MCQ | Madhyamik Geography Bharater Savabik Udvid Question and Answer :
- যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমি – এর বেশি সেখানে কী জাতীয় বৃক্ষ দেখা যায় ?
(A) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ
(B) সরলবর্গীয় উদ্ভিদ
(C) আর্দ্র পর্ণমোচী
(D) ম্যানগ্রোভ
Ans: (A) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ
- চিরহরিৎ অরণ্যের একটি উদ্ভিদ হল –
(A) রডোডেনড্রন
(B) ওয়ালনাট
(C) রোজউড
(D) গরান
Ans: (C) রোজউড
- কোন্ অঞ্চলের বৃক্ষগুলির উচ্চতা গড়ে ৩৫-৪৫ মি ?
(A) চিরহরিৎ
(B) পর্ণমোচী
(C) আল্পীয়
(D) ম্যানগ্রোভ
Ans: (A) চিরহরিৎ
- চিরহরিৎ বৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায়—
(A) পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালে
(B) গুজরাটে
(C) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে
(D) রাজস্থানে
Ans: (C) পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে
- ভারতের কোন্ রাজ্যে রবার গাছের চাষ সর্বাধিক ?
(A) পশ্চিমবঙ্গ
(B) কেরল
(C) মহারাষ্ট্র
(D) উত্তরাখণ্ড
Ans: (B) কেরল
- ভারতে কোন্ অরণ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ?
(A) পর্ণমোচী
(B) চিরহরিৎ
(C) মরু উদ্ভিদ
(D) ম্যানগ্রোভ
Ans: (A) পর্ণমোচী
- সাধারণত ঘাস , গুল্ম এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা গাছকে একসঙ্গে বলে –
(A) মরু উদ্ভিদ
(B) মিশ্র অরণ্য
(C) শুষ্ক পর্ণমোচী
(D) কোনোটাই নয়
Ans: (C) শুষ্ক পর্ণমোচী
- হিমালয়ের পাদদেশের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে কোন্ উদ্ভিদ দেখা যায় ?
(A) পর্ণমোচী
(B) সরলবর্গীয়
(C) ম্যানগ্রোভ
(D) চিরহরিৎ
Ans: (D) চিরহরিৎ
- পূর্ব হিমালয়ের ৪০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় কী অরণ্য রয়েছে ?
(A) সরলবর্গীয়
(B) আল্লীয়
(C) পাইন
(D) চিরহরিৎ
Ans: (D) চিরহরিৎ
- মরু অঞ্চলের কাঁটাযুক্ত উদ্ভিদকে বলে –
(A) হ্যালোফাইট
(B) জেরোফাইট
(C) হেলিওফাইট
(D) মেসোফাইট
Ans: (B) জেরোফাইট
- মরু জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় –
(A) রাজস্থানের মরুপ্রান্তে
(B) ছোটোনাগপুর মালভূমিতে
(C) গ্রস্ত উপত্যকায়
(D) তামিলনাড়ুর পূর্ব দিকে
Ans: (A) রাজস্থানের মরুপ্রান্তে
- ভারতের মরু অঞ্চলে জন্মায় ফণীমনসা –
(A) ফার
(B) খয়ের
(C) স্প্রুস
(D) ফণীমনসা
Ans: (D) ফণীমনসা
- রডোডেনড্রন , নাক্স ভমিক্যা , জুনিপার ইত্যাদি উদ্ভিদ কোন অরণ্যে দেখতে পাওয়া যায় ।
(A) সরলবর্গীয়
(B) মিশ্র
(C) আল্পীয়
(D) চিরহরিৎ
Ans: (C) আল্পীয়
- পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে কী ধরনের বৃক্ষ দেখতে পাওয়া যায় ?
(A) গুষ্ম ও তৃণ
(B) সরলবর্গীয়
(C) ম্যানগ্রোভ
(D) চিরহরিৎ
Ans: (A) গুষ্ম ও তৃণ
- যে অঞ্চলে চিরহরিৎ গাছ দেখা যায় সেখানে সারাবছর মাটি থাকে –
(A) শুষ্ক
(B) জলমগ্ন
(C) আদ্র
(D) পাথুরে
Ans: C) আদ্র
- হুগলি নদীর মোহানায় যে গাছটি বেশি দেখা যায় সেটি হল –
(A) পাইন
(B) ক্যাকটাস
(C) শিশু
(D) সুন্দরী
Ans: (D) সুন্দরী
- লম্বা ও ছুঁচোলো প্রকৃতির গাছ দেখা যায় –
(A) সমভূমি অঞ্চলে
(B) পার্বত্য অঞ্চলে
(C) মরু অঞ্চলে
(D) সুন্দরবন অঞ্চলে
Ans: (B) পার্বত্য অঞ্চলে
- কোন্ মৃত্তিকায় সরলবর্গীয় উদ্ভিদ ভালো জন্মায় ?
(A) পডসল
(B) লবণাক্ত
(C) আত্মীয়
(D) চিরহরিৎ
Ans: (A) পডসল
- কোন গাছের নামানুসারে সুন্দরবনের নামকরণ করা হয় ?
(A) সিঙ্কোনা
(B) মৃত্তিকা
(C) ভূপ্রকৃতি
(D) সুন্দরী
Ans: (D) সুন্দরী
- ভারতে কোন্ অরণ্যে ঠেসমূল যুক্ত গাছ দেখতে পাওয়া যায় ?
(A) পর্ণমোচী
(B) ম্যানগ্রোভ
(C) আল্পীয়
(D) মিশ্র
Ans: (B) ম্যানগ্রোভ
- কোন রাজ্যে অরণ্যের বিন্যাস সবথেকে কম ?
(A) হরিয়ানা
(B) বিহার
(C) রাজস্থান
(D) পাঞ্জাব
Ans: (D) পাঞ্জাব
- ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর কোন উপাদানের প্রভাব সর্বাধিক –
(A) জলবায়ু
(B) মানুষ
(C) মৃত্তিকা
(D) ভু প্রকৃতি
Ans: (A) জলবায়ু
- ভারতের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটি কোথায় অবস্থিত ।
(A) গোদাবরী বদ্বীপে
(B) গঙ্গা বদ্বীপে
(C) কাবেরী বদ্বীপে
(D) মহানদী বদ্বীপে
Ans: (B) গঙ্গা বদ্বীপে
- ভারতের কত শতাংশ অঞ্চল বনভূমি দ্বারা অধিকৃত ?
(A) ৩১.০৫ %
(B) ৫১.০৫ %
(C) ৪১.০৫ %
(D) ২১.০৫ %
Ans: (D) ২১.০৫ %
- অরণ্য কী জাতীয় সম্পদ ?
(A) প্রবাহমান
(B) পুনর্ভব
(C) ক্ষয়মান
(D) অপুনর্ভব
Ans: (B) পুনর্ভব
- ভারতের কোন্ অরণ্যের অপর নাম ‘ মৌসুমি অরণ্য ‘ ?
(A) চিরহরিৎ
(B) পর্ণমোচী
(C) ম্যানগ্রোভ
(D) সরলবর্গীয়
Ans: (B) পর্ণমোচী
- সামাজিক বনসৃজনে কোন্ উদ্ভিদের চাষ করা হয় ?
(A) ইউক্যালিপটাস
(B) রডোডেনড্রন
(C) হেতাল
(D) ফণীমনসা
Ans: (A) ইউক্যালিপটাস
- ভারতে বনসংরক্ষণ আইন কবে প্রণয়ন করা হয়েছে ?
(A) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে
- পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ উদ্ভিদ হল—
(A) চিরহরিৎ প্রকৃতির
(B) পর্ণমোচী প্রকৃতির
(C) ম্যানগ্রোভ প্রকৃতির
(D) সরলবর্গীয় প্রকৃতির
Ans: (B) পর্ণমোচী প্রকৃতির
- হেক্টরপ্রতি কত শতাংশ থাকলে তাকে অরণ্য বলা হয় ?
(A) ৫ শতাংশ
(B) ১৫ শতাংশ
(C) ২০ শতাংশ
(D) ১০ শতাংশ
Ans: (D) ১০ শতাংশ
- শাল ও সেগুন কোন প্রকার উদ্ভিদ –
(A) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ
(B) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী
(C) ম্যানগ্রোভ
(D) সরলবর্গীয়
Ans: (B) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী
32 কোন প্রকার অরণ্যে শ্বাসমূল ও ঠেসমূল দেখা যায় –
(A) পর্ণমোচী
(B) সাভানা
(C) ম্যানগ্রোভ
(D) মরু উদ্ভিদ
Ans: (C) ম্যানগ্রোভ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Savabik Udvid Question and Answer :
- দু – এককথায় উত্তর দাও স্বাভাবিক উদ্ভিদের নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী ?
Ans: ভূপ্রকৃতি , জলবায়ু ও মৃত্তিকা ।
- ভারতের প্রায় কত শতাংশ অঞ্চলজুড়ে চিরহরিৎ অরণ্য অবস্থান করছে ।
Ans: ১২ % ।
- শীতকালে কোন্ জাতীয় অরণ্যের বৃক্ষের পাতা নির্দিষ্ট সময়ে ঝরে যায় ?
Ans: পর্ণমোচী ।
- এবং ছোটো PATTER ঘাস , গুগ্ম , লতা এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা উদ্ভিদকে কোন্ শ্রেণির উদ্ভিদ বলে ?
Ans: শুষ্ক পর্ণমোচী ।
- পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু অংশে কোন প্রকার অরণ্য দেখতে পাওয়া যায় ?
Ans: আল্পীয় অরণ্য ।
- ভারতের কোন অঞ্চলের উদ্ভিদ শঙ্কু আকৃতির হয় ?
Ans: সরলবর্গীয় এবং আল্পীয় অরণ্য ।
- পড়সল মৃত্তিকায় কোন্ প্রকার উদ্ভিদ জন্মায় ?
Ans: সরলবর্গীয় ।
- লোহিত ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় কোন প্রকার উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায় ।
Ans: ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ ।
- দুটি মিশ্র অরণ্যের উদ্ভিদের নাম লেখো ।
Ans: দেবদারু / ওক / বার্চ / ম্যাপল ।
- কোন্ অরণ্য অঞ্চলকে ‘ ভারতের সাভানা অঞ্চল ‘ বলা হয় ।
Ans: শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য ।
- ভারতের মধ্যে কোন রাজ্যে সর্বাধিক সংখ্যক গাছ রয়েছে ।
Ans: অন্ধ্রপ্রদেশে ।
- ভারত সরকারের অরণ্য গবেষণার প্রধান কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত ?
Ans: উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনে ।
- ভারতের সামাজিক বনসৃজন গবেষণাকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত ?
Ans: উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে ।
- দেরাদুনে অবস্থিত অরণ্য গবেষণাগার – এর নাম কী ?
Ans: Forest Research Institute .
- ভারতের কোন অঞ্চলে মোট বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক ?
Ans: উপদ্বীপীয় মালভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলে ।
- ভারতে সর্বপ্রথম বনমহোৎসব উদযাপন করেন কে ?
Ans: ড . কানাইয়ালাল মাণিকলাল মুনশি ।
- নদীতীরবর্তী অঞ্চলের উদ্ভিদরাজিকে কী বলে ?
Ans: Tiparian Tree .
- ভারতীয় অরণ্যের প্রথম শ্রেণিবিভাগ কে করেন ।
Ans: আবহবিজ্ঞানী চ্যাম্পিয়ন ।
- যে কাল্পনিক রেখার ওপরে কোনো গাছ জন্মায় না , তাকে কী বলে ?
Ans: উদ্ভিদ রেখা ।
- পৃথিবীর মোট বনভূমির কত শতাংশ ভারতে আছে ।
Ans: প্রায় এক শতাংশ ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Savabik Udvid Question and Answer :
- কোন্ কোন্ উপাদানের ওপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে ওঠে ।
Ans: জলবায়ু , মৃত্তিকা ও ভূমির প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে স্বাভাবিক উদ্ভিদ গড়ে ওঠে । জলবায়ুর উপাদান , বৃষ্টিপাত , আর্দ্রতা ও উয়তা উদ্ভিদকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে ।
- ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করো ।
Ans: বৃষ্টিপাত , উষ্ণতা , ভূপ্রকৃতি , মৃত্তিকা প্রভৃতির তারতম্য অনুসারে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে ।
যথা : ( ১ ) ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য ( ২ ) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য ( ৩ ) ক্রান্তীয় মরু অরণ্য ( ৪ ) পার্বত্য উদ্ভিদ অরণ্য ও ( ৫ ) ম্যানগ্রোভ অরণ্য ।
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ কাকে বলে ?
Ans: ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং গড় উয়তা ২৫ ° –৩০ ° সেলসিয়াস – এর মধ্যে এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ % -এর বেশি সেইসকল স্থানে যে উদ্ভিদ জন্মায় তাকেই বলে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ ।
- ভারতের কোথায় কোথায় ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ দেখা যায় ?
Ans: ভারতের প্রায় ১২ % অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই অরণ্য । এই অরণ্য দেখা যায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল , উচ্চ অসম , নাগাল্যান্ড , মণিপুর , মিজোরাম এবং ত্রিপুরা ।
- কোন্ পরিবেশে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য গড়ে ওঠে ?
Ans: ভারতের যেসকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ২০০ সেমির বেশি , গড় উয়তা ২৫ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস , আর্দ্রতার পরিমাণ ৮০ শতাংশের বেশি এবং বছরে ৮-৯ মাস জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির সেখানে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদ জন্মায় । অধিক বৃষ্টিপাত , উষ্ণতা ও আর্দ্রতার প্রভাবে গাছগুলি সারাবছর সবুজ থাকে । ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদ চিরসবুজ কেন ? উত্তর : চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের গাছের পাতা শুকনো ঋতুতেও ঝরে পড়ে না । বেশি বৃষ্টির জন্য মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না । এই কারণে গাছ সবসময় সবুজ পাতাতে ভরে থাকায় গাছগুলি চিরহরিৎ বা চিরসবুজ ।
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদগুলির নাম লেখো ।
Ans: রোজউড , আয়রনউড , এবনি , তুন , পুন , শিশু , বাঁশ , বেত প্রভৃতি হল ভারতের চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ ।
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের ঘনত্ব খুব বেশি হয় কেন ?
Ans: চিরহরিৎ অরণ্যের গাছপালাগুলি বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয় এবং ভিজে মাটিতে সহজেই প্রচুর গাছপালা জন্মায় । এই বৃক্ষগুলি এত ঘনভাবে জন্মায় বলে বলা হয় যে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের ঘনত্ব খুব বেশি ।
- কোন্ বনভূমিকে “ চিরগোধূলি অঞ্চল ” বলা হয় । এবং কেন ?
Ans: চিরহরিৎ অরণ্যে অসংখ্য শাখাপ্রশাখা যুক্ত গাছগুলি এত ঘনভাবে জন্মায় যে , সূর্যালোক মাটিতে পৌছোতে পারে না । ফলে বনভূমির তলদেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন , আর্দ্র ও স্যাঁতসেঁতে হয় । তাই একে চিরগোধূলি অঞ্চল বলে ।
- চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির উপরের অংশে চাঁদোয়ার সৃষ্টি হয় কেন ?
Ans: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উয়তার অনুকূল্যে গাছগুলির অসংখ্য ভালপালা , সুপ্রশস্ত লম্বা পাতা বিস্তৃত হয়ে , গাছের মাথায় পরস্পর মিলে খোলা ছাতার মতো নিশ্ছিদ্র আস্তরণ তৈরি করে । একে অনেকটা চাঁদোয়ার মতো দেখতে চিরহরিৎ অরণ্যের উপরিভাগে সৃষ্ট চাদোয়া । লাগে বলে বলা হয় যে , চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির উপরের অংশে চাঁদোয়ার সৃষ্টি হয় ।
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ কাকে বলে ?
Ans: যেসকল অঞ্চলের উদ্ভিদের অধিকাংশই নির্দিষ্ট ঋতুতে সমস্ত পাতা ঝরে যায় , তাকে পর্ণমোচী শ্রেণির উদ্ভিদ বলে ।
- কোন্ পরিবেশে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য গড়ে ওঠে ?
Ans: যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টি ৫০–২০০ সেমি এবং বৃষ্টির বেশিরভাগ ঘটে বর্ষাকালে সেখানে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ জন্মায় । গ্রীষ্মের আগে বসন্তে অধিকাংশ গাছ সব পাতা ঝরিয়ে ফেলে ।
- ভারতের কোথায় কোথায় পর্ণমোচী জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় ?
Ans: অসম অববাহিকা , পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যপ্রদেশ , ছত্তিশগড় , ওড়িশা , তামিলনাড়ু , অন্ধ্রপ্রদেশ , মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক প্রভৃতি অংশে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদ দেখা যায় ।
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদগুলি বছরের নির্দিষ্ট সময় পাতা ঝরায় কেন ?
Ans: ক্রান্তীয় অঞ্চলে বর্ষার আগে গ্রীষ্মকালে গাছের জলের অভাব ঘটে । এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য অধিকাংশ গাছ গ্রীষ্মের আগে বসতে সব পাতা ঝরিয়ে ফেলে ।
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের প্রধান উদ্ভিদগুলির নাম লেখো ।
Ans: শাল , সেগুন , শিমুল , মহুয়া , জারুল , শিরীষ , আম , জাম বিভিন্ন ধরনের ঘাস , কুল , পলাশ প্রভৃতি হল ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের প্রধান উদ্ভিদ ।
- জেরোফাইট বা জাঙ্গল উদ্ভিদ কাকে বলে ?
Ans: ভারতের মরু অঞ্চলে অধিক উষ্ণতা ও শুষ্কতার জন্য ক্যাকটাস বা ফণীমনসা , কাঁটাগাছ বা বাবলা জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় । এই ধরনের উদ্ভিদকে জেরোফাইট বলা হয় ।
- ঠেসমূল কাকে বলে ?
অথবা , ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে ঠেসমূল দেখা যায় কেন ?
Ans: ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ নরম কাদামাটিতে জন্মায় । উপকূল অঞ্চলে প্রবাহিত প্রবল হাওয়ার বেগে গাছগুলি যাতে পড়ে না যায় , তার জন্য কাণ্ডের গোড়ার দিক থেকে এক রকমের অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ ঠেসমূল করে গাছগুলিকে ধরে রাখে । একেই ঠেসমূল বলা হয় ।
- জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম কাকে বলে ?
Ans: জলময় পরিবেশে জন্মানো গাছের ফল বা বীজগুলি জলে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় বা ভেসে না যায় , তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঝুলন্ত অবস্থায় বীজ থেকেই অঙ্কুরোদগম – এর মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয় । একে বলে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ।
- ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদগুলির নাম লেখো ।
Ans: ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদগুলি হল সুন্দরী , গরান , গেঁওয়া , কেয়া , গোলপাতা , হোগলা প্রভৃতি ।
- সুন্দরবন নামকরণের কারণ কী ?
Ans: সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরী গাছের প্রাধান্য বেশি । তাই এই বনভূমির নামকরণ হয় সুন্দরবন ।
- অরণ্য সংরক্ষণের ( Forest Conservation ) অর্থ কী ?
Ans: অরণ্য সংরক্ষণের অর্থ হল , বিচারবিবেচনা করে গাছ কাটা এবং সেইসঙ্গে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গাছের অভাব পূরণ করা । অর্থাৎ অরণ্য ও অরণ্যজাত সম্পদের অপচয় বন্ধ করে প্রয়োজনমতো এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ব্যবহার করা , সুরক্ষিত রাখা ও বনভূমির পুনর্নবীকরণ করাকে অরণ্য সংরক্ষণ বলে ।
- সামাজিক বনসৃজন কী ?
Ans: সামাজিক বনসৃজন হল জনগণের সহায়তায় গ্রামাঞ্চলের সামাজিক , অর্থনৈতিক ও পরিবেশের উন্নতির উদ্দেশ্যে বনভূমির সংরক্ষণ ও নতুন বনভূমি স্থাপন ।
- কৃষি বনসৃজন কাকে বলে ?
Ans: কৃষকের নিজের জমিতে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ , সবুজ সার , পশুখাদ্য , ওষুধ , ফলমূল ইত্যাদি পাওয়ার জন্য গাছপালা লাগিয়ে যে বনভূমি গড়ে তোলা হয় তা হল কৃষি বনসৃজন ।
- চিরহরিৎ অরণ্যের ব্যবহার লেখো ।
Ans: দুর্গমতার কারণে কাঠ সংগ্রহ কষ্টকর হলেও ( ১ ) মেহগনি , রোজউড , আয়রন উডের কদর খুব বেশি । আসবাব নির্মাণে এগুলি ব্যবহৃত হয় , ( ২ ) বন থেকে পাওয়া যায় বাঁশ ও বেত যা স্থানীয় কুটির শিল্পে ব্যবহৃত হয় ।
- ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশগুলি কী কী ?
Ans: ভারতের উপকূল ও বদ্বীপ অঞ্চলসমূহে যেখানে সূক্ষ্ম পলিমাটির সঞ্চয় ও লবণাক্ত জলের প্রভাব রয়েছে এবং প্রতিদিন দুবার জোয়ার ও ভাটা হয় সেখানেই এই অরণ্য দেখা যায় ।
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদে বর্ষবলয় দেখতে পাওয়া যায় না কেন ?
Ans: সারাবছর ব্যাপী উষ্ণও আর্দ্র গ্রীষ্ম ঋতুর জন্য গাছের বৃদ্ধিকালের কোনো নির্দিষ্ট সমীমিত সময় হয় না । তাই গাছগুলির গুঁড়িতে কোনো বর্ষবলয় থাকে না ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Savabik Udvid Question and Answer :
- ক্রান্তীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য লেখো ।
Ans: ( i ) চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলের গাছের পতা শুকনো ঋতুতেও ঝরে পড়ে না । বেশি বৃষ্টির জন্য মাটি সবসময় ভিজে থাকে বলে গাছের কখনও জলের অভাব হয় না । এই কারণে ও গাছ সবসময় সবুজ পাতাতে ভরে থাকায় গাছগুলি চিরহরিৎ বা চিরসবুজ । ( ii ) চিরহরিৎ বনভূমির গাছগুলির কাঠ শক্ত ও ভারী । ( iii ) চিরহরিৎ গাছের পাতা যথেষ্ট চওড়া এবং ঘনসবুজ । ( iv ) সূর্যকিরণ পাওয়ার আশায় চিরহরিৎ অরণ্যের বৃক্ষগুলির উচ্চতা খুব বেশি হয় ( গড় ৩৫–৪৫ মিটার ) । ( v ) চিরহরিৎ অরণ্যের উদ্ভিদের ঘনত্ব খুব বেশি হয় । ( vi ) চিরহরিৎ অরণ্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে অবস্থান করার ফলে সূর্যকিরণ মাটিতে প্রবেশ করতে পারে না । ( vii ) এই অরণ্যের ভূমিসংলগ্ন তলদেশ গুল্ম , লতাপাতা , আগাছা ও অর্কিড জাতীয় পরগাছা উদ্ভিদে পূর্ণ থাকে ।
- উত্তর – পূর্ব ভারত , আন্দামাননিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে চিরহরিৎ অরণ্য গড়ে উঠেছে কেনো ?
Ans: উত্তর – পূর্ব ভারত , আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে বাৎসরিক গড় বৃষ্টি ২৫০ সেমি বা তারও বেশি । এখানকার গড় উষ্ণতা ২৫ ° -২৭ ° সেলসিয়াস এবং বছরের ৮–৯ মাস জলবায়ু উষ্ণ- আর্দ্র বা স্যাঁতসেঁতে প্রকৃতির । উষ্ণ- আর্দ্র জলবায়ুর কারণেই এখানে অতিঘন চিরসবুজ বা চিরহরিৎ জাতীয় অরণ্য গড়ে উঠেছে ।
- আর্দ্র পর্ণমোচী ও শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ বলতে কি বোঝ ?
Ans: আর্দ্র পর্ণমোচী : ভারতের যেখানে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা ২৭ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন উষ্ণতা ১৫ ° –২০ ° সেলসিয়াস সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০–২০০ সেমি এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ % ৭৫ % , সে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায় । প্রয়োজনীয় উষ্ণতা ও আকার অভাবে এই অরণ্যের বৃক্ষগুলির পাতা শীতকালে করে যায় বলে একে পর্ণমোচী বা ‘ পাতাঝরা ‘ উদ্ভিদ বলে । আর্দ্র পর্ণমোচী উদ্ভিদ
শুদ্ধ পর্ণমোচী : সাধারণত ঘাস , গুল্ম এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা গাছ– এইসবকে একসঙ্গে বলে শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ । ভারতের যেসব অঞ্চল শুষ্ক অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম , বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি এবং গড় উচ্চতা হল ২৫ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস সেখানে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় ।
- পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে উদ্ভিদ চিরহরিৎ প্রকৃতির কিন্তু পূর্ব ঢালে কাঁটা ঝোপ ও গুল্ম জন্মায় ’ – কারণ লেখো ।
Ans: পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে জলবায়ু আর্দ্র নিরক্ষীয় প্রকৃতির । এখানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ সেমির বেশি এবং বৃষ্টিপাতের সময়কালও দীর্ঘ । এ ছাড়া একদিকে মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যেমন বৃষ্টিপাত ঘটায় , অন্যদিকে সমুদ্র থেকে উত্থিত নিম্নচাপের কারণেও এখানে বৃষ্টিপাত হয় । অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মুক্তিকার আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় , এখানে চিরহরিৎ জাতীয় বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে । অপরদিকে পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালের ( অনুবাত ঢাল ) বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম ( মাত্র ২০ – ৫০ সেমি ) । এই শুষ্কতা ও রুক্ষতার কারণে এখানে কাঁটা ঝোপ ও যুগ্ম জাতীয় অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
- পশ্চিমঘাট পর্বতের উভয় পার্শ্বের অরণ্যের প্রকৃতি ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
Ans: ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল – ( ১ ) শুষ্ক ঋতুতে জলের খরচ বাঁচানোর জন্য অধিকাংশ গাছ গ্রীষ্মের আগে পাতা ঝরিয়ে ফেলে । ( ২ ) চিরহরিৎ অরণ্যের মতো উদ্ভিদের ঘনত্ব অত বেশি নয় । ( ৩ ) গাছের উচ্চতা মাঝারি এবং আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয় । ( ৪ ) একই প্রজাতির উদ্ভিদের সমাবেশ একইসঙ্গে লক্ষ করা যায় ।
- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের ব্যবহার উল্লেখ করো ।
Ans: ক্রান্তীয় পর্ণমোচী উদ্ভিদের ব্যবহারগুলি হল ( ১ ) আসবাবপত্র , ঘরবাড়ি , বাস , লরির কাঠামো তৈরিতে শাল , সেগুন , শিশু , গামার কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম । ( ২ ) বাঁশ ও সাবাই ঘাস কাগজ শিল্পে কাঠমন্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । ( ৩ ) বনভূমি থেকে পাওয়া যায় বুঁদ ও শিরীয় আঠা , কেন্দুপাতা ( বিড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ) , শালপাতা যা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয় । ( ৪ ) নিকৃষ্ট শ্রেণির কাঠ স্থানীয় জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয় ।
জেনে রাখো : ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে The Indian Council of Forestry and Research Education ( ICFRE ) উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনে তাদের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন ।
- ” আন্দামান অপেক্ষা মেঘালয়ে বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি , অথচ মেঘালয় অপেক্ষা আন্দামানে উদ্ভিদের ঘনত্ব বেশি —কারণ লেখো ।
Ans: উত্তর – পূর্ব ভারতের মেঘালয় মালভূমি অঞ্চলে বাৎসরিক বৃষ্টি প্রায় ৩০০-৪০০ সেমি । ( ব্যতিক্রম চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরাম , বৃষ্টি ১১০০ ও ১২০০ সেমি ) এবং গড় উয়তা ২৫ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস । এখানে বৃষ্টিপাত অধিক হলেও বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই ঘটে জুন থেকে সেপ্টেম্বর – এর মধ্যে এবং বাকি সময় জলবায়ু শুষ্ক প্রকৃতির । পক্ষান্তরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রায় নিরক্ষরেখার নিকটে অবস্থিত হওয়ার কারণে সারাবছর ধরেই এখানে উয়আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে । মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ( ২০০-২৫০ সেমি ) কম হলেও বর্ষাকাল বেশ দীর্ঘ । অর্থাৎ , বৃষ্টিমুখর দিনের সংখ্যা এখানে মেঘালয় অপেক্ষা অধিক । মেঘালয় অপেক্ষা আন্দামানের জলবায়ু অধিক উষ্ণ- আর্দ্র হওয়ায় উদ্ভিদের ঘনত্বও আন্দামানে অধিক ।
- মরু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।
Ans: মরু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ( ১ ) এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অতি ক্ষুদ্র আকৃতির এবং এদের বৃদ্ধিও সীমিত । ( ২ ) শুষ্ক অঞ্চলে জলের অভাবের জন্য গাছের শিকড়গুলি খুব দীর্ঘ হয় ফলে মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে জল সংগ্রহ করে । ( ৩ ) এইপ্রকার উদ্ভিদের কান্ড হয় খর্বকায় বা বেঁটে , শক্ত ও কাষ্ঠল । ( ৪ ) গাছে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড হয় রসালো , চ্যাপটা ও ক্লোরোফিলযুক্ত এবং এদের রং হয় সবুজ । এইপ্রকার কাণ্ডকে বলে পর্ণকাণ্ড ।
যেমন — ফণীমনসা । ( ৫ ) গাছের জল যাতে পাতার মাধ্যমে বাষ্পমোচন হয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে , তার জন্য গাছের কাণ্ড মোম জাতীয় পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে ও গাছের গায়ে প্রচুর লোম ও কাঁটা থাকে । এদের পরকণ্টক বলে । ( ৬ ) উদ্ভিদগুলি বেশ দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে । ( 9 ) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মি . এর বেশি হয় না । এবং ( ৮ ) পরাগ মিলনের সুবিধার জন্য মরু উদ্ভিদের ফুলগুলি তীব্র গন্ধযুক্ত ও উজ্জ্বল রঙের হয় ।
- ভারতের কোথায় কোথায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে উঠেছে ?
Ans: পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন ; এ ছাড়া গঙ্গা , মহানদী , গোদাবরী , কুয়া প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ অঞ্চল , আন্দামান – নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিম্ন উপকূলভাগ , গুজরাটের কচ্ছ । ও কাম্বে উপসাগরের উপকূলের নিম্ন জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায় । সুন্দরবন ভারতের তথা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য । ভারতের মোট অরণ্যের ৬০ % সুন্দরবন অঞ্চলে অবস্থিত ।
- ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
Ans: ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ( ১ ) জোয়ার ভাটার প্রকোপে মাটি সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকে বলে উদ্ভিদগুলি চিরসবুজ ; ( ২ ) উদ্ভিদগুলি খর্বকার , শাখাপ্রশাখাযুক্ত এবং আকৃতি ছাতার মতো ; ( ৩ ) নরম মাটিতে যাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তার জন্য গোড়ায় ঠেসমূল ও অধিমূল থাকে ; ম্যানগ্রোভ অরণ্য ( ৪ ) মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকে বলে শ্বাসমূল দেখা যায় ; ( ৫ ) উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম দেখা যায় । প্রশ্ন ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যবহার লেখো । ( ১ ) কাঠ বাড়িঘর ও নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয় , ( ২ ) গোলপাতা ও হোগলা ঘর ছাউনিতে কাজে লাগে , ( ৩ ) বন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ হয় , ( ৪ ) স্থানীয় জ্বালানির জোগান আসে এই ভূমি থেকে ।
- অরণ্যসংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী ?
Ans: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোনো দেশে ৩৩.৩৩ % । বনভূমি থাকা প্রয়োজন । অথচ , বর্তমানে ভারতের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৯.৪৫ % । তাই বনভূমির সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন । বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল
( 1 ) মৃত্তিকা ক্ষয়রোধ উদ্ভিদের শিকড় মাটিকে ধরে রাখে । বনভূমি ধ্বংস হলে মৃত্তিকা বা ভূমিক্ষয় বাড়বে , যার প্রভাবে কৃষিকার্যের ক্ষতি হবে এবং সমভূমিতে বন্যা বাড়বে ।
( ২ ) মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধ বনভূমি ধ্বংসের প্রভাবে মরুভূমির সংলগ্ন অঞ্চলও মরুভূমিতে পরিণত হয় । উদ্ভিদ দ্বারা বাধার অভাবে বালি ক্রমাগত উড়ে গিয়ে অন্যস্থানে সঞ্চিত হয় । এবং অঞ্চলটি মরুভূমিতে পরিণত হয় ।
( ৩ ) পরিবেশের ভারসাম্য উদ্ভিদ দিনের বেলা CO2 গ্রহণ করে । ও O2 ছাড়ে । উদ্ভিদের সংখ্যা কমলে CO2 এর পরিমাণ বাড়বে । ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে ।
( 8 ) জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা : ক্রমাগত বনভূমির উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা প্রাণীকুল ধ্বংস হবে । ফলে পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হবে । ফলে বাস্তুতন্ত্রের বিঘ্ন হবে ।
( ৫ ) ভৌমজলের ভাণ্ডার পুরণ ও বন্যা রোধ : উদ্ভিদ মাটিকে ধরে রাখে । উদ্ভিদের শিকড় ও মাটির মধ্যে দিয়ে জল টুইয়ে চুইয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফলে ভৌমজলের ভাণ্ডার বাড়ে ও পৃষ্ঠপ্রবাহ কমে । ফলে বন্যার সম্ভাবনা কমে । এ ছাড়া বনভূমি সংরক্ষণের ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় , বনজসম্পদ ও জ্বালানি কাঠের জোগান বাড়ে এবং কিছুটা আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ হয় ।
- কোন্ কোন্ উদ্দেশ্যে সামাজিক বনসৃজন করা হয় ? অথবা , সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো ।
Ans: সামাজিক বনসৃজনের উদ্দেশ্য হল —– ( ১ ) চাহিদা অনুযায়ী নতুন বনভূমি রোপণ ও আদি বনভূমির সংরক্ষণ , ( ২ ) পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে জমি ব্যবহারের উন্নতি , ( ৩ ) রোপণ করা গাছ থেকে ফল , কাঠ , জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ , ( ৪ ) কাগজ , প্লাইউড শিল্পে কাঠের জোগান সুনিশ্চিত করা , ( ৫ ) পশুখাদ্যের জোগান বৃদ্ধি , ( ৬ ) গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন , ( ৭ ) মাটি ও জালের সংরক্ষণ ।
- কোন্ কোন্ স্থানে সামাজিক বনসৃজন রূপায়ণ হয় ।
Ans: সামাজিক বনসৃজন – এর অঞ্চলগুলি হল— ( ১ ) পতিত জমি , ( ২ ) রাস্তা ও রেললাইনের পার্শ্ববর্তী খালি জমি , ( ৩ ) নদী ও খালপাড়ের জায়গা , ( ৪ ) পঞ্চায়েতের অব্যবহৃত জমি , ( ৫ ) শহর ও শিল্পাঞ্চলের ফাঁকা স্থান , ( ৬ ) বাড়ি , বিদ্যালয় , অফিস , ধর্মস্থানের আশেপাশের জায়গা , ( ৭ ) খনির পার্শ্ববর্তী ও অব্যবহৃত খনি অঞ্চল প্রভৃতি । প্রশ্ন ১৫ | কৃষি বনসৃজনের উদ্দেশ্য কী ? ডিত্তর : কৃষি বনসৃজনের উদ্দেশ্যগুলি হল— ( ১ ) অব্যবহৃত ও পতিত জমি যেখানে চাষ সম্ভব নয় সেই জমিকে উৎপাদনশীল কৃষকের করা , পরিবারের অতিরিক্ত কর্মসংস্থান , ( ৩ ) কাঠ , ফল , ফুল বিক্রি করে কৃষকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি , ( 8 ) ভূমিক্ষয় রোধ , ( ৫ ) প্রয়োজনীয় কৃষি বনসৃজন জ্বালানির চাহিদা মেটানো । ( ৬ ) ভেষজ উদ্ভিদ লাগিয়ে ওষুধ শিল্পে কাঁচামালের জোগান বৃদ্ধি , ( ৭ ) পশুখাদ্যের জোগান , ( ৮ ) জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ।
- ভারতে সরলবর্গীয় অরণ্যের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখো ।
Ans: অবস্থান : পূর্ব হিমালয়ের ৩০০০-৪০০০ মি . উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ২০০০- ৪০০০ মি . উচ্চতায় এই বনভূমি দেখতে পাওয়া যায় ।
বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী শীতকালের জন্য এখানে প্রবল তুষারপাত হয় । ফলে গাছগুলির আকৃতি অনেকটা মোচার মতো অর্থাৎ শঙ্কু আকৃতির হয় । ফলে তুষারপাতের পর অনায়াসে তুষার ঝড়ে পড়ে যায় । ( ২ ) গাছগুলি অনেক দীর্ঘ বা লম্বা আকৃতির হয় । ( ৩ ) এই বৃক্ষে সারাবছর পাতা দেখা যায় । ( ৪ ) এই অরণ্য বিশেষ ঘন হয় না । শঙ্কু আকৃতির সরলবর্গীয় উদ্ভিদ ( ৫ ) এই গাছের কাঠগুলি নরম ও হালকা প্রকৃতির হয় । ( ৬ ) বছরের বেশিরভাগ সময় মাটি তুষারাবৃত থাকে বলে এই জাতীয় বনভূমিতে ঝোপঝাড় বা লতাগুল্ম জন্মাতে পারে না । সেইজন্যে এই বনভূমির তলদেশ খুব পরিষ্কার থাকে ।
- ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের মিশ্র অরণ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ।
Ans: ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের মিশ্র অরণ্য : ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে পূর্ব হিমালয়ের ১০০০-৩০০০ মি . উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ১৫০০ – ২৫০০ মি . উচ্চতায় ইউক্যালিপটাস , উড , পপলার , ওয়ালনাট , ওক , চেস্টনাট , স্পুস , পাইন ইত্যাদি পর্ণমোচী 3 চিরহরিং মিশ্র অরণ্য মিশ্র অরণা দেখা যায় । অরণ্যের বৈশিষ্ট্য : মিশ্র বনভূমিতে সামগ্রিক ভাবে অধিকাংশ বৃক্ষ পর্ণমোচী যারা শীতকাল ছাড়া সারাবছর সবুজ থাকে ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়) মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Geography Bharater Savabik Udvid Question and Answer :
1. “ হিমালয় পর্বতের উচ্চতা বৃদ্ধিতে উদ্ভিদমণ্ডলীর পরিবর্তন ঘটে— উদাহরণসহ কারণ ব্যাখ্যা করো ।
অথবা হিমালয় পর্বতে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদমণ্ডলী গড়ে উঠেছে কেন ?
অথবা , ‘ স্বল্প দূরত্বে হিমালয় অঞ্চলে উদ্ভিদমণ্ডলীর পার্থক্য দেখা যায় – উদাহরণসহ কারণ লেখো ।
Ans: হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে অক্ষাংশ , উচ্চতা , বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের বনভূমি দেখতে পাওয়া যায় , যেমন – ( ক ) চিরহরিৎ তারণ্য : পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ১,০০০ মি . উচ্চতা পর্যন্ত অংশে এবং পশ্চিম হিমালয়ের ৫০০০ মি . উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলে অধিক উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের কারণে শাল , শিশু , চাপলাস , মেহগনি , গর্জন , রোজউড প্রভৃতি শক্ত কাঠের বনভূমি দেখা যায় । ( খ ) পাইন অরণ্য : পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের ১,০০০ – ২,০০০ মিটার উচ্চতায় বিক্ষিপ্তভাবে পাইন জাতীয় উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায় ।। ( গ ) পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ১,০০০ – ২,৫০০ মি . উচ্চতায় ও পশ্চিম হিমালয়ের ৫০০ – ২,০০০ মি . উচ্চতায় দেবদারু , পপলার , ওক , ম্যাপল , ওয়ালনাট , বার্চ ইত্যাদি বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় । ( ঘ ) মিশ্র অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ১,০০০ – ৩০০০ মি . উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ১,৫০০ ২,৫০০ মি . উচ্চতায় ইউক্যালিপটাস , ওক , আয়রন উড , পাইন , স্পুস সমেত নাতিশীতোয় পর্ণমোচী এবং নাতিশীতোয় চিরহরিৎ মিশ্র অরণ্য দেখা যায় । ( ঙ ) সরলবর্গীয় অরণ্য : পূর্ব হিমালয়ের ৩,০০০ – ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় এবং পশ্চিম হিমালয়ের ২,০০০ – ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় পাইন , দেবদারু , ফার , স্পুস , উইলো , এলম ইত্যাদি উদ্ভিদ দেখা যায় । ( চ ) আত্মীয় অরণ্য সরলবর্গীয় অরণ্যের ঊর্ধ্বে ( ৩,৫০০– ৪,৫০০ মি . ) যেখানে বছরে ৩/৪ মাস বরফাবৃত ও বাকি সময় বরফমুক্ত থাকে সেখানে জুনিপার , রডোডেনড্রন , নাকস ভমিকা , লার্চ , ভুর্জ ও নানান রকম তৃণ ও গুল্ম জাতীয় আত্মীয় উদ্ভিদ জন্মায় । হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর তারতম্যই হল । এই পর্বতের বিভিন্ন অংশে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকৃতির হওয়ার অন্যতম কারণ , যেমন- ( ক ) উচ্চতার তারতম্য : উচ্চতার তারতম্যের ফলে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অংশের উয়তা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতিরও পরিবর্তন হয় । ( খ ) আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য : পূর্ব হিমালয়ে বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের একই উচ্চতায় স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যে অনেক তারতম্য দেখা যায় । ( গ ) অক্ষাংশগত অবস্থানের তারতম্য পশ্চিম হিমালয় পূর্ব হিমালয়ের তুলনায় উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিম হিমালয়ের উষ্ণতা পূর্ব হিমালয়ের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম । উয়তার তারতম্যের ফলে পূর্ব ও পশ্চিম হিমালয়ের স্বাভাবিক উদ্ভিদের তারতম্য হয় ।
2. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ ও ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদের অবস্থান গড়ে ওঠার পরিবেশ , বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বৃক্ষগুলির নাম লেখো ।
Ans: ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য ( Tropical Evergreen Forest ) :
অবস্থান : ভারতের ১২ % অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই অরণ্য । এটি দেখা যায় , পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে , পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশভূমি , উত্তর – পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল , পশ্চিমবঙ্গ , ঝাড়খণ্ড , বিহার ও ওড়িশার বৃষ্টিবহুল অংশ ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই উদ্ভিদ দেখা যায় । গড়ে ওঠার কারণ : ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং গড় উয়তা ২৫ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস – এর মধ্যে এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৮ % এর বেশি সেখানে এই বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় । অত্যধিক বৃষ্টিপাতের জন্য মাটি সর্বদাই ভিজে থাকে , ফলে গাছে জলের অভাব হয় না । এই কারণে গাছগুলি সর্বদাই চিরহরিৎ থাকে ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে গাছে জলের অভাব হয় না বলে এই গাছগুলি সারাবছর সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে । এইজন্য একে চিরসবুজ অরণ্য বলে । ( ii ) ঘন অরণ্যে বৃক্ষগুলি এমন সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান করে যে , সূর্যালোক অরণ্যের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না , ফলে অরণ্যের মধ্যে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বিরাজ করে । এই জন্য এই বনভূমিকে চির গোধূলি অঞ্চল ( Land of Eternal Twilight ) বলে । ( iii ) এই অরণ্যে বৃক্ষের বড়ো বড়ো পাতাগুলি একসঙ্গে মিশে বৃক্ষের উপর দিকে চাঁদোয়া ( Canopy ) সৃষ্টি করে । ( iv ) গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত গঠিত হয় । ( v ) অরণ্যের তলদেশ আগাছা ও লতাগুল্মে ভরা থাকে । ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে এই অরণ্যের গাছগুলি সূর্যালোক পাবার আশায় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে । ফলে গাছগুলি সুদীর্ঘ হয় । ( vi ) এখানকার গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী হয় । ( vii ) এই গাছ বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয় ।
প্রধান বৃক্ষ : শিশু , গর্জন , রোজউড , মেহগনি , চাপলাস , নাহার , লোহাকাঠ , পুন , তুন ইত্যাদি হল প্রধান বৃক্ষ । এ ছাড়া রবার , বাঁশ ও আবলুসও চোখে পড়ে । ক্রান্তীয় মনু উদ্ভিদ ( Tropical Desert Forest ) :
অবস্থান : রাজস্থানের মরুপ্রান্তে এবং তার সংলগ্ন গুজরাটের কচ্ছ কাথিয়াবাড় , পাঞ্জাবের মরু অংশ এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় । গড়ে ওঠার পরিবেশ যেখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টি ২৫-৫০ সেমি এবং উষ্ণতা খুব বেশি ( ২৫ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস ) এবং আর্দ্রতা খুবই কম । সেখানে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) এই অঞ্চলের উদ্ভিদগুলি অতিক্ষুদ্র আকৃতির এবং এদের বৃদ্ধিও সীমিত । ( ২ ) শুষ্ক অঞ্চলে জলের অভাবের জন্য গাছের শিকড়গুলি খুব দীর্ঘ হয় ফলে মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে জল সংগ্রহ করে । ( ৩ ) এইপ্রকার উদ্ভিদের কাণ্ড হয় খর্বকায় বা বেঁটে , শক্ত ও কাষ্ঠল । ( 8 ) গাছে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড হয় রসাল , চ্যাপটা ও ক্লোরোফিলযুক্ত এবং এদের রং হয় সবুজ । এইপ্রকার কান্ডকে বলে পর্ণকাণ্ড । যেমন — ফণীমনসা । ( ৫ ) গাছের জল যাতে পাতার মাধ্যমে বাষ্পমোচন হয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে , তার জন্য গাছের কাণ্ড মোম জাতীয় পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে ও গাছের গায়ে প্রচুর লোম ও কাঁটা থাকে । এদের পত্রকণ্টক বলে । ( ৬ ) উদ্ভিদগুলি বেশ দুরে দুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে । ( ৭ ) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মি . এর বেশি হয় না এবং ( ৮ ) পরাগ মিলনের সুবিধার জন্য মরু উদ্ভিদের ফুলগুলি তীব্র গন্ধযুক্ত ও উজ্জ্বল রঙের হয় ।
প্রধান বৃক্ষ : খয়ের , বাবলা , খেজুর , ক্যাকটাস , ফণীমনসা , বিভিন্ন ঘাস ও কাঁটাঝোপ এখানকার প্রধান উদ্ভিদ ।
3. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবস্থান , গড়ে ওঠার কারণ , বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বৃক্ষগুলির নাম লেখো ।
Ans: ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য ( Tropical Deciduous Forest ) : ঋতু নিয়ন্ত্রিত , বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারতে শুষ্ক ঋতুতে যেসকল গাছ – এর পাতা একসঙ্গে ঝরে পড়ে যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছপালা যুক্ত অরণ্যকে ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য বা পাতাঝরা গাছের বনভূমি বলে ।
শ্রেণিবিভাগ : ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যকে ভারতে দু – ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ( ১ ) আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য ( Moist Deciduous Forest ) এবং ( ২ ) শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য ( Dry Deciduous Forest ) Igen EHA 162 ( ক ) আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য ( Moist deciduous Forest ) :
আঞ্চলিক বণ্টন : ভারতের মোট বনভূমির প্রায় ২৭ % অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এই পর্ণমোচী বনভূমি । হিমালয় পর্বতের পাদদেশের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল , পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢাল , ছোটোনাগপুর মালভূমি , পশ্চিমবঙ্গ সমভূমি , অসম সমভূমি ও ওড়িশা , অন্ধ্রপ্রদেশ , তামিলনাড়ু , কর্ণাটক , কেরল রাজ্যে এই অরণ্য দেখা যায় ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারতের যেখানে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা ২৭ ° – ৩০ ° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন উষ্ণতা ১৫ ° – ২০০ সেলসিয়াস সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সেমি . এবং বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ ° – ৭৫ ° , সেখানে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) শীতকালে অধিকাংশ বৃক্ষের পাতা ঝরে যায় । ( ২ ) বৃক্ষগুলির কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান । ( ৩ ) অধিকাংশ গাছের ছাল পুরু ও অমসৃণ । ( ৪ ) গাছগুলির গড় উচ্চতা ২৫–৬০ মিটার পর্যন্ত । ( ৫ ) বহু ডালপালা বিশিষ্ট এই গাছগুলিতে বর্ষবলয় স্পষ্ট দেখা যায় । ( ৬ ) এই অরণ্য অপেক্ষাকৃত কম ঘন । ( ৭ ) গাছগুলি মাঝারি থেকে বৃহৎ পত্রযুক্ত এবং গাছের ছাল পুরু ও অমসৃণ এবং ( ৮ ) এই অরণ্য যথেষ্ট সুগম ।
প্রধান বৃক্ষ : সাল , সেগুন , পলাশ , কুল , শিমুল , মহুয়া , কুসুম , আম , জাম , চন্দন , অর্জুন ইত্যাদি । ( 4 ) যুদ্ধ পর্ণমোচী উ s ( Dry Deciduous Forest ) :
আঞ্চলিক বণ্টন : রাজস্থানের পূর্বাংশ , উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে , বিহারের পশ্চিমাংশ , ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণাংশ , মধ্যপ্রদেশ , ছত্তিশগড় , মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক , তামিলনাড়ু , তেলেঙ্গানা প্রভৃতি রাজ্যে এই বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : সাধারণত ঘাস , গুল্ম এবং ছোটো ছোটো পাতাঝরা গাছ — এইসবকে একসঙ্গে বলে শুষ্ক পর্ণমোচী উদ্ভিদ । ভারতের যেসব অঞ্চল শুষ্ক অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম , বার্বিক গড় বৃষ্টিপাত ৫০-১০০ সেমি এবং গড় উষ্ণতা হল ২৫ ° – ৩০০ সেন্টিগ্রেড সেখানে এই জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায় ।
বৈশিষ্ট্য : ( ১ ) এই অঞ্চলে প্রধানত লম্বা ঘাস , তৃণ , গল্প জাতীয় উদ্ভিদ বেশি জন্মায় । ( ২ ) গাছগুলি তাপ সহনশীল এবং গাছের কাণ্ডের আবরণ অত্যন্ত পুরু ও অমসৃণ । ( ৩ ) উদ্ভিদগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ে ওঠে । ( ৪ ) উদ্ভিদগুলির উচ্চতা ১০ মিটারের বেশি হয় না । ( ৫ ) মাঝারি থেকে অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলের বনভূমি ঘন হয় না । ( ৬ ) এখানে সাবাই ঘাস , হাতি ঘাস , শর , চাপড়া ইত্যাদি গাছ দেখা যায় ।
প্রধান বৃক্ষ : সাবাই ঘাস , হাতি ঘাস , শর , চাপড়া ইত্যাদি ।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য ( Mangrove Forest ) : diely নদীর বদ্বীপ অঞ্চল ও অন্যান্য নীচুস্থান , যেখানে সাগরের নোনা জল প্রবেশ করে , সেইসব অঞ্চলে যে বনভূমি সৃষ্টি হয় , তাকে ম্যানগ্রোভ বনভূমি বলা হয় । * আঞ্চলিক বণ্টন : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবন ; এ ছাড়া গঙ্গা , মহানদী , গোদাবরী , কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর বদ্বীপ অঞ্চল , আন্দামান – নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিম্ন উপকূলভাগ , গুজরাটের কচ্ছ ও কাম্বে উপসাগরের উপকূলের নিম্ন জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায় । সুন্দরবন ভারতের তথা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য । ভারতের মোট অরণ্যের ৬০ % সুন্দরবন অঞ্চলে অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্য : ( i ) এইসব গাছের শিকড় নদীর জোয়ারের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জন্য মাটি ফুঁড়ে ওঠে , একে শ্বাসমূল বলা হয় । ( ii ) কাণ্ডকে ভেজা নরম মৃত্তিকায় সোজাভাবে ধরে রাখার জন্য এইসব গাছে ঠেসমূলও দেখা যায় । ( iii ) এখানকার উদ্ভিদ চিরহরিৎ প্রকৃতির । তাই একে চিরসবুজ উপকূলীয় বনভূমিও বলা হয় । ( iv ) এখানকার উদ্ভিদের অপর বৈশিষ্ট্য হল জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ( v ) লবণাম্বু উদ্ভিদগুলি মোমের মতো এক তৈলাক্ত পদার্থের প্রলেপ দ্বারা আবৃত থাকে এবং ( vi ) এই অরণ্যের বৃক্ষের কাণ্ড রসালো প্রকৃতির হয় । প্রধান বৃক্ষ : সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেয়া, গোলপাতা, প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায় ।
4. ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর জলবায়ুর প্রভাব উদাহরণসহ আলোচনা করো ।
অথবা , জলবায়ু ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা উদাহরণসহ লেখো ।
Ans: কোনো স্থানের জলবায়ু অর্থাৎ বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ঋতুগত তারতম্য ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রভাবিত করে । কোনো স্থানের জলবায়ুর ওপর সেখানকার উদ্ভিদের প্রকৃতি নির্ভরশীল যেমন—
( ১ ) ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২০০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং তাপমাত্রা যথেষ্ট তীব্র সেইসব অঞ্চলে , নিরক্ষীয় অঞ্চলের মতো চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় । এইসব অঞ্চলের গাছপালাগুলি বছরের কোনো সময়েই পত্রহীন হয় না । এইসব অঞ্চলে শিশু , গর্জন , রোজউড , মেহগনি , চাপলাস , নাহার , লোহাকাঠ প্রভৃতি প্রধান বৃক্ষ ছাড়াও মধ্যে মধ্যে রবার , বাঁশ ও আবলুস বৃক্ষও চোখে পড়ে । ভারতের অসম , অরুণাচল , পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা , উত্তরবঙ্গ , বিহার ও ওড়িশার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায় ।
( ২ ) ভারতের যেসব অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০–২০০ সেন্টিমিটারের মধ্যে , শীতকাল শুকনো এবং শীতের শুরতে বৃষ্টিপাত হয় , সেইসব অঞ্চলে পাতাঝরা বা পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় । এই অঞ্চলের প্রধান স্বাভাবিক উদ্ভিদ হল শাল , শিমুল , সেগুন , জারুল , মহুয়া , পলাশ , শিরীষ , বট , অশ্বত্থ , আম , কাঁঠাল প্রভৃতি । উত্তরপ্রদেশ , বিহার , ওড়িশা , মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব ঢালসংলগ্ন মাঝারি বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চলে এই বনভূমি দেখা যায় ।
( ৩ ) ভারতের যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০ ক বৃষ্টিপাত ৫০–২০০ সেন্টিমিটার , সেখানে সাবাই , কাশ প্রভৃতি তৃণ বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দেখা যায় । আরাবল্লীর পূর্ব দিকে অবস্থিত রাজস্থানের মরুপ্রান্ত , গুজরাটের কচ্ছ ও কাথিয়াওয়ার অঞ্চল এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও পশ্চিম – ভারতের মহারাষ্ট্রের কোনো কোনো অঞ্চলে এই ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায় ।
( ৪ ) রাজস্থানের মতো অঞ্চলে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০ সেন্টিমিটারের কম ও উত্তাপ খুব বেশি ( গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ৪০ ° সেন্টিগ্রেডের বেশি ) , সেখানে জলের অভাবে কাটা জাতীয় গাছ জন্মায় । বাবলা , ফণীমনসা প্রভৃতি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য স্বাভাবিক উদ্ভিদ । অপেক্ষাকৃত আর্দ্র অঞ্চলে বুনো খেজুর , তাল প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায় ।
( ৫ ) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা ক্রমশ কমে যায় । বলে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন উচ্চতায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মায় , যেমন ( ক ) পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের পাদদেশ থেকে ১,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলে শিশু , মেহগনি , গর্জন , রোজউড প্রভৃতি চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় । পশ্চিম হিমালয়ে অবশ্য এই বনভূমি দেখা যায় না ; ( খ ) হিমালয় পর্বতের ১,০০০ – ২৫০০ মিটার উচ্চতাযুক্ত অঞ্চলে পপলার , ওক , ম্যাপল , ওয়ালনাট , বার্চ প্রভৃতি পর্ণমোচী বা পাতাঝরা গাছের বনভূমি দেখা যায় । ( গ ) হিমালয়ের ২,০০০ মিটার থেকে ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় পাইন , ফার , স্পুস প্রভৃতি সরলবর্গীয় বৃক্ষ জন্মায় ; ( ঘ ) হিমালয় পর্বতের ৪,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অত্যধিক ঠান্ডা ও তুষারপাতের জন্য বৃক্ষ বিশেষ জন্মায় না । এখানে জুনিপার , রডোডেনড্রন , নাকস ভূমিকা প্রভৃতি তৃণগুল্ম জন্মায় , যা আল্লীয় তৃণভূমি নামে পরিচিত ।
( ৬ ) গঙ্গা , মহানদী , গোদাবরী , কৃয়া প্রভৃতি নদীর মোহানার কাছে অবস্থিত বদ্বীপ অঞ্চলের নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বনভূমি নামে শ্বাসমূল ও ঠেসমূলযুক্ত বিশেষ এক ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় । এখানকার স্বাভাবিক উদ্ভিদদের মধ্যে সুন্দরী , গরান , গেওয়া , ক্যাওড়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । ম্যানগ্রোভ বনভূমি ঠিক জলবায়ু নির্ভর নয় , কারণ নদীর মোহানার বদ্বীপ অংশের নিম্ন জলাভূমি অঞ্চলের যেখানে জোয়ারভাটা হয় এবং মাটি লবণাক্ত ও সবসময় ভিজে থাকে , সমুদ্রোপকূলবর্তী সেইসব অঞ্চলেই কেবলমাত্র বনভূমি দেখা যায় ।