শ্রেণী | দ্বাদশ শ্রেণী -উচ্চমাধ্যমিক (HS Class 12) |
বিষয় | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা (HS Bengali) |
গল্প | ভারতবর্ষ (Bharatbarsha) |
লেখক | সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ |
MCQ | প্রশ্ন ও উত্তর
- “ পিচের সড়ক বাঁক নিয়েছে যেখানে , সেখানেই গড়ে উঠেছে’ –
(A) একটি মিষ্টির দোকান
(B) একটি ছোট্ট বাজার
(C) একটি শনি মন্দির
(D) একটি চায়ের দোকান
Ans: (B) একটি ছোট্ট বাজার
- যা পিছনে ঘন বাঁশবনে ঢাকা , তা হল –
(A) শহর
(B) ইটভাটা
(C) গ্রাম
(D) আড়ত
Ans: (C) গ্রাম
- ‘ মাঝে – মাঝে বিমর্ষ সভ্যতার মুখ চোখে পড়ে এমন বলার কারণ –
(A) গ্রামে কলেরার প্রকোপ
(B) গ্রামে রাস্তাঘাট নেই
(C) গ্রামে মানুষ নেই
(D) গ্রামে বিদ্যুৎ নেই
Ans: (D) গ্রামে বিদ্যুৎ নেই
- কাঁচারাস্তা ধরে সবুজ ঝোপের ফাঁকে এগিয়ে আসে –
(A) হতদরিদ্র মানুষ
(B) যুবক বা যুবতি
(C) বিমর্ষ ভিখিরি
(D) বুনো পশুর দল
Ans: (B) যুবক বা যুবতি
- আমেদাবাদের কারখানায় তৈরি হয়—
(A) পোশাক
(B) কাচ
(C) কাগজ
(D) দড়ি
Ans: (A) পোশাক
- বাজারে চায়ের দোকান আছে –
(A) দুটি
(B) একটি
(C) তিনটি
(D) দুটি
Ans: C) তিনটি
- বাজারে সন্দেশের দোকান আছে –
(A) চারটি
(B) পাঁচটি
(C) দুটি
(D) একটি
Ans: (C) দুটি
- বাজারে পোশাকের দোকান আছে –
(A) একটি
(B) পাঁচটি
(C) দুটি
(D) তিনটি
Ans: (D) তিনটি
- বাজারে মনোহারি দোকান আছে –
(A) চারটি
(B) দুটি
(C) তিনটি
(D) একটি
Ans: (D) একটি
- বাজারে মুদিখানার দোকান আছে—
(A) পাঁচটি
(B) একটি
(C) দুটি
(D) চারটি
Ans: (C) দুটি
- বাজারে হাস্কিং মেশিন , আড়ত এবং ইটভাটা আছে । সংখ্যায় –
(A) একটি করে
(B) চারটি করে
(C) তিনটি করে
(D) দুটি করে
Ans: (A) একটি করে
- গ্রামের ইটভাটাটি রয়েছে—
(A) নদীর ধারে
(B) রাস্তার ওপরে
(C) হাস্কিং মেশিনের পিছনে
(D) বাঁশবনের পিছনে
Ans: (C) হাস্কিং মেশিনের পিছনে
- ছোট্ট বাজারটিতে জোর জমাটিভাব থাকে –
(A) সন্ধে ছ – টা পর্যন্ত
(B) রাত ন – টা পর্যন্ত
(C) রাত আটটা পর্যন্ত
(D) রাত সাড়ে ন – টা পর্যন্ত
Ans: (B) রাত ন – টা পর্যন্ত
- রাতের বেলায় পিচ রাস্তার ওপর ঘোরাফেরা করে –
(A) নেড়িকুকুরের ছায়া
(B) কুকুর – বিড়ালের ছায়া
(C) শিয়ালের ছায়া
(D) গাছের ছায়া
Ans: (A) নেড়িকুকুরের ছায়া
- রাতে গ্রামের ছোট্ট বাজারে নেমে আসা স্তব্ধতার অন্তর্গত হয়ে যায় –
(A) কুকুরের ডাক
(B) রাতচরা পাখির ডাক
(C) প্যাঁচার ডাক
(D) শেয়ালের ডাক
Ans: (C) প্যাঁচার ডাক
- ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পের ঘটনার সময়টি ছিল—
(A) শীতের
(B) গ্রীষ্মের
(C) বর্ষার
(D) শরতের
Ans: (D) শরতের
- ‘ বাজারের বয়ে আসছিল সারাক্ষণ ।
(A) দক্ষিণে
(B) পশ্চিমে
(C) পূর্বে
(D) উত্তরে
Ans: (D) উত্তরে
- আকাশ ধূসর হয়ে উঠেছিল—
(A) ঝড়ে
(B) পড়ন্ত রোদে
(C) মেঘে
(D) বৃষ্টিতে
Ans: C) মেঘে
- ‘ রাঢ়বাংলা ‘ বলতে বোঝায় পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী নদীর—
(A) পশ্চিম তীর
(B) পূর্ব তীর
(C) উত্তর দিক
(D) দক্ষিণ দিক
Ans: (A) পশ্চিম তীর
- ‘ বৃষ্টিতে তা হল ধারালো । ‘ -এখানে ‘ ধারালো ‘ হয়ে উঠেছে –
(A) বাতাসের বেগ
(B) ঝড়ের তীব্রতা
(C) রাঢ়বঙ্গের শীত
(D) নদীর স্রোত
Ans: (C) রাঢ়বঙ্গের শীত
- শীতের অকাল – দুর্যোগের ফলে ধানের –
(A) গোড়া শক্ত হয়
(B) ক্ষতি হয়
(C) গাছ বাড়ে
(D) গোড়া কাটতে সুবিধে হয়
Ans: (B) ক্ষতি হয়
- ভদ্রলোকেরা ‘ পউষে বাদলা ‘ বলতে বোঝায় –
(A) জাঁকালো শীতকে
(B) ধারালো বৃষ্টিকে
(C) তীব্র শীতের সঙ্গে অকাল বৃষ্টিকে
(D) শীতের কুয়াশাকে
Ans: (C) তীব্র শীতের সঙ্গে অকাল বৃষ্টিকে
- বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে তারা বলে –
(A) পউষে বাদশা
(B) ডাওর
(C) ঝড় – বৃষ্টি
(D) ফাঁপি
Ans: (D) ফাঁপি
- ‘ লোকের মেজাজ গেল বিগড়ে ।’— ‘ মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণ –
(A) সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকা
(B) গ্রামে বিদ্যুৎ নেই
(C) অসময়ের বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি
(D) শীতের প্রকোপ
Ans: C) অসময়ের বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি
- চাষাভুসো মানুষ চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে প্রতীক্ষা করছিল—
(A) গরম চায়ের
(B) রোদ ঝলমল একটা দিনের
(C) নীল উর্দিপরা চৌকিদারের
(D) শহরে যাওয়ার বাসের
Ans:
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি হওয়ায় গ্রামের মানুষেরা মুণ্ডুপাত করে—
(A) নেতা – মন্ত্রীর
(B) প্রকৃতির অনাচারের
(C) আল্লা – ভগবানের
(D) পাশের গ্রামের লোকেদের
Ans: (C) আল্লা – ভগবানের
- ‘ মাথার ওপর আর কোনো শালা নেই রে — কেউ নাই । ‘ —কে বলেছিল—
(A) ভিখিরি বুড়ি
(B) ভটচাজমশাই
(C) মোল্লাসাহেব
(D) কোনো এক যুবক চাষি
Ans: (D) কোনো এক যুবক চাষি
- চায়ের দোকানে গ্রামের মানুষদের মেজাজ ক্ষিপ্ত থাকায় কথায় কথায় শুরু হয় –
(A) মারামারি
(B) আলোচনা
(C) তাস খেলা
(D) তর্ক
Ans: (D) তর্ক
- গ্রামের ঘরে বসে কারও সময় কাটে না , কারণ –
(A) চারদিকে আতঙ্কের পরিবেশ
(B) শীতের অকাল দুর্যোগ
(C) ঘরে বিদ্যুৎ নেই
(D) সকলের রোগ ব্যাধি ও অসুস্থতা
Ans: (B) শীতের অকাল দুর্যোগ
- চায়ের দোকানে হঠৎ আসা বুড়ির ‘ ক্ষয়া খবুটে ‘ মুখে প্রকট হয়ে আছে –
(A) সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন
(B) বসন্তের দাগ
(C) মেচেতার দাগ
(D) গভীর ক্ষতের দাগ
Ans: (A) সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন
- ‘ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ।’— যা অবাক করেছিল –
(A) বুড়ির হাবভাব ও তেজ
(B) বুড়ির চেহারা , কথাবার্তা ও ব্যবহার
(C) দুর্যোগে বেঁচেবর্তে হেঁটে আসার ক্ষমতা
(D) বুড়ির মাথার সাদা চুল
Ans: (C) দুর্যোগে বেঁচেবর্তে হেঁটে আসার ক্ষমতা
- ‘ তাকে দেখে সবাই তর্ক থামাল । ‘ – উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি হল –
(A) উদিপরা চৌকিদার
(B) মোল্লাসাহেব
(C) ভটচাজমশাই
(D) থুখুঁড়ে কুঁজো বুড়ি
Ans: (D) থুখুঁড়ে কুঁজো বুড়ি
- বুড়ি কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞেস করায় সে বলেছিল –
(A) ‘ দূরের গ্রাম থেকে ‘
(B) ‘ সে – কথায় তোমাদের কী কাজ বাছারা ‘
(C) ‘ সে – কথা বলতে অনেক সময় লাগবে ‘
(D) ‘ সে – কথা বলে লাভ নেই ‘
Ans: (B) ‘ সে – কথায় তোমাদের কী কাজ বাছারা ‘
- বুড়ির কথাবার্তার তেজ দেখে একজন তাকে তুলনা করেছিল –
(A) চটপটে খরগোশের সঙ্গে
(B) চটপটে কাঠবিড়ালির সঙ্গে
(C) তেজি টাট্টুর সঙ্গে
(D) তেজি হরিণের সঙ্গে
Ans: (C) তেজি টাট্টুর সঙ্গে
- বুড়ির টাকাপয়সা ছিল—
(A) ব্যাগের মধ্যে
(B) কম্বলের ভিতরে ন্যাকড়ায় বাঁধা
(C) গ্যাটের মধ্যে
(D) শাড়ির আঁচলের খুঁটে
Ans: (B) কম্বলের ভিতরে ন্যাকড়ায় বাঁধা
- বুড়ি ঘুরে ‘ তোদের শতগুষ্টি মরুক ’ বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল , কারণ –
(A) লোকেরা তাকে উত্যক্ত করেছিল
(B) লোকেরা বুড়িকে অকথাকুকথা শুনিয়েছিল
(C) লোকেরা বলেছিল বুড়ি নির্ঘাত মরবে
(D) লোকেরা বলেছিল বুড়ি টাট্টুর মতো তেজি
Ans: (C) লোকেরা বলেছিল বুড়ি নির্ঘাত মরবে
- চায়ের দোকানের লোকেরা বুড়িকে নড়বড় করে এগিয়ে যেতে দেখেছিল—
(A) বারোয়ারিতলায়
(B) চণ্ডীমণ্ডপে
(C) মুদির দোকানে
(D) বটতলায়
Ans: (D) বটতলায়
- বুড়ি দোকানের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বট গাছের গুড়ির কাছে—
(A) একটা বড়ো পাথরের ওপর বসল
(B) একটা মোটা শেকড়ে বসে পড়ল
(C) একটা মাদুরের ওপর গিয়ে বসল
(D) একটা মোটা খোঁদলে বসে পড়ল
Ans: (B) একটা মোটা শেকড়ে বসে পড়ল
- শেকড়টির পিছনে বটগাছের গুঁড়ির গায়ে ছিল একটি—
(A) খোঁদল
(B) কোটর
(C) পাখির বাসা
(D) গর্ত
Ans: (A) খোঁদল
- যেদিন আকাশ পরিষ্কার হল , সেদিন দেখা গেল বুড়ি খোঁদলে পিঠ রেখে পড়ে আছে –
(A) নিঃসাড়
(B) রক্তাক্ত
(C) অর্ধমৃত
(D) কর্দমাক্ত
Ans: (A) নিঃসাড়
29 AF ( ) ফজলু সেখ ( ঘ ) চা – ওলা জগা
- নিঃসাড় বুড়িকে দেখে গ্রামের সকলে প্রথম খবর দিয়েছিল—
(A) মোল্লাসাহেবকে
(B) চা – ওলা জগাকে
(C) চৌকিদারকে
(D) ভটচাজমশাইকে
Ans: (C) চৌকিদারকে
- ‘ থানায় খবর দিয়ে কী হবে ? ‘ –এ কথা বলেছিল –
(A) চৌকিদার
(B) চা – ওলা জগা
(C) দোকানের লোকজন
(D) করিম ফরাজি
Ans: (A) চৌকিদার
- ‘ অতএব মড়াই বটে ।’— এমন সিদ্ধান্তে আসার কারণ ছিল –
(A) বুড়ি নিঃসাড়
(B) বুড়ির কপাল প্রচণ্ড ঠান্ডা
(C) বুড়ির নাড়ির কোনো স্পন্দন নেই
(D) বুড়ির শরীর ফুলে ঢোল
Ans: (C) বুড়ির নাড়ির কোনো স্পন্দন নেই
- ‘ বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হল । ‘ – চৌকিদার কী পরামর্শ দিয়েছিল ?
(A) দোকান বন্ধ করতে
(B) দাঙ্গা থামাতে
(C) বুড়িকে নদীতে ফেলে আসতে
(D) বুড়ির সেবা করতে
Ans: (C) বুড়িকে নদীতে ফেলে আসতে
- ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্প অনুসারে গ্রাম থেকে থানার দূরত্ব ছিল—
(A) দু – মাইল
(B) চার ক্লোশ
(C) এক ক্লোশ
(D) পাঁচ ক্লোশ
Ans: (D) পাঁচ ক্লোশ
- “ মাঠ পেরিয়ে ___ দূরে নদী । ”
(A) চার মাইল
(B) দু – মাইল
(C) পাঁচ মাইল
(D) তিন মাইল
Ans: (B) দু – মাইল
- নিঃসাড় বুড়িকে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে এসেছিল –
(A) খাটে চাপিয়ে
(B) খাটিয়ায় চাপিয়ে
(C) বাঁশের চ্যাংদোলায় বেঁধে
(D) তক্তপোশে চাপিয়ে
Ans: (C) বাঁশের চ্যাংদোলায় বেঁধে
- হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল । দৃশ্যটি হল –
(A) হিন্দুরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে
(B) হেঁটে হেঁটে বুড়ি এদিকেই আসছে
(C) বুড়ি মারা গেছে বলে সকলে কাঁদছে
(D) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে
Ans: (D) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে
- মুসলমান পাড়ার লোকেরা চ্যাংদোলায় করে বুড়িকে নিয়ে আসার সময় , তাদের মুখে ও মাথায় ছিল—
(A) রুমাল ও পাগড়ি
(B) রুমাল ও টুপি
(C) আরবি মন্ত্র ও টুপি
(D) রুমাল ও কালো কাপড়
Ans: (C) আরবি মন্ত্র ও টুপি
- ফজরের নমাজ বলতে বোঝায় –
(A) বিকেলের নমাজ
(B) ভোরের নমাজ
(C) দুপুরের নমাজ
(D) সন্ধ্যার নমাজ
Ans: (B) ভোরের নমাজ
- ‘ ওকে স্পষ্ট কলমা পড়তে শুনলাম । –এমন শোনার কথা বলেছিল—
(A) করিম ফরাজি
(B) মোল্লাসাহেব
(C) ভটচাজমশাই
(D) ফজলু সেখ
Ans: (B) মোল্লাসাহেব
- মোল্লাসাহেবের শহরে যাওয়ার কারণ ছিল –
(A) ইদের দিন
(B) হাটের দিন
(C) মামলার দিন
(D) কাজের দিন
Ans: C) মামলার দিন
- ‘ আমিও তো মোল্লার সঙ্গে একই বাসে আজ শহরে গিয়েছিলুম ।’— কে শহরে গিয়েছিল ?
(A) ফজুল সেখ
(B) করিম ফরাজি
(C) নিবারণ বাগদি
(D) ভটচাজমশাই
Ans: (D) ভটচাজমশাই
- ‘ উঁকি মেরে সব দেখে – শুনে বললেন — অসম্ভব ।’— কে উকি মেরেছিলেন ?
(A) করিম ফরাজি
(B) নিবারণ বাগদি
(C) ভটচাজমশাই
(D) ফজলু সেখ
Ans: (C) ভটচাজমশাই
- ভটচাজমশাইয়ের মতে বুড়ি বলেছিল—
(A) ওঁ নমো
(B) জয় মা কালী
(C) ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু
(D) শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি
Ans: (D) শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি
- বুড়িকে ‘ হরিবোল ‘ বলতে স্পষ্ট শুনেছে –
(A) নিবারণ বাগদি
(B) নকড়ি নাপিত
(C) ভটচাজমশাই
(D) ফজলু সেখ
Ans: B) নকড়ি নাপিত
- ফজলু সেখ শুনেছিল বুড়ি বলছে –
(A) আল্লাহু আকবর
(B) নারায়ে তকবির
(C) ওয়ালেকুম সালাম
(D) লাইলাহা ইল্লাল্ল
Ans: (D) লাইলাহা ইল্লাল্ল
- একদা পেশাদার লাঠিয়াল ছিল –
(A) নিবারণ বাগদি
(B) নকড়ি নাপিত
(C) ফজলু শেখ
(D) করিম ফরাজি
Ans: (A) নিবারণ বাগদি
- করিম ফরাজি একদা ছিল –
(A) পেশাদার কুস্তিগির
(B) পেশাদার লাঠিয়াল
(C) পেশাদার বন্দুকবাজ
(D) পেশাদার ডাকাত
Ans: (B) পেশাদার লাঠিয়াল
- নিবারণের চিৎকারের প্রত্যুত্তরে করিম ফরাজি বলেছিল—
(A) হুঁশিয়ার
(B) খবরদার
(C) সাবধান
(D) মিথ্যে
Ans: (B) খবরদার
- ‘ সেই বাঁশের চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে । ‘ —কারা চ্যাংদোলা নিয়ে টানাটানি শুরু করেছিল ?
(A) কুকুর – বিড়াল
(B) একদল লোক
(C) একদল শিকারি কুকুর
(D) একদল বন্য শিয়াল
Ans: (B) একদল লোক
- ‘ দোকানগুলোর ঝাঁপ বন্ধ হতে থাকল । ‘ —কারণ—
(A) গ্রামের বাজারে বিদ্যুৎ নেই
(B) রাত ন – টা বেজে গেছে
(C) হিন্দু – মুসলিম দাঙ্গা বাধার উপক্রম হয়েছে
(D) বিভিন্ন দল ধর্মঘট ডেকেছে
Ans: (C) হিন্দু – মুসলিম দাঙ্গা বাধার উপক্রম হয়েছে
- গ্রাম থেকে অনেক লোক দৌড়ে আসছে । ‘ – তাদের হাতে ছিল—
(A) ছুরি
(B) অস্ত্রশস্ত্র
(C) লাঠি
(D) আগুন
Ans: (B) অস্ত্রশস্ত্র
- ‘ করিম ফরাজি এখন খুব নমাজ পড়ে এবং ‘ বান্দা ‘ মানুষ । ‘ —এখানে ‘ বান্দা ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে –
(A) ইংরেজের গোলাম
(B) আল্লার অনুগত
(C) বিধর্মী মানুষ
(D) ভৃত্য শ্রেণির
Ans: (B) আল্লার অনুগত
- ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে ‘ জেহাদ ‘ ঘোষণা করেছিল –
(A) করিম ফরাজি
(B) আকবর মিঞা
(C) ফজলু শেখ
(D) মোল্লাসাহেব
Ans: (D) মোল্লাসাহেব
- ‘ জয় মা কালী । যবন নিধনে অবতীর্ণ হও মা । ‘ বলে গর্জে উঠেছিল –
(A) ভটচাজমশাই
(B) নকড়ি নাপিত
(C) জগা চা – ওলা
(D) নিবারণ বাগদি
Ans: (A) ভটচাজমশাই
- ‘ দু – পক্ষকেই কিছু বলার চেষ্টা করছে । ‘ –এমন করছিল –
(A) নকড়ি নাপিত
(B) নিবারণ বাগদি
(C) নীল উর্দিপরা
(D) চৌকিদার
Ans: (A) নকড়ি নাপিত
- তারপরই দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য । দৃশ্যটি হল –
(A) চায়ের দোকানে থুথুড়ে বুড়ি এসেছে
(B) হিন্দু – মুসলিম দু – পক্ষেরই মারামারির উপক্রম
(C) বুড়ি চ্যাংদোলায় চলেছে
(D) বুড়ির মড়াটা নড়ছে
Ans: (D) বুড়ির মড়াটা নড়ছে
- ‘ চৌকিদার এতক্ষণে মুখ খুলে বলল – সে বলেছিল—
(A) ‘ বুড়িমা ! তুমি মরনি ! ’
(B) ‘ সাবধান ! ’
(C) “ খবরদার !
(D) নদীতে ফেলে দিয়ে এসো ! ’
Ans: (A) ‘ বুড়িমা ! তুমি মরনি ! ’
- ‘ বুড়ি খেপে গিয়ে বলল— বুড়ি খেপে গিয়েছিল কেন ?
(A) সমবেত জনতা বলেছিল , ‘ বুড়ি ! তুমি মরনি ! ‘
(B) চৌকিদার জানতে চেয়েছিল , ‘ বুড়িমা ! তুমি মরনি !
(C) সবাই জানতে চেয়েছিল , বুড়ি হিন্দু না মুসলমান
(D) সবাই বুড়িকে উত্ত্যক্ত করছিল
Ans: (A) সমবেত জনতা বলেছিল , ‘ বুড়ি ! তুমি মরনি ! ‘
- ‘ মুখটা বিকৃত হয়ে গেল । ‘ – বুড়ির মুখ বিকৃত হওয়ার কারণ –
(A) শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা
(B) দু – দিকে দুই ধর্মের মারমুখী জনতা
(C) গ্রামের লোকেদের ভিড় ও হুড়োহুড়ি
(D) চ্যাংদোলায় ঝোলার কষ্ট
Ans: (C) গ্রামের লোকেদের ভিড় ও হুড়োহুড়ি
- ‘ ফিরে এসে সবাই দিগন্তে চোখ রাখল কারণ –
(A) ঝাঁকে ঝাঁকে শকুনের খোঁজ
(B) সূর্যাস্তের অসামান্য সৌন্দর্য
(C) নদীর বালির চড়ায় বুড়ির উঠে বসা
(D) দূরে গ্রামের ছায়াময় প্রতিচ্ছবি
Ans: (A) ঝাঁকে ঝাঁকে শকুনের খোঁজ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | ভারতবর্ষ (গল্প) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Bharatbarsha Question and Answer :
- ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে ছোট্ট বাজারটিকে কোথায় গড়ে উঠতে দেখা যায় ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ গল্প অনুসারে , গ্রামের সামনে পিচের সড়ক বাঁক নিয়েছে যেখানে , সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি ছোট্ট বাজার ।
- গ্রামটি কীসে ঢাকা ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ গল্পে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু গ্রামটি বাঁশবন দিয়ে ঢাকা ।
- ‘ মাঝে – মাঝে বিমর্ষ সভ্যতার মুখ চোখে পড়ে —’— এমন বলার কারণ কী ?
Ans: বিদ্যুৎহীন গ্রামের কাঁচারাস্তা ধরে সবুজ ঝোপের ফাঁক দিয়ে আমেদাবাদের কারখানায় তৈরি পোশাক পরে কোনো যুবক বা যুবতিকে এগিয়ে আসতে দেখলে , বিমর্ষ সভ্যতার মুখ চোখে পড়ে ।
- ‘ কিন্তু বাজারে বিদ্যুৎ আছে । ‘ – এমন বলা হয়েছে কেন ?
Ans: ছোট্ট বাজারটির আশেপাশের গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই , কিন্তু সেখানে আছে ; তাই এমন কথা বলা হয়েছে ।
- গ্রামের ছোট্ট বাজারটিতে কী কী ছিল ?
Ans: গ্রামের ছোট্ট বাজারটিতে তিনটি চায়ের , দুটি সন্দেশের , তিনটি পোশাকের , একটি মনোহারির এবং দুটি মুদিখানার দোকান ছাড়াও একটি আড়ত , একটি হাস্কিং মেশিন এবং একটি ইটভাটাও ছিল ।
- ‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পের বাজারসংলগ্ন গ্রামটি কেমন ছিল ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পানুসারে বাজারসংলগ্ন গ্রামটি ছিল ঘন বাঁশবনের পিছনে এবং সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না ।
- গ্রামের ছোট্ট বাজারটি কতক্ষণ জমজমাট থাকে ?
Ans: গ্রামের ছোট্ট বাজারটি চারপাশের গ্রাম থেকে আসা লোকজনের ভিড়ে রাত ন – টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে ।
- গ্রামের ছোট্ট বাজারটির রাতে কেমন অবস্থা হয় ।
Ans: রাতে শুনসান বাজারটিতে শুধু কিছু আলো জ্বলে আর পিচ রাস্তায় কয়েকটি নেড়িকুকুর ঘোরে । মাঝে মাঝে ট্রাক যায় । প্যাঁচার ডাককেও স্তব্ধতা বলে মনে হয় ।
- ‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পের কাহিনিটি কোন্ সময়ের ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটির কাহিনি শীতকালের পৌষ মাসের ঘটনা ।
- রাঢ়বাংলায় কেমন শীত পড়ে ?
Ans: রাঢ়বাংলায় জাঁকিয়ে শীত পড়ে ।
- ‘ পউষে বাদলা ’ বলতে কী বোঝ ?
Ans: রাঢ়বাংলার পৌষ মাসের জাঁকালো শীতের বৃষ্টিবাদলকে বলে ‘ পউষে বাদলা ‘ ।
- ‘ পউষে বাদলা ’ – কে গ্রামের চাষাভুসো মানুষেরা কী বলে ?
অথবা , ‘ ডাওর ‘ বলতে কী বোঝ ?
Ans: রাঢ়বঙ্গে শীতের অকালবৃষ্টিতে নেমে আসা জোরালো কনকনে ঠান্ডাকে , গ্রামের চাষাভুসো মানুষেরা বলে ‘ ডাওর ‘ ।
- ফাপি কাকে বলে ?
Ans: পৌষ মাসের বৃষ্টিবাদলের সঙ্গে জোরালো বাতাস বইলে , তাকে বলে ‘ ফাঁপি ‘ ।
- পৌষের অকাল দুর্যোগ গ্রামবাংলায় কী কী নামে পরিচিত ?
Ans: পৌষের অকাল দুর্যোগকে ভদ্রলোকেরা বলে ‘ পউষে বাদলা ‘ আর ছোটোলোকেরা বলে ‘ ডাওর ‘ ।
- ‘ লোকের মেজাজ গেল বিগড়ে । – লোকজনের মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণ কী ছিল ?
Ans: পৌষের অকাল দুর্যোগে ধানের অনেক ক্ষতি হবে ভেবে লোকজনের মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল ।
- গ্রামের চাষাভুসো মানুষেরা অকাল দুর্যোগে কীভাবে সময় কাটাচ্ছিল ?
Ans: গ্রামের চাষাভুসো মানুষেরা অকাল দুর্যোগে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে আর আল্লা – ভগবানের মুণ্ডুপাত করে দিন কাটাচ্ছিল ।
- ‘ প্রতীক্ষা করতে থাকল ’ – কীসের প্রতীক্ষা করতে থাকল ?
Ans: গ্রামের চাষাভুসো মানুষেরা অকাল দুর্যোগে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়ে একটা রোদ ঝলমলে দিনের প্রতীক্ষা করতে থাকল ।
- ‘ তখন যা খুশি করা যায় । ‘ —এখানে ‘ যা খুশি ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: অকাল দুর্যোগে ক্ষিপ্ত চাষাভুসো মানুষজন চায়ের দোকানে বসে প্রসঙ্গে অপ্রসঙ্গে তর্ক বাধায় , বচসা করে ; এমনকি মারামারিরও উপক্রম হয় । একেই ‘ যা খুশি ’ বলা হয়েছে ।
- গ্রামের ঘরে বসে কারও সময় কাটে না কেন ?
Ans: পৌষের প্রচণ্ড শীতে আবহাওয়া ‘ ফাপি ‘ হয়ে ওঠায় গ্রামের ঘরে বসে কারও সময় কাটে না ।
- ‘ সভ্যতার ছোট্ট উনোনে সেঁক নেওয়া ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: শীতের অকাল দুর্যোগে ঘরে বসে সময় না – কাটায় , মানুষজন বাজারের চায়ের দোকানে আড্ডা দেয় । লেখক একেই সভ্যতার ছোট্ট উনোনে সেঁক নেওয়া বলেছেন ।
- নানান কথা আসে । ‘ -কেন ?
Ans: পৌষের অকাল দুর্যোগে মাঠের কাজ বন্ধ থাকায় , অলস দিন কাটানোর একঘেয়েমি দূর করতে চায়ের দোকানের আড্ডায় নানান কথা আসে ।
- ‘ সে – সবই এসে পড়ে । কী কী এসে পড়ে ?
Ans: গ্রামবাসীদের চায়ের দোকানের আড্ডায় বোম্বাইয়ের অভিনেতা – অভিনেত্রী , গায়ক , ইন্দিরা গান্ধি , মুখ্যমন্ত্রী , এমএলএ থেকে সরা বাউরি এসব প্রসঙ্গই এসে পড়ে ।
- ‘ এইটুকুই যা সুখ ’ –’সুখ ‘ – টি কী ?
Ans: শীতের অকাল দুর্যোগে কাজ না থাকায় ; চাষাভুসো মানুষ বাজারের চা – দোকানে গরমাগরম আলাপ – আলোচনার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার উত্তাপটুকু অনুভব করত । এটুকুই ছিল তাদের ‘ সুখ ‘ ।
- চা – ওলার বিক্রিবাটা বাড়ে ’ –কেন ?
Ans: শীতের অকাল দুর্যোগে চা – দোকানে আসা গ্রামবাসীদের মধ্যে তর্ক – বচসা – কথা কাটাকাটি – আড্ডা চলতে থাকায় চা – ওলার বিক্রিবাটা বাড়ে ।
- তাই ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে । ‘ —ধারের অঙ্ক বেড়ে চলার কারণ কী ?
Ans: ধানের মরশুমে আজ না হলে কাল পয়সা মিলবেই এই ভরসা থাকায় চায়ের দোকানে আড্ডা ও তর্কের সঙ্গে ধারে চা খাওয়াও বেড়ে চলে ।
- ‘ সেই সময় এল এক বুড়ি । ‘ —বুড়িটি কেমন ছিল ?
Ans: চা – দোকানে আসা থুথুড়ে বুড়িটির কুঁজো চেহারায় একমাথা সাদা চুল , পরনের কাপড়টি ছেঁড়া – নোংরা , গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল ও হাতে ছোটো লাঠি ।
- ‘ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ।’— সবাই অবাক হয়েছিল কেন ?
অথবা , ‘ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ।’— কোন্ ঘটনা সবাইকে অবাক করেছিল ?
Ans: শীতের অকাল দুর্যোগে এমন থুথুড়ে বুড়ি কীভাবে বেঁচেবর্তে হেঁটে এল , তা দেখেই সবাই অবাক হয়েছিল ।
- বুড়িটি চা দোকানে এসে কী করেছিল ?
Ans: বুড়িটি গ্রামবাসীদের আড্ডা – তর্কে ভ্রুক্ষেপ না করে চায়ের দোকানে ঢুকে চা চেয়েছিল ।
- ‘ দিব্যি একই তালে হেঁটে এল ’ –কীভাবে এল ?
Ans: বয়সের ভারে জর্জরিত থুথুড়ে বুড়ি হাতে বেঁটে লাঠি নিয়ে , শীতের অকাল দুর্যোগে পিচের পথে ভিজতে ভিজতে দিব্যি একই তালে হেঁটে এসেছিল ।
- ‘ সবার মুখের দিকে তাকাল ‘ –কখন ?
Ans: শীতের অকাল দুর্যোগে চা – দোকানে আসা থুখুড়ে বুড়ি আরামে চা খেয়ে দোকানে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকিয়েছিল ।
- তখন একজন তাকে জিজ্ঞেস করল ‘ কী জিজ্ঞেস করল ?
Ans: চা – দোকানে আসা থুথুড়ে বুড়ির চা খাওয়া শেষ হলে , একজন তাকে সে কোথা থেকে আসছে জিজ্ঞাসা করেছিল ।
- ‘ বুড়ি খেপে গেল ‘ – কেন ?
Ans: অকাল দুর্যোগে বাদলায় চা – দোকানে এসে উপস্থিত বুড়িকে একজন ‘ তেজি টাট্রুর ’ সঙ্গে তুলনা করায় , সে খেপে গিয়েছিল ।
- তাই জিজ্ঞেস করছে এরা । ‘ –এমন বলার কারণ কী ছিল ?
Ans: অকাল দুর্যোগে চা – দোকানে উপস্থিত বুড়িকে একজন ঠান্ডা মাথায় সে কোথায় থাকে জানতে চেয়ে , সেই প্রসঙ্গে এ কথা বলেছিল ।
- ‘ চায়ের দাম মিটিয়ে আবার রাস্তায় নামল । থুথুড়ে বুড়ি কীভাবে চায়ের দাম মিটিয়েছিল ?
Ans: থুথুড়ে বুড়িটি চা খেয়ে কম্বলের ভিতর ন্যাকড়ায় বাঁধা পয়সা খুলে বের করে চায়ের দাম মিটিয়েছিল ।
- মরবে রে , নির্ঘাত মরবে বুড়িটা ! ’ — কারা , কেন এ কথা বলেছিল ?
Ans: সময়টা ছিল শীতকাল , তার ওপর বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাস বইছে । এমন পরিবেশে আশ্রয়হীনা ভিখিরি বুড়ির মৃত্যু আসন্ন বলে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে থাকা গ্রামের লোক মনে করেছিল ।
- ‘ সবাই দেখল ’ – সবাই কী দেখেছিল ?
Ans: অকাল দুর্যোগ মাথায় করে চা – দোকানে আসা বুড়িটি চা খেয়ে বাঁকের মুখের বটতলায় গিয়েছিল । এটিই সবাই দেখেছিল ।
- ‘ খবর্দার , অকথাকুকথা বোলো না । ‘ – বুড়িটি কখন এমন কথা বলেছিল ?
Ans: চা – দোকানের লোকজন দুর্যোগের মধ্যে সেখানে আসা থুথুড়ে বুড়িকে তেজি টাট্টুর সঙ্গে তুলনা করায় , সে এমন কথা বলেছিল ।
- ‘ তোরা মর্ , তোদের শতগুষ্টি মরুক ।’— কেন এ কথা বক্তা বলেছিল ?
Ans: চায়ের দোকানে আড্ডারত গ্রামের লোক শীতকালের অকাল দুর্যোগের মধ্যে বুড়ি কে , কোথা থেকে এসেছে এসব প্রশ্ন করতে থাকে । বিরক্ত হয়ে বুড়ি জবাব না দিয়ে ফিরে যাচ্ছে দেখে লোকেরা সমস্বরে চিৎকার করে— “ মরবে রে , নির্ঘাত মরবে বুড়িটা । ‘ তখন রেগে গিয়ে বুড়ি জবাব দেয় ।
- ‘ বসে পড়ল ‘ – বুড়ি কোথায় বসে পড়ল ?
Ans: চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে থুথুড়ে বুড়ি ফাঁকা বটতলায় গুড়ির কাছে , একটি মোটা শিকড়ে বসে পড়ল ।
- বুড়ি কোথায় পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে দিয়েছিল ?
Ans: থুথুড়ে বুড়ি বটগাছের মোটা শিকড়ে বসে , পিছনের গুঁড়ির গায়ের খোঁদলে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে দিয়েছিল ।
- বোঝা গেল , বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে ।’- বুড়ির কী অভিজ্ঞতা ছিল ?
Ans: বুড়ি অসহায় , আশ্রয়হীনা ভিখিরি , তাই সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে সে মানিয়ে নিয়েছে । সে বৃক্ষবাসিনী হয়ে উঠেছে ।
- পউষে বাদলা সম্পর্কে গ্রামের ‘ ডাপুরুষের পুরোনো বচনটি
অথবা , পউষে বাদলা সম্পর্কে গ্রামের ‘ ডাকপুরুষের ‘ পুরোনো ‘ বচনে ‘ কী বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ পউষে বাদলা ‘ সম্পর্কে ডাকপুরুষের বচনটি হল ‘ শনিতে সাত , মঙ্গলে পাঁচ , বুধে তিন – বাকি সব দিন – দিন ‘ ।
- ‘ পউষে বাদলা ‘ সম্পর্কে ‘ ডাকপুরুষের ’ বচনটির অর্থ বুঝিয়ে দাও ।
Ans: ‘ পউষে বাদলা ’ সম্পর্কে ডাকপুরুষের বচন অনুসারে শনিতে বাদলা লাগলে সাতদিন থাকে , মঙ্গলে পাঁচদিন ও বুধে তিনদিন । থাকে । আর অন্যদিনের বাদলা একদিনের ব্যাপার ।
- কিন্তু যেদিন ছাড়ল ‘ – সেদিন কী দেখা গেল ?
Ans: পউষের বাদলা ছাড়ার দিন আকাশ পরিষ্কার হয়ে সূর্যের উজ্জ্বল মুখ দেখা গেল এবং সকলে আবিষ্কার করল বুড়ি গুঁড়ির খোঁদলে পিঠ রেখে নিঃসাড় পড়ে আছে ।
- ‘ নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা । ‘ –কে বলেছিল ?
Ans: অনেকটা বেলা হয়ে যাওয়ার পরেও বুড়ি নড়ছে না দেখে , চা – ওলা জগা প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছিল ।
- জগার কাছে বুড়ি মরে গেছে শুনে লোকের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?
Ans: বুড়ি মরে গেছে শুনে লোকজন ভেবেছিল , এবার বুড়ির মৃতদেহ শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবে এবং দুর্গন্ধে টেকা দায় হবে ।
- ‘ একজন দুজন করে ভিড় বাড়তে থাকল । ‘ – কেন ?
Ans: থুথুড়ে বুড়ির মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় । একজন – দুজন করে ভিড় বাড়তে থাকল ।
- ‘ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ’ – কী ‘ প্রচণ্ড ঠান্ডা ’ বলে মনে হয়েছিল ?
Ans: বট গাছের গুঁড়ির খোঁদলে পিঠ দিয়ে চিত হয়ে পড়ে থাকা নিঃসাড় বুড়ির কপাল ছুঁয়ে দেখে কেউ কেউ বলেছিল , তার শরীর ‘ প্রচণ্ড ঠান্ডা ‘ ।
- ‘ অতএব মড়াই বটে । ‘ —কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল ।
Ans: বটতলায় চিত হয়ে পড়ে থাকা বুড়ির নিঃসাড় দেহ , ঠান্ডা কপাল আর স্পন্দনহীন নাড়ি দেখে গ্রামবাসীরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ।
- ‘ তারপর ওনার আসতে আসতে রাত – দুপুর ‘ – কার আসতে এত সময় লাগবে ?
Ans: গ্রাম থেকে থানার দূরত্ব পাঁচ ক্লোশ । সুতরাং , ফাঁপিতে এক ভিখিরি পটল তুলেছে থানায় এ খবর পাঠাতে আর থানা থেকে পুলিশের আসতে রাতদুপুর হয়ে যাবে ।
- ” ঠিক গতি হয়ে যাবে ‘ — কীসের গতি হবে ?
Ans: চৌকিদারের মতে বুড়ির দেহ নদীতে ফেলে এলে , তার ঠিক গতি হয়ে যাবে ।
- মুসলমান পাড়ার লোকেরা চ্যাংদোলাটা নিয়ে আসার সময় কী করছিল ?
Ans: চ্যাংদোলা করে বুড়ির দেহ নিয়ে আসার সময় মুসলমান পাড়ার লোকেদের মাথায় ছিল টুপি এবং মুখে ছিল আরবি মন্ত্র ।
- রেগে গিয়ে জানতে চাইল তাদের রাগের কারণ কী ছিল ?
Ans: মুসলমান পাড়ার লোকেরা চ্যাংদোলা করে বুড়ির মৃতদেহ । ফেরত নিয়ে এসেছে দেখে হিন্দুরা রেগে গিয়েছিল ।
- রেগে গিয়ে জানতে চাইল ‘ –কে , কী জানতে চাইল ?
Ans: বুড়ির মৃতদেহ মুসলমান পাড়ার লোকেরা ফেরত নিয়ে এসেছে দেখে বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হিন্দুরা বুড়ি যে মুসলমান তার প্রমাণ চেয়েছিল ।
- ‘ প্রমাণ অনেক । ‘ —বুড়ি যে মুসলমান তার প্রমাণ কী ছিল ?
Ans: মুসলমান পাড়ার লোকেদের বক্তব্য ছিল অনেকেই বুড়িকে বিড়বিড় করে আল্লা বা বিসমিল্লা বলতে শুনেছে ।
- ‘ কলমা ‘ কী ?
Ans: ইসলাম ধর্মের আত্মশুদ্ধিবাচক ইষ্টমন্ত্রকে বলা হয় ‘ কলমা ‘ ।
- ‘ মোল্লাসায়েব অকাট্য শপথ করে বললেন— — কী বলেছিলেন ?
Ans: মোল্লাসাহেব সকালের নমাজ সেরে বাস ধরতে যাওয়ার সময় , বটতল ায় বুড়িকে কলমা পড়তে শোনেন । তিনি অকাট্য শপথ করে এ কথাই বলেছিলেন ।
- মোল্লাসাহেব কখন বুড়িকে মারা যেতে দেখেন ?
Ans: মোল্লাসাহেব ফজরের নমাজ সেরে বাস ধরে শহরে যাওয়ার সময় , বটতলায় বুড়িকে মারা যেতে দেখেন ।
- দেখা হল না ব্যাপারটা । ‘ –কেন দেখা হল না ?
Ans: মোল্লাসাহেব ফজরের নমাজ সেরে শহরে মামলা থাকায় । তড়িঘড়ি করে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন । তাই বুড়ির মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি ।
- তা কি হয় আমরা বেঁচে থাকতে । ‘ —কী হয় না ?
Ans: মোল্লাসাহেবের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষেরা বেঁচে থাকতে বটতলায় মৃত বুড়ির দেহ কবরস্থ না করে নদীতে ফেলা হবে , তা হয় না ।
- ‘ সব দেখে – শুনে বললেন অসম্ভব ‘ -কেন ?
Ans: গাঁয়ের ভটচাজমশাই বাস থেকে নেমে বাড়ি যাওয়ার পথে মুসলমান পাড়ার লোকেদের বটতলার বুড়িকে মুসলমান বলার দাবি নস্যাৎ করে বলেছিলেন , ‘ অসম্ভব ‘ ।
- ‘ একই বাসে আজ শহরে গিয়েছিলুম ‘ কারা একসঙ্গে শহরে গিয়েছিলেন ?
Ans: বটতলার বুড়ির নিঃসাড় দেহকে নদীতে ফেলে আসার দিন সকালে গাঁয়ের ভটচাজমশাই ও মোল্লাসাহেব একই বাসে করে শহরে গিয়েছিলেন ।
- বুড়িকে ‘ শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি ‘ বলতে কে শুনেছিলেন ?
Ans: গাঁয়ের ভটচাজমশাই বুড়িকে ‘ শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি বলতে শুনেছিলেন ।
- তাঁর সপক্ষে অনেক প্রমাণ জুটে গেল ‘ কার সপক্ষে প্রমাণ জুটল ?
Ans: গাঁয়ের ভটচাজমশাইয়ের সপক্ষে অনেক হিন্দু প্রমাণ দিতে জুটে গিয়েছিল ।
- নকড়ি নাপিত কী শুনেছিল ?
Ans: নকড়ি নাপিত বটতলায় কামানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এসে শুনেছিল , বুড়ি মনে মনে বলছে , ‘ হরিবোল ‘ ।
- দেখলাম বসা যাবে না কেন ?
Ans: নকড়ি নাপিত বটতলায় কামানোর উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়ে সে বুড়ির মুমূর্ষু অবস্থা এবং জলকাদা দেখে বুঝেছিল , সেখানে বসে কাজ করা যাবে না ।
- ‘ ভুল শুনেছ ‘ – কে , কাকে বলেছিল ?
Ans: নকড়ি নাপিত বটতলায় বুড়িকে ‘ হরিবোল ‘ বলতে শুনেছে বলার পর গ্রামের ফজলু সেখ এমন মন্তব্য করেছিল ।
- ‘ আমি স্বকর্ণে শুনেছি ’ –কী শুনেছিল ?
Ans: ফজলু সেখ স্বকর্ণে বুড়িকে ‘ লাইলাহা ইল্লাল্ল ‘ বলতে শুনেছিল ।
- ‘ লাইলাহা ইল্লাল্ল ‘ কথাটির অর্থ কী ?
Ans: ‘ লাইলাহা ইল্লাল্ল ‘ কথাটির অর্থ , আল্লাই একমাত্র উপাস্য ।
- নিবারণ বাগদি কেমন লোক ?
Ans: একসময়কার দাগি ডাকাত নিবারণ বাগদি ছিল রাগী লোক ।
- করিম ফরাজি কেমন মানুষ ?
Ans: করিম ফরাজি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান । সে আল্লার অনুগত বলে নিজেকে ভাবে এবং খুব নমাজ পড়ে ।
- ‘ একদা সে ছিল পেশাদার লাঠিয়াল । ‘ ব্যক্তিটি কে ?
Ans: ধর্মপ্রাণ মুসলমান করিম ফরাজি একসময়ে পেশাদার লাঠিয়াল ছিল ।
- ‘ বুড়ির মড়ার দু – পাশে স্পষ্ট দুটো জনতা দাঁড়িয়ে গেছে । ‘ -কেন ?
Ans: গ্রামের হিন্দু ও মুসলমান উভয় পক্ষই মৃত অজ্ঞাত পরিচয় ভিখিরি বুড়িকে নিজেদের ধর্মের লোক হিসেবে ভেবেছে । তাই কেউ কারও অধিকার ছেড়ে দিতে রাজি নয় ।
- ‘ বচসা বেড়ে গেল । ‘ – বচসার কারণ কী ?
Ans: মৃত অজ্ঞাত পরিচয় ভিখিরি বুড়িকে গ্রামের হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের ধর্মের বলে দাবি করতে থাকে । দুই ধর্মের মানুষেরাই নানান মনগড়া যুক্তি দিতে দিতে নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও বচসাতে জড়িয়ে পড়ে ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | ভারতবর্ষ (গল্প) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Bharatbarsha Question and Answer :
1. ‘ কিন্তু বাজারে বিদ্যুৎ আছে । –‘বাজার ’ টি কোথায় অবস্থিত ? গল্প অবলম্বনে ‘ বাজার ‘ – এর বর্ণনা দাও ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পের ঘটনার অন্যতম বাজারের অবস্থান কেন্দ্রবিন্দু হল গ্রামসংলগ্ন একটি ছোট্ট বাজার । বহুকালের পুরোনো বট গাছের কাছে সড়ক যেখানে বাঁক নিয়েছে , সেখানেই গ্রামের সামনে গড়ে উঠেছে এই ছোট্ট বাজার ।
গ্রামের বাজারটি আকারে ছোটো হলেও , সারাদিন মানুষের আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে । এখানে তিনটি চায়ের দোকান , দুটি সন্দেশের , তিনটি কাপড়ের , একটি মনিহারি এবং দুটি মুদিখানার দোকান ছাড়া একটি আড়ত , একটি হাস্কিং মেশিন এবং একটি ইটভাটাও আছে । রাত ন – টা পর্যন্ত আশপাশের বাজারের বর্ণনা গ্রাম থেকে আসা লোকজনের ভিড়ে বাজারটি জমজমাট হয়ে থাকে । তারপর সব ফাঁকা হয়ে যায় । বাজারসংলগ্ন গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ না থাকলেও , এখানে বিদ্যুৎ আছে । তাই রাতে শুনসান বাজারে কিছু আলো জ্বলে । পিচ রাস্তায় ঘোরে নেড়ি কুকুর । মাঝে মাঝে দু – একটি ট্রাক দূরে শহরের দিকে চলে যায় । তখন বট গাছ থেকে ভেসে আসা প্যাঁচার ডাককেও বাজারের নিস্তব্ধতারই অংশ বলে মনে হয় । অথচ এই বাজারের চায়ের দোকানেই সারাদিন গ্রামের সাধারণ মানুষ নেতা – মন্ত্রী – গায়ক – অভিনেতা – অভিনেত্রী প্রভৃতি নানা বিষয়ে আড্ডা জমায় । একঘেয়ে গ্রামীণ জীবনের একমাত্র আমোদ – সুখ ও বৈচিত্র্যের জোগান মেটে গ্রামের প্রাণকেন্দ্র এই ছোট্ট বাজারটিকে অবলম্বন করেই ।
2. ‘ সেই দুরন্ত শীতের অকাল – দুর্যোগে গ্রামের ঘরে বসে কারো সময় কাটে না । –সেই ‘ শীতের অকাল – দুর্যোগ – এর বিবরণ দাও । তখন সময় কাটাতে সকলে কী করে ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটিতে পৌষের অকাল দুর্যোগ একটি অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে । এ কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে রাঢ়বাংলার একটি গ্রাম ও তার সংলগ্ন ছোট্ট বাজার । তার উত্তরে বিশাল মাঠ থেকে কনকনে বাতাস বয়ে আসে । ক্রমে আকাশ ধূসর হয়ে ওঠে মেঘে । বৃষ্টি শুরু হলে শীত আরও শীতের দুর্যোগ ধারালো হয়ে ওঠে । ভদ্রলোকেরা একে বলে ‘ পউষে বাদলা ’ । গ্রামের চাষাভুসো মানুষের মুখের ভাষায় এ হল ‘ ডাওর ’ । সেই বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস যুক্ত হলে , তাকেই বলে ‘ ফাঁপি ’ । সেবার আবহাওয়া হয়ে পড়েছিল ‘ ফাঁপি ’ ।
মাঠে কাজ না – থাকায় গ্রামের মানুষজন চা দোকানে সময় কাটাতে আসে । তারা নিরুপায় হয়ে রোদ ঝলমলে দিনের অপেক্ষা করে আর হতাশায় , বিরক্তিতে ঈশ্বর কিংবা আল্লার মুণ্ডুপাত করে । সকলের মেজাজ ক্ষিপ্ত থাকায় কথায় কথায় তর্ক বাধে , এমনকি সকলের সময় কাটানো হাতাহাতির উপক্রমও হয় । যে কোনো প্রসঙ্গেই শুরু হয় তর্ক । বোম্বাইয়ের অভিনেতা – অভিনেত্রী বা গায়ক কিংবা ইন্দিরা গান্ধি থেকে মুখ্যমন্ত্রী , এমএলএ , সরা বাউরি কেউই বাদ যায় না । তর্ক জমে উঠলে চা – ওলারও বিক্রিবাটা বাড়ে । ধানের মরশুম চলায় তার কাছে যারের অঙ্কও ক্রমশ বেড়ে চলে । এভাবেই একঘেয়ে গ্রামীণ জীবনে আসে বৈচিত্র্যের স্বাদ গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনে তখন এইটুকুই সুখ ।
3. সেই সময় এল এক বুড়ি । – লেখক বুড়ির সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে বর্ণিত বুড়ি হল ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক । বুড়ির বাহ্যিক রূপের পরিচয়ও লেখক দিয়েছেন ।
শীতকালে বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়ার জন্য মাঠের কাজ বন্ধ । চায়ের দোকানে চাষাভুসো মানুষ অলস সময় অতিবাহিত করছেন । এইসময় দোকানে এক বুড়ি আসে । বুড়ি থুথুরে কুঁজো ভিখিরি । রাক্ষুসী চেহারা । তার একমাথা সাদা চুল । পরনে ছেঁড়া নোংরা কাপড় , গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল , হাতে বেঁটে লাঠি । পিচের রাস্তা দিয়ে ভিজতে ভিজতে হেঁটে এল । বুড়ির ক্ষীণ খর্বাকৃতি মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । দোকানে ঢুকেই চা চাইল । এমন বয়স্কা বুড়ি কীভাবে বৃষ্টিঝরা দিনে পথে বেরোলো , তা সবাইকে অবাক করেছিল ।
বুড়িকে প্রথম দেখতে পাওয়া লেখকের বর্ণনায় বুড়ির সম্পর্কে আরও জানা যায় যে , বুড়ি জিজ্ঞাসু মানুষের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর সোজাসাপটা দিতেই ভালোবাসে । বুড়ির বয়স হলেও শরীর , মন , বুড়ির দৈহিক কাঠামো কণ্ঠ যথেষ্ট দৃঢ় । বুড়ির কথায় কোনো শিথিলতা নেই , প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আক্রমণাত্মক ও দৃপ্ত ।
4. ‘ তাকে দেখে সবাই তর্ক থামালে । ‘ –প্রসঙ্গসহ তর্কের কারণ ব্যাখ্যা করো । ‘ তাকে দেখে তর্ক থেমে গিয়েছিল কেন ?
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ ছোটোগল্পটির কাহিনি । গড়ে উঠেছে রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট গ্রামকে ঘিরে । একঘেয়ে । গ্রামীণ জীবনে বৈচিত্র্যের খোঁজ পেতে সম্প্রসঙ্গ তর্কের কারণ গ্রামবাসীরা চায়ের দোকানগুলিতে ভিড় জমায় । বিশেষত পৌষের অকাল দুর্যোগে ধান কাটার কাজ বন্ধ থাকায় , জগার চা দোকানে মানুষের আড্ডা জমে ওঠে । বোম্বাইয়ের অভিনেতা – অভিনেত্রী কিংবা গায়ক বা ইন্দিরা গান্ধি , মুখ্যমন্ত্রী , এমএলএ থেকে সরা বাউরি — এসবই আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় । তর্ক তুমুল জমে উঠলে চা – ওলা জগার বিক্রিবাটা বাড়ে । উপস্থিত সকলের ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে । ঠিক এমন জমজমাট আসরে সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে এক থুথুড়ে বুড়ির আগমন ঘটলে তর্ক থেমে যায় ।
কুঁজো ভিখিরি বুড়ির রাক্ষুসি চেহারা , একমাথা সাদা চুল , পরনে ছেঁড়া নোংরা কাপড় । চিটচিটে তুলোর কম্বল জড়ানো গায়ে , আর তর্ক থামার কারণ । এক হাতে বেঁটে লাঠি । তার ক্ষয়া – খর্বুটে মুখে বয়সের চিহ্ন প্রকট হয়ে আছে । এই প্রবল শীতের বাদলায় পিচ রাস্তা ধরে ভিজতে ভিজতে হেঁটে এসে তাকে চায়ের দোকানে ঢুকে চা চাইতে দেখে , সকলে অবাক হয় । এই কারণেই লোকজনের মুখের কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় , তর্কে ছেদ পড়ে ।
5. বোঝা গেল , বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে । —কোন্ বুড়ির কথা বলা হয়েছে । এখানে তার কোন অভিজ্ঞতার কথা কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল , আলোচনা করো ।
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ” গল্পে উল্লিখিত নাম পদবিহীন অনাশ্রিতা ভিখিরি বুড়ির কথা এখানে বলা হয়েছে ।
শীতের অকাল দুর্যোগে বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাস বইতে থাকে । গ্রাম্য ভাষায় একে বলে ‘ ফাঁপি ‘ । সবাই ঘরবন্দি জীবনযাপন করে । আর কর্মহীন কিছু মানুষ সময় কাটানোর জন্য বাজারে চায়ের দোকানে এসে আড্ডা দিতে থাকে । কখনো কখনো প্রবল তর্কাতর্কি হয় । ঠিক তক্ষুনিই এক থুথুড়ে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি হাতে বেঁটে লাঠি নিয়ে চায়ের দোকানে এলে , তাকে দেখে সকলের তর্ক থেমে যায় । আয়েশ করে চা খেয়ে বুড়ি সকলের মুখের দিকে তাকায় । একজন জিজ্ঞাসা করে — ‘ ও বুড়ি , তুমি এলে কোত্থেকে ? ‘ বুড়ি মেজাজের সঙ্গে উত্তর বুড়ির অভিজ্ঞতার দেয় – ‘ সে – কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা ? ‘ বুড়িকে ব্যঙ্গ করে সকলে হেসে প্রকাশ বলে ‘ ভারি তেজ ’ , ‘ তেজি টাট্টু ’ । বুড়ি তাদের মুখের ওপর যোগ্য জবাব দিয়ে চায়ের দাম মিটিয়ে রাস্তার বাঁকের মুখে বট গাছতলায় যায় । এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভিখিরি বুড়ির পরিণতি সম্পর্কে সকলে বলে ওঠে — ‘ মরবে রে , নির্ঘাত মরবে বুড়িটা ’ বুড়ির অবশ্য তোয়াক্কা করার কোনো কারণ ছিল না । বটতলাটা ফাঁকা , মাটি ভিজে কাদা । বুড়ি গুঁড়ির কাছে একটি মোটা শিকড়ের ওপর বসে পড়ে গুঁড়ির পিছনে খোঁদলে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসে । আশ্রয়হীন হওয়ায় প্রতি মুহূর্তে তাকে এমন জীবন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় ; লেখকের ভাষায় ‘ সে বৃক্ষবাসিনী ‘ ।
6. ‘ আবার জমে গেল । ‘ —এখানে ‘ আবার ‘ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও । পউষে বাদলা কেটে যাওয়ার পর কী ঘটেছিল ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে পউষের অকাল দুর্যোগে চাষের কাজ বন্ধ থাকায় গ্রামবাসীরা বাজারের চায়ের দোকানে আড্ডা জমায় । ধানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় তারা তিরিক্ষে মেজাজে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের অপেক্ষা করতে করতে ঈশ্বর বা আল্লার মুণ্ডুপাত করে । বোম্বাইয়ের অভিনেতা – অভিনেত্রী থেকে গায়ক , মুখ্যমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি কিংবা সরা বাউরি , তাদের আলোচনায় প্রসঙ্গ- অপ্রসঙ্গ কিছুই বাদ ছিল না । এমন সময় সেখানে এক ভিখিরিগোছের থুখুড়ে বুড়ি এসে হাজির হয় । একজন জানতে চায় বুড়ি কোথা থেকে আসছে । বুড়ি মেজাজের সঙ্গে জানায় , তা জেনে তাদের কী লাভ । এবার অনেকেই নানা কথা বলে বুড়িকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে । বুড়ি সবাইকে সাবধান করে দিয়ে চা খেয়ে দাম মিটিয়ে কাছের বটতলায় আশ্রয় নেয় । তা দেখে উপস্থিত লোকজনের আলোচনায় বুড়িকে নিয়ে আরও অনেক কথা এসে পড়ে এবং আড্ডা আবার নতুন করে জমে ওঠে । পউষের বাদলা কেটে যাওয়ার পর সকলে বুড়ির নিঃসাড় দেহ গাছতলায় পড়ে থাকতে দেখে । বুড়ি মারা গেছে ভেবে গ্রামের বিজ্ঞ চৌকিদার পরামর্শ দেয় , মৃতদেহ নদীর চড়ায় গিয়ে ফেলে আসতে । গ্রামের হিন্দু লোকজন বাঁশের চ্যাংদোলায় করে বুড়ির দেহ নদীর চড়ায় গিয়ে রেখে আসে আর বাজারে ফিরে দিগন্তে চোখ রাখে , কখন খাবারের লোভে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে আসে — তা দেখার প্রত্যাশায় ।
7. ‘ আবার ’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য । পড়িয়ে বাংলা কাটার পর ‘ বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হল । -চৌকিদারের পরামর্শ অনুসারে কী ঘটেছিল ? গল্পে চৌকিদারের ভূমিকা পর্যালোচনা করো ।
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্প অনুসারে গ্রামের বটতলায় আশ্রয় নেওয়া থুথুড়ে বৃদ্ধাকে গ্রামবাসীরা পৌষের অকাল দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর , নিঃসাড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মৃত বলে ধরে নেয় । গ্রামের বিজ্ঞ চৌকিদার শীতের বাদলায় মৃত চৌকিদারের পরামর্শে ঘটা ঘটনা এক বৃদ্ধা ভিখিরির জন্য পাঁচ ক্লোশ দূরের থানায় যাওয়ার পরিবর্তে মৃতদেহ নদীর চড়ায় ফেলে আসার পরামর্শ দেয় । তা না হলে মৃতদেহ পচে দুর্গন্ধ বের হবে । তাই গ্রামবাসীরা চৌকিদারের কথামতোই বৃদ্ধাকে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে ।
গল্পের কথক চৌকিদারকে ‘ বিজ্ঞ ’ আখ্যা দেন , কারণ সে অভিজ্ঞ ও বাস্তববাদী মানুষ । যদিও বুড়ি যে জীবিত , তা সেও বুঝতে গল্পে চৌকিদারের পারেনি । কিন্তু গ্রামের লোকেদের মৃতদেহের ভূমিকা দুর্গন্ধ কিংবা থানা পুলিশের ঝামেলা থেকে বাঁচাতে সে বুড়ির দেহটিকে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে বলে । তবে চৌকিদার সবচেয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দেয় , বুড়ির দেহের ওপর অধিকার নিয়ে যুযুধান হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়কে নিরস্ত করার ক্ষেত্রে । বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসার আগে পর্যন্ত রাস্তায় লাঠি ঠুকে ‘ সাবধান ‘ , ‘ খবরদার ‘ বলে হুংকার দিয়ে । আপন কর্তব্যে অটল থেকে দুই সম্প্রদায়কেই ঠেকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে । এক্ষেত্রে চৌকিদারের বিচক্ষণতা , দায়িত্ববোধ এবং সাহসিকতার প্রশংসা করতেই হয় ।
8. ‘ বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল।— বুড়ির চেহারা ও পোশাকের পরিচয় দাও । তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী ?
Ans: শীতকালের অকাল দুর্যোগ উপেক্ষা করে একমাথা সাদা চুল নিয়ে থুথুড়ে ভিখিরি বুড়ি হাতে বেঁটে লাঠি ঠুকে ঠুকে পিচ রাস্তায় ওপর দিয়ে ভিজতে ভিজতে হেঁটে এল । কুঁজো হয়ে গেছে বুড়ির চেহারা ও তার শরীর । ক্ষয়ে যাওয়া খর্ব আকৃতির মুখে পোশাক সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন । লেখকের ভাষায়— ‘ রাক্ষুসী চেহারা ‘ । তার পরনে একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড় । চিটচিটে তুলোর কম্বল গায়ে জড়ানো । তাকে দেখে চায়ের দোকানের তর্ক মুহূর্তে থেমে গেল । তবে , তার মেজাজি জবাবে সকলে চুপ হয়ে যায় ।
সবাইকে অবাক করে যেমন বুড়িটি এসেছিল , তেমনি অবাক করে বাজারের রাস্তার বাঁকের পাশে বট গাছতলায় সে আশ্রয় নেয় । ফাঁকা বট গাছতলায় মাটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে । তার ওপর ছড়ানো একটা মোটা শিকড়ে বসে পড়ল । শিকড়ের পিছনে গুঁড়ির গায়ে খোঁদলে পিঠ ঠেস দিয়ে গুছিয়ে বসল । নিরাশ্রিতা বুড়ির কাছে এই অভিজ্ঞতা খুব কিন্তু দুর্যোগ কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে দিন এলে বট গাছতলায় পড়ে থাকা বুড়ির নিঃসাড় দেহ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে চা – ওয়ালা জগা বলল- নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা ‘ , বুড়ির কপাল ছুঁয়ে , নাড়ির স্পন্দন দেখে কেউ কেউ নিশ্চিত হল তার মৃত্যু সম্পর্কে । শেয়াল – কুকুরে ছিঁড়ে খাবে অথবা মরার পচা গন্ধে বাজারে টেকা দায় হবে ভেবে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল । চৌকিদারকে জানালে সে পরামর্শ দিল— নদীতে ফেলে দিয়ে এসো । ‘ ফাঁপিতে ভিখিরি বুড়ি মারা গেছে , তাই আর থানা – পুলিশে খবর দিয়ে কোনো লাভ নেই । মাঠ পেরিয়ে দু – মাইল দূরে নদীর শুকনো চড়ায় কয়েকজন মিলে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে ফেলে দিয়ে এল । বুড়ির নিস্তেজ শরীর রোদে তপ্ত বালিতে পড়ে রইল ।
9. ‘ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য গেল । –‘অদ্ভুত দৃশ্য ‘ – টি কী ? দৃশ্যটিকে ‘ অদ্ভুত ‘ বলার কারণ কী ছিল ?
Ans: কেউ কেউ মাথায় টুপি পরে আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে মাঠ পেরিয়ে চ্যাংদোলা করে নদীর চড়ায় ফেলে অদ্ভুত দৃশ্য দিয়ে আসা বুড়ির মৃতদেহ তুলে নিয়ে আসছে । এই দৃশ্যকে অদ্ভুত বলা হয়েছে ।
ঘটনার সূত্রপাত এক অজ্ঞাতপরিচয় ভিখিরি বুড়িকে নিয়ে । দৃশ্যটি অদ্ভুত কেন শীতের অকাল দুর্যোগের দিনে বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে এক বট গাছের তলায় তাকে সবাই আশ্রয় নিতে দেখে । কয়েকদিন পরে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে । সবাই দেখল বটতলায় সেই বুড়িটিকে নিঃসাড় হয়ে পড়ে থাকতে । অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও বুড়ি নড়ছে না দেখে মনে হল সে মারা গেছে । পাঁচ ক্লোশ দূরে থানা । বিজ্ঞ চৌকিদার বলে- ‘ ফাঁপিতে এক ভিখিরি পটল তুলেছে , তার আবার থানা পুলিশ । তাই চৌকিদারের পরামর্শে মাঠ পেরিয়ে দু – মাইল দূরে নদীর শুকনো চড়ায় বুড়ির মৃতদেহকে ফেলে দিয়ে আসা হল । বুড়ির শরীর উত্তপ্ত বালির মধ্যে চিত হয়ে পড়েছিল । আর সবাই দিগন্তে চোখ রাখল , কখন ঝাকে ঝাকে শকুন এসে মৃতদেহ খুবলে নেবে । অথচ বিকেলে তারা পরবর্তী দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিল না ; একদল মানুষকে বুড়িকে নদীর চড়া থেকে তুলে আনতে দেখা গেল । যারা বুড়িকে ফেলে এসেছিল , তারা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের । আর যারা বুড়িকে নদীর চড়া থেকে তুলে এনেছিল তারা মুসলমান । দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের এই কাজের মধ্যে বয়ে যায় অসংখ্য প্রশ্ন । হিন্দুধর্মের মানুষরা যদি বুড়িকে হিন্দু বলে ভেবে থাকে তাহলে তার সৎকার বিধিবদ্ধ রীতিতে কেন করেনি । আর মুসলিম ধর্মের মানুষেরা যদি নিশ্চিত ছিল বুড়ির ধর্মীয় পরিচয়ে তবে কেন তারা প্রথমেই বুড়ির প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেয়নি । কোনো পক্ষই কোনো কর্তব্য পালন করেনি বুড়ির প্রতি , অথচ ক্ষমতা জাহির করেছে । তাই দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলা হয়েছে ।
10. দেখতে – দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে । – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ
অথবা , ‘ বচসা বেড়ে গেল । –‘ভারতবর্ষ ‘ গল্প অবলম্বনে বচসা বেড়ে যাওয়ার কারণ আলোচনা করো ।
অথবা , ‘ দোকানগুলোর ঝাঁপ বন্ধ হতে লাগল । —এমন ঘটনার কারণ নিজের ভাষায় লেখো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু । হল রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট গ্রাম । সেখানে পৌষের অকাল দুর্যোগের সময় এক অজ্ঞাতপরিচয় থুথুড়ে বুড়ি এসে বটতলায় আশ্রয় নেয় । দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা বুড়ির নিঃসাড় দেহ বটতলায় পড়ে থাকতে দ্যাখে । অনেক আলাপ – আলোচনার পরে গ্রামের হিন্দুরা সৎকারের উদ্দেশ্যে বুড়ির দেহ বাঁশের চ্যাংদোলায় করে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে । বিকেলে দেখা যায় মুসলমান পাড়ার লোকজন কবর দেওয়ার আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে বুড়ির দেহ বাজারে নিয়ে এসে হাজির করেছে । কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাইয়ের নেতৃত্বে গ্রামের হিন্দু এবং মুসলমানেরা বুড়ির দেহের ওপর অধিকার কায়েম করার জন্য নানান প্রমাণ প্রদর্শন করতে শুরু করে । হিন্দুরা বলে তারা বুড়িকে ‘ শ্রীহরি ’ কিংবা ‘ হরিবোল ‘ বলতে শুনেছে । অন্যদিকে মুসলমানেরা বুড়ির ‘ কলমা ‘ পড়ার কথা বলে । এই নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বচসা – তর্কাতর্কি ও হল্লা বেধে যায় । ক্রমশ প্রচন্ড উত্তেজনা ছড়ানোয় বাঁশের চ্যাংদোলা নিয়েই টানাটানি শুরু হয় । মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র হাতে লোকজন দৌড়ে আসতে থাকে । চরম গর্জন – প্রতিগর্জনের মাঝে গ্রামে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । এই পরিস্থিতিতেই বাজারের সমস্ত দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হাতে শুরু করে ।
11. কতক্ষন সে এই মারমুখী জনতাকে ঠকিয়ে রাখতে পারত কে জানে । ‘ সে ‘ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন ?
Ans: বিপন্ন আইনরক্ষক নীল উর্দিপরা চৌকিদারের কথা বলা হয়েছে ।
‘ মারমুখী জনতা ‘ বলতে গ্রামের হিন্দু – মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিবাদজনিত আচরণকে বোঝানো হয়েছে । বাজারের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে বট গাছতলায় শীতকালের অকাল দুর্যোগে স্বজন – স্বজাতিহীন অজ্ঞাতপরিচয় এক বুড়ি আশ্রয় নেয় । গ্রামের মানুষজন এই অনাশ্রিতা অসহায় বুড়ির জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিল না । চিন্তা শুরু জনতা মারমুখী কেন হয় বুড়ির সাড়া না পাওয়ায় তাকে মৃত ভেবে চৌকিদারের পরামর্শে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসার পর । মোল্লাসাহেবের আদেশে বিকেল বেলা নদীর চড়া থেকে বুড়ির দেহ চ্যাংদোলা করে তুলে আনে মুসলমান ভাইয়েরা । তারপরই বুড়ির ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে উভয় পক্ষই নিজেদের মতো সাজানো দাবি পেশ করতে থাকে । মোল্লাসাহেব নিজে বুড়িকে নাকি ‘ কলমা ‘ পড়তে শুনেছে , ফজলু সেখ বুড়িকে ‘ লাইলাহা ইল্লাল্ল ‘ বলতে শুনেছে । আর ভটচাজমশাই বুড়িকে ‘ শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি ‘ বলতে স্পষ্ট শুনেছেন । নকড়ি নাপিত , নিবারণ বাগদি তাঁকে সমর্থন জানায় । দু – পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে গর্জে ওঠে –‘আল্লাহু আকবর ‘ কিংবা ‘ জয় মা কালী ’ রবে । দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় । গ্রাম থেকে দলে দলে সশস্ত্র লোক আসতে থাকে । উভয় পক্ষের লোক স্পষ্টত দু – দিকে ভাগ হয়ে যায় । চৌকিদার ‘ সাবধান ’ ‘ খবরদার ’ রবে দু – দিকে লাঠি ঠুকে ঠুকে দুই পক্ষের উন্মত্ত জনতার মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করে তার ভূমিকা পালনের আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় ।
12. ‘ তাঁর সপক্ষে অনেক প্রমাণ জুটে গেল । কার সপক্ষে কে প্রমাণ দিয়েছিল । এখানে কোন প্রমাণের কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে রক্ষণশীল পণ্ডিত ব্রাহ্মণ ভটচাজমশাই – এর মনগড়া কথার সপক্ষে নকড়ি নাপিত প্রমাণ দিয়েছিল ।
মুরশিদাবাদে গ্রামে দীর্ঘদিন কাটানোর জন্য গল্পকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ গ্রামীণ মানুষের ধর্মীয় আচার – আচরণ পরস্পরের প্রতি সন্দেহ , বিবাদ সম্পর্কে অবগত ছিলেন । ফলে বাজারে বট গাছের তলায় আশ্রয়হীন , নামধাম – ঠিকানাহীন বুড়ি ঠাঁই নিলে গ্রামের লোকজন আশা প্রকাশ করে নির্ঘাত মরবে বুড়িটা । ‘ কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না । উলটে সকলের কৌতূহল দেখা যায় কয়েকদিন পর বুড়িটির সাড়া না পেয়ে । মারা গেছে ভেবে আপদ বিদেয় করার মতো নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে । চৌকিদারের কথায় সেই তাচ্ছিল্য মিশেছিল- ‘ ফাঁপিতে এক ভিখিরি পটল তুলেছে , তার আবার থানা পুলিশ । বাজারে মৃতদেহ পচে গন্ধ ছড়াবে , তাই তারা চ্যাংদোলা করে দুরে ফেলে দিয়ে দায় সেরেছে । দিগতে চোখ রেখে নিশ্চিত হতে চেয়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন এসে মৃতদেহ সাবাড় করছে কিনা । আবার মোল্লাসাহেবের তত্ত্বাবধানে বিকেলে সেই বুড়ির দেহ নদীর চড়া থেকে ফের তুলে আনা হয় । মোলাসাহেব বুড়িকে স্পষ্ট কলমা পড়তে শুনেছেন । কিন্তু মামলার কাজে এত ব্যস্ত যে খোঁজখবর নেওয়ার সময় পাননি । অথচ , মারা যাওয়ার পর সময় পেয়েছেন বুড়ির মুসলমানত্ব প্রমাণ করার জন্য । ভটচাজমশাইও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন । মোল্লাসাহেবের সঙ্গে তিনিও একই বাসে সকালে শহরে গিয়েছিলেন , তিনি নাকি বুড়িকে বলতে শুনেছেন— ‘ শ্রীহরি শ্রীহরি শ্রীহরি । ‘ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে হরিনাম স্মরণ করলেও তিনিও বুড়ির কুশল জিজ্ঞাসার সময় পাননি । নকড়ি নাপিত , নিবারণ বাগদি ভটচাজমশাই – এর সমর্থনে এগিয়ে আসে । উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সপক্ষ প্রমাণের লড়াই যত জমে ওঠে , তত দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয় ।
13. ‘ দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য । ’ –‘অদ্ভুত দৃশ্য -টি কী ? গল্পের পরিণতিতে বৃদ্ধা সকলকে কী বার্তা দিয়ে যায় ?
Ans: গ্রাম্য মানুষের নিস্তরঙ্গ জীবনযাত্রার মধ্যে শীতকালের অকাল দুর্যোগ ‘ ফাপি ’ অনন্ত অবসর এনে দিয়েছে । চায়ের দোকানে নানান বিষয়ে আড্ডা দিতে দিতে কখনো কখনো তর্ক বাড়তে বাড়তে মারামারির উপক্রম হয় । সেইসময় এক অজ্ঞাত পরিচয় ভিখিরি বুড়ির আগমন ঘটলে সকলের আলোচনা ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ‘ অসহায় বুড়িটি ‘ । বাজারের ওপর দিয়ে যাওয়া রাস্তার বাঁকের মুখে বটতলায় বুড়ি আশ্রয় নেয় । কয়েকদিন পরে বুড়ির সাড়া না পেয়ে বিজ্ঞ চৌকিদারের অদ্ভুত দৃশ্য পরামর্শে মৃত ভেবে বুড়িকে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসা হয় । বিকেল গড়াতেই আর একদল লোক আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে বুড়িকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসে । শুরু হয় বুড়িকে ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণ । হিন্দু – মুসলমান জনতা স্পষ্টভাবে বুড়ির মৃতদেহের দু – পাশে ভাগ হয়ে তাদের প্রত্যেকের দাবিকে জোরালো করে তুলতে পিছপা হয় না । চৌকিদার পিচ রাস্তার ওপর লাঠি ঠুকে ঠুকে মারমুখী জনতাকে সংঘাত থেকে বিরত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে । সেই সময় মারমুখী সশস্ত্র জনতাকে অবাক করে দিয়ে বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসে । একেই ‘ অদ্ভুত দৃশ্য ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
নির্বোধ জনতার ভিড় দেখে বুড়ি বিকৃতমুখে ফ্যাক – ফ্যাক করে হেসে ওঠে । বুড়ি হিন্দু না মুসলিম জানতে চাইলে বুড়ি উলটে তাদের সামনে প্রশ্ন রাখে- ‘ আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নেতৃ মানুষ বুড়ির ভালোমন্দের খবর রাখেনি , শুধু বুড়ির ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়েছে । এরাই আবার আত্মস্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় বলে দুর্যোগের দিনে ঈশ্বর – আল্লার মুণ্ডুপাত করতে থাকে । তারাই আবার ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে ধর্মকে হাতিয়ার করে । তাই বুড়ির ওই জবাবের মধ্য দিয়ে মানবতার জয়গান ধ্বনিত হয় ।
14. যা , যা , পালাঃ বলে সে নড়বড় করে রাস্তা ধরে চলতে থাকল । পাঠ্য গল্প অবলম্বনে থুথুড়ে বুড়ির চরিত্রবিশ্লেষণ করো । এ প্রসঙ্গে গল্পকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বর্ণনা করো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের গল্পে ‘ ভারতবর্ষ ’ – এর কেন্দ্রীয় চরিত্র এক বুড়ি ভিখিরি । তার একমাথা চুল , নোংরা কাপড় , গায়ে তেল চিটচিটে তুলোর কম্বল , হাতে লাঠি ।
আত্মসম্মানবোধসম্পন্না : বুড়ি ভিখিরির পোশাকে – আশাকে । দৈন্য থাকলেও তার আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রবল । তাই চায়ের দোকানে চা খেয়ে সে পয়সা দিতে ভোলে না । চায়ের দোকানের লোকেদের ব্যঙ্গবিদ্রুপের জবাবে সে প্রতিবাদ জানায় ।
দুর্মুখ ও মেজাজি : বুড়ি শুধু আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্নাই নয় , একইসঙ্গে দুর্মুখ এবং মেজাজিও । তাই গ্রামের লোকেরা তার বিষয়ে অহেতুক কৌতূহল প্রকাশ করলে বা তাকে অকথাকুকথা বললে , সেও গালি দিয়ে দু – কথা শুনিয়ে দেয় ।
রসিক : বুড়ির যে রসবোধও আছে তার প্রমাণ , ঘুম ভেঙে উঠে বুড়ি যখন টের পায় যে , সকলে তাকে মড়া ভেবে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়েছে , তখন সে ‘ ফ্যাক – ফ্যাক ’ করে হেসে ওঠে ।
লেখক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই গল্পে ভিখিরি বুড়ির কোনো নাম ব্যবহার করেননি । এই বুড়ি যেন লাঞ্ছিত , অপমানিত ভারতাত্মার প্রতীক । তাই ধর্মীয় সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ এই ভারতভূমি যে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের নয় , বরং জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমগ্র ভারতবাসীর লেখকের সেই বার্তাই কাহিনির শেষে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
15. ‘ আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? ‘ কোন্ প্রশ্নের উত্তরে বক্তা এ কথা বলেছেন ? গঙ্গানুসারে বক্তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে মারমুখী জনতার মাঝে পড়ে যখন চৌকিদার দিশেহারা তখন মৃত মনে করা বুড়ি নড়েচড়ে ওঠে । সমবেত জনতা বুড়িকে জিজ্ঞেস করে — সে হিন্দু না মুসলমান । সেই প্রশ্নের উত্তরে বুড়ি প্রশ্নোধৃত কথাটি বলে ।
→ দ্বিতীয় অংশের উত্তরের জন্য ১৪ নং প্রশ্নের উত্তরের প্রথম অংশটি দ্যাখো ।
16. ‘ শেষ রোদের আলোয় সে দুরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল । কার কথা বলা হয়েছে ? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন ?
Ans: কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ‘ ভারতবর্ষ নামাঙ্কিত গল্পের আগন্তুক , সমস্ত জাতপাতের ঊর্ধ্বে মনুষ্যত্বের প্রতিভূস্বরূপ ভিখিরি বুড়িটির কথা আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে ; যার নিথর দেহকে মৃতদেহ মনে করে গ্রামের দুই মনুষ্যত্বহীন জাতি সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে মারমুখী হয়ে ওঠে ।
‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটি আধুনিক ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের এক আশ্চর্য প্রত্যুত্তর । গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অজ্ঞাত পরিচয় ভিখিরি বুড়ির হঠাৎ আবির্ভাব গ্রামের মানুষের আড্ডা দেওয়া চা – এর দোকানে চা খেয়ে পয়সা মিটিয়ে বুড়ি আশ্রয় নেয় গ্রামেরই বাজারের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকের মুখে বটগাছের তলায় । শীতের অকাল দুর্যোগে পথে আশ্রয় নেওয়া বুড়ির নিঃসাড় দেহ পরের দিন দুর্যোগ কেটে গেলে সেই গাছতলায় গ্রামের মানুষ দেখতে পায় । চৌকিদারের পরামর্শে গ্রামের হিন্দুরা বুড়ির সৎকার করে নদীর চড়ায় বুড়িকে ফেলে রেখে এসে । পরমুহূর্তেই দেখা অর্থাৎ পাড়ার মুসলমানরা বুড়ির দেহকে নিয়ে আসে তাদের রীতিতে সৎকার করার উদ্দেশ্যে । কারণ উভয় সম্প্রদায়ই বুড়ির কাজেকর্মে মনে করত , বুড়ি তাদের ধর্মের । শুরু হয় সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েন । যে বুড়িটি জীবদ্দশায় হিন্দু বা মুসলিম । কোনো সম্প্রদায়ের মানুষেরই সাহায্য বা শুশ্রুষা পায়নি ; তার মৃতদেহটিকে নিয়ে ধর্মের ধ্বজাধারীদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই উঠে তুঙ্গে । এরই মাঝে দেখা যায় বুড়ি নড়ে চড়ে উঠে বসে এবং হিন্দু – মুসলিম উভয়ের নির্বুদ্ধিতা দেখে বিকৃতমুখে ফ্যাক – ফ্যাক করে হেসে ওঠে । তাদের গালি দিতে দিতে পড়ন্ত বিকেলে দূরে অদৃশ্য হয়ে যায় ।
লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ আলোচ্য গল্পটিতে বুড়িটিকে ভারতমাতার প্রকৃত স্বরূপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন , যার কাছে জাত – ধর্ম এ সবই সংকীর্ণ — কোনো মূল্যই রাখে না । গল্পের বুড়ি অস্পষ্ট হয়ে গেলেও স্পষ্ট হয়ে জ্বলে ওঠে ভারতের অন্তরাত্মা , যার কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই ।
17. “ ভারতবর্ষ ” গল্পটির মূল সুর বিদ্বেষ ও মান্ধতার পরিবর্তে এক অসাম্প্রদায়িক মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি । পাঠ্য গল্প অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটি আধুনিক ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক সমস্যার এক আশ্চর্য প্রত্যুত্তর । তাই এ কাহিনি এমন একটি গ্রামের ; যার নামোল্লেখ গল্পকার সচেতনভাবেই এড়িয়ে যান । কারণ এ গল্প আসলে হয়ে ওঠে ভারতের যে – কোনো জনপদের গল্প । পউষের বাদলার দিনে গ্রামের চা – দোকানে এক থুথুড়ে ভিখিরি বুড়ি এসে উপস্থিত হয় । চা খেয়ে দাম মিটিয়ে , সে গ্রামের বটতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয় । দুর্যোগ কাটলে গ্রামের সকলে বুড়ির নিঃসাড় দেহ আবিষ্কার করে । হিন্দুরা বাঁশের চ্যাংদোলায় করে বুড়ির দেহ নদীর চড়ায় নিয়ে গিয়ে ফেলে আসে । কিন্তু বিকেলে মুসলমান পাড়ার লোকেরা কবর দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বুড়ির দেহ ফেরত নিয়ে আসে । বুড়ির দেহের উপর অধিকারকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বচসা বেধে যায় । মিথ্যাচারে , পারস্পরিক দোষারোপে পরিস্থিতি চরম উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে । গ্রামে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গার উপক্রম শুরু হয় । ঠিক এমন সময় দু – পাশের মারমুখী সশস্ত্র জনতাকে হতবাক করে দিয়ে বুড়ি নড়েচড়ে উঠে বসে , তাদের নির্বুদ্ধিতা দেখে হেসে উঠে সমবেত হিন্দু – মুসলিম জনতাকে গাল পাড়তে পাড়তে অস্তমিত আলোয় অদৃশ্য হয়ে যায় । গল্পের বুড়ি অস্পষ্ট হয়ে গেলেও স্পষ্ট হয়ে জ্বলে ওঠে ভারতের অন্তরাত্মা , যার কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই । কেবল প্রাচীন ও বিশুদ্ধ মানবিকতার সম্পৰ্কটুকুই সে দাবি করে আধুনিক ভারতের কাছে , আর সমস্ত ভারতবাসীকে ধর্মমোহ ত্যাগ করে ক্রমাগত জাগিয়ে তুলতে চায় ।
18. ‘ ছোটোগল্প হিসেবে ‘ ভারতবর্ষ ’ – এর সার্থকতা আলোচনা করো ।
Ans: লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পের ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হল রাঢ়বাংলার একটি গ্রাম । পৌষের এক দুর্যোগময় সকালে বাজারসংলগ্ন চায়ের দোকানে এক থুথুড়ে বুড়ি এসে চা খেয়ে গ্রামের বটতলায় গিয়ে আশ্রয় নেয় । দুর্যোগ কাটলে তাকে গল্পের বিষয় নিঃসাড় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মৃত মনে করে গ্রামের হিন্দুরা তার দেহ বাঁশের চ্যাংদোলায় করে নদীর চড়ায় ফেলে আসে । কিন্তু বিকেলে মুসলমান পাড়ার লোকেরা কবর দেবে বলে , সেই বুড়িকে ফেরত নিয়ে আসে । মৃতদেহের ওপর অধিকারকে কেন্দ্র করে হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গার উপক্রম হয় । এসময় আচমকা , বুড়ি সকলকে বিহ্বল করে দিয়ে নড়েচড়ে উঠে বসে লোকজনের নির্বুদ্ধিতাকে বিদ্রুপ করে হাঁটতে হাঁটতে আবছা আলোয় মিলিয়ে যায় ।
ছোট্ট আয়তনের এ গল্পে লেখক এক অজ্ঞাতপরিচয় বুড়ির তথাকথিত মৃতদেহের ওপর অধিকারকে কেন্দ্র করে , হিন্দু – মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধতার স্বরুপটিকে ফুটিয়ে ছোটোগল্প হিসেবে তুলেছেন । এদেশের প্রেক্ষাপটে এই অসহায় ‘ ভারতবর্ষ থুথুড়ে বুড়ি যেন লাঞ্ছিত ও অপমানিত ভারতাত্মার প্রতীক হয়ে ওঠে । ধর্মীয় সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ এ ভারত যে , কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের নয় , বরং সমগ্র ভারতবাসীর — সেই বার্তাই স্পষ্টরূপে ধ্বনিত হয় । আর এভাবেই ‘ ভারতবর্ষ ’ একটি সার্থক ছোটোগল্পে রূপান্তরিত হয় ।
19. ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্প অবলম্বনে মোল্লাসাহেব , ফজলু সেখ , করিম ফরাজিদের সঙ্গে ভটচাজমশাই , নকড়ি নাপিত ও নিবারণ বাগদিদের চরিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটির ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি হয় গ্রামে আসা থুথুড়ে বুড়ির নিঃসাড় দেহের ওপর দুই সম্প্রদায়ের অধিকারকে কেন্দ্র করে । গ্রামের হিন্দুরা বুড়ির দেহ সৎকারের উদ্দেশ্যে নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে । কিন্তু বিকেলে মুসলমান পাড়ার লোকেরা কবর দেওয়ার জন্য বুড়ির দেহটিকে ফেরত আনে । এই ঘটনায় হিন্দুরা বিরক্ত হয় । গ্রামের মোল্লাসাহেব ও ভটচাজমশাই সকালে একই বাসের যাত্রী হয়ে শহরে গিয়েছিলেন । অথচ মোল্লাসাহেব যাওয়ার পথে বুড়িকে কলমা পড়তে শুনেছেন , কিন্তু ভটচাজমশাই বুড়ির মুখে শুনেছেন ‘ শ্রীহরি ’ বচন । ফজলু সেখ কিংবা করিম ফরাজিরা মোল্লাসাহেবের পক্ষ অবলম্বন করে বুড়ির মুসলমান হওয়ার প্রমাণ দাখিল করে । ঠিক তেমনই নকড়ি নাপিত ও নিবারণ বাগদি ভটচাজমশাইয়ের স্তাবকতা করে । এই সূত্র ধরেই মোল্লাসাহেব হিন্দুদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দেন , একইভাবে ভটচাজমশাইও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যবন নিধনের আহ্বান জানান । উগ্র ধর্মান্ধতার প্রতিভূ মোল্লাসাহেব এবং ভটচাজমশাইয়ের দল । তাঁরা নির্দ্বিধায় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় প্ররোচনা জোগায় । তাদের চরিত্রে মানবতার বদলে বড়ো হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষপূর্ণ মানসিকতা । এই চরিত্রগুলির মাধ্যমে গল্পকার আসলে এক মৃতপ্রায় বৃদ্ধাকে বাঁচাতে নিশ্চেষ্ট অথচ অধিকার কায়েম করতে তৎপর , নির্লজ্জ ও ধর্মোন্মাদ মানুষের ভয়াবহতার স্বরূপটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন ।