প্রবন্ধ রচনা প্রশ্ন ও উত্তর

প্রবন্ধ রচনা – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Class 12th Bengali Question and Answer

  1. করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ রচনা ।

Ans: ভূমিকা : বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ যতই দাম্ভিক পদক্ষেপ রেখেছে ভূমিকম্প , ঝড় ইত্যাদি নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষকে ততোবার অসহায়তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । প্রকৃতির কাছে মানুষ যে নেহাতই শিশু তা মনে করিয়ে দেবার জন্য প্রকৃতির শেষ মার হলো মহামারী । চিকিৎসা বিজ্ঞানের আকাশ ছোঁয়া উন্নতির পরেও প্রাচীনকাল থেকে আজও পৃথিবীকে শাসন করে চলেছে কলেরা , ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া , এইড্স , ক্যানসার এর মতো নানান মারণ রোগ । আর এই তালিকার নবতম সংযোজন হলো বর্তমান বিশ্বের ত্রাস করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ । 

করোনা ভাইরাস কী ? : করোনা ভাইরাস শব্দটি লাটিন ভাষার করোনা থেকে এসেছে যার অর্থ হলো মুকুট । ইলেকট্রনিক অনুবীক্ষণিক যন্ত্রে পাওয়া ছবিতে ভাইরাসের গায়ে গদার মতো প্রোটিনের আবরণ মুকুটের মতো দেখাচ্ছে । করোনা শব্দটি গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে যার অর্থ মালা বা হার । করোনা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৬০ এর দশকে । প্রথমদিকে মুরগীর মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে দেখা যায় । এছাড়াও গোরু , শূকর ইত্যাদি নানান প্রাণী দেহে নানান প্রজাতির ভাইরাস দেখা গেছে । আর এইসব প্রাণী দেহের থেকে মানুষের দেহে সংক্রমন হয়েছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , তিনটি প্রজাতি মানবদেহে মারাত্মক সংক্রমন ঘটিয়েছে তা হলো সার্স কোভিড ( ২০১২ ) , সার্স কোভিড ২ ( ২০১৯ ) যার সর্বাধিক প্রচলিত নাম কোভিড ১৯ । 

রোগ লক্ষণ ও সংক্রমন : যদি কোনো ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হন তাহলে সাধারণত শুষ্ক কাশি , বমি , গলা বা মাথা ব্যথা , পেটের সমস্যার সৃষ্টি হয় । তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস – প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা যায় , এটা সাধারণত ফুসফুসকে আক্রমন করে । আবার কোনো কোনো সময়ে উপসর্গ ছাড়াও করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে । WHO এর নির্দেশিকা অনুযায়ী উক্ত ভাইরাস ইনকিউরেশন পিরিয়ড ১৪ দিন থেকে ২৪ দিন পযন্ত দেখা যাচ্ছে । এই ভাইরাসের উৎসস্থল হলো চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে । চিন থেকে , কোভিড ১৯ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে ভারতবর্ষে ও বাংলাদেশ সহ প্রায় ২১৩ টির বেশি দেশ আজ আক্রান্ত । তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো এই ভাইরাসের বাহক হলো মানুষ । 

মহামারীরূপে কোভিড ১৯ : সাধারণত একই সময়ে যখন বিশ্বজুড়ে বহু দেশের মানুষ কোনো বিশেষ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন তাকে বিশ্ব মহামারী বলে । ঐতিহাসিক ক্রমকে যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায় তবে দেখা যাবে যে , প্রতি একশ বছর পর পর মহামারী হতে দেখা গেছে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে , ১৭২০ সালের প্লেগ , ১৮২০ সালে কলেরা , ১৯২০ সালে স্পানিশ ফ্লু আর ২০২০ সালে কোভিড ১৯। আর এই কোভিড ১৯ বীর দর্পে বিশ্বের সমস্ত দেশগুলিতে তার থাবা বসিয়ে বেড়াচ্ছে । আর তা থেকে বঞ্ছিত হয় নি আমাদের দেশও । সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আমাদের ভারতবর্ষে কোভিড সক্রিয় ৯৬৮৩৭৭ জন তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৫৮৭৬১৩ জন এবং মারা গেছেন ৯০০২০ জন । 

প্রতিকারের উপায় : একদিকে মানুষের সংক্রমন ও মৃতের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি গবেষকরা এর প্রতিষেধক আবিস্কার করতে নাস্তানুবাদ হচ্ছেন । অর্থাৎ নোবেল করোনা ভাইরাসের এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক নেই । তাহলে প্রশ্ন হলো সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচার কী উপায় ? গবেষকগণ এর কিছু উপায় দিয়েছেন । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো – 

(1) যেহেতু মানুষই প্রধান বাহক তাই সরকার দেশে লকডাউন কার্যকরী করেছেন । 

(2) লকডাউন না থাকলে মানুষকে সামাজিক দুরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে ।

(3) যেহেতু নাক , মুখ এর মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসকে আক্রমন করে তাই মাস্ক পড়া একান্ত বাঞ্ছনীয় ।

(4) শরীরে অ্যান্ডিবডি তৈরি করতে সময় নেয় ১৪-২৪ দিন পর্যন্ত । তাই ৩৩ দিন । সুষম খাদ্য গ্রহণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত । 

(5) মন সুস্থ রাখতে সৃষ্টিশীল কাজ করা উচিত ।

(6) বাইরে বেরোলে মাঝে মাঝে হাত স্যানিটাইজ করা উচিত । 

(7) পশু বাজার এড়িয়ে চলা উচিত । 

(8) বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বাইরের পোষাক সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলা । সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত । 

উপসংহার : প্রকৃতিকে যথেচ্চরূপে ব্যবহার করে সমাজ যখন উন্নয়নের চরম শিখরে পৌছয় ঠিক তখনই প্রকৃতিও তার উপযুক্ত শাস্তির নিদান দেন । সবকিছুকে আবার সুন্দর করে তোলার প্রয়াস দেখা যায় । এই মারণ ভাইরাসের কারণে বিপুল মানুষের মৃত্যু , অর্থনৈতিক মন্দা লক্ষ্য করা গেলেও একই মাঝে প্রকৃতি যেন নিজেকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে নিয়েছেন এই লকডাউনের মধ্যে । তাই বলা যায় যে , এই মারণ ভাইরাসের দরুণ এক অপ্রাকৃত আনন্দের জগত সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশের মাঝে । 

  1. ছাত্রজীবন বাংলা রচনা।

Ans: ভূমিকা : মানবজীবনে শিক্ষা ও বিদ্যাচর্চার কোনো বয়স নেই । তবুও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও বিদ্যার্জনের সময়কে সাধারণভাবে ছাত্রজীবন বলা চলে । ছাত্রজীবন জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময় । এসময় মানুষের মন থাকে কলুষতা মুক্ত । জীবনে চলার পথের পাথেয় মানুষ ছাত্রজীবনে সঞ্চয় করে । ছাত্রজীবনে অর্জিত সুশিক্ষা , সৌজন্য , শিষ্টাচার , সমাজসেবা , দেশপ্রেম মানুষের মধ্যে জীবনভর বিরাজ করে । তাই এসময় পড়াশোনা , বিদ্যার্জন ও নানা দিকে ব্যুৎপত্তি অর্জন করলে বাকি জীবনটা বেশ মসৃণভাবে কাটে । 

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার : মানবজীবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সদ্‌গুণ হলো সৌজন্য ও শিষ্টাচার । শিষ্টাচারের মধ্য দিয়ে ছাত্র – ছাত্রীরা নিজের অন্তরাত্মার দেখা পায় । নিজেকে ভালোভাবে জানা ও অন্যকে বোঝার জন্য ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের সাধনা করতে হয় । প্রকৃত জ্ঞানলাভ করতে হলে ছাত্র – ছাত্রীদের শিষ্টাচারী হতেই হবে । কেননা নিরপেক্ষতাবোধ ও স্বার্থত্যাগের মতো মহৎ মনোবৃত্তি মানুষ শিষ্টাচারের মধ্য দিয়েই অর্জন করে । ছাত্রজীবনে মানুষকে বিদ্যার্জনের পাশাপাশি শিষ্টাচারের প্রাথমিক পাঠও গ্রহণ করতে হয় । অন্যদিকে , সৌজন্য মানুষের জীবনে অলংকার স্বরূপ । এটা এমন এক মনোবৃত্তি যেখানে আমাদের কোনো বিশেষ ব্যয় হয় না । মিষ্টভাষা , মিতভাষা , নম্রতা , ভদ্রতা মিলেমিশে সৌজন্যবোধ গড়ে উঠে । আসলে যাকে কিছু দেওয়া যায় না , তাকেও একটু সৌজন্য দেখানো যায় । এজন্য ছাত্রজীবনেই সৌজন্যবোধের পাঠ গ্রহণ করতে হবে যা সারা জীবন মানুষকে চলার পথে শক্তি জোগাবে ও সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে । 

ছাত্রজীবনে সমাজভাবনা : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । ছাত্রাবস্থায়ই মানুষকে সামাজিকতা , সমাজভাবনা , সমাজসেবা , পরিবেশ সচেতনতা , পারস্পরিক সহযোগিতা , সহমর্মিতা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্জন করতে হয় । “ মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য ” –এই মহান বাণী নিজের জীবনে অনুশীলন ও প্রয়োগের শ্রেষ্ঠ সময় ছাত্রজীবন । কর্মজীবনে কিংবা সংসারজীবনে প্রতিদিন আমাদের এসব বিষয়ের মুখোমুখি হতে হয় । তাই বিদ্যার্জনের পাশাপাশি ছাত্রজীবনে সমাজভাবনা , সমাজসেবা , পরিবেশ সচেতনা বিষয়ে যথাসম্ভব ব্যুৎপত্তি অর্জন করা জরুরি।

ছাত্রজীবনে নিয়মশৃঙ্খলা : বিশ্বের প্রতিটি উন্নত দেশ ও সব মহান ব্যক্তির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার চর্চা । কোন বিষয়টি কখন জরুরি , কোন কাজ ফেলে রাখা উচিত নয় , ব্যক্তিজীবনে কখন কী করতে হবে , কীভাবে চলতে হবে , কী করা উচিত নয় ইত্যাদি বিষয়ে ছাত্রজীবন থেকে সজাগ থাকলে বাকি জীবনটা অনেক মসৃণভাবে কেটে যায় । তাই পড়াশোনা ও বিদ্যার্জনের পাশাপাশি ছাত্রজীবনে নিয়মশৃঙ্খলার প্রাথমিক পাঠও গ্রহণ করতে হবে । 

ছাত্রজীবনে শরীরচর্চা : সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বাস । তাই ছাত্রজীবনে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া জরুরি । এজন্য প্রয়োজন প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা । এতে শরীর নীরোগ ও নির্মল থাকে । নিয়মিত ব্যায়াম , সাঁতার , খেলাধুলা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে মনের স্বাস্থ্য ও তারুণ্যও বজায় থাকে । ছাত্রজীবনে গড়ে তোলা শরীর ও মনের সতেজতা বাকি জীবনে চলার পথে শক্তি জোগায় । x 

উপসংহার : আজকের ছাত্র – ছাত্রী আগামী দিনের সচেতন নাগরিক । দেশ ও জাতিকে পরিচালনার দায়িত্ব বর্তায় তাদের উপর । বর্তমান সমাজে অপসংস্কৃতি , অশিষ্টের দাপাদাপি দিন দিন বাড়ছে । ছাত্রজীবনে অর্জিত শিষ্টাচার কর্মজীবনে প্রয়োগ করে তারা সাফল্য পাবে । সেই সঙ্গে অশিষ্টের বাড়বাড়ন্ত রুখতেও এ শিষ্টাচার কাজে লাগে । তারুণ্যের ধর্মই অন্যায় – অসুন্দরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো । আর এই রুখে দাঁড়ানো যেন শিষ্টাচারের সীমা লঙ্গন না করে তার শিক্ষা মানুষ পায় ছাত্রজীবনে । সবদিক মিলিয়ে , ছাত্রজীবন এমনই এক প্ল্যাটফর্ম যেখানে অনেক পথ এসে মিশেছে — এর মধ্যে কোনটি বেছে নিলে জীবনটা মসৃণ হবে , দেশ – দশেরও মঙ্গল হবে তার সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত ও পাঠ ছাত্রজীবনেই নিতে হবে । 

  1. জাতীয় সংহতির উদ্দেশ্য 

ভারতীয় জীবনচর্চা 

জাতীয় সংহতির সমস্যা হিন্দু – মুসলমান সমস্যা এবং অন্যান্য সমস্যা 

ভূমিকা জাতীয় সংহতি ও বিচ্ছিন্নতাবাদ সংহতির বিভিন্ন রূপ — ভাষাগত , শ্রেণিগত , আচরণগত , ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সংহতি জাতীয় সংহতির অবনতি ও সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ সংহতি রক্ষায় ছাত্রসমাজ উপসংহার।

নানা ভাষা নানা মত 

নানা পরিধান 

বিবিধের মাঝে দেখ 

মিলন মহান

– অতুলপ্রসাদ সেন 

Ans: ভূমিকা : বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই ভারতবর্ষের আদর্শগত ধারণা । জাতীয় সংহতি হলো জাতীয় ঐক্য । জাতীয় সংহতি না থাকলে দেশ নানাভাগে । বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং দেশের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যায় । তাই দেশের জাতীয় সংহতি থাকা একান্তই প্রয়োজন ।

জাতীয় সংহতির উদ্দেশ্য : জাতীয় জীবনে ভাষা , ধর্ম , বর্ণ , জাতি নির্বিশেষে সকলের মধ্যে আন্তরিক মেলবন্ধন ঘটানোই জাতীয় সংহতির উদ্দেশ্য । জাতীয় সংহতি যদি শক্তিশালী হয় তা হলে দেশের অন্তর্গত সামাজিক , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলির চরম বিকাশ লক্ষ করা যায় । আর যদি সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদে দেশ ছেয়ে যায় তা হলে সেই দেশের সভ্যতা অতল গভীরে তলিয়ে যায় ।

ভারতীয় জীবনচর্চা : সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতি ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে আসছে । বিভিন্ন সময়ে শক , হুন , মোঘল , পাঠান এবং সবশেষে ইংরেজ ভারতবর্ষের সংহতির ঐতিহ্যে আঘাত হেনেছে । মানুষ হতাশার অন্ধকারে পথ হাতড়েছে কিন্তু হামাগুড়ি দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে আবার বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে প্রতিষ্ঠা করেছে । → 

সংহতির বিভিন্ন রূপ : ভারতবর্ষের জাতীয় সংহতির বিভিন্ন রূপ লক্ষ করা যায় । যেমন ১. ভাষাগত সংহতি , ২. শ্রেণিগত সংহতি , ৩.  আচরণগত সংহতি , ৪. ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সংহতি । 

১. ভাষাগত সংহতি : হিন্দি ও ইংরেজি রাষ্ট্রভাষা হলেও রাজ্যে রাজ্যে বাংলা , ওড়িয়া , তেলেগু প্রভৃতি কতই না আঞ্চলিক ভাষা এদেশের মানুষ ভাবের আদান প্রদান ঘটায় অথচ এই বিভিন্ন ভাষা – ভাষীর মধ্যে মিলনক্ষেত্রে রচিত হয়েছে জাতীয় সংহতি । 

২. শ্রেণিগত সংহতি : হিন্দু , মুসলমান , জৈন , খ্রিস্টান প্রভৃতি শ্রেণি ও বর্ণের মানুষ এই ভারতভূমিতে বাস করে আসছে । কিন্তু তারা পরস্পর পরস্পরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ করে ভারতবর্ষের গৌরব বৃদ্ধি করেছে । 

৩. আচরণগত সংহতি : যেখানে নানা বর্ণ , ধর্ম ও বহু ভাষাভাষী মানুষ বসবাস করছে এখানে তাদের আচার আচরণও যে ভিন্ন ধরনের হবে তাই স্বাভাবিক কিন্তু আদিলগ্ন থেকেই সকলের আচরণকে মেনে নিয়ে একই ভূখণ্ডে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে ।

৪. ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সংহতি : ভারতবাসীর ধর্মীয় বিশ্বাস এক নয় , আবার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ভিন্ন ধরনের তবুও ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফল্গু ধারার মতো প্রবাহিত হয়ে হিন্দু , মুসলমান , জৈন , খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মের মানুষের মধ্যে মিলনসেতু রচনা করেছে । 

জাতীয় সংহতির অবনতি ও সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ : ঐতিহ্যবাহী ভারতবর্ষ জাতীয় ঐক্যকে অটুট রাখলেও আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ।

হিন্দু – মুসলমান সমস্যা : ব্রিটিশ শক্তি দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়ার পর থেকেই হিন্দু – মুসলিম বার বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে যার জ্বলন্ত প্রমাণ বাবরি মসজিদ বিতর্ক , কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বর্তমানে ভারতবর্ষকে ভাবিয়ে তুলেছে । 

অন্যান্য সমস্যা : পশ্চিমবঙ্গের কামতাপুরি , জনযুদ্ধ গোষ্ঠী , মাওবাদী প্রভৃতি সংগঠন হিংসাত্বক কার্যকলাপ দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে । এর মধ্যে আবার চলছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীদের সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রচেষ্টা । 

সংহতি রক্ষায় ছাত্রসমাজ : আজকের ছাত্ররা আগামী দিনের কর্মবীর । তাই তাদের অন্ধ কুসংস্কার , গোঁড়ামি , রাজনীতি ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে দেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে । 

জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে— 

“ ধর্মের বেশে মোহ এসে ফেরে 

ধয়ে অন্ধ সেজন মায়ে তার শুধু মার ” 

সব শ্রেণীর মানুষকে বোঝাতে হবে

 “ সবার উপরে মানুষ সত্য , তাহার উপরে নাই ” 

সর্বোপরি মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে ।