বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর

  1. ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়— 

(A) ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে 

(B) ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে

(D) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে 

Ans: (C) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে

 

  1. রাজা প্রতাপাদিত্য রচনা করেন 

(A) তারিণীচরণ মিত্র 

(B) মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার 

(C) রামরাম বসু

(D) বিদ্যাসাগর 

Ans: (C) রামরাম বসু

 

  1. ছাপাখানার জনক বলে পরিচিত – 

(A) জোহানেস গুটেনবার্গ 

(B) উইলিয়াম কেরি 

(C) মার্শম্যান 

(D) স্যার জন ম্যাক 

Ans: (A) জোহানেস গুটেনবার্গ

 

  1. জন অ্যান্ড্রুজ ছাপাখানা গড়ে তোলেন – 

(A) শ্রীরামপুরে 

(B) হুগলিতে

(C) হাওড়ায় করেন 

(D) কলকাতায়

Ans: (B) হুগলিতে

 

  1. বাংলার গুটেনবার্গ ’ বলে পরিচিত – 

(A) পঞ্চানন কর্মকার 

(B) চার্লস উইলকিনস 

(C) হেস্টিংস 

(D) হ্যালহেড 

Ans: (B) চার্লস উইলকিনস

 

  1. ছাপাখানার মুদ্রণের জন্য সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষর তৈরি 

(A) পঞ্চানন কর্মকার

(B) উইলিয়াম কেরি 

(C) চার্লস উইলকিনস

(D) হালেদ 

Ans: (C) চার্লস উইলকিনস

 

  1. ‘ হাফটোন ব্লক ‘ – এর ব্যবহার কোন প্রেসে প্রথম শুরু হয় 

(A) ইউ রায় অ্যান্ড সন্স 

(B) সংস্কৃত প্রেস 

(C) গুপ্ত প্রেস 

(D) রাজেন্দ্র লাইব্রেরি

Ans: (A) ইউ রায় অ্যান্ড সন্স

 

  1. ‘ ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ ’ অন্য যে নামে পরিচিত – (A) হিন্দু কলেজ 

(B) বিদ্যাসাগর কলেজ

(C) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ 

(D) কোনোটিই নয়

Ans: (C) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ

 

  1. ভারতে মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন করে 

(A) ফরাসিরা 

(B) চিনারা 

(C) পোর্তুগিজরা 

(D) ডাচরা 

Ans: (C) পোর্তুগিজরা

 

  1. বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন— 

(A) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

(B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

(C) দ্বারকানাথ ঠাকুর 

(D) রামমোহন রায়

Ans: (B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

  1. কবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – 

(A) 1921 

(B) 1913

(C) 1955

(D) 1872

Ans: (A) 1921

  1. বেদাস্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন— 

(A) রামমোহন রায়

(B) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 

(C) স্বামী বিবেকানন্দ

(D) কেশবচন্দ্র সেন 

Ans: (A) রামমোহন রায়

  1. দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ হয়— 

(A) 1868 

(B) 1876

(C) 1877 

(D) 1878

Ans: (D) 1878

  1. রশিদ আলি দিবস পালিত হয় 

(A) 11 ফেব্রুয়ারি

(B) 12 ফেব্রুয়ারি 

(C) 13 ফেব্রুয়ারি

(D) 14 ফেব্রুয়ারি 

Ans: (B) 12 ফেব্রুয়ারি

  1. জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রথম সভাপতি ছিলেন— 

(A) হীরেন্দ্রনাথ দত্ত 

(B) আশুতোষ চৌধুরী

(C) রাসবিহারী ঘোষ 

(D) বি . বি . উপাধ্যায়

Ans: (C) রাসবিহারী ঘোষ

  1. শ্রীরামপুর ছাপাখানার প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন— 

(A) উইলিয়াম কেরি 

(B) উইলকিনস 

(C) জন অ্যান্ড্রুজ

(D) ক্লার্ক মার্শম্যান । 

Ans: (A) উইলিয়াম কেরি

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ কে প্রতিষ্ঠা করেন ? Ans: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সত্যেন্দ্রনাথ বসু । 
  2. বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক সূচনা কবে হয়েছিল ?

Ans: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে । 

  1. সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরের উন্নত টাইপ তৈরি করেন কে ? 

Ans: সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরের উন্নত টাইপ তৈরি করেন পঞ্চানন কর্মকার । 

  1. কারা ‘ শ্রীরামপুর ত্রয়ী ’ নামে পরিচিত ? 

Ans: উইলিয়াম কেরি , জোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ‘ শ্রীরামপুর ত্রয়ী ‘ নামে পরিচিত । 

  1. বিশ্বভারতী কবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় ? 

Ans: ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায় । 

  1. ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ের নাম লেখো । 

Ans: ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত একটি বই হিতোপদেশ । কলিকাতা 

  1. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য কে ?

Ans: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় উপাচার্য স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় । 

  1. স্কুল বুক সোসাইটির একজন ভারতীয় সদস্যের নাম লেখো । 

Ans: স্কুল বুক সোসাইটির একজন ভারতীয় সদস্য রাধাকান্ত দেব । 

  1. ভারতীয় উদ্যোগে কোথায় প্রথম ছাপাখানা গড়ে 

Ans: ভারতীয় উদ্যোগে প্রথম ছাপাখানা খিদিরপুরে গড়ে ওঠে । 

  1. বাংলা ভাষায় প্রথম রসায়ন বিষয়ক গ্রন্থ কে লেখেন ? 

Ans: বাংলা ভাষায় প্রথম রসায়ন বিষয়ক গ্রন্থ জন ম্যাক লেখেন ।

  1. ‘ এনকোয়ারার ‘ পত্রিকার সম্পাদক কে ?

Ans: ‘ এনকোয়ারার ’ পত্রিকার সম্পাদক ডিরোজিও । 

  1. ডিরোজিও – র দু’জন অনুগামীর নাম লেখো ।

Ans: ডিরোজিও – র দু’জন অনুগামী হলেন রামতনু লাহিড়ি , রসিককৃয় মল্লিক । 

  1. ‘ কেসকোগ্রাফ ’ যন্ত্রটি কে আবিষ্কার করেন ?

Ans:  ‘ কেসকোগ্রাফ ’ যন্ত্রটি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু আবিষ্কার করেন ।

  1. কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

Ans: জেমস অগাস্টাস হিকি । 

  1. ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ছাপাখানাটি কে প্রতিষ্ঠা করেন ? 

Ans: উত্তর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী । 

  1. বেঙ্গল গেজেট কবে প্রকাশিত হয়েছিল ? 

Ans: জেমস অগাস্টাস হিকি । 

  1. গোয়াতে পোর্তুগিজরা কবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল ? 

Ans: 1556 খ্রিস্টাব্দে । 

  1. অ্যান্ড্রুজ সাহেব কবে ছাপাখানা গড়ে তোলেন ? 

Ans: 1778 খ্রিস্টাব্দে । 

  1. ইতিহাসমালা গ্রন্থটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল ? 

Ans: 1812 খ্রিস্টাব্দে । 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. শিক্ষাবিস্তারে বিবেকানন্দের মতামত কী ছিল ? 

Ans: বিবেকানন্দের মতে , ঔপনিবেশিকরা কখনোই সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে না । তাই তিনি চেয়েছিলেন গণশিক্ষা । 

  1. হিকির ‘ বেঙ্গল গেজেট ‘ পত্রিকা প্রকাশের দু’টি উদ্দেশ্য লেখো । 

Ans: 1) ভারতে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন । 2) বাংলায় ছাপাখানা শিল্পের প্রসার ঘটানো । 

  1. তারকনাথ পালিত স্মরণীয় কেন ? 

অথবা , কবে , কার উদ্যোগে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় ? 

Ans: 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় । এ কারণে তিনি আজও স্মরণীয় । 

  1. কী উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন ? 

Ans: বাঙালি তথা ভারতীয়দের স্বনির্ভর করে তোলার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । 

  1. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কবে , কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ? 

Ans: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশি ভাবনার প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় । 

  1. কার্লাইল সার্কুলার কী ?

Ans: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাত্রসমাজকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য 1905 খ্রিস্টাব্দে আর.ডব্লু . কার্লাইল একটি দমনমূলক আইন জারি করেন যা কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত । 

  1. ভারতে মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন প্রথম কারা করেছিল ? 

Ans: পোর্তুগিজরা ভারতে প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন করেছিল । দেশীয় হরফের দ্বারা পোর্তুগিজরা ভারতীয় মুদ্রণযন্ত্রের প্রথম আবিষ্কার ( 1556 খ্রিস্টাব্দে ) করে । 

বিশ্লেষণভিত্তিক প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. বাংলার মুদ্রণশিল্পের অগ্রগতিতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান কী ছিল ? উপেন্দ্রকিশোরের সাহিত্য প্রতিভা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো । 

Ans: উনিশ শতকের বাংলার নিম্নমানের মুদ্রণশিল্প উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পরীক্ষানিরীক্ষার ফলশ্রুতিতে রঙিন ছবি ছাপার যুগে প্রবেশ করে । 

  1. ইউ রায় অ্যান্ড সন্স : বিদেশ থেকে আনা উন্নত মুদ্রণযন্ত্রে উপেন্দ্রকিশোর কলকাতায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামের ঐ ছাপাখানায় তিনি নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে মুদ্রণশিল্পের উন্নতি ঘটান । 
  2. হাফটোন ব্লক : তামা ও দস্তার পাতে অক্ষর বা ছবি খোদাই করে ছাপার ব্লক তৈরি করেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী । অন্ধকার ঘরে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ লক্ষ করে তিনি হাফটোন ব্লক তৈরির সূত্র উদ্ভাবন করেন । 2001 
  3. ছবি ব্যবহার : বইয়ের প্রচ্ছদ ও লেখায় ব্যবহৃত ছবির মুদ্রণ উন্নত করার জন্য তিনি নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে গেছেন । একাজে তিনি ডায়াফ্রাম পদ্ধতি , ষাট ডিগ্রি স্ক্রিন , ডায়োটাইপ , স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার , রিপ্রিন্ট ইত্যাদির সাহায্য নেন । এর ফলশ্রুতিতে ‘ সন্দেশ ’ পত্রিকায় রঙিন ছবি ছাপা হতো তখন থেকেই । 
  4. স্টুডিও : মুদ্রণশিল্পের উন্নতির জন্য নিজস্ব স্টুডিওতে উপেন্দ্রকিশোর আধুনিক ফটোগ্রাফি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন । এই পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে তিনি শিশু – কিশোরদের উপযোগী বইয়ে সাদা – কালোর যুগে রঙিন ছবি ছাপতে শুরু করেন । 

সাহিত্য প্রতিভা : শিশুসাহিত্যিক হিসেবে উপেন্দ্রকিশোর আজও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ও সুপরিচিত । নীচে তার সাহিত্য প্রতিভা আলোচিত হলো : 

  1) ছাত্রজীবনেই তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু হয় । এইসময় থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবিতা , ছড়া , ছোটোদের উপযোগী গল্প লিখতে থাকেন । 

  2) সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘ ছেলেদের রামায়ণ ‘ উপেন্দ্রকিশোরের লেখা প্রথম গ্রন্থ । এই গ্রন্থের জন্য তিনি কিছু ছবিও এঁকেছিলেন । তবে বইটির মুদ্রণ ছিল নিম্নমানের । 

  3) নিজস্ব ছাপাখানা থেকে তিনি একের পর এক বই প্রকাশ করতে থাকেন । তাঁর লেখা এই বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ গুপী গাইন বাঘা বাইন ‘ , ‘ ছেলেদের মহাভারত ’ , ‘ সেকালের কথা ‘ ইত্যাদি । 

  4) নিজের ছাপাখানা থেকে তাঁর সম্পাদনায় ছোটোদের জন্য অসাধারণ জনপ্রিয় ‘ সন্দেশ ‘ পত্রিকা প্রকাশ করেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী । বর্তমানেও এই পত্রিকা তাঁর পরিবারের সম্পাদনায়ই চলছে । 

  1. ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

অথবা , বাংলায় কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে টীকা লেখো । 

Ans: সূচনা : পাশ্চাত্য শিক্ষার পথ ধরেই উনিশ শতক থেকে ধীরে ধীরে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ শুরু হয় । যদিও প্রথম অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার নিজেদের প্রয়োজনেই কারিগরি শিক্ষার বিকাশে আগ্রহী হয়েছিল । ইংরেজরা নিজেদের সামরিক প্রয়োজনে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু করে । ঠিক তেমনি দেশের ভৌগোলিক বিস্তারে খুঁটিনাটি জানতে জমি জরিপ ও সমীক্ষা স্কুল গড়ে তোলে ইংরেজ সরকার । কিন্তু পরবর্তীতে কারিগরি শিক্ষার সুফলের প্রায় অনেকটা ভোগ করেছিল বাংলা তথা ভারতের মানুষেরা । 

কারিগরি শিক্ষার বিকাশ : অচিরেই বাঙালি কারিগররা আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা শেখার দিকে মন দেয় । রাজকৃত্ন কর্মকার জলচক্র , বন্দুক , এমনকী মেশিনগান তৈরিতে পারদর্শিতা দেখান । প্রসন্নকুমার ঘোষ কলকাতার প্রথম সাইকেল ও রিক্শা নির্মাণ করেন । বিপিনবিহারী দাস ভারতে সর্বপ্রথম একটি মোটরগাড়ি তৈরি করেন । 

সরকারি উদ্যোগ : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গড়ে ওঠে অসংখ্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যেমন টমসন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , ক্যালকাটা কলেজ অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং , পুণে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং । 

বেসরকারি উদ্যোগ : ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি উদ্যোগে ইন্ডিয়ান এডুকেশন পলিসি প্রযুক্তি শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ ভূমিকা নেয় । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠে । কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয় ।

মূল্যায়ন : এইভাবে উনিশ শতকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠে একাধিক কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র যা কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক বিকাশ ঘটায় ৷ এক্ষেত্রে ডন সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ডন সোসাইটির উদ্যোগে শিক্ষানবিশদের যান্ত্রিক কৌশলের বিষয়ে শিক্ষাদান করা হতে থাকে । 

  1. বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে ডা . মহেন্দ্রলাল সরকার কী ভূমিকা পালন করেন ? 

অথবা , ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স সম্পর্কে কী জানো ? অথবা , 

টীকা— IACS 

Ans: ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মহেন্দ্রলাল সরকার একটি পরিচিত নাম । তিনি পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক । বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার লক্ষ্যে ১৮৭৬ সালে তিনি গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স । 

বিজ্ঞানচর্চায় অবদান : 

যুক্তিবাদের প্রসার : ডা . সরকার ছিলেন প্রকৃত অর্থেই বিজ্ঞানপ্রেমী । বাঙালিকে অন্ধবিশ্বাসের বদলে যুক্তিবাদের পথে নিয়ে যেতে চান তিনি । বৈজ্ঞানিক সংগঠন স্থাপন ফাদার ইউজিন লাঁফোর সাহায্যে কলকাতায় ডা . সরকার গড়ে তোলেন আই.এ.সি.এস। এটিই দেশের প্রথম 

বৈজ্ঞানিক সংগঠন : এর প্রথম অধিকর্তা ছিলেন প্যারিমোহন সরকার । এখানে জগদীশচন্দ্র বসু , সি.ভি. রমন , মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিজ্ঞানী গবেষণা করেছেন । বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা এখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য পেশ করতেন ।

মূল্যায়ন : ঔপনিবেশিক ভারতে বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ গড়েছিলেন ডা . সরকার । তাঁকে বলা হয় ‘ জাতীয় বিজ্ঞানচর্চার জনক ’ । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Question and Answer : 

  1. ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো । 

অথবা , বাংলায় কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে টীকা লেখো । 

Ans: সূচনা : পাশ্চাত্য শিক্ষার পথ ধরেই উনিশ শতক থেকে ধীরে ধীরে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ শুরু হয় । যদিও প্রথম অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার নিজেদের প্রয়োজনেই কারিগরি শিক্ষার বিকাশে আগ্রহী হয়েছিল । ইংরেজরা নিজেদের সামরিক প্রয়োজনে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু করে । ঠিক তেমনি দেশের ভৌগোলিক বিস্তারে খুঁটিনাটি জানতে জমি জরিপ ও সমীক্ষা স্কুল গড়ে তোলে ইংরেজ সরকার । কিন্তু পরবর্তীতে কারিগরি শিক্ষার সুফলের প্রায় অনেকটা ভোগ করেছিল বাংলা তথা ভারতের মানুষেরা । 

কারিগরি শিক্ষার বিকাশ : অচিরেই বাঙালি কারিগররা আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা শেখার দিকে মন দেয় । রাজকৃয় কর্মকার জলচক্র , বন্দুক , এমনকী মেশিনগান তৈরিতে পারদর্শিতা দেখান । প্রসন্নকুমার ঘোষ কলকাতার প্রথম সাইকেল ও রিক্শা নির্মাণ করেন । বিপিনবিহারী দাস ভারতে সর্বপ্রথম একটি মোটরগাড়ি তৈরি করেন । 

সরকারি উদ্যোগ : ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গড়ে ওঠে অসংখ্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যেমন — টমসন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ , ক্যালকাটা কলেজ অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং , পুণে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং । 

বেসরকারি উদ্যোগ : ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি উদ্যোগে ইন্ডিয়ান এডুকেশন পলিসি প্রযুক্তি শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ ভূমিকা নেয় । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে একটি অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠে । কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয় । 

মূল্যায়ন : এইভাবে উনিশ শতকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠে একাধিক কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র যা কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক বিকাশ ঘটায় । এক্ষেত্রে ডন সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ডন সোসাইটির উদ্যোগে শিক্ষানবিশদের যান্ত্রিক কৌশলের বিষয়ে শিক্ষাদান করা হতে থাকে । 

  1. উনিশ শতকের বাংলায় ছাপাখানার বিস্তার সম্পর্কে যা জান লেখো । 

অথবা , উনিশ শতকে বাংলায় ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্দ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো । 

Ans: ভূমিকা : ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার সূত্র ধরে বাংলায় শিক্ষা প্রসারের কারণে মুদ্রণশিল্পের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । এজন্য বাংলায় নতুন নতুন ছাপাখানা গড়ে উঠল । একশ্রেণির শিক্ষিত বাঙালি মুদ্রণশিল্পকে পেশা হিসেবে বাছতে উদ্যোগী হয় । 

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ : 

অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস : ১৭৮১ সালে উইলকিনস কলকাতায় অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস গড়ে তোলেন । এটি ছিল কলকাতার সবথেকে ব্যস্ত ছাপাখানা । 

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস : ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে কেরি , মার্শ ও ওয়ার্ড শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করেন । এটি ছিল এশিয়ার বৃহত্তম ছাপাখানা । 

গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য : গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা । প্রথম সচিত্র বাংলা বই ‘ অন্নদামঙ্গল ‘ তিনি প্রকাশ করেন । 

ইস্টার্নহোপ প্রেস : ১৮৪০ সালে ঈশ্বরীপ্রসাদ বসু এটি স্থাপন করেন । এখান থেকে ‘ বামাবোধিনী ‘ পত্রিকা ছাপা হতো । 

গুপ্ত প্রেস : ১৮৬১ সালে দুর্গাচরণ গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেন গুপ্ত প্রেস । এখানে ছাপা পথ্বিকা আজও সকলের ঘরে ঘরে সমাদৃত । 

বি . পি . এমস প্রেস : বরদাপ্রসাদ মজুমদার গড়ে তোলেন এই ছাপাখানা । তিনি জমিদারি ছেড়ে দিয়ে ‘ নোটবই ‘ -এর ব্যাবসা শুরু করেন । অন্য বাঙালিদের মধ্যে বেণীমাধব দে , মথুরানাথ তর্করত্ন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য । 

  1. বাংলার ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক কী ছিল ? 

Ans: সূচনা : ভারতবর্ষে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টোল , বিদ্যালয় , উচ্চ বিদ্যালয় এর যেমন ভূমিকা রয়েছে এক্ষেত্রে ছাপাখানার ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । উনিশ শতক থেকে বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ শুরু হলে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ , সাময়িকপত্র , সংবাদপত্র – এর প্রকাশ শুরু হয় । এর সুবাদে বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান তথা শিক্ষার বিস্তার ঘটতে শুরু করে আর এই কারণেই ছাপাখানার সাথে শিক্ষাবিস্তারের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে ।

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্বন্ধ : ছাপাখানার প্রসার ঘটলে ছাপা বইয়ের সংখ্যা বাড়ে , শুরু হয় শিক্ষাবিস্তার । বাংলা ভাষায় মুদ্রিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বইটি হলো জোনাথন ডানকান অনূদিত ‘ মফসসল দেওয়ানি আদালত সকলের ও সদর দেওয়ানি আদালতের বিচার ও ইনসাফ চলা হইবার কারণ ধারা ও নিয়ম ‘ । 

পাঠ্যপুস্তক : বাংলার ছাপাখানাগুলিতে স্কুল , কলেজের ছাত্র – ছাত্রীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে থাকে । এই ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্রের সুন্দর মুদ্রণ এবং দাম কম হওয়ায় সাধারণ ঘরের ছাত্র – ছাত্রীদের হাতে পৌঁছানোও সম্ভব হতো । জনপ্রিয় এই সকল গ্রন্থ শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল যা বাংলার ছাপাখানার সঙ্গে সমকালীন শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক নির্ণয়ে সহায়ক হয়েছিল । 

অন্যান্য গ্রন্থ : ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের পর থেকে বাংলায় ‘ বাইবেল ’ , ‘ রামায়ণ ’ , ‘ মহাভারত ‘ , বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় ধর্মীয় সাহিত্য শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষাদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । ” 

সংবাদপত্রাদি : সমকালীন ছাপাখানাগুলি থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে বেশ কিছু সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশিত হতে থাকে যা পাঠকসমাজকে ছাপাখানা শিল্পের প্রতি মনোযোগী করে তোলে । আর এইভাবেই সমকালীন ছাপাখানাগুলি শিক্ষাবিস্তারের পরিবেশ স্থাপনেও সহায়তা করে । 

মূল্যায়ন : উপরের আলোচনায় স্পষ্ট যে উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় শিক্ষাবিস্তারের সূচনা ও প্রসার ঘটাতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল | বাংলার ছাপাখানা । ছাপাখানায় মুদ্রিত গ্রন্থাবলি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের সহজ পথ দেখিয়েছিল আর এইভাবেই বাংলার ছাপাখানার সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে ৷