ভারতের মৃত্তিকা (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর

 MCQ |  Madhyamik Geography Bharater Mrittika Question and Answer :

  1. কোন্ মৃত্তিকায় তুলো চাষ ভালো হয় ? 

(A) রেগুর 

(B) পলি

(C) লোহিত মৃত্তিকা

(D) ল্যাটেরাইট 

Ans: (A) রেগুর

 

  1. ভারতের সমভূমি অঞ্চলে প্রধানত কোন ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায় ? 

(A) কৃষ্ণ মৃত্তিকা

(B) মরু মৃত্তিকা

(C) লোহিত মৃত্তিকা

(D) পলি মৃত্তিকা

Ans: (D) পলি মৃত্তিকা

 

  1. নদীর প্লাবনভূমিতে নবীন পলি দিয়ে গঠিত হয় কোন্ মৃত্তিকা ?

(A) ভাঙ্গার 

(B) খাদার 

(C) ভুর 

(D) উষর

Ans: (B) খাদার 

 

  1. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে বালিমিশ্রিত কোন্ মৃত্তিকা দেখা যায় ?

(A) এটেল

(B) ভাঙ্গার

(C) ভুর 

(D) কালার

Ans: (C) ভুর

 

  1. দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত মালভূমি অঞ্চলে যে মৃত্তিকা দেখা যায় তা হল – 

(A) লোহিত মৃত্তিকা 

(B) ঊষর মৃত্তিকা

(C) রেগুর মৃত্তিকা

(D) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা 

Ans: (C) রেগুর মৃত্তিকা

 

  1. ভারতের কোথায় মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ?

(A) দিল্লিতে

(B) জয়পুরে

(C) যোধপুরে

(D) আমেদাবাদে

Ans: (C) যোধপুরে

 

  1. গ্রানাইট ও নিস্ শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয় –

(A) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

(B) কৃষ্ণ মৃত্তিকা

(C) লোহিত মৃত্তিকা

(D) রেগুর মৃত্তিকা

Ans: C) লোহিত মৃত্তিকা

 

  1. বালির ভাগ বেশি থাকার জন্য কোন্ মৃত্তিকায় জলধারণ ক্ষমতা কম ? 

(A) কৃষ্ণ

(B) লোহিত

(C) এটেল 

(D) পাললিক

Ans: (B) লোহিত

 

  1. মৃত্তিকায় অবস্থিত , পরিপূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট জীবদেহবিশেষ কী নামে পরিচিত ?

(A) হিউমাস

(B) কালার

(C) ঊষর 

(D) পিট

Ans: (A) হিউমাস

 

  1. মরু মৃত্তিকা কী প্রকৃতির হয় ? 

(A) অম্লধর্মী

(B) ক্ষারধর্মী

(C) লবণাক্ত

(D) কোনোটাই নয়

Ans: (B) ক্ষারধর্মী


  1. লাল মাটিতে কীসের পরিমাণ বেশি থাকে ? 

(A) পটাশিয়াম

(B) হিউমাস 

(C) অ্যালুমিনিয়াম

(D) লোহা 

Ans: (D) লোহা

 

  1. কোন মাটির স্থানীয় নাম ‘ সারাম ’ ?

(A) ল্যাটেরাইট

(B) লোহিত

(C) বেলেমাটি

(D) ভুর

Ans: (A) ল্যাটেরাইট

 

  1. পডসল মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায় –

(A) আরাবল্লি পর্বতে

(B) সাতপুরা পর্বতে

(C) বিন্ধ্য পর্বতে

(D) হিমালয় পর্বতে

Ans: (D) হিমালয় পর্বতে

 

  1. কোন্ মৃত্তিকায় হিউমাসের পরিমাণ বেশি ?

(A) পাললিক 

(B) পডসল

(C) লোহিত মৃত্তিকা 

(D) পাললিক মৃত্তিকা 

Ans: (C) লোহিত মৃত্তিকা

 

  1. আন্দামান – নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে কোন্ ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায় ?

(A) লোহিত মৃত্তিকা 

(B) পিট মৃত্তিকা 

(C) রেগুর মৃত্তিকা 

(D) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা 

Ans: (D) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

 

  1. উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে নদী উপত্যকার পুরোনো পলিমাটিকে কী বলে ?

(A) ভাঙ্গার

(B) খাদার 

(C) ভুর

(D) বেট

Ans: (A) ভাঙ্গার

 

  1. তরাই অঞ্চলের মৃত্তিকার অপর নাম হল –

(A) ভাঙ্গার 

(B) খাদার

(C) ঊষর 

(D) ভাবর

Ans: (D) ভাবর

 

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের মৃত্তিকা (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Mrittika Question and Answer : 

  1. যে মৃত্তিকায় লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে এবং যার রং বাদামি , লাল বা হলুদ হয় , তাকে কী বলে ?

Ans: পেডালফার মৃত্তিকা ।

  1. যে মৃত্তিকায় চুনের ভাগ বেশি ও রং কালো তাকে কী বলা হয় ?

Ans: পেডোক্যাল মৃত্তিকা ।

  1. গঠন হিসেবে খাদার বা নবীন পলিমাটিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায় ?

Ans: দোআঁশ মাটি , এঁটেল মাটি ও বেলে মাটি ।

  1. যে মাটিতে বালি ও কাদার ভাগ প্রায় সমান হয় তাকে । বলে ?

Ans: দোঁয়াশ মাটি । 

  1. বেলেমাটিতে কোন্ কোন্ ফসলের চাষ হয় ?

Ans: তরমুজ , শশা , আলু ইত্যাদি ।

  1. কৃষ্ণ মৃত্তিকার অপর নাম কী ?

Ans: রেগুর মৃত্তিকা বা কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা ।

  1. কোন্ মৃত্তিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খোয়াই ভূমিরূপের সৃষ্টি করে ?

Ans: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ।

  1. পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞ্চলে কী মৃত্তিকা দেখা যায় ?

Ans: ভাবর । 

  1. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির জলাভূমির মৃত্তিকাকে কী বলে ? 

Ans: ধাঙ্কার ।

  1. কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কীসের পরিমাণ বেশি থাকে । 

Ans: চুন ও কাদা ।

  1. পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কী ?

Ans: কালো / ধূসর বাদামি ।

  1. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা প্রকৃতপক্ষে কোন শ্রেণির মৃত্তিকা ?

Ans: লোহিত মৃত্তিকা ।

  1. কোন্ মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা সর্বাধিক ।

Ans: কৃষ্ণ মৃত্তিকা ।

  1. নদীর মোহানা অঞ্চলের মৃত্তিকা কী প্রকৃতির হয় ?

Ans: লবণাক্ত ।

  1. মৃত্তিকা ক্ষয়ের সর্বপ্রধান কারণ কী ?

Ans: বৃক্ষচ্ছেদন ।

  1. আর্দ্র অঞ্চলে কীসের দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয় ?

Ans: জলের দ্বারা ।

  1. ভারতের প্রায় কত জমি প্রতি বছর জলের দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ?

Ans: প্রায় ৫৩.৩৪ মিলিয়ন হেক্টর জমি ।

  1. পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় ধাপ কেটে যে চাষ করা হয় , তাকে কী বলে ?

Ans: ধাপ চাষ ।

  1. পাহাড়ে জঙ্গল পুড়িয়ে যে চাষ হয় , তাকে কী বলে ? 

Ans: ঝুম চাষ ।

  1. রেগুর শব্দের উৎপত্তি হয় কোন শব্দ থেকে ?

Ans: তেলুগু শব্দ রেগাডা থেকে ( Regada ) .

  1. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কী ?

Ans: বাদামি হলুদ ও হালকা হলুদ আকারে । 

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের মৃত্তিকা (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Mrittika Question and Answer : 

  1. ধাঙ্কার কাকে বলে ?

Ans: উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমিতে জলাভূমির মৃত্তিকাকে ধাক্কার ( Dhankar ) মৃত্তিকা বলে । 

  1. ভাবর মৃত্তিকা কাকে বলে ? 

Ans: পর্বতের পাদদেশে নুড়ি , পলি ও বালি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকাকে ভাবর মৃত্তিকা বলে ।

  1. ভাবর মৃত্তিকা অনুর্বর কেন ? 

Ans: ভাবর মৃত্তিকা নুড়ি , কাকর ও বালি দ্বারা গঠিত হওয়ায় এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা খুবই কম । তাই এই মৃত্তিকা অত্যন্ত অনুর্বর ।

  1. পলি মৃত্তিকায় কোন কোন ফসল উৎপন্ন হয় ?

Ans: ভারতের পলিমাটিতে প্রায় সব ধরনের কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হয় । প্রধান উৎপাদিত ফসল হল ধান , গম , আখ , তৈলবীজ , ডাল , পাট , আলু , শাকসবজি প্রভৃতি ।

  1. পলি মৃত্তিকা অত্যন্ত উর্বর কেন ?

Ans: এই পলি মৃত্তিকায় ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি । অধিকাংশ স্থানে মাটির মধ্যে পলি , কাদা ও বালির ভাগ সমান সমান থাকায় মাটি দোআঁশ জাতীয় বলে জলধারণ ক্ষমতাও বেশ বেশি । তাই ইহা উর্বর । জেনে রাখো 

হিউমাস : মৃত্তিকায় অবস্থিত , পরিপূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট জীবদেহ বিশেষ Humus নামে পরিচিত । এটি মৃত্তিকার গঠন , সচ্ছিদ্রতা , উন্নতা প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

  1. কৃষ্ণ মৃত্তিকা ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায় ? 

Ans: মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম অংশ , গুজরাটের দক্ষিণ , অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর – পশ্চিম , কর্ণাটকের উত্তর ও তামিলনাড়ুর উত্তর অংশের প্রায় ৫.৫০ লক্ষ বর্গকিমি ( ১৭ % ) স্থানজুড়ে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মৃত্তিকা দেখা যায় ।

  1. রেগুর মৃত্তিকা কাকে বলে ?

Ans: দাক্ষিণাত্যের উত্তর – পশ্চিম অংশে লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন যে অতি উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায় , স্থানীয়ভাবে তাকে ‘ রেগুর ‘ বলে ।

  1. রেগুর মৃত্তিকার রং কালো হয় কেন ?

Ans: ব্যাসল্ট শিলায় আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট রেগুর মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইডের পরিমাণ খুব বেশি থাকে । এই কারণে রেগুর মৃত্তিকার রং হয় কালো ।

  1. ভুর কাকে বলে ?

Ans: উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে ( বিশেষত উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পশ্চিমাংশের দোয়ার অঞ্চলে ) বালি মিশ্রিত অতি সূক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায় , যা ‘ ভুর ‘ নামে পরিচিত ।

  1. কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায় ?

Ans: কৃষ্ণ মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত । তাই মাটি ‘ Black cotton Soil ‘ নামে পরিচিত । কার্পাস ছাড়াও এই মাটিতে মিলেট , তৈলবীজ , তামাক , পিঁয়াজ প্রভৃতির চাষ হয় ।

  1. কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে ‘ কৃষ্ণকার্পাস মৃত্তিকা ‘ বা ‘ Black Cotton Soil ‘ বলে কেন ?

Ans: কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর কার্পাস বা তুলা চাষের জন্য উপযোগী বলে , কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে ‘ কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা ‘ বা ‘ Black Cotton Soil বলে ।

  1. লোহিত মৃত্তিকা কোথায় কোথায় দেখা যায় ?

Ans: কর্ণাটক , মহারাষ্ট্রের দক্ষিণ – পূর্বাংশ , অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বভাগ , মধ্যপ্রদেশ , ওড়িশা , ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ অংশ , পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম , বাঁকুড়া জেলায় এবং উত্তর – পূর্বের নাগাল্যান্ড , মণিপুর , মিজোরাম , ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায় ।

  1. লোহিত মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায় ? 

Ans: লোহিত মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও মিলেট , বাদাম , ভুট্টা , সোয়াবিন , আঙুর ও কফি উৎপাদনের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে ধান , তৈলবীজ , ডাল প্রভৃতির চাষ করা হয় । HTTO DRA 

  1. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার এইরূপ নামকরণের কারণ কী ? 

Ans: লাতিন ভাষায় ‘ ল্যাটার ‘ ( Later ) শব্দের অর্থ হল ইট । ইটের মতো শক্ত ও লাল রঙের হয় বলে , এই মৃত্তিকার নাম ল্যাটেরাইট ।

  1. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার খনিজ উপাদান কী কী ?

Ans: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার খনিজ উপাদানগুলি হল লোহা , অ্যালুমিনিয়াম , ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড প্রভৃতি ।

  1. পার্বত্য মৃত্তিকা কোথায় কোথায় দেখা যায় ?

Ans: উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পর্বতের বনভূমি অঞ্চলে পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায় । হিমালয়ের উপত্যকা ও অবনমিত অঞ্চলেই এই মৃত্তিকা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ।

  1. পার্বত্য ও অরণ্য মৃত্তিকায় কোন্ কোন্ ফসল ভালো জন্মায় ?

Ans: পার্বত্য মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও , চা , কফি , বিভিন্ন মশলা , ফল প্রভৃতি বাগিচা ফসল ভালো জন্মায় ।

  1. মরু ও শুষ্ক মৃত্তিকা ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায় ?

Ans: রাজস্থানের মরুভূমি ও তৎসংলগ্ন পাঞ্জাব , হরিয়ানা | ও গুজরাটের প্রায় ১.৫০ লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চলজুড়ে রয়েছে মরু ও শুষ্ক মৃত্তিকা ।

  1. শিট ক্ষয় ও খোয়াই ক্ষয় কাকে বলে ?

Ans: ঢালু জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার মাধ্যমে মাটির উপরিস্তরের অপসারণ হল শিট ক্ষয় । ছোটো নালা বড়ো নালায় পরিণত হলে তা হল খোয়াই ক্ষয় । প্রশ্ন ২৯ র‍্যাভাইন ক্ষয় কী ? উত্তর : জলনালিকা ও খোয়াই আরও গভীর খাড়া পাড়যুক্ত গভীর খাত তৈরি করে । একেই বলে র‍্যাভাইন ক্ষয় ।

  1. অপভূমি বা Badland কাকে বলে ?

Ans: খোয়াই ও র‍্যাভাইন ক্ষয়ের মাধ্যমে বিশাল অঞ্চল এবড়োখেবড়ো ও শুষ্ক অনুর্বর ভূমিতে পরিণত হলে তা হল অপভূমি বা ব্যাডল্যান্ড । যেমন— গড়বেতায় অবস্থিত গণগনির ব্যাডল্যান্ড । 

ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের মৃত্তিকা (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Mrittika Question and Answer : 

  1. ল্যাটেরাইট মাটি ভারতের কোথায় কোথায় দেখা যায় ? 

Ans: ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা । এই মৃত্তিকা দেখা যায় পশ্চিমঘাট , পূর্বঘাট , বিন্ধ্য সাতপুরা , রাজমহল প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চলে এবং কর্ণাটক , অন্ধ্রপ্রদেশ , ওড়িশা , তামিলনাড়ু , ঝাড়খণ্ড , মেঘালয় , পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলে । 

  1. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে ?

Ans: ভারতে প্রাচীন শিলায় ( গ্রানাইট ও নিস ) গঠিত মালভূমি ও প্রাচীন পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই বেশি এবং পর্যায়ক্রমে আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু বিরাজ করে সেখানেই । এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়েছে । অধিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে আবহারিকার গ্রস্ত উচ্চভূমির প্রাচীন শিলাস্তর থেকে এলুভিয়েশান প্রক্রিয়ায় সিলিকা ও অন্যান্য দ্রবণীয় পদার্থ অপসারিত হয় এবং পড়ে থাকে লোহা । অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রেক্সাইড এবং সৃষ্টি হয় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা । 

  1. ল্যাটেরাইট মাটির বৈশিষ্ট্য লেখো ।

Ans: ল্যাটেরাইট মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল— ( ১ ) এই মৃত্তিকা লাল , বাদামি ও হলদে বাদামি রঙের হয় । ( ২ ) এই মাটিতে জল থাকলে থকথকে কিন্তু শুকিয়ে গেলে শক্ত ইটের মতো হয়ে যায় । ( লাতিন শব্দ ল্যাটেরাইট এর অর্থ – ইট ‘ ) । ( ৩ ) লোহা , অ্যালুমিনিয়াম , ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড এই মৃত্তিকার প্রধান উপকরণ । ( ৪ ) বড়ো শক্ত দলার বা বিচ্ছিন্ন কাঁকরের মতো পদার্থ দিয়ে এটি সৃষ্ট । ( ৫ ) অন্যান্য খনিজ ও জৈব পদার্থ থাকে না বলে এটি অনুর্বর তাই চাষআবাদ খুব বেশি হয় না । ( ৬ ) ক্ষয়ীভবনের মাধ্যমে উচ্চভূমি থেকে এই মৃত্তিকা সমতলভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সঞ্চিত হয় ।

  1. ল্যাটেরাইট মাটি অনুর্বর কেন ?

Ans: প্রাচীনকালের আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলার ওপর গভীর আবহবিকারের প্রভাবে শিলাস্তরের উপরিভাগ থেকে সিলিকা ও অন্যান্য দ্রবণীয় খনিজ অপসারিত হয় এবং পড়ে থাকে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও হাইড্রক্সাইড । বাদামি বর্ণের কাকর জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ চুন , ম্যাগনেশিয়াম , নাইট্রোজেন প্রভৃতির পরিমাণ খুবই কম । এই মাটির জলধারণ ক্ষমতাও খুব কম । তাই এই মাটি কৃষির পক্ষে একেবারে অনুর্বর ।

  1. পার্বত্য মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো ।

Ans: পার্বত্য মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ( ১ ) পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার রং কালো ও ধুসর বাদামি । ( ২ ) এই মাটিতে পটাশ ও ফসফরাস কম , কিন্তু জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি । ( ৩ ) প্রকৃতিগতভাবে এই মাটি অম্ল এবং অনুর্বর । ( ৪ ) ধাপ চাষের মাধ্যমে চা , ফল , বার্লি , আলু , ধান , গম ও জোয়ার চাষ করা যায় ।

  1. মরু ও শুদ্ধ মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখো ।

Ans: মরু ও শুষ্ক মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যগুলি হল- ( ১ ) মাটির রং বাদামি হলুদ ও হালকা হলুদ , ( ২ ) মাটিতে লবণের ভাগ বেশি , ( ৩ ) মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকায় অনুর্বর প্রকৃতির , ( ৪ ) তবে ফসফেট ও নাইট্রেটের উপস্থিতির কারণে আর্দ্রতার প্রভাবে এই মাটি উর্বর হয়ে ওঠে ।

  1. মৃত্তিকায় লবণের ভাগ বেশি কেন ?

Ans: মরু অঞ্চলে গভীর বাষ্পীভবনের কারণে মৃত্তিকার অভ্যন্তরের লবণ কৌশিক প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত হারে উপরে উঠে মৃত্তিকার উপরিস্তরে সঞ্চিত হচ্ছে । তাই এইসকল অঞ্চলে অর্থাৎ মরু অঞ্চলে মরু মৃত্তিকার লবণতা বাড়ছে যা কৃষিকাজের পক্ষে ক্ষতিকর ।

  1. প্রবহমান জলধারা কীভাবে মৃত্তিকাকে ক্ষয় করে ?

Ans: প্রবহমান জলধারার দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষরের প্রক্রিয়াসমূহ— ( ক ) বৃষ্টির আঘাতে ক্ষয় : বৃষ্টির ফোঁটা সরাসরি মাটিকে আঘাত করলে মাটি আলগা হয় এবং জলের প্রবাহে তা সহজেই যায় । ( খ ) শিট বা চাদর ক্ষয় : ঢালু জমির ওপর  ি প্রবাহিত জলধারার মাধ্যমে মাটির উপরিস্তরের অপসারণ হল শিট ক্ষয় । ( গ ) জলনালিকা ক্ষয় : জলপ্রবাহে ছোট্ট ছোট্ট নালি তৈরির মাধ্যমে মাটির অপসারণ হল জলনালিকা ক্ষয় । ( ঘ ) খোয়াই ক্ষয় : ছোটো নালা বড়ো নালায় পরিণত হলে তা হল খোয়াই । এর মাধ্যমে মাটির ক্ষয় খুব বেশি ঘটে । বীরভূম , বাঁকুড়ার লালমাটি অঞ্চলে খোয়াই ক্ষয় খুব বেশি ঘটে । ( ঙ ) র‍্যাভাইন ক্ষয় : জলনালিকা ও খোয়াই আরও গভীর খাড়া পাড়যুক্ত গভীর খাত তৈরি করে এটি হল র‍্যাভাইন ক্ষয় । এ ছাড়া নদীর পাড় – ভাঙন , পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসজনিত ক্ষয় জলপ্রবাহ ক্ষয়ের মধ্যে পড়ে ।

  1. মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে বন্যার মাত্রা বাড়ে কারণ ব্যাখ্যা করো । 

Ans: মৃত্তিকা ক্ষয় পেলে সেই ক্ষয়জাত দ্রব্যগুলি নদীর খাতে জমলে খাতের উচ্চতা বাড়ে এবং জলবহনের ক্ষমতা কমে । বর্ষাকালে নদীর দুই তীর ছাপিয়ে বন্যা হয় ।

  1. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের মাত্রা খুব বেশি ?

Ans: ভারতের অত্যধিক মৃত্তিকা ক্ষয়প্রবণ অঞ্চল ( Very heavy erosion ) হল মধ্য ভারত তথা মধ্যপ্রদেশের উত্তরাংশ , উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণাংশ রাজস্থানের দক্ষিণ – পূর্বাংশ , গুজরাটের দক্ষিণ – পূর্বাংশ এবং পাঞ্জাব , হিমাচল প্রদেশ , উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অংশ । ভারতের অধিক মৃত্তিকা ক্ষয়প্রবণ অঞ্চল হল ছোটোনাগপুর মালভূমি অংশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বিস্তীর্ণ অংশ এবং মধ্যম প্রকৃতির মৃত্তিকা ক্ষয় অঞ্চল হল উত্তরপ্রদেশের উত্তর পশ্চিমাংশ , সমগ্র মধ্যপ্রদেশ , মহারাষ্ট্রের সমগ্র মধ্য – পূর্বাংশ , অন্ধ্রপ্রদেশের সমগ্র । পশ্চিমাংশ , কর্ণাটকের পূর্বাংশ ও তামিলনাড়ুর উত্তরাংশ ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের মৃত্তিকা (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Mrittika Question and Answer : 

1. ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করে প্রধান একপ্রকার মৃত্তিকার অবস্থান , বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।

Ans: ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার উৎপত্তি , বৈশিষ্ট্য , উদ্ভিদের বিস্তার , শিলাস্তরের গঠন ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে মৃত্তিকাকে প্রধান ছ – টি ভাগে ভাগ করা যায় । মৃত্তিকার প্রধান ভাগগুলি হল- ( ১ ) পলি মৃত্তিকা , ( ২ ) কৃষ্ণ মৃত্তিকা , ( ৩ ) লোহিত মৃত্তিকা , ( ৪ ) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা , ( ৫ ) পার্বত্য মৃত্তিকা এবং ( ৬ ) নরু ও শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকা । নিম্নে পলি মৃত্তিকার অবস্থান , বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল । 

পলি বা পাললিক মৃত্তিকা ( Alluvial Soil ) : অবস্থান : উত্তর ভারতে গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু সমভূমি , দক্ষিণ ভারতের মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণা ও কাবেরী অববাহিকার কয়েকটি অংশে এবং উপকূল বরাবর নদী দ্বারা বাহিত পলি সজ্জিত হয়ে এই মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে । 

বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) অবস্থানের তারতম্য অনুসারে এক – একটি অঞ্চলের পলিমাটির রং এক এক রকমের হয় । কোনো অঞ্চলের পলিমাটিতে বালির ভাগ বেশি , কোথাও আবার কাদার ভাগ বেশি । ( ২ ) পলিমাটিতে জৈব পদার্থ , ফসফরাস পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি , কিন্তু এই মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম হলেও কৃষির পক্ষে অতি উর্বর । ( ৩ ) অঞ্চলবিশেষে পলিমাটির বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের ফলে এই মাটির উর্বরতারও তারতম্য হয় । ( ৪ ) মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি বলে এটি উর্বর । 

গুরুত্ব : এই মাটি কৃষিকার্যের পক্ষে অত্যন্ত উর্বর বলে প্রায় সব ধরনের ফসলের চাষ এই মাটিতে করা হয় । যেমন- ধান , গম , ইক্ষু , তৈলবীজ , পাট আলু প্রভৃতি । ভারতের অধিকাংশ কৃষিজ ফসল এই মাটিতেই উৎপন্ন হয়ে থাকে । 

2. ভারতের রেগুর মৃত্তিকা ও পলি মৃত্তিকার অবস্থান , বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।

Ans: রেগুর মৃত্তিকা বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা ( Black Soil ) : 

অবস্থান : মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম অংশ , গুজরাটের দক্ষিণ , অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর – পশ্চিম , কর্ণাটকের উত্তর এবং তামিলনাড়ুর উত্তর অংশের প্রায় ৫.৫০ লক্ষ বর্গকিমি ( ১৭ % ) স্থানজুড়ে আছে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর । 

বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্ট এই মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগের পরিমাণ বেশি থাকায় রং কালো । ( ২ ) বর্ষাকালে এই মাটি চটচটে কিন্তু শুষ্ক ঋতুতে বেশ শক্ত এবং ফাটলের সৃষ্টি হয় । ( ৩ ) পলি ও কাদার ভাগ ( ৫০ % -৮০ % ) বেশি থাকায় এখন মাঝারি বলে জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি । ( ৪ ) বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ হওয়ায় ( অ্যালুমিনা , চুন , ম্যাগনেশিয়াম , আয়রন । অক্সাইড ) মাটি খুব উর্বর । 

গুরুত্ব : এই মাটিতে কার্পাস , মিলেট , তৈলবীজ , তামাক ও পিঁয়াজের প্রচুর পরিমাণ চাষ হয় । এই মৃত্তিকা তুলো চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে একে ‘ Black Cotton Soil বলে ।

3. ভারতের লোহিত মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার অবস্থান , বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখো ।

Ans: লোহিত মৃত্তিকা ( Red Soil ) : • অবস্থান : ভারতের প্রায় ১১ % এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ধরনের মৃত্তিকা দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত কর্ণাটক , তামিলনাড়ু , তেলেঙ্গানা , ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল , ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমিতে এবং উত্তর – পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল ও মেঘালয় মালভূমিতে এই মাটি দেখা যায় । 

বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় সাধারণত এই মাটির রং লাল , তবে কোথাও কোথাও হলুদ রং – এর লোহিত মাটিও দেখা যায় । ( ২ ) বালি ও কাঁকরপূর্ণ হওয়ায় লোহিত মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব কম । ( ৩ ) এই মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের ভাগ বেশি , নাইট্রোজেন , চুন ও ফসফরাসের ভাগ কম এবং জৈব পদার্থ খুব কম থাকায় সাধারণভাবে এটি অনুর্বর । ( ৪ ) এই মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি ও কাদার ভাগ কম বলে এথন সূক্ষ্ম প্রকৃতির । ( ৫ ) আৰ্দ্ৰ ঋতুতে এই মৃত্তিকা অত্যন্ত শক্ত । ( ৬ ) প্রধানত জলসেচের সাহায্যে লোহিত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে রাগি , তৈলবীজ , জোয়ার ও সামান্য ধান উৎপন্ন হয় । সহায়িকা ,

 গুরুত্ব : লোহিত মৃত্তিকা অনুর্বর হলেও মিলেট , বাদাম , ভুট্টা , সয়াবিন , আঙুর ও কফি উৎপাদনের পক্ষে বিশেষ উপযোগী । জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে ধান , তৈলবীজ , ডাল প্রভৃতির চাষ করা হয় । ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ( Laterite Soil ) অবস্থান : কর্ণাটক , তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ , ঝাড়খণ্ড , আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের কয়েকটি অঞ্চলের প্রায় ২.৫ লক্ষ বর্গকিমি ( প্রায় ৮ % ) স্থানজুড়ে এই মৃত্তিকা দেখা যায় । 

বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) সাধারণত এই মাটি ইটের মতো লাল রং – এর । তবে বাদামি ও হলুদ – বাদামি রং – এর ল্যাটেরাইট মাটিও দেখা যায় । ( ২ ) ল্যাটেরাইট মাটি শুকনো অবস্থায় ইটের মতো শক্ত হয় , তবে ভিজে অবস্থায় থকথকে হয়ে যায় । ( ৩ ) লোহা , ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এই মৃত্তিকার প্রধান উপাদান । ( ৪ ) বড়ো শক্ত দলার মতো পদার্থে কিংবা বিভিন্ন কাঁকরজাতীয় পদার্থে এই মৃত্তিকা গঠিত । কাঁকরপূর্ণ বলে এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা বিশেষ । ( ৫ ) কাঁকর ও বালিপূর্ণ হওয়ায় এই মৃত্তিকার প্রথন স্থূল প্রকৃতির । ( ৬ ) ল্যাটেরাইট মাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ বিশেষ থাকে না বলে এবং মাটির জলধারণ ক্ষমতা না থাকায় সাধারণভাবে এই মাটি অনুর্বর । ( ৭ ) তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগ করে কিছু কিছু অঞ্চলে ধান , চা , কফি ও রবার চাষ করা হয় । 

গুরুত্ব : এই মৃত্তিকা অনুবর বলে কৃষিকাজের সহায়ক নয় । তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা , কফি , রবার ও বাদামের চাষ হয় । গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণ এই মাটি ব্যবহৃত হয় ।

3. মৃত্তিকা সংরক্ষণ কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে করা হয় ? 

Ans: মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিরোধ ও সংরক্ষণ ( Prevention of Soil Erosion & Conservation ) : যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে মৃত্তিকাকে ক্ষয় ও অবনমনের হাত থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে রক্ষা করা যায় , তাকেই বলে মৃত্তিকা সংরক্ষণ । 

মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিসমূহ ( Methods of Soil Conservation ) : 

( ১ ) বৃক্ষরোপণ ( Tree Planting ) : মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল বৃক্ষরোপণ । যেহেতু উদ্ভিদ তার শিকড়ের দ্বারা মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে , সেই কারণে যদি নতুন বৃক্ষরোপণ করা যায় তাহলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ কমবে । 

( ২ ) ধাপ চাষ ( Terrace farming ) : ভারতে পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় সিঁড়ির মতো ধাপ কেটে অর্ধচন্দ্রাকার সমতল জমি তৈরি করে সেখানে চাষ করা হয় । এই পদ্ধতিকে ধাপ চাষ বলা হয় । এর ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ পায় । 

( ৩ ) সমোন্নতি রেখা চাষ ( Contour Ploughing ) : পার্বত্য উপত্যকার ঢালু জমিতে সমান উচ্চতা বরাবর ঢালের আড়াআড়িভাবে জমি কর্ষণ , বপন ও রোপণ করা হয় । এখানে আবার সমোন্নতি রেখা বরাবর দীর্ঘাকার উঁচু বাঁধ তৈরি করে ঢালের দিকে ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় । এতে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ পায় । 

( 8 ) ফালি চাষ ( Strip Cropping ) : এই পদ্ধতিতে উদ্ভিদহীন ঢালু জমিতে বৃষ্টির গতি ও মাটি ক্ষয় বেশি হওয়ায় ঢালের আড়াআড়ি দিকে চওড়া ফিতের মতো জমি তৈরি করে ক্ষয়রোধী শস্য চাষ করে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা হয় । 

( ৫ ) গালি চাষ ( Gully ploughing ) গালি অঞ্চলে যেখানে জল প্রবাহিত হয় সেই প্রবাহপথে আড়াআড়িভাবে পাথর দিয়ে কৃত্রিমভাবে জল ধরে রেখে সেই জল দিয়ে চাষাবাদ করার ব্যবস্থা করা হয় । একে গালি চাষ বলে ।  

( ৬ ) ঝুম চায় রোধ : ঝুম চাষের ফলে প্রধানত মৃত্তিকা ক্ষয় হয় । যদি অবৈজ্ঞানিক প্রথায় এই ঝুম চাষ বন্ধ করা হয় , তাহলে মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ পাবে । 

( ৭ ) মালচিং ( Mulching ) : জমি থেকে ফসল কেটে নেওয়ার পর মু গাছে যে অংশ মাটিতে পড়ে থাকে , তাকে মাটির আবরণ হিসেবে ব্যবহার করে পরবর্তী চাষ করা হয় । এই আবরণ একদিকে যেমন মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে তেমনি মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ সৃষ্টিতেও সাহায্য করে । 

( ৮ ) শেল্টার বেল্ট ( Shelter Belt ) কোনো স্থানে আবহাওয়া গত ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যখন জমির চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয় , তখন তাকে শেল্টার বেল্ট বলে । 

( ৯ ) শস্যাবর্তন ( Crop Rotation ) : একই জমিতে সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসল শস্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় চাষ করলে সহায়িকা , মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় থাকে ও মাটি ক্ষয়ের হাত থেকেও রক্ষা পায় । 

( ১০ ) নদীপাড়ে বাঁধ নির্মাণ ( Dam Construction ) : নদীর পাড়ে বা সমুদ্র উপকূলে বাঁধ নির্মাণ করলে বা কংক্রিট দিয়ে নদীর পাড় বাঁধলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয় । 

( ১১ ) নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ ( Control Overgrazing ) : ভূমির ওপর তৃণের আচ্ছাদন থাকলে মৃত্তিকাক্ষয় কম হয় । তাই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় পশুচারণ করলে মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করা যায় । এ ছাড়াও মালচিং প্রক্রিয়ার চাষাবাদ করা , সঠিক শস্য } নির্ধারণ করা এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা ইত্যাদির মাধ্যমেও মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ করা হয় ।