MCQ | Madhyamik Geography Bharater Jolsampad Question and Answer :
- ভারতের জাতীয় নদী –
(A) গঙ্গা
(B) ব্রহ্মপুত্র
(C) সিন্ধু
(D) কাবেরী
Ans: (A) গঙ্গা
- ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতে কী নামে পরিচিত ?
(A) ডিহং
(B) সাংপো
(C) লোহিত
(D) দিবং
Ans: B) সাংপো
- ভারতের দীর্ঘতম উপনদী হল –
(A) শতদু
(B) যমুনা
(C) হুগলি
(D) শন
Ans: (B) যমুনা
- উৎপত্তিস্থলে গঙ্গানদী কী নামে পরিচিত ?
(A) ভাগীরথী
(B) গঙ্গোত্রী
(C) হুগলি
(D) গঙ্গা
Ans: (A) ভাগীরথী
- উৎপত্তিস্থল থেকে কতদূর পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি ?
(A) হরিদ্বার
(B) দেবপ্রয়াগ
(C) বিহার
(D) মুরশিদাবাদের ধূলিয়ান
Ans: (A) হরিদ্বার
- গঙ্গার একটি বামতীরের উপনদী হল—
(A) যমুনা
(B) শন
(C) চম্বল
(D) গোমতী
Ans: (D) গোমতী
- হাওড়া ও কলকাতা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় । গঙ্গার নাম হয় –
(A) ভাগীরথী
(B) সুবর্ণরেখা
(C) গঙ্গা
(D) হুগলি
Ans: (D) হুগলি
- ভারতে যে নদীটি সর্বাধিক পরিমান জল বহন করে তার নাম হল –
(A) গঙ্গা
(B) ব্রহ্মপুত্র
(C) সিন্ধু
(D) যমুনা
Ans: (B) ব্রহ্মপুত্র
- থর মরুভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কোন্ নদী ?
(A) তাপ্তি
(B) নর্মদা
(C) লুনি
(D) মহানদী
Ans: (C) লুনি
- অলকানন্দা নদীটি কোথায় গঙ্গায় মিলিত হয়েছে ?
(A) দেবপ্রয়াগ
(B) গোমুখ গুহা
(C) এলাহাবাদ
(D) বিহার
Ans: (A) দেবপ্রয়াগ
- লুনি নদী পতিত হয়েছে –
(A) কচ্ছ উপসাগর
(B) খাম্বাত উপসাগর
(C) কচ্ছের রণে
(D) কাম্বে উপসাগরে
Ans: (C) কচ্ছের রণে
- তান্তী নদীটি কোথায় পতিত হয়েছে ?
(A) খাম্বাত উপসাগরে
(B) আরব সাগরে
(C) কাম্বে উপসাগরে
(D) কচ্ছের রণে
Ans: (C) কাম্বে উপসাগরে
- চত্র হিরাকুদ বাঁধ কোন্ নদীর ওপর অবস্থিত ?
(A) সুবর্ণরেখা
(B) কৃষ্ণা
(C) কাবেরী নদী
(D) মহানদী
Ans: (D) মহানদী
- নর্মদা হল একটি –
(A) পূর্ববাহিনী
(B) উত্তরবাহিনী
(C) পশ্চিমবাহিনী
(D) দক্ষিণবাহিনী
Ans: (C) পশ্চিমবাহিনী
- দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলা হয় কোন্ নদীকে ?
(A) নর্মদা
(B) কৃষ্ণা
(C) পেন্নার
(D) গোদাবরী
Ans: (D) গোদাবরী
- উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের জলবিভাজিকা হল—
(A) হিমালয় পর্বত
(B) সাতপুরা পর্বত
(C) বিন্ধ্য পর্বত
(D) আরাবল্লী পর্বত
Ans: (C) বিন্ধ্য পর্বত
- গোদাবরী নদী উৎপন্ন হয়েছে কোথা থেকে ?
(A) ট্রিম্বক মালভূমি
(B) দণ্ডকারণ্য
(C) মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর
(D) পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রহ্মগিরি পাহাড়
Ans: (A) ট্রিম্বক মালভূমি
- শিবসমুদ্রম জলপ্রপাতটি কোন নদীর ওপর অবস্থিত ?
(A) নর্মদা
(B) গোদাবরী
(C) সিন্ধু
(D) কাবেরী
Ans: (D) কাবেরী
- নিম্নলিখিত কোন্ নদীর মোহানায় বদ্বীপ নেই ?
(A) কৃষ্ণা
(B) গোদাবরী
(C) নর্মদা
(D) মহানদী
Ans: (C) নর্মদা
- ভারতের দুটি পশ্চিমবাহিনী নদী হল –
(A) কৃষ্ণা ও কাবেরী
(B) নর্মদা ও তাপ্তি
(C) মহানদী ও মাহী
(D) গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র
Ans: B) নর্মদা ও তাপ্তি
- সবরমতী নদীর তীরে যে – বিখ্যাত শহরটি অবস্থিত তার নাম হল –
(A) সুরাট
(B) গান্ধিনগর
(C) পোরবন্দর
(D) আমেদাবাদ
Ans: (B) গান্ধিনগর
- হুড়ু জলপ্রপাতটি কোন্ নদীর ওপর অবস্থিত ?
(A) সুবর্ণরেখা
(B) দামোদর
(C) কাবেরী
(D) সরাবতী
Ans: A) সুবর্ণরেখা
- ভারতের বৃহত্তম উপহ্রদ হল –
(A) ভেম্বানাদ
(B) চিল্কা
(C) কোলেরু
(D) পুলিকট
Ans: (B) চিল্কা
- নর্মদা ও তাপ্তি নদী দুটি কোথা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ?
(A) হিমবাহ উপত্যকা
(B) গ্রস্ত উপত্যকা
(C) সমভূমি
(D) গিরিখাত
Ans: (B) গ্রস্ত উপত্যকা
- লোকটাক হ্রদ কোথায় অবস্থিত ?
(A) মণিপুর
(B) ত্রিপুরা
(C) মিজোরাম
(D) নাগাল্যান্ড
Ans: (A) মণিপুর
- হরিদ্বার ও বারাণসী শহর দুটি কোন নদীর তীরে অবস্থিত ।
(A) যমুনা
(B) শোন
(C) ঘর্ঘরা
(D) গঙ্গা
Ans: (D) গঙ্গা
- গঙ্গানদীর দৈর্ঘ্য কোন রাজ্যে সবথেকে বেশি ?
(A) উত্তরাখন্ড
(B) পশ্চিমবঙ্গ
(C) বিহার
(D) উত্তরপ্রদেশ
Ans: (D) উত্তরপ্রদেশ
- গুয়াহাটি কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত ?
(A) ব্রহ্মপুত্র
(B) তিস্তা
(C) সিন্ধু
(D) তিস্তা
Ans: (A) ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্ব্য ও সাতপুরা পর্বতের মাঝে অবস্থিত একটি নদী হল—
(A) সরাবতী
(B) মাহী
(C) নর্মদা
(D) কাবেরী
Ans: (D) কাবেরী
- ডিহং , ড্রিবং , লোহিতের মিলিত প্রবাহের নাম কী ?
(A) ব্রহ্মপুত্র
(B) যমুনা
(C) সাংপো
(D) সুবর্ণরেখা
Ans: (A) ব্রহ্মপুত্র
- বিশ্বের উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদ হল –
(A) কালিভেলি
(B) সল্টলেক
(C) প্যাংগং
(D) উলার
Ans: (C) প্যাংগং
- ভারতের একটি স্বাদু জলের হ্রদ হল –
(A) অষ্টমুদী
(B) পুলিকট
(C) কোলেরু
(D) চিল্কা
Ans: (C) কোলেরু
- কোন অঞ্চলের লবণাক্ত জলের হ্রদকে প্লায়া বলে ?
(A) উত্তরপ্রদেশ
(B) রাজস্থান
(C) গুজরাট
(D) অন্ধ্রপ্রদেশ
Ans: (B) রাজস্থান
- নাগার্জুন সাগর জলাশয় কোন নদীর ওপর নির্মিত ?
(A) গোদাবরী
(B) গঙ্গা
(C) যমুনা
(D) কৃষ্ণা
Ans: (D) কৃষ্ণা
- দামোদর নদের ওপর নির্মিত একটি বাঁধ হল –
(A) তিলাইয়া
(B) মাইথন
(C) পাঞ্চেৎ
(D) কোনার
Ans: (C) পাঞ্চেৎ
- স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী পরিকল্পনা হল –
(A) ভাক্রা – নাঙ্গাল
(B) নাগার্জুন সাগর
(C) তুঙ্গভদ্রা
(D) DVC
Ans: (D) DVC
- হীরাকুঁদ প্রকল্প কোন্ রাজ্যে অবস্থিত ?
(A) ঝাড়খণ্ড
(B) বিহার
(C) ছত্তিশগড়
(D) ওড়িশা
Ans: (D) ওড়িশা
- ভাক্রা – নাঙ্গাল কোন নদীর ওপর নির্মিত পরিকল্পনা ?
(A) ইরাবতী
(B) চন্দ্রভাগা
(C) তিস্তা
(D) শতদ্রু
Ans: (D) শতদ্রু
- পশ্চিমবঙ্গের কোন্ নদীকে ‘ দুঃখের নদী ‘ বলে ?
(A) তিস্তা
(B) কংসাবতী
(C) দামোদর
(D) সুবর্ণরেখা
Ans: (C) দামোদর
- বরাকর , বোকারো ও কোনার কোন নদীর তিনটি শাখানদী ?
(A) শতদ্রু
(B) মহানদী
(C) দামোদর
(D) সুবর্ণরেখা
- ভারতের মধ্যে কোন্ রাজ্যে জলসেচ পদ্ধতির সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা যায় ?
(A) পাঞ্জাব
(B) হরিয়ানা
(C) পশ্চিমবঙ্গ
(D) উত্তরপ্রদেশ
- ইরাবতী নদী কোন্ নদীর উপনদী ?
(A) সিন্ধু
(B) গঙ্গা
(C) ব্রক্ষ্মপুত্ৰ
(D) ভাগীরথী
Ans: (A) সিন্ধু
- গঙ্গানদীর প্রধান শাখা নদীটি হল –
(A) পদ্মা
(B) গোদাবরী
(C) তিস্তা
(D) মানস
Ans: (D) মানস
- ব্রহ্মপুত্র নদের বৃহত্তম উপনদী হল—
(A) লোহিত
(B) তোর্সা
(C) যমুনা
(C) মানস
Ans: (C) মানস
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলসম্পদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jolsampad Question and Answer :
- ভারত ও দক্ষিণ ভারতের জলবিভাজিকা কোন্টি ?
Ans: বিন্ধ্য পর্বত ।
- সিন্ধু নদের উৎপত্তি কোথা থেকে হয় ?
Ans: তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত জলধারা সিন – কা – বাব থেকে ।
- সিন্ধু নদের যে কোনো ২ টি উপনদীর নাম লেখো ।
Ans: শতদ্রু / বিপাশা / ইরাবতী / চন্দ্রভাগা / বিতস্তা ।
- বিতস্তা ( ঝিলাম ) নদীর তীরে জম্মু ও কাশ্মীরের কোন শহর অবস্থিত ?
Ans: শ্রীনগর ।
- ভারতের দীর্ঘতম নদী কোনটি ?
Ans: গঙ্গানদী ।
- যমুনা নদীর উৎপত্তি কোন্ হিমবাহ থেকে হয়েছে ?
Ans: যমুনোত্রী হিমবাহ ।
- গঙ্গার ডান তীরের উপনদীর নাম লেখো ।
Ans: শোন / যমুনা ।
- গঙ্গার বাম তীরের ২ টি উপনদীর নাম লেখো ।
Ans: রামগঙ্গা / গোমতী / ঘর্ঘরা / গণ্ডক / কোশী / বুড়িগণ্ড / মহানন্দা ইত্যাদি ।
- উৎপত্তিস্থলে গঙ্গানদীর নাম কী ?
Ans: ভাগীরথী ।
- কোন্ দুই নদীর মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত ?
Ans: ভাগীরথী ও অলকানন্দা ।
- ভারতে গঙ্গার প্রধান শাখানদী কোনটি ?
Ans: ভাগীরথী – হুগলি ।
- গঙ্গানদীর যে শাখা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তার নাম কী ?
Ans: পদ্মা নদী ।
- কোথায় গঙ্গানদী দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে ?
Ans: মুরশিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে ।
- শতধু নদী কোথা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে ?
Ans: শিল্পকিলা গিরিপথের কাছে ।
- ভাকা – নাগাল বাঁধ কোন নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ।
Ans: শতধু নদী ।
- গঙ্গানদীর ওপর নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের একটি বাসের নাম লেখো ।
Ans: ফরাক্কা বাঁধ ।
- ব্রহ্মপুত্র নদ কোন নামে ভারতে প্রবেশ করেছে ?
Ans: ডিহং নামে ।
- ব্রহ্মপুত্র নদ কোন্ ৩ টি নদের মিলিত প্রবাহ ?
Ans: ডিহং , ডিবং ও লোহিত ।
- রাজস্থানের একটি নদীর নাম লেখো ।
Ans: লুনি ।
- ভারতের একটি অন্তর্বাহিনী নদীর নাম লেখো ।
Ans: রূপনগর / মেধা / লোকটাক ।
- সিন্ধু কোন্ কোন্ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ?
Ans: চিনের তিব্বত , পাকিস্তান ও ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর ।
- ভারতে জম্মু ও কাশ্মীর অংশে সিন্ধুর সাথে কোন কোন নদী মিলিত হয়েছে ?
Ans: জাস্কর , সায়ক , গিলগিট , দ্রাস ইত্যাদি ।
- ব্রহ্মপুত্র নদ কোন্ কোন্ দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ।
Ans: চিনের তিব্বত , ভারতের অসম ও বাংলাদেশ ।
- ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপের নাম লেখো ।
Ans: মাজুলী দ্বীপ ।
- নর্মদা নদীতে অবস্থিত একটি জলপ্রপাতের নাম লেখো ।
Ans: ধুঁয়াধর জলপ্রপাত ।
- ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি ?
Ans: গেরসোপ্পা জলপ্রপাত ।
- মহানদীর ওপর কোন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ?
Ans: হীরাকুঁদ বাঁধ ।
- দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী কোনটি ?
Ans: গোদাবরী ।
- দক্ষিণ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী কোনটি ?
Ans: কৃষ্ণা নদী ।
- কৃষ্ণা নদীতে নির্মিত জলাধারের নাম লেখো ।
Ans: নাগার্জুন সাগর জলাধার ।
- কাবেরী নদী কোন্ কোন্ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ?
Ans: কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু ।
- তিরুচিরাপল্লী কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত ?
Ans: কাবেরী নদী ।
- ভারতের দুই পশ্চিমবাহিনী নদীর নাম লেখো ।
Ans: নর্মদা ও তাপ্তি ।
- গঙ্গার মূল শাখা বাংলাদেশের কোন নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে ?
Ans: পদ্মা নদীর সঙ্গে ।
- কাবেরী নদীর একটি জলপ্রপাতের নাম লেখো ।
Ans: পদ্মার সঙ্গে ।
- কুমায়ুন হিমালয়ের ২ টি হ্রদ বা তালের নাম লেখো ।
Ans: নৈনিতাল / ভীমতাল / সাততাল / পুনাতাল ।
- জম্মু – কাশ্মীর রাজ্যের দুটি হ্রদের নাম লেখো ।
Ans: ডাল , উলার ।
- উত্তর – পূর্ব ভারতের একটি বিখ্যাত হ্রদের নাম লেখো ।
Ans: লোকটাক হ্রদ ।
- ভারতের মরু অঞ্চলের দুটি হ্রদের নাম লেখো ।
Ans: সম্বর , পুষ্কর ।
- রাজস্থান অঞ্চলের লবণাক্ত জলের হ্রদকে কী বলে ?
Ans: প্লায়া ।
- মালাবার উপকূলের উপহ্রদগুলিকে কী বলে ?
Ans: কয়াল ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলসম্পদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jolsampad Question and Answer :
- গঙ্গানদীর উৎস ও মোহানার নাম লেখো ।
Ans: গঙ্গানদীর উৎসস্থল হল গঙ্গোত্রী হিমবাহের উ 3 প্রশ্ন > উত্তর : ‘ গোমুখ ‘ নামক তুষার গুহা ।
- কোন দুটি নদী এবং কোথায় মিলিত হয়ে গঙ্গা নাম m হয়েছে ?
Ans: ভাগীরথী ও অলকানন্দা দেবপ্রয়াগে মিলিত হয়ে গঙ্গানদীর সৃষ্টি করেছে ।
- গঙ্গানদীর বাম তীরের দুটি উপনদীর নাম লেখো ।
Ans: গঙ্গানদীর বামতীরের দুটি উপনদীর নাম হল – গোমতী / ঘর্ঘরা / গণ্ডক / কোশী / বুড়িগণ্ডক ।
- গঙ্গার ডান তীরের দুটি উপনদীর নাম লেখো ।
Ans: গঙ্গার ডান তীরের দুটি উপনদী হল – যমুনা / শোন ।
- ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সিন্ধু নদের উপনদীগুলির নাম লেখো ।
Ans: শতদ্রু ( শতলজ ) , বিপাশা ( বিয়াস ) , ইরাবতী ( রাডি ) , চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তা ( ঝিলাম ) ।
- গঙ্গার দুটি শাখানদীর নাম লেখো ।
Ans: গঙ্গার দুটি শাখানদী হল— ভাগীরথী – হুগলি এবং পদ্মা ।
- ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থলের নাম লেখো ।
Ans: ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তিস্থল — তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ । ব্রহ্মপুত্র নদের পতনস্থলবঙ্গোপসাগর ।
- ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদীর নাম লেখো । কোন্ কোন্ নদীর মিলিত প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র ?
Ans: ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি উপনদী হল – সুবর্ণসিড়ি / তিস্তা / তোর্সা / মানস / ধানসিড়ি / সঙ্কোশ । দিহং , দিবং ও লোহিত নদীর মিলিত প্রবাহের নাম ব্রহ্মপুত্র ।
- ভারতের প্রধান জলবিভাজিকাগুলির নাম লেখো ।
Ans: ভারতের দুটি প্রধান জলবিভাজিকা হল বিন্ধ্যপর্ব ও পশ্চিমঘাট পর্বত এবং উত্তরের হিমালয় পর্বত ।
- রাজস্থানের প্রধান নদী কী ? এর উৎপত্তি পতনস্থল কোথায় ?
Ans: রাজস্থানের প্রধান নদী হল লুনি নদী । উৎপত্তি আজমেড়ের আন্নাসাগর হ্রদ । পতনস্থল কচ্ছের রণ । লুনি নদী ।
- অন্তর্বাহিনী নদী কাকে বলে ?
Ans: যে – সমস্ত নদীর প্রবাহপথ কোনো দেশ বা মহাদেশে মধ্যেই সীমাবদ্ধ — অর্থাৎ যেসব নদী স্থলভাগের বাইরে কোনে সাগর বা জলভাগে না – পড়ে স্থলভাগের মধ্যেই কোনো হ্রদ ব জলাশয়ে পতিত হয় কিংবা স্থলভাগেই বিলীন হয়ে যায় , সেইস নদীকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে । উদাহরণ — ইম্ফল , ঘাঘর ইত্যাদি ।
- উত্তর ভারতের এবং দক্ষিণ ভারতের তিনটি করে নদীর নাম করো ।
Ans: উত্তর ভারতের তিনটি উল্লেখযোগ্য নদী হল — গ সিন্ধু এবং ব্রহ্মপুত্র । দক্ষিণ ভারতের তিনটি উল্লেখযোগ্য ন হল— গোদাবরী , কৃয়া ও কাবেরী ।
- ভারতের ২ টি পশ্চিমবাহিনী ও ২ টি পূর্ববাহিনী নদীর নাম লেখো ।
Ans: ভারতের ২ টি পশ্চিমবাহিনী নদী হল — নর্মদা / তাি সবরমতী / মাহী এবং ২ টি পূর্ববাহিনী নদী হল মহানদী / গোদাবরী কৃষ্ণা / কাবেরী ।
- গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল ও মোহানা কোথায় ?
Ans: গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল — পশ্চিম | পর্বতমালার ত্রিম্বক পাহাড় । পতনস্থল— ওড়িশার কটকে কাছে বঙ্গোপসাগরে ।
- নর্মদা নদীর উৎপত্তিস্থল ও পতনস্থলের লেখো ।
Ans: নর্মদা নদীর উৎপত্তিস্থল — মহাকাল পর্বতের অমরকন শৃঙ্খ । পতনস্থল — ব্রোচের কাছে কাম্বে বা খাম্বাত উপসাগরে ।
- উত্তর ভারতের নদনদীগুলির নদীখাতের ঢাল সামস্যপূর্ণ নয় কেন ?
Ans: উত্তর ভারতের নদনদীগুলি অনেক ক্ষেত্রেই পর্বতকে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে নিম্নভূমিতে অবতরণ করেছে , তাই এদের উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদীখাতের ঢাল সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । তা ছাড়া উত্তর ভারতের নদীগুলি বয়সে নবীন , তাই এইসব নদীগুলোর নদীখাতের ঢাল সামস্যপূর্ণ নয় ।
- যমুনা নদী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
Ans: যমুনা নদী হল গঙ্গার প্রধান উপনদী । যমুনা কুমায়ুন হিমালয়ের যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সঙ্গে ডান তীরস্থ উপনদী হিসেবে মিলিত হয়েছে । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০০ কিমি । চম্বল , সিন্টু , কেন হল এর ডান তীরস্থ উপনদীসমূহ ।
- গঙ্গার প্রবাহপথে সৃষ্টি হওয়া কতকগুলি শহরের নাম লেখো ।
Ans: গঙ্গার প্রবাহপথে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন শহর : উচ্চ , মধ্য ও নিম্ন গতিতে গঙ্গার উভয় তীরে প্রাচীনকাল থেকেই বহু জনপদ গড়ে উঠেছে । এদের মধ্যে হরিদ্বার , কানপুর , এলাহাবাদ , বারাণসী , পাটনা , মুঙ্গের , ভাগলপুর , নবদ্বীপ ও কলকাতা উল্লেখযোগ্য । যমুনার তীরের প্রধান শহরগুলি হল — দিল্লি , মথুরা ও আগ্রা ।
- উত্তর ভারতের নদনদীগুলি দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলির মতো জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী নয় কেন ?
Ans: উত্তর ভারতের নদনদীগুলি উচ্চপ্রবাহ ছাড়া মন্দস্রোতা হওয়ায় সমভূমি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুপযুক্ত । কিন্তু দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে সুবিধাজনক । উত্তর ভারতের নদনদীগুলির উৎস অঞ্চল অপেক্ষাকৃত দুর্গম এবং লোকালয় থেকে বহু দূরে অবস্থিত হওয়ার জন্যও উত্তর ভারতের নদনদীগুলিকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগানো যায় না ।
- ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী ? এটি কোন্ নদীর গতিপথে অবস্থিত ?
Ans: ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম হল গেরসোপ্পা জলপ্রপাত বা মহাত্মা গান্ধি জলপ্রপাত বা যোগ জলপ্রপাত ( Jog Falls , উচ্চতা ২৭৫ মিটার ) । এই জলপ্রপাতটি পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল থেকে উৎপন্ন হওয়া সরাবতী নদীর গতিপথে অবস্থিত ।
- ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী বন্দ্বীপ সৃষ্টি করেছে কেন ?
Ans: ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে , কারণ : ( ১ ) পূর্ববাহিনী নদীগুলোর মোহানায় স্রোতের বেগ কম , তাই পলিসঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি হয় । ( ২ ) পূর্ববাহিনী নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই সমস্ত নদীর জলে অবক্ষেপণযোগ্য পলির পরিমাণ বেশি । ( ৩ ) পূর্ববাহিনী নদীগুলির মোহানার গভীরতা কম হওয়ায় তুলনামূলকভাবে অগভীর বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন নদীর প্রচুর পলিসঞ্জয়ের ফলে , বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়া ভারতের পূর্ববাহিনী নদীগুলি ( যেমন : গঙ্গা , গোদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী , মহানদী প্রভৃতি ) নিজেদের মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে ।
- দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন ?
Ans: দক্ষিণ ভারতের ভূমির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী ।
- ভারতের বৃহত্তম নদী – দ্বীপের নাম ও অবস্থান উল্লেখ করো ।
Ans: ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপের নাম হল — ব্রহ্মপুত্র নদীর মাজুলি দ্বীপ । এটি ভারতের আসাম রাজ্যের জোরহাট জেলায় অবস্থিত ।
- অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী কাকে বলে ?
Ans: নদী সাধারণত ভূপৃষ্ঠ বরাবর প্রবাহিত হয় । কিন্তু চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে যেহেতু সচ্ছিদ্রতা বা প্রবেশ্যতা বেশি সেই কারণে নদী ভূপৃষ্ঠ দিয়ে প্রবাহিত হতে হতে হঠাৎই ভূ – অভ্যন্তরে প্রবেশ করে । এই ধরনের নদীকে বলা হয় অন্তঃসলিলা বা ফল্গু নদী । চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল পেরিয়ে এই ধরনের নদী পুনরায় ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করে । যেমন — অন্ধ্রপ্রদেশের গোস্সানী নদী ।
- ভারতের এমন যে – কোনো দুটি নদীর নাম লেখো । যার গতিপথে জলপ্রপাত আছে ।
Ans: নর্মদা নদী ( ধুঁয়াধর জলপ্রপাত ) , কাবেরী নদী ( শিবসমুদ্রম ) জলপ্রপাত ।
- খাম্বাত উপসাগরে এবং বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে — এমন দুটি করে নদীর নাম লেখো ।
Ans: খাম্বাত উপসাগরে মিশেছে নর্মদা ও তাপ্তি নদী । বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে — কৃষ্ণা / কাবেরী / গোদাবরী নদী ।
- অলকানন্দা কোন্ কোন্ নদীর মিলিত প্রবাহ ?
Ans: পিন্ডার , মন্দাকিনী , ধৌলিগঙ্গা ও বিষেণ গঙ্গার মিলিত প্রবাহ হল অলকানন্দা ।
- হিমালয় থেকে সৃষ্ট নদীগুলি চিরপ্রবাহী হয় কেন ?
Ans: হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি প্রধানত তুষার গলা জলে পুষ্ট বলে সারাবছর তো জল থাকেই এমনকি নদীগুলি বর্ষাকালে বর্ষার জলে পুষ্ট বলেও সারা বছরব্যাপী নদীগুলিতে হ জলের প্রবাহ বজায় থাকে ।
- দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা কেন ?
Ans: দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলাস্তর দ্বারা গঠিত প্রাচীন ও বন্ধুর মালভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত । উঁচুনীচু বন্ধুর ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ও নদীর ঢাল অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এই দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা ।
- দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয় কেন ?
Ans: দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি কেবলমাত্র বর্ষার জলে পুষ্ট । হিমবাহ বা বরফগলা জল এরা পায় না বলে নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না । তাই এই নদীগুলি চিরপ্রবাহী নয় ।
- উত্তর ভারতের নদীগুলিকে পূর্ববর্তী নদী বলা হয় কেন ?
Ans: উত্তর ভারতের হিমালয়ের উত্থানের আগে থেকেই এখানের নদীগুলির অস্তিত্ব ছিল । হিমালয় উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে নদীগুলি গতি পরিবর্তন করে । তাই উত্তর ভারতের নদীগুলিকে পূর্ববর্তী নদী বলা হয় ।
- দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিকে অনুগামী নদী বলা হয় । কেন ?
Ans: দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি ভূমির প্রাথমিক ঢাল অনুযায়ী প্রবাহিত হয় বলে , এই নদীগুলিকে অনুগামী নদী বলে ।
- লুনি নদী সম্পর্কে যা জান লেখো ।
Ans: রাজস্থানে অবস্থিত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৩০ কিমি । আনাসাগর হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কচ্ছের রণ অঞ্চলে ত পড়েছে ।
- ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের দুটি করে উপহ্রদের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের পূর্ব উপকূলের দুটি হ্রদ হল — চিল্কা ও পুলিকট উ এবং পশ্চিম উপকূলের দুটি উপহ্রদ হল ডেম্বানাদ ও অষ্টমুদি ।
- ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুটি মিষ্টি জলের হ্রদের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুটি মিষ্টি জলের হ্রদ । হলো ডাল ও উলার ।
- ভারতের কয়েকটি লবণাক্ত হ্রদের নাম লেখো ।
Ans: ভারতের কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ হল — রাজস্থানের ( সম্বর , পাচভদ্র , দিদওয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের লাডাক অঞ্চলের ও প্যাংগং ও সোমোরারি ।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলসম্পদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jolsampad Question and Answer :
- ব্রক্ষ্মপুত্র নদ ( Brahmaputra River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ : ( ১ ) তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে । ( ২ ) তিব্বতে সাংপো নামে পরিচিত এই নদীটি হিমালয়ের সমান্তরালে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রবাহিত হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের পূর্বে হিমালয়ের গভীর ও সংকীর্ণ | গিরিখাত অতিক্রম করে দিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । ব্রহ্মপুত্র নদ ( ৩ ) সাদিয়ার কাছে দিহং নদীটি , ডিবং ও লোহিত – এর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে আসাম উপত্যকার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবাহিনী হয়েছে । সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত এই ৭৫০ কিলোমিটার গতিপথে ব্রহ্মপুত্র মোটামুটি সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । ( ৪ ) ধুবড়ির কিছুদূরে দক্ষিণবাহিনী হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং ব ( ৫ ) পরিশেষে গঙ্গার মূলশাখা পদ্মার সঙ্গে মিলে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । উপনদী : প্রধান উপনদীগুলি হল — সুবর্ণসিড়ি , তিস্তা , তোর্সা , বরাক , কামেং , মানস , বুড়ি – দিহাং , দিসাং , কপিলি ও ধানসিড়ি । তীরবর্তী শহর : ডিব্ৰুগড় , তেজপুর , গুয়াহাটি হল ব্রঘুপুত্রের তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর । বৈশিষ্ট্য : এই নদী উপত্যকার ঢাল অত্যন্ত কম ফলে , নদী দি বাহিত বালি ও পলি জমে ব্রক্ষ্মপুত্রের নদীগর্ভে ভরাট হয়ে বহু চরের এন সৃষ্টি হয় । এই ধরনের একটি চর হল মাজুলী দ্বীপ , যাকে পৃথিবীর শি বৃহত্তম নদী চর বলা হয় ।
- সিন্ধু নদ ( Indus River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী সিন্ – কা – বার্ নামে জলাধার থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর – পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের হৃ মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে , পরে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে । এরপর সিন্ধু নদ নাঙ্গা পর্বতের উত্তর প্রান্ত ঘুরে কাশ্মীরের সীমানা ত্যাগ করে দক্ষিণ – পশ্চিম বাহিনী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে সিন্ধু নদ | পড়েছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৮০ কিমি ও এর মধ্যে ৭০৯ কিমি ভারতের অন্তর্গত । সম্পূর্ণ নদীর ৯৩ % পাকিস্তানে , ৫ % ভারতে ও ২ % চিনে অবস্থিত ।
উপনদী : শতুদ্র , বিপাশা , ইরাবতী , চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা সিন্ধুর প্রধান পাঁচটি উপনদী । এই পাঁচটি নদী অধ্যুষিত ভূমিকে পাঞ্জাব বলে । এই উপনদীগুলি পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে ।
ভারতে সিন্ধুর কয়েকটি উপনদী হল — গিলগিট , শায়ক , জাস্কার , হ্রাস ইত্যাদি । শতদ্রুর ভাক্রা – নাঙ্গাল জলসেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প হিমাচল প্রদেশে শস্য উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন এনেছে । তীরবর্তী শহর : বিপাশা নদীর তীরে মানালি , বিতস্তা নদীর তীরে শ্রীনগর , শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত ভাক্রা হল এখানকার তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর ।
- গঙ্গানদী ( Ganges River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ : ( ভারতের দীর্ঘতম নদী । মোট দৈর্ঘ্য ২,৫২৫ কিমি – এর মধ্যে ২,০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত ) ভারতের ‘ জাতীয় নদী ’ পুণ্যতোয়া গঙ্গা হল এই দেশের শ্রেষ্ঠ নদী । গঙ্গা কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং এই দুই মিলিত স্রোত গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে । গঙ্গা পরে শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অবতরণ করেছে । পরে বিহারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে মুরশিদাবাদ | জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে দুটি শাখায় বিশ্ব হয়েছে । গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী – হুগলি নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে ।
উপনদী : গঙ্গার প্রধান উপনদী যমুনা যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে এলাহাবাদ বা প্রয়াগে এসে ডান দিক থেকে গঙ্গায় পতিত হয়েছে , তাই এটি গঙ্গার ডানতীরের উপনদী । চম্বল , বেতোয়া , কেন প্রভৃতি যমুনার উল্লেখযোগ্য উপনদী , এরা দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । গঙ্গার ডান তীরের উপনদীগুলির মধ্যে শোন নদীটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য , এটিও দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । ব্রাহ্মণী , ময়ূরাক্ষী , অজয় , দামোদর , রূপনারায়ণ , কাঁসাই প্রভৃতি উপনদীগুলি ভাগীরথী – হুগলি নদীর ( গঙ্গার একমাত্র শাখানদী ) দক্ষিণ তীরে মিলিত হয়েছে । গঙ্গার বাম তীরের উপনদীগুলির মধ্যে রামগঙ্গা , গোমতী , ঘর্ঘরা , গণ্ডক , মহানন্দা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । গঙ্গা – ব্রহ্মপুত্র – মেঘনার বদ্বীপটি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম ।
তীরবর্তী শহর : গঙ্গার তীরে কলকাতা , পাটনা , বারাণসী , এলাহাবাদ , কানপুর , হরিদ্বার প্রভৃতি বিখ্যাত শহর ও তীর্থকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে ।
বৈশিষ্ট্য : গঙ্গানদীর গতিপথে উচ্চগতি , মধ্যগতি ও নিম্নগতি স্পষ্ট বোঝা যায় বলে গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে ।
- গোদাবরী নদী ( Godavari River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ : গোদাবরী নদী দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৬৫ কিলোমিটার । গোদাবরী নদীটি মহারাষ্ট্রের নাসিকের নিকট পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অন্তর্গত বিশ্বক পাহাড়ের ১৬০০ মি উচ্চতাযুক্ত ব্রহ্মগিরি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । এর পর নদীটি পূর্বমুখী হয়ে মহারাষ্ট্র , ছত্তিশগড় , মধ্যপ্রদেশ , তেলেঙ্গানা ও পরিশেষে অন্ধ্রপ্রদেশ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে ।
উপনদী : বামতীরের উপনদীগুলি হল ওয়েনগঙ্গা , পেনগঙ্গা , ওয়ার্ধা , পূর্ণা , প্রংহিতা , ইন্দ্রাবতী এবং ডানতীরের উপনদীগুলি হল মন্ত্রীরা , সিন্ধু , কণা ইত্যাদি । প্রংহিতা নদীটি পেনগঙ্গা , ওয়ার্ধা ও ওয়েনগঙ্গার মিলিত প্রবাহ । অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী নদীটি তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । শাখানদী তিনটি হল — গৌতমী , বশিষ্ট , বৈনতেয় ।
তীরবর্তী শহর : গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক , নিজামাবাদ , আন্দা ইত্যাদি শহর গড়ে উঠেছে ।
বৈশিষ্ট্য : এটি দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী বলে একে ‘ দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা ‘ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং গোদাবরী নদী তার মোহনায় পলি সঞ্চয় করে বিস্তীর্ণ বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে ।
- কাবেরী নদী ( Cauveri River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ : পশ্চিমঘাট পর্বতের ( কর্ণাটক রাজ্য ) । ব্রহ্মগিরি পর্বতের ১৩৪১ মিটার উঁচু তালাকাবেরী থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী কর্ণটিক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাবেরী পত্তনমের নিকট বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এই নদীর মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে ।
উপনদী ও শাখানদী : কাবেরী নদীর ডানতীরের উপনদীগুলি হল ভবানী , সুবর্ণবর্তী ও কবিনা এবং বামতীরের উপনদীগুলি হল । অর্কবর্তী , হেমবতী ও সিমসা । এর শাখানদী হল কালিদাস । তীরবর্তী শহর : কাবেরী নদীর তীরে শ্রীরঙ্গপত্তনম , মহীশুর , তিরুচিরাপল্লী , তাঞ্জাভুর ইত্যাদি শহর গড়ে উঠেছে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) কাবেরী নদী দক্ষিণ ভারতের অধিবাসীদের কাছে গঙ্গার মতো পবিত্র । এই কারণে অনেকে কাবেরী নদীকে ‘ দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা ‘ বলে । এর দৈর্ঘ্য ৮০৫ কিমি । ( ii ) কাবেরী নদীর গতিপথে বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত দেখতে । পাওয়া যায় ( যেমন — ছুনছানা কাটে , হোগেনাকাল ইত্যাদি ) যাদের মধ্যে শিবসমুদ্রম হল বিখ্যাত ।
- কৃষ্ণা নদী ( Krishna River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ : কুয়া নদী দক্ষিণ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী । এর দৈর্ঘ্য হল প্রায় ১২৯০ কিমি । কুয়া নদীটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মি . উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়েছে । এরপর নদীটি পূর্বমুখী হয়ে কর্ণাটক , তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । কৃষ্ণা নদী তার মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে ।
উপনদী ও শাখানদী : কৃষ্ণা নদীর প্রবাহপথে এর বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল ভীমা , মুসি এবং ডানতীরস্থ উপনদী হল ঘাটপ্রভা , তুঙ্গভদ্রা ইত্যাদি । মুনের হল কৃষ্ণা নদীর শাখানদী ।
তীরবর্তী শহর : কৃষ্ণানদীর তীরে বিজয়ওয়ারা এবং এর উপনদী মুন্সির তীরে হায়দরাবাদ অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্য : কৃষ্ণা নদীতে বাঁধ দিয়ে শ্রীসালেম ও বিখ্যাত নাগার্জুন সাগর ড্যাম তৈরী করা হয়েছে ।
- নর্মদা নদী । ( Narmada River ) সম্পর্কে লেখো ।
Ans: উৎস ও প্রবাহপথ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা হল দীর্ঘতম নদী ( দৈর্ঘ্য -১৩১০ কিমি ) । নর্মদা মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে ব্রোচের কাছে খাম্বাত ( কাম্বে ) উপসাগরে পড়েছে । নর্মদা নদীর মোহানায় ঢাল বেশি থাকার জন্য এখানে কোনো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি । উপনদী : গ্রস্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদীর উপনদীর সংখ্যা তুলনামূলক কম । নর্মদা নদীর ডান তীরের প্রধান উপনদী হল হিরণ ও বর্ণা এবং বামতীরের উপনদী হল = বাঞ্জার , শাক্কর প্রভৃতি । তীরবর্তী শহর : নর্মদা নদীর তীরে জব্বলপুর , ভারুচ ইত্যাদি । শহর অবস্থিত । বৈশিষ্ট্য : গ্রস্ত উপত্যকার কঠিন শিলাস্তর অতিক্রম করার সময় নর্মদা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে । এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের নিকট অবস্থিত ধুঁয়াধর জলপ্রপাত হল বিখ্যাত । এই অংশেই বিখ্যাত ‘ মার্বেল রক ’ দেখতে পাওয়া যায় । এছাড়াও এখানকার অন্যান্য জলপ্রপাতগুলি হলো — সহস্রধারা , কপিলধারা ইত্যাদি ।
- ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয় কেন ?
Ans: ভারতের বিভিন্ন অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , সিন্ধু , গোদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী , নর্মদা , তাপ্তি , মহানদী , সুবর্ণরেখা , লুনি ইত্যাদি বড়ো এবং অসংখ্য মাঝারি ছোটো ছোটো নদী । এই নদীগুলির উৎপত্তি , প্রবাহপথ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যে ভরপুর । সুদূর অতীত কাল থেকেই এই নদনদীগুলি ভারতের জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে । এই নদীগুলির তীরেই গড়ে উঠেছে । অসংখ্য ছোটো – বড়ো শহর , নগর এমনকি সভ্যতা । উর্বর এই নদী অববাহিকাগুলি কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ । নদীগুলির পরিবহণযোগ্যতা , জলের জোগান , জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে , নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাতে বহু শিল্পকলকারখানাও গড়ে উঠেছে । এ ছাড়াও দেশের জলসেচ ব্যবস্থা , অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থা , জলবিদ্যুৎ উৎপাদন , পানীয় জলের জোগান ইত্যাদি নানান ক্ষেত্রেও নদনদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এইসকল কারণেই ভারতকে ‘ নদীমাতৃক দেশ ’ বলা হয় ।
- ব্রহ্মপুত্র নদ তার প্রবাহ পথের বিভিন্ন অংশে কী কী নামে পরিচিত ?
Ans: ব্রহ্মপুত্র নদ তার উৎপত্তিস্থল থেকে মোহানা পর্যন্ত গতিপথের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত । যেমন ( ১ ) তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর পূর্বদিকে নামচাবারওয়া পর্যন্ত , তিব্বতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্রহ্মপুত্রের নাম সাংপো । ( ২ ) তিব্বত অতিক্রম করে এই নদী ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিয়ং ও দিহং নামে প্রবাহিত । ( ৩ ) এইখানেই ডিবং লোহিত নদী , দিহং – এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে । এরপর অরুণাচল প্রদেশ অতিক্রম করে , সাদিয়া থেকে আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত এই তিনটি নদীর মিলিত পশ্চিমমুখী প্রবাহের নাম হল ব্রহ্মপুত্র । ( ৪ ) আসাম অতিক্রম করে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র , যমুনা নামে প্রবাহিত হয়েছে । ( ৫ ) বাংলাদেশে যমুনা পদ্মানদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে , পদ্মা নামে কিছুটা প্রবাহিত হয়েছে । ( ৬ ) পরিশেষে পদ্মা , মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে , মিলিত প্রবাহ | মেঘনা নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ।
- ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতি বছর বন্যা হয় কেন ? বা , ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ কেন ?
Ans: ব্রহ্মপুত্র নদ বন্যাপ্রবণ হওয়ার কারণ— ( ১ ) ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে হিমালয়ের সমান্তরালে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রবাহিত হয়ে দিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । ( ২ ) সাদিয়ার কাছে দিহং — দিবং ও লোহিত – এর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে আসাম উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । ( ৩ ) আসাম উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্রের খাতের ঢাল অত্যন্ত কম হওয়ার ফলে যুগ যুগ ধরে বহু উপনদীর সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ পলি বহন করতে করতে ব্রহ্মপুত্র নদীগর্ভ ক্রমশ ভরাট হয়ে অগভীর হয়ে গিয়েছে । ( ৪ ) বর্ষাকালে সাংপো নদীটি যখন তিব্বত থেকে বিপুল পরিমাণে হিমবাহের বরফ গলা জল বহন করে । নিয়ে আসে , ওই সময়ে আসাম উপত্যকাতেও প্রবল বৃষ্টিপাত ব্রহ্মপুত্র নদে বন্যা হয় । ব্রহ্মপুত্রের অগভীর নদীখাত সেই বিপুল পরিমাণ জলরাশিকে ধরে রাখতে পারে না বলে দু – কুল গ্লাবিত করে । ফলে প্রতিবছরই ব্রহ্মপুত্র নদীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় ।
- ভারতের পূর্ববাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়েছে কেন ?
Ans: ভারতের অধিকাংশ পূর্ববাহিনী নদী তাদের মোহানায় বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে , যেমন — গোদাবরী , কুয়া , কাবেরী , মহানদী প্রভৃতি । ভারতের পূর্ববাহিনী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে উঠেছে কারণ— ( ১ ) বেশিরভাগ পূর্ববাহিনী নদীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এদের জলে পলির পরিমাণ বেশি । ( ২ ) পূর্ববাহিনী নদীগুলির স্রোতের বেগ কম থাকায় এইসব নদীর মোহানায় পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি হয় । ( ৩ ) পূর্ববাহিনী নদীগুলির নদীখাত নরম পলি দ্বারা গঠিত বলে নদীখাতে পলিসওয়ের পরিমাণ পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির তুলনায় অনেক বেশি । ( ৪ ) নিম্ন প্রবাহে পূর্ববাহিনী নদীগুলির নদীখাতের ঢাল খুব কম বলে এরা খরস্রোতা নয় , ফলে এদের মোহানায় সহজেই পলি সঞ্চিত হতে পারে । ( ৫ ) বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগে তুলনামূলক ভাবে অগভীর এবং মহিসোপান মৃদু ঢাল বিশিষ্ট হওয়ায় এই সাগরে পতিত হওয়া নদীগুলির মোহানায় সহজেই পলিসঞ্জয় ঘটে ।
- ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন ?
অথবা , নর্মদা ও তাপ্তি নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি কেন ?
Ans: ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীর মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি , কারণ— ( ১ ) বেশিরভাগ পশ্চিমবাহিনী নদীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এদের জলে পলি কম থাকে । তাপ্তি ও নর্মদা তুলনামূলকভাবে বড়ো নদী হলেও মোহানার কাছে এদের স্রোতের বেগ বেশি হওয়ায় এদের মোহানায় খুব বেশি পরিমাণ পলি সঞ্চিত হতে পারে না । ( ২ ) পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম হওয়ায় মোট জলের পরিমাণ এবং সঞ্চয়যোগ্য পলির পরিমাণ কম হয় । ( ৩ ) পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানা অঞ্চলের গভীরতা বেশি হওয়ায় মোহানায় পলিসঞ্জয় তেমন হয় না । ( ৪ ) দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি কঠিন । শিলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে , এইসব নদীর জলে পলি , বালি প্রভৃতির পরিমাণ কম , তাই মোহানায় সঞ্চয়ের পরিমাণও কম । এই সমস্ত কারণে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মোহানায় বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি ।
- আদর্শ নদী ( Ideal River ) কাকে বলে ? গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলা হয় কেন ?
Ans: উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই ( যেমন – উচ্চ , মধ্য ও নিম্ন গতি ) সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় , তাকে আদর্শ নদী বলে । গঙ্গাকে একটি আদর্শ নদী বলার কারণ হল – এই নদীর মধ্যে একটি আদর্শ নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই পরিলক্ষিত হয় , যেমন- ( ১ ) গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার উচ্চগতি ( ২ ) হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশে গঙ্গার মধ্যগতি এবং ( ৩ ) মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের পর থেকে গঙ্গাসাগরের মোহানা পর্যন্ত অংশে গঙ্গার নিম্নগতি দেখা যায় ।
- ভারতের একটি গ্রন্থ উপত্যকা মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর নাম লেখো এবং তার গতিপথ বর্ণনা করো ।
Ans: ভারতের একটি গ্রস্ত উপত্যকার মধ্যবর্তী অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর নাম হল নর্মদা » নর্মদা নদীর গতিপথ : ভারতের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে নর্মদা হল দীর্ঘতম নদী ( দৈর্ঘ্য ১৩১০ কিমি ) । নর্মদা মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে ব্রোচের কাছে খাম্বাত ( কাম্বে ) উপসাগরে পড়েছে । নর্মদা নদীর মোহানায় ঢাল বেশি থাকার জন্য এখানে কোনো বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি । গ্রস্ত উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদীর উপনদীর সংখ্যা তুলনামূলক কম । নর্মদা নদীর ডান তীরের প্রধান উপনদী হল হিরণ ও বর্ণা এবং বামতীরের উপনদী হল বাজ্ঞার , শাকর প্রভৃতি । গ্রস্ত উপত্যকার কঠিন শিলাস্তর অতিক্রম করার সময় নর্মদা জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে । এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের নিকট অবস্থিত ধুয়াধার জলপ্রপাত হল বিখ্যাত । এই অংশেই বিখ্যাত ‘ মার্বেল রক ’ দেখতে পাওয়া যায় । এ ছাড়াও এখানকার অন্যান্য জলপ্রপাতগুলি হল— সহস্রধারা , কপিলধারা ইত্যাদি ।
- দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন ?
Ans: দক্ষিণ ভারতের জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ বেশি প্রচলিত হওয়ার কারণগুলি হল— ( ১ ) দাক্ষিণাত্য মালভূমির পাথুরে ভূমি ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে বৃষ্টির জল মাটির গভীর চলে যেতে পারে না বলে দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পুকুর বা জলাশয় তৈরি করে সহজেই তা থেকে জলসেচ করা হয় । ( ২ ) দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে বৃষ্টির জল অপ্রবেশ্য শিলাস্তর ভেদ করে ভূগর্ভে সঞ্চিত হতে পারে না বললেই চলে , ফলে এখানকার অধিকাংশ অঞ্চলে কুপ ও নলকুপের সাহায্যে জলসেচ করা যায় । না । ( ৩ ) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট বলে বছরের সব সময়ে এগুলিতে জল থাকে না । তা ছাড়া দক্ষিণ ভারতের সর্বত্র নদী প্রবাহিত হয়নি তাই এই অঞ্চলে খালের সাহায্যেও জলসেচ করা যায় না । এইসব কারণে দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ ধিক প্রচলিত ।
- বহুমুখী নদী পরিকল্পনা থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যায় ?
অথবা , বহুমুখী পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ?
Ans: বহুমুখী নদী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদ্দেশ্যসাধন করা হয় । যেমন— ( ১ ) বর্ষাকালে নদীর অতিরিক্ত জলকে নদীসংলগ্ন বিশাল জলাধারে সঞ্চিত করে রাখা হয় । এতে একদিকে যেমন প্রবল বর্ষায় বন্যার নিয়ন্ত্রণ করা যায় , অন্যদিকে তেমনি ( ২ ) জলাধারে সঞ্চিত জলকে ব্যবহার করে সংলগ্ন অঞ্চলে সারাবছর ব্যাপী খালের মাধ্যমে জলসেচ করা হয় । ( ৩ ) জলাশয়গুলি থেকে সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ছাড়া জলের প্রচণ্ড গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় । ( ৪ ) জলাধারে মাছচাষ করা হয় । ( ৫ ) জলাধারের জলকে পরিস্তুত করে নিকটবর্তী অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় । ( ৬ ) বাঁধ ও জলাশয় সংলগ্ন অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ , রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতির জন্য ভূমিক্ষয় নিবারণ হয় এবং ভূমিসংরক্ষণ করা হয় । ( ৭ ) বাঁধগুলি নদীর ওপর সেতুর কাজ করে । এ ছাড়া ( ৮ ) বিশাল জলাধারসংলগ্ন অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে ওঠে ।
- (Irrigation ) জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচের ( Tank Water) সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো ।
Ans: জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি
সুবিধা : ( ১ ) জলাশয় প্রাকৃতিক , তাই নির্মাণের বিপুল খর নেই । ( ২ ) কঠিন শিলার ওপর অবস্থিত খাল এর স্থায়িত্বকাল দীর হয় । ( ৩ ) অনেক জলাশয়ে মাছ চাষও হয় । ফলে জলসেচের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য ও আর্থিক সংস্থানের সুযোগ বেশি হয় ।
অসুবিধা : ( ১ ) গ্রীষ্মকালে অধিকাংশ জলাশয় শুকিয়ে গেছে জলসেচের সমস্যা দেখা দেয় । ( ২ ) জলাশয়ে বেশি পলি জমঙ্গে বারবার সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে । ( ৩ ) জলাশয় থেকে দূরবর্তী স্থানে জলসেচে সমস্যা দেখা যায় ।
- খালের মাধ্যমে জলসেচের ( Canal Irrigation ) সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো ।
Ans: খালের মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি হল সুবিধা : ( ১ ) ভারতের অধিকাংশ খালই নিত্যবহ শ্রেণির । এই খালে সারাবছর ধরেই জল থাকে বলে , সারাবছর ধরেই এই খালের মাধ্যমে জলসেচ করা যায় । ( ২ ) নদীবাহিত পলি খালের মাধ্যমে । কৃষিজমিতে যায় বলে , জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় । ( ৩ ) বেশকিছু খালে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা গৃহীত হয় বলে জল সরবরাহ সুলভ । ( ৪ ) খাল নির্মাণের প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও পরবর্তীকালে বায় তুলনামূলক ভাবে কম । » অসুবিধা : ( ১ ) খালের অতিরিক্ত জলের প্রবাহ মাঝে মাঝে বন্যার সৃষ্টি করে । ( ২ ) এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত জলসেচের ফলে মাটির অভ্যন্তরীণ লবণ কৈশিক প্রক্রিয়ায় উপরে উঠে আসে ও এতে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় । ( ৩ ) কেবলমাত্র বৃষ্টিবহুল এবং সমভূমি এলাকাতেই এই পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয় ।
- ভৌমজল ( Groud Water ) বলতে কী বোঝ ? তাৎপর্য কী ?
Ans: সাধারণভাবে সকল প্রকার জল যা ভূঅভ্যন্তরে পাওয়া যায় তাকেই ভৌমজল বলে । ভৌমজল প্রধানত দূষণমুক্ত ও সেচের কাজে এটির উপযোগিতা অনস্বীকার্য । খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ ভৌমজল চাষবাস , শিল্প কারখানায় , শক্তি উৎপাদন ও পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ভৌমজল গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টিজলের উৎস । এই ভৌমজল দূষণমুক্ত এবং সেচের কাজে এই জলের উপযোগীতা অনস্বীকার্য । সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে এই ভৌমজল আহরণ করা যায় । শুষ্ক অঞ্চলে এই ভৌমজলের মাধ্যমে সেচকার্য করা হয়ে থাকে । অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মতো এটি সীমাহীন নয় । তাই ক্রমাগত হারে এই ভৌমজল ব্যবহারের ফলে এর ভাণ্ডারটি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে । ভারতে ৭০ % অঞ্চলেই ভৌমজল এখন সংকটময় এবং ৩০ % অঞ্চলে এটি চরমসংকটে পৌঁছেছে ।
- নলকূপের সাহায্যে জলসেচ উত্তর ভারতে অধিক প্রচলিত কেন ?
Ans: নলকূপের সাহায্যে জলসেচ উত্তর ভারতে অধিক প্রচলিত , কারণ– ( ১ ) উত্তর ভারতের সিন্ধু ও গঙ্গা অববাহিকায় ( পাঞ্জাব , উত্তরপ্রদেশ , বিহার , পশ্চিমবঙ্গ ) কোমল ও প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তর রয়েছে । ( ২ ) এই কোমল ও প্রবেশ্য পাললিক শিলাস্তরে সহজেই গভীর ও অগভীর নলকুপ খনন করা যায় । ( ৩ ) এই অঞ্চলে ভৌমজলের অবস্থান ভূপৃষ্টের কাছাকাছি হওয়ায় , গভীর নলকূপ খনন করা সুবিধাজনক । ( ৪ ) দক্ষিণ ভারতে কঠিন শিলাস্তর থাকায় নলকূপ খনন অত্যন্ত ব্যায়সাধ্য ।
- জল সংরক্ষণ ( Water Conservation ) কী ? জল সংরক্ষণের গুরুত্বগুলি লেখো ।
Ans: জল সংরক্ষণ : জল মানুষের জীবন । বর্তমানে মানুষ নানাভাবে জলের অপচয় করছে । এই অপচয় রোধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে । তাই নানাভাবে জল সংরক্ষণ করা অত্যন্ত দরকার হয়ে পড়েছে । জল সংরক্ষণের গুরুত্ব : ( ১ ) মিষ্টি জল ছাড়া অন্য কোনো জল মানুষের তেমন কোনো কাজে লাগে না । তাই মিষ্টি জল – এর সংরক্ষণ অত্যন্তই গুরুত্বপূর্ণ । ( ২ ) প্রাকৃতিক উপায়ে জল সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ( ৩ ) প্রাকৃতিক উপায়ে জল সংরক্ষণ করলে খরচ কম হয় । ( ৪ ) জল হল সম্পদ । তাই সম্পদ সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । ( ৫ ) জল সংরক্ষণ করলে একদিকে যেমন চাষের জন্য সুবিধা হবে , অপর দিকে শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় জল সহজেই পাওয়া সম্ভব হবে । ( ৬ ) বর্তমানে জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে , বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য জলের চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে । তাই জলের চাহিদার সমপরিমাণ জোগান দিতে হলে জল সংরক্ষণ করা আবশ্যক । ( ৭ ) বাঁধ দিয়ে জল সংরক্ষণ করলে একদিকে যেমন চাষের কাজে লাগে , অপরদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন , পরিবহণ ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হয় । উপরিউক্ত এইসব কারণেই জল সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে ।
জেনে রাখো : ভারতের নদনদীর অববাহিকার আয়তন অনুযায়ী মবিন্যাস- ১. গঙ্গানদী ( ২৬.২ % ) , ২. সি ( ৯.৮ % ) , গোদাবরী ( ৯.৫ % ) , ৪. কৃষ্ণা নদী ( ৭.৯ % ) , ৫. ব্রহ্মপুত্র ( ৭.৮ % ) । | ২৫ ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাবগুলি সম্বন্ধে লেখো । উত্তর : বর্তমানে নানা কাজের জন্য ভৌমজল এত বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে , ফলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন যে , অদুর ভবিষ্যতে পৃথিবীর ভৌমজলের ভাণ্ডার শূন্য হয়ে যাবে । ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রভাবগুলি হল – ( ১ ) জলস্তর নেমে যাবে । যার ফলে কুপ বা নলকূল স্থানে স্থানে শুকিয়ে যাবে । ( ২ ) পরিমাণ মতো জল আহরণ করার জন্য কুপ ও নলকূপ আরো গভীরে প্রোথিত করতে হবে , যাতে খরচ বেড়ে যাবে । ( ৩ ) ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে যাওয়ায় পৃষ্ট জল চুঁইয়ে ভিতরে ঢুকবে ফলে পৃষ্ঠীয় জলের পরিমাণ কমবে । ( ৪ ) বেশ কয়েকটি স্থানে ভৌমজলের ভাণ্ডার কমে যাওয়ায় ভূমি বসে যাচ্ছে বা ভূমিধস এর সম্ভাবনা বাড়ছে । ( ৫ ) কৃষিতে অতিরিক্ত ভৌমজলের ব্যবহারে জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে । ( ৬ ) শহরাঞ্জল গুলিতে ভৌমজল চরম সংকটে পৌঁছেছে । কলকাতাতেও ভৌমজলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে । এইসকল সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য নানান বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে ভৌমজলের ভাণ্ডার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে । জেনে রাখো গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান সরকারীভাবে জাতীয় নদীর মর্যাদা পেয়েছে পৃথিবীর ৩৯ তম দীর্ঘ নদী গঙ্গা । ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সভাপতিত্বে ‘ গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান – এর কাজকর্মের জন্য ‘ গঙ্গা রিভার বেশিন অথরিটি ‘ নামে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করা । এর আগেও ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব | গান্ধির তত্ত্বাবধানে তৈরী হয়েছিল ‘ গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান ‘ । যার উদ্দেশ্য ছিল একটিই অর্থাৎ গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করা / রাখা , কলকারখানার বর্জ্য যাতে গঙ্গার জলে মিশে না যায় , সেদিকে লক্ষ রাখা , নদীর অবক্ষয় রুখে জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখা ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের জলসম্পদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Jolsampad Question and Answer :
1. গঙ্গানদীর উৎস ও গতিপথের বর্ণনা দাও ।
Ans: গঙ্গা ভারতের প্রধান ও দীর্ঘতম নদী । এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫২৫ কিমি , এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত হয়েছে । এই নদীতে প্রধানত ৩ টি গতি লক্ষ করা যায় , যথা — উচ্চগতি , মধ্যগতি ও নিম্নগতি । এই কারণেই গঙ্গাকে ‘ আদর্শ নদী ’ বলা হয় ।
গতিপথ – এর বর্ণনা :
( ক ) গঙ্গার উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ : গঙ্গা কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ নামে তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার ( পিন্ডার , মন্দাকিনী , ধৌলিগঙ্গা , । ঋষিগঙ্গা ও বিষেণগঙ্গার মিলিত প্রবাহ ) সঙ্গে মিলিত হয়েছে । দেবপ্রয়াগের পর থেকে ভাগীরথী ও অলকানন্দার দুই মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে । এরপর শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে । গঙ্গা হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অবতরণ করেছে । উৎসস্থল । থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গতিপথ গঙ্গার পার্বত্য অবস্থা বা উচ্চগতি সূচিত করে ।
( খ ) গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ : হরিদ্বার শহর থেকে বের হয়ে গঙ্গা প্রথমে দক্ষিণমুখী এবং পরবর্তীকালে পূর্বমুখী হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের পূর্বদিক দিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং কিছু দূর প্রবাহিত হওয়ার পর মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষপর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । হরিদ্বার থেকে রাজমহল পর্যন্ত গঙ্গার গতিপথ মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ সূচিত করে । গঙ্গার ক্ষীণস্রোতা দ্বিতীয় শাখাটি ভাগীরথী – হুগলি নদী নামে দক্ষিণমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । উপনদী : এই মধ্যগতিতে অবস্থিত গঙ্গার বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল — রামগঙ্গা , গোমতী , ঘর্ঘরা , গণ্ডক , বুড়ীগণ্ডক , কোশি ইত্যাদি এবং ডানতীরস্থ উপনদীগুলি হল – যমুনা ও শোন ।
( গ ) নিম্নগতি : পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর গঙ্গানদী মুরশিদাবাদ জেলার ধূলিয়ানের কাছে এসে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে বিভক্ত হয়েছে । প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । অপর শাখাটি ভাগীরথী – হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গার গতিকে বলে নিম্নগতি বা বদ্বীপ অবস্থা ।
উপনদী ; এই অংশে ভাগীরথীর ডানতীরের উপনদীগুলি হল ব্রাক্মণী , দ্বারকা , ময়ূরাক্ষী , অজয় , দামোদর , রূপনারায়ণ , কংসাবতী ইত্যাদি । ভাগীরথীর বামতীরস্থ উপনদীগুলি হল জলঙ্গী , চূর্ণী , মাথাভাঙ্গা ইত্যাদি । ভাগীরথী – হুগলি ও পদ্মা নদীর মধ্যবর্তী বদ্বীপ হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ । এর অধিকাংশই বাংলাদেশে অবস্থিত ।
2. কী কী কারণে ভারতে কৃষিজমিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তার তিনটি প্রয়োজন হয় ব্যাখ্যা করো ।
অথবা , ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো ।
অথবা , ভারতে জলসেচের যে – কোনো তিনটি প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো ।
Ans: ভারতের কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তাগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল :
( ১ ) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালি চরিত্র যদিও ভারতের ৮০ % বৃষ্টিপাত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সম্পন্ন হয় , তবুও মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় অত্যন্ত অনিশ্চিত , কারণ কোনো বছর এই বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট সময়ের আগে আসে , আবার কোনো বছর নির্দিষ্ট সময়ের পরে আসে । অন্যদিকে মৌসুমি বায়ু কোনো বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রত্যাবর্তন করে , কোনো বছর আবার বেশ পরে । ফলে কোনো কোনো বছর বেশি দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয় , কোনো বছর অল্প দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয় । মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি চরিত্রের জন্য কৃষিজমিতে নিয়মিত এবং স্থায়ীভাবে জল সরবরাহের জন্য জলসেচের একান্ত প্রয়োজন ।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টিপাত যে হবেই , তার কোনো নিশ্চয়তা নেই । কোনো বছর বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারতে খরা দেখা দেয় , আবার কোনো বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের নানান স্থানে বন্যা হয় । এই জন্য খরার সময় নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে জল সরবরাহ এবং বন্যার জল নিয়ন্ত্রণের জন্য জলসেচের প্রয়োজন ।
( ২ ) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব : ভারতে শীতকাল শুষ্ক হওয়ায় তামিলনাড়ুর উপকূল এবং উত্তর – পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ ছাড়া শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে । সেইজন্য শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয় ।
( ৩ ) বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন এবং আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের তারতম্য : মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের প্রায় ৮০ % বৃষ্টিপাত ঘটলেও ভারতের সর্বত্র একই পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় না । বিশেষত ভারতের শুষ্ক ও অতিঅল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল ‘ ( বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০ সেমির নীচে ) ও ‘ অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল ‘ ( বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০-৬০ সেমি ) -এর অন্তর্গত রাজস্থান , উত্তর – পশ্চিম কাশ্মীর , পূর্ব ও পশ্চিম হরিয়ানা , কচ্ছের রণ অঞ্চল , পূর্ব ও দক্ষিণ – পশ্চিম পাঞ্ঝাব , উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যভাগে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম । হওয়ায় এইসব অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য জলসেচ অবশ্য প্রয়োজনীয় ।
( ৪ ) উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ : আজকাল ভারতে নানারকম উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ করা হচ্ছে । উচ্চফলনশীল শস্য চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হওয়ায় বর্তমানে ভারতে ব্যাপক জলসেচের প্রয়োজন হয় ।
( ৫ ) রবিশস্য চাষ : প্রধানত জলসেচের ওপর নির্ভর করে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ করা হয় সেইসব ফসলকে রবি ফসল বলে । গম , যব , আলু , বিভিন্ন রকমের তৈলবীজ ও ডাল রবি ফসলের উদাহরণ । শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় রবিশস্য চাষের জন্য জলসেচ একান্ত প্রয়োজন ।
( ৬ ) অতিরিক্ত বাষ্পীভবন : ভারতের বেশিরভাগ অংশ ক্রান্তীয় মৌসুমী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার অত্যধিক । অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের ফলে , বিশেষত দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে না । এইসব অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য সারাবছর জলসেচের প্রয়োজন হয় ।
( ৭ ) জমির ওপর কৃষির চাপ এবং একই জমিতে বহুবার ফলনের ক্ষেত্রে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা : আজকাল বৈজ্ঞানিক কৃষিপদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে ৩/৪ বার ফসল ফলানো যায় । এই কাজের জন্য কৃষিজমিতে সারাবছর ধরে জলসেচের জল জোগান থাকা প্রয়োজন ।
( ৮ ) বিভিন্ন শস্যের জলের চাহিদার বিভিন্নতা ও মাটির জলধারণ ক্ষমতার বিভিন্নতার জন্য জলসেচের প্রয়োজনীয়তা : ভারতে বিভিন্নরকম মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা একরকম নয় । এঁটেল মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি , আবার দোআঁশ মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম । যেসব অঞ্চলের মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা কম , সেইসব অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয় । আবার , ধান , আখ , আলু , বাদাম , কার্পাস প্রভৃতি শস্যচাষে জলের চাহিদা বেশি হওয়ায় জলসেচের প্রয়োজন হয় ।
3. ভারতের বিভিন্ন জলসেচ পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে লেখো ।
Ans: জলসেচ : কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণে জমিতে অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম উপায়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সঠিক পরিমাণে জলের সরবরাহকে বলা হয় জলসেচ । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তার জন্য ভারতে জলসেচ খুবই প্রয়োজনীয় । ভারতে প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে জলসেচ করা হয় , যথা ( ১ ) কূপ ও নলকুপ সেচ , ( ২ ) পুকুর ও জলাশয় সেচ , ( ৩ ) সেচ খাল । তবে কোনো স্থানের ভূপ্রকৃতি , শিলার গঠন , ভৌমজলের অবস্থান , বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি প্রভৃতি কারণের ওপর জলসেচ ব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ভর করে ।
( ১ ) কূপ ও নলকূপ : ভারতের যেসব অঞ্চলে ভৌমজলের প্রাচুর্য বেশি , অর্থাৎ যেসব অঞ্চলে বৃষ্টির জল পাললিক শিলাস্তর ভেদ করে মাটির নীচে জমা হতে পারে , সাধারণত সেইসব অঞ্চলে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে । উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিহার , উত্তরপ্রদেশ , পাঞ্জাব , হরিয়ানা , আসাম , ঝাড়খণ্ড , পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয় । কূপকে সাধারণত দু – ভাগে ভাগ করা হয় – ( ক ) স্থায়ী কুপ ( পাঞ্জাব , উত্তরপ্রদেশ , বিহার , অন্ধ্রপ্রদেশ , তামিলনাড়ু , পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায় ) । ( খ ) অস্থায়ী কূপ ( পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় ) ।
( ২ ) পুকুর ও জলাশয় : বর্ষাকালে বৃষ্টির জল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার অথবা পুকুরে সঞ্চয় করে রেখে সেচের কাজে লাগানো হয় । দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপৃষ্ঠ ঢেউ খেলানো বা তরঙ্গায়িত ও কঠিন অপ্রবেশ্য শিলায় গঠিত হলে বৃষ্টির জল মাটির নীচে সঞ্চিত হতে পারে না । এই জল নিম্নভূমিতে ধরে রাখা হয় এবং তারপর ডোঙা , পাম্পিং মেশিনের সাহায্যে তা সেচকালে ব্যবহার করা হয় । স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে দামোদর , ময়ূরাক্ষী , কংসাবতী , হিংলা প্রভৃতি প্রকল্পের সাহায্যে খাল কেটে জলসেচ করা হয় । উত্তর ভারতের শোন , কোশি , গণ্ডক ও রিহ প্রভৃতি প্রকল্পের সাহায্যে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জলসেচ করা হচ্ছে । দাক্ষিণাত্যের উল্লেখযোগ্য যে – সমস্ত জলাশয় , বা বাঁধ থেকে জলসেচ করা হচ্ছে , যথা- ( ক ) গোদাবরীর রামপদ সাগর বাঁদ ও জলাশয় , ( খ ) মঞ্জিরায়নিজাম সাগর জলাশয় , ( গ ) কৃ নদীর নাগার্জুন সাগর জলাশয় , ( ঘ ) কৃথ্বার উপনদী করনা , ভীমা , ঘাটপ্রভা , তুঙ্গভদ্রার বাঁধ , ( ঙ ) কাবেরী নদীর মেটুর বাঁস , ( চ ) তাপ্তি নদীর প্রকল্প ও ( ছ ) ওড়িশার হীরাকুদ বাঁধ প্রকল্প থেকে ওই রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসেচ করা হচ্ছে । ভারতের প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ কৃষিজমিতে জলাশয়ের সাহায্যে জলস্যে করা হয় ।
( ৩ ) সেচখাল : ভারতের প্রায় ২৬ % সেচগ্লাবিত কৃষিজমিতে খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয় । ভারতে প্রধানত নদনদী সমৃদ্ধ অঞ্চলে খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে । ভারতে খালগুলি প্রধানত দু – ধরনের । যথা- ( ক ) নিত্যবহ খাল এবং ( খ ) প্লাবন খাল ।
( ক ) নিত্যবহ খাল : সারাবছর ধরে জলে পুষ্ট নদী থেকে খনন করা খালকে নিত্যবহ খাল বলা হয় , দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি । ভারতে ( ১ ) উত্তর প্রদেশের গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী স্থান , ( ২ ) রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলা ,
( ৩ ) পশ্চিম পাঞ্জাব সমভূমি এবং ( ৪ ) পশ্চিমবঙ্গের দামোদর উপত্যকায় প্রধানত নিত্যবহ সেচ খাল দেখা যায় ।
( খ ) প্লাবন খাল প্লাবন খালে সারাবছর জল থাকে । না । এগুলি সাধারণত বর্ষার প্লাবনে জলপূর্ণ হয় । বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই জাতীয় খাল বিশেষ উপযোগী । ভারতের প্লাবন খাল দ্বারা সেচ প্লাবিত অঞ্চলগুলি হল- ( ১ ) ওড়িশার মহানদী বদ্বীপ , ( ২ ) তামিলনাড়ুর কাবেরী বদ্বীপ ,
( ৩ ) অন্ধপ্রদেশের গোদাবরী কৃষ্ণা বদ্বীপ ইত্যাদি । • ভারতের উল্লেখযোগ্য খালসমূহ : ( ক ) পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিম যমুনা খাল , ভাক্রা – নাঙ্গাল প্রকল্পের অন্তর্গত সেচ খালসমূহ । ( খ ) উত্তরপ্রদেশের আগ্রা খাল , পূর্ব যমুনা খাল , গঙ্গা খাল । ( গ ) পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের খাল , দামোদর খাল , হিজলী খাল । ( ঘ ) রাজস্থানের খাল ইত্যাদি । খালের মাধ্যমে জলসেচ কার্য : ( ১ ) উত্তরপ্রদেশ — প্রথম , ( ২ ) পাঞ্জাব – দ্বিতীয় , ( ৩ ) হরিয়ানা তৃতীয় ,
( ৪ ) অন্ধ্রপ্রদেশ — চতুর্থ , ( ৫ ) তামিলনাড়ু – পঞ্চম ।
4. মানবজীবনে নদনদী , হ্রদ ও জলাশয়ের গুরুত্ব লেখো ।
Ans: মানবজীবনে নদনদী , হ্রদ , জলাশয় – এর গুরুত্ব :
( ১ ) আবাদি জমির উৎপত্তি : নদনদী প্রবাহিত হলে তার তীরবর্তী অঞ্চলে যে পলিসঞ্চয় হয় , তার ফলে উর্বর মাটির সৃষ্টি হয় , যা চাষবাসের পক্ষে অতি অনুকূল ।
( ২ ) অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা : যেসব নদীগুলির নাব্যতা বেশ ভালো ( বিশেষত বরফ গলা জলে পুষ্ট নদনদী ) , সেগুলির মাধ্যমে নৌপরিবহণ ব্যবস্থা বেশ ভালোভাবে করা যায় । যেমন – গঙ্গা , যমুনা প্রভৃতি নদী । এ ছাড়া গভীর খালপথ গুলির 5 G সাহায্যেও যাতায়াত করা হয় ।
( ৩ ) মৎস্যারোহণ : নদী , হ্রদ , পুকুর ও জলাশয়গুলিকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবীরা মৎস্যারোহন করেন , যা যথেষ্ট অর্থনৈতিক ও ভূমিকা পালন করে ।
( ৪ ) পর্যটন কেন্দ্র : ভারতবর্ষের মিরিক , পুলিকট , উটি প্রভৃতি স্থানের হ্রদগুলিকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে ।
( ৫ ) জলসেচ : নদনদী এবং খালপথগুলির মাধ্যমে জলসেচ করা হয় , কৃষির অনুকূল ।
( ৬ ) প্রাচীন সভ্যতাগুলির উৎপত্তিস্থল : পৃথিবীর সব প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নদীর তীরে । যেমন— সিন্ধু নদের = তীরে সিন্ধুসভ্যতা , নীলনদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা , হোয়াংহো = ও ইয়াং – সিকিয়াং নদীর তীরে চৈনিক সভ্যতা এবং টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমীয় সভ্যতা প্রভৃতি ।
( ৭ ) শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে : কাঁচামালের জোগান , পরিবহণ ও ব্যবস্থার সুগম্যতা প্রভৃতি কারণে নদীর তীরে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র = Z । গড়ে ওঠে । যেমন— হুগলি নদীর তীরে পেট্রোরসায়ন শিল্প , পাটশিল্প প্রভৃতি ।
( ৮ ) বন্দর গড়ে ওঠে : নদনদীগুলিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বন্দর গড়ে ওঠে । যা জলপথে পরিবহণ ব্যবস্থায় অন্যতম সহায়ক । যেমন— কলকাতা বন্দর ( হুগলি নদীর তীরে ) ।
5. ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা কতখানি ?
Ans: নদনদী ও জলাধারের জল কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য যে খাল কাটা হয় তাকে সেচখাল বলে । সেচখাল দু – রকমের , যথা — প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খাল ।
( ১ ) প্লাবন খাল : প্লাবন খালে সারাবছর জল থাকে না , কারণ , = যে নদী থেকে খালে জল আসে সেই নদীর জলস্তর গ্রীষ্মকালে নীচে নেমে যায় অথবা শুকিয়ে যায় । বর্ষার প্লাবনে জলপূর্ণ হলে এইসব খালের সাহায্যে কৃষিজমিতে জলসেচ দেওয়া যায় । ( ক ) ওড়িশার মহানদী বদ্বীপ ( খ ) তামিলনাড়ুর কাবেরী বদ্বীপ , ( গ ) অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী ও কৃষ্ণা বদ্বীপে প্লাবন খালের আধিক্য দেখা যায় ।
( ২ ) নিত্যবহ খাল : সারাবছর জল থাকে এমন নদী থেকে কাটা খালকে নিত্যবহ খাল বলে । নদীতে বাঁধ দিয়ে রাখার ফলে এসব খালে সারাবছরই জল থাকে এবং এই জল সেচের কাজে লাগানো হয় । দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে নিত্যবহ খালের সংখ্যা অনেক বেশি । পাঞ্জাব , রাজস্থান , উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত নিত্যবহ খালের সাহায্যে জলসেচ করা হয় । এই খালের মাধ্যমে সারাবছর জলসেচ দেওয়া যায় ।
( ৩ ) খাল দ্বারা জলসেচের উপযোগিতা : ভারতীয় কৃষিতে খাল দ্বারা জলসেচের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে , কারণ—
( ক ) অসংখ্য নদনদী ও জলাধারের জলের সঠিক ব্যবহার : সারাভারতে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদনদী ও জলাধার থেকে সরাসরি খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচ দিয়ে নদনদী ও জলাধারের জলের সঠিক ব্যবহার করা যায় । ( খ ) সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে কৃষিজমিতে জলের জোগানে নিত্যবহ খালের উপযোগিতা : উত্তর ভারতের বেশিরভাগ নদী বরফগলা জলে পুষ্ট বলে এইসব নদীতে সারাবছরই জল থাকে । তাই নিত্যবহ খালের সাহায্যে উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলের কৃষিজমিতে জলসেচ দেওয়া হয় ।
( গ ) বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিক্ষেত্রে জলসেচে প্লাবন খালের উপযোগিতা : বর্ষাকালে দক্ষিণ ভারতের নদীগুলিতে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয় । প্লাবন খালের সাহায্যে বন্যার জলকে কৃষিজমিতে জলসেচের কাজে লাগানো হয় । ( ঘ ) কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে খালের উপযোগিতা : খালের মাধ্যমে নদনদীর অতি উর্বর পলি কৃষিজমিতে বাহিত হয়ে জমির উর্বরতা বাড়ায় । ( ঙ ) ভূগর্ভস্থ জলন্তরের হ্রাস নিয়ন্ত্রণে খালের উপযোগিতা : ভূগর্ভস্থ জলস্তরে হ্রাসপ্রাপ্তির নানান কুফলের পরিপ্রেক্ষিতে নদনদীর ভূপৃষ্ঠস্থ জলকে খালের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় । এইভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবনমনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
6. ভারতে খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় কেন ?
Ans: ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৯০ % বৃষ্টিপাত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়ে থাকলেও বছর বছর মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিশ্চিত । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ এবং একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ভারতে বন্যার প্রধান কারণ । অর্থাৎ মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্যই কোনো কোনো বছর ভারতে খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ।
ভারতে খরার প্রধান কারণ : ( ১ ) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ । ( ২ ) ভারতের কোন স্থানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষা দেরিতে আসা সেই স্থানের খরার অন্যতম কারণ । ( ৩ ) স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়া হল খরা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ । ( ৪ ) কোনো স্থান বর্ষাকালে বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । ( ৫ ) বনভূমির অভাবের জন্য সূর্যের প্রচণ্ড তাপে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে ভৌমজল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং মাটি ফেটে চৌচির হয়ে খরার সৃষ্টি করে । ( ৬ ) পরিবেশদূষণের জন্য বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মৌসুমিবায়ু ঘনীভূত না হতে পারাও খরা সৃষ্টির অন্যতম কারণ । ভারতে বন্যার প্রধান কারণ : এ ভারতে বন্যার প্রধান কারণ : ( ১ ) কোনো স্থানে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সেই স্থানে বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয় । ( ২ ) মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হলে অতিবৃষ্টির ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয় । ( ৩ ) নদীর বহনক্ষমতা কমে এলে বা জলনিকাশী ব্যবস্থা ( যেমন — খাল ) বুজে গেলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না – হলেও বন্যার সৃষ্টি হতে পারে । ( ৪ ) বর্ষাকালে বাঁধ বা জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যার সৃষ্টি হয় । ( ৫ ) কখনো – কখনো ভূমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয় । ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটি নদীগর্ভে জমা হয় এবং নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয় । এর ফলে নদীর জলবহন ক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে ।