাঠক্রমিক কর্মসূচির পরিকল্পনা করা প্রয়োজন ।
  2. শিশুকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করা । এতে আগ্রহের পরিসর বাড়ে । 
  3. যেকোনো বিষয়ের প্রতি শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাবকে সর্বদা অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন । এইভাবে দেখা যায় যে শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠন সম্ভব । 
  4. বুদ্ধি কী ? এর বৈশিষ্ট্য লেখো । শিখনের ক্ষেত্রে মানসিক ক্ষমতার ভূমিকা আলোচনা করো । 

Ans: বুদ্ধির সংজ্ঞা : এটি শিখনের অন্যতম উপাদান । যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং কার্যকরী প্রয়োগের ক্ষমতাকেই বলে বুদ্ধি । মনোবিদগণ বিভিন্নভাবে বুদ্ধিকে বিশ্লেষণ করেছেন । তার ভিত্তিতে বলা যায়— “ বুদ্ধি হলো ব্যক্তির একটি জৈব – মানসিক কৌশল যার মাধ্যমে চটজলদি জীবনের যে কোনো পরিস্থিতি বা সমস্যার মোকাবিলায় ব্যক্তি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে এবং সমাধানসূত্র নিরূপণে নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করতে পারে । ” 

বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য : বুদ্ধির বিচ্ছুরণ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে । এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো— 

  1. নিত্যনতুন সমস্যা / পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে বুদ্ধি । 
  2. অনেক জটিল , বিমূর্ত বিষয় নিয়ে ব্যক্তিকে ভাবতে শেখায় বুদ্ধি । 
  3. পুরনো অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার মোকাবিলা করতে শেখায় বুদ্ধি । 
  4. তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে বুদ্ধি । 
  5. সমস্যার চুলচেরা বিশ্লেষণে বুদ্ধির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । 
  6. যেকোনো নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রে বুদ্ধি সহায়তা করে । 

শিখনে মানসিক ক্ষমতার ভূমিকা : শিখনের কার্যকারিতা অনেকাংশে শিক্ষার্থীর মানসিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে । 

  1. শিক্ষার্থীর আই কিউ ( বুদ্ধ্যঙ্ক ) অনুযায়ী তার শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হয় । বুদ্ধির অভাব থাকলে পড়াশোনায় অগ্রগতি অসম্ভব । 
  2. বুদ্ধির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে পৃথকভাবে বিদ্যাদান করলে পাঠদান গতি পায় । 
  3. শিক্ষার্থীর বুদ্ধি ও মেধা অনুযায়ী পাঠক্রম বাছাই করা উচিত । এতে সফলতা আসা সম্ভব । 4. শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোন পেশা বেছে নেবে সেটাও বুদ্ধির উপর নির্ভরশীল । 
  4. আগ্রহের সংজ্ঞা দাও । শিক্ষায় আগ্রহের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো । 

Ans: আগ্রহ একটি মানসিক প্রক্রিয়া । একে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী জোন্স | বলেছেন , “ আগ্রহ বলতে আমরা বুঝি বাস্তব বা কাল্পনিক কোনো বস্তু বা অবস্থার প্রতি আনন্দের অনুভূতি , যা ব্যক্তিকে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে । ” মনোবিদ ম্যাকডুগাল – এর মতে , “ আগ্রহ হলো সুপ্ত মনোযোগ । ” মনোবিজ্ঞানী ড্রেভার এর মতে , “ আগ্রহ হলো গতিশীল মনোভাব । ” সব মিলিয়ে , “ আগ্রহ হলো একটি মানসিক সংগঠন , যা ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ । ধরনের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে এবং তা সম্পাদন করতে প্রেরণা জোগায় । ” 

শিক্ষায় আগ্রহের গুরুত্ব : শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগ ( interest ) বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় শ্রেণি শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ সঞ্চার করতে পারেন তা শিক্ষার্থীর পক্ষে মঙ্গলজনক হয় । শিক্ষায় শিশুর আগ্রহের কয়েকটি প্রয়োজনীয় দিক হলো— 

প্রথমত , শিক্ষণীয় বিষয়ে শিশু যদি আগ্রহ বোধ করে , সেক্ষেত্রে শিশুর আনন্দদায়ক অনুভূতি আসে । তাই বস্তু বা কর্মকেন্দ্রিক এই অনুভূতি শিক্ষাকে কার্যকর করে । 

দ্বিতীয়ত , আগ্রহ কোনো নিষ্ক্রিয় মানসিক সংগঠন নয় । এর সঙ্গে যুক্ত প্রাক্ষোভিক অনুভূতি কোনো কাজের শক্তি জোগায় । অর্থাৎ আগ্রহ প্রেষণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে । এই প্রেষণা শিখনের অন্যতম প্রধান শর্ত । 

তৃতীয়ত , আগ্রহ শিশুকে সক্রিয় করে তোলে । সক্রিয়তা শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । 

চতুর্থত , শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগ তার সেন্টিমেন্ট দ্বারাও প্রভাবিত হয় । সেন্টিমেন্ট হলো শিশুর প্রাক্ষোভিক প্রবণতা । এটাও অভিজ্ঞতার প্রভাবে গড়ে ওঠে । 

পঞ্চমত , শিশুর আগ্রহ অনেক সময় তাকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করে । সৃজনশীল ব্যক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নতুন সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ । 

ষষ্ঠত , শিশুর আগ্রহ সমাজ পরিবেশের দ্বারাও প্রভাবিত হয় । সামাজিক পরিবেশে বাস করতে গিয়ে শিশু সামাজিক আচরণগুলি আয়ত্ত করে । 

সপ্ততম , শিশুর আগ্রহের যথাযথ অনুশীলনই তাকে ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হতে সাহায্য করে ৷ 

মন্তব্য : আগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি শিক্ষার পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ । বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিশুর মনে জ্ঞান আহরণের প্রতি আগ্রহ সঞ্চার করতে পারলে তা সারাজীবন স্থায়ী হবে । এভাবেই শিক্ষা জীবনে পূর্ণতা আনতে পারে । তাই শিক্ষা ও আগ্রহ পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ । 

  1. সাধারণ মানসিক ক্ষমতা কাকে বলে ? সাধারণ মানসিক ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো । অথবা , বিশেষ মানসিক ক্ষমতা কাকে বলে ? বিশেষ মানসিক ক্ষমতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

Ans: সাধারণ মানসিক ক্ষমতা : স্পিয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার উপর সমীক্ষা করে সিদ্ধান্তে এসেছেন , এক ধরনের ক্ষমতা আছে যা সবরকম বৌদ্ধিক কাজে কম – বেশি ব্যবহৃত হয় । তাদের বলা হয় সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বা ‘ G ‘ । 

সাধারণ মানসিক ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য : 

  1. সহজাত : প্রত্যেক শিশুই জন্মসূত্রে বা জিনগত সূত্রে সাধারণ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী । একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এই ক্ষমতা বিকশিত হয় । 
  2. সর্বজনীন : সব ব্যক্তিই কম বেশি সাধারণ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী । 
  3. বিকাশপ্রবণতা : প্রত্যেক শিশুর জন্ম থেকে কৈশোর পর্যন্ত সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বিকশিত হতে পারে । 
  4. সৃজনধর্মী যেকোনো নতুন সমস্যায় মূলত অভিনব উপাদান খুঁজে বের করতে সাধারণ মানসিক ক্ষমতা সাহায্য করে । 
  5. জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি : যে ব্যক্তি যত বেশি সাধারণ মানসিক ক্ষমতার অধিকারী হবে সে জীবনে তত বেশি সাফল্যের স্বাদ পাবে । • 

বিশেষ মানসিক ক্ষমতা : স্পিয়ারম্যানের মতে , যে মানসিক উপাদানটি বিশেষ বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের বলা হয় বিশেষ মানসিক ক্ষমতা বা ‘ S ‘ । 

  1. বিশেষধর্মী : বিশেষ মানসিক ক্ষমতা হলো বিশেষধর্মী । কোনো বিশেষ কাজ সম্পন্ন করার সময় বিশেষধর্মী ক্ষমতা ব্যবহৃত হয় । : 
  2. পেশাগত ক্ষমতায় সহায়তাকারী বিশেষ মানসিক ক্ষমতা কোনো ব্যক্তিকে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনে সাহায্য করে । 
  3. যুদ্ধবন্ধ : বিশেষ বিশেষ ধরনের কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ ধরনের মানসিক ক্ষমতা দরকার হয় । এটি যেকোনো জটিল কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে । 
  4. ব্যক্তিভেদে পৃথক ক্ষমতা : বিশেষ মানসিক ক্ষমতা কোনো একজন ব্যক্তির মধ্যে নয় , ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ মানসিক ক্ষমতা দেখা যায় । 
  5. শিক্ষায় শিখনের প্রভাব আছে কি ? শিখনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো । 

Ans: শিক্ষা ও শিখন : শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে শিখনের প্রভাবই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষা বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে সর্বাগ্রে এসে যায় শিখন প্রসঙ্গ । শিখন এমন একটি অনন্ত প্রক্রিয়া যা আমৃত্যু চলতেই থাকে । শিখন প্রক্রিয়ার বিকাশের মধ্য দিয়েই শিশু পরিবেশ ও সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয় । শিখন হলো সুসংগঠিত একটি পদ্ধতি যা ব্যক্তিকে বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করে । শিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য শিশুকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা । 

শিখনের প্রকৃতি : শিখন বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত হতে হলে শিখনের প্রকৃতি বা চরিত্র বুঝে নেওয়া প্রয়োজন । শিখনের প্রকৃতি মোটামুটি এইরূপ 

নব নব অভিজ্ঞতা : শিখন শিশুকে প্রতিদিন নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনে অভ্যস্ত করে । শিখনের মাধ্যমে শিশু পুরনো আচরণ পালটে ফেলে নতুন আচরণে অভ্যস্ত হয় । 

আচরণগত পরিবর্তন : শিখন চলতে থাকলে শিশুর আচরণে পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক । আচরণগত পরিবর্তনই শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । 

” নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা : শিখন প্রক্রিয়া শিশুকে নতুন কিছু শিখতে অনুপ্রাণিত করে । যে শিশু একদিন জ্বলন্ত কয়লায় হাত দিয়েছিল , বড়ো হয়ে সে কিন্তু শিখনের কারণেই এই আচরণ আর করে না । অর্থাৎ তার এবিষয়ে জ্ঞান অর্জন হয়েছে । 

নির্দিষ্ট লক্ষ্য : সব ক্ষেত্রে শিখন হয় উদ্দেশ্যমুখী । কারণ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যবিহীন শিখন প্রক্রিয়া পরিপূর্ণতা পায় না । 

নতুন কিছু করার তাগিদ : শিখনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো সমস্যার উপস্থিতি । জীবনে জটিলতা বা সমস্যা দেখা না দিলে শিশু নতুন কিছু করার তাগিদ অনুভব করে না । সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই শিশু নতুন কিছু করার আনন্দ খুঁজে পায় । এভাবেই তার আচরণে আসে নতুনত্ব । 

অনুশীলনের উপর নির্ভরতা : শিখনের সাফল্য অনেকাংশে অনুশীলনের উপর নির্ভরশীল । অনুশীলনের প্রভাবে শিখন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় । এজন্যই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শিখনের হার লঘু হয়ে যায় ।