শ্রেণী | দ্বাদশ শ্রেণী -উচ্চমাধ্যমিক (HS Class 12) |
বিষয় | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা (HS Bengali) |
কবিতা | রুপনারায়নের কূলে (Rupnaraner Kule) |
লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) |
MCQ | প্রশ্ন ও উত্তর
- কবি জেগে উঠেছিলেন—
(A) পদ্মার কূলে
(B) গঙ্গার কূলে
(C) রূপ – নারানের কূলে
(D) আত্রেয়ীর কূলে
Ans: (C) রূপ – নারানের কূলে
- রূপনারান হল একটি –
(A) নদের নাম
(B) ব্যক্তির নাম
(C) দেশের নাম
(D) গ্রামের নাম
Ans: (A) নদের নাম
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ বলতে কবি আসলে বুঝিয়েছেন—
(A) নদীতীরকে
(B) মৃত্যুর হাতছানিকে
(C) নদীময় দেশমাতৃকাকে
(D) রূপময় পৃথিবীকে
Ans: (D) রূপময় পৃথিবীকে
- কবিতাটিতে রূপনারানকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে –
(A) মাতৃভূমির সঙ্গে
(B) জলাভূমির সঙ্গে
(C) অন্তর্মনের সঙ্গে
(D) জগৎসংসারের সঙ্গে
Ans: (D) জগৎসংসারের সঙ্গে
- ‘ জেগে উঠিলাম ’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—
(A) মোহভঙ্গ হওয়া
(B) স্বপ্নভঙ্গ হওয়া
(C) ঘুম থেকে জাগা
(D) চেতনার পরিপূর্ণতা
Ans: (D) চেতনার পরিপূর্ণতা
- রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবির উপলব্ধি হয় –
(A) স্বপ্ন ও বাস্তব সমান
(B) স্বপ্ন ও বাস্তব জগৎ এক নয়
(C) এ জগৎ স্বপ্নের মতো
(D) স্বপ্ন ও নিদ্রার জগৎ – ই বাস্তব
Ans: B) স্বপ্ন ও বাস্তব জগৎ এক নয়
- কবি এ জগৎ যে স্বপ্ন নয় , তা জেনেছিলেন –
(A) ঘুম থেকে জেগে উঠে
(B) একা পথ হাঁটতে গিয়ে
(C) রূপনারানের কূলে জেগে উঠে
(D) অকুল পাথারে পড়ে
Ans: (C) রূপনারানের কূলে জেগে উঠে
- ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম’—
(A) মৃত্যুর মুখ
(B) আপনার রূপ
(C) প্রকৃতির রূপ
(D) রূপনারানের রূপ
Ans: (D) রূপনারানের রূপ
- ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম ‘ – কী দেখলেন ?
(A) আপনার স্বপ্ন
(B) আপনার বেদনা
(C) আপনার জগৎ
(D) আপনার রূপ
Ans: (D) আপনার রূপ
- কবি রবীন্দ্রনাথ নিজের রূপ দেখেন –
(A) রক্তের অক্ষরে
(B) আরশিতে
(C) মানবহৃদয়ে
(D) নদীজলে
Ans: A) রক্তের অক্ষরে
- ‘ দেখিলাম আপনার রূপ ‘ বলতে কবি বুঝিয়েছেন –
(A) প্রকৃতির সৌন্দর্যকে
(B) নিজের সৌন্দর্যকে
(C) মহাবিশ্বের রহস্যময়তাকে
(D) ব্যক্তিজীবনের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারাকে
Ans: (D) ব্যক্তিজীবনের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারাকে
ক ) দুঃখে – শোকে ( খ ) সুখে – আনন্দে ( গ ) বেদনায় – আঘাতে and the ঘ
- ‘ রক্তের অক্ষরে ‘ বলতে কবি রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়েছেন—
(A) জীবনের সুখস্মৃতিগুলিকে
(B) অস্তিত্বের আঘাত ও বেদনাময় অভিজ্ঞতা – উপলব্ধিকে
(C) জীবনে আহত হওয়ার দিনগুলিকে
(D) জীবনের রঙিন দিনগুলিকে
Ans: (B) অস্তিত্বের আঘাত ও বেদনাময় অভিজ্ঞতা – উপলব্ধিকে
- ‘ চিনিলাম আপনারে ‘ —কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন ?
(A) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
(B) দুঃখে – শোকে
(C) বেদনায় – আঘাতে
(D) সুখে – আনন্দে
Ans: (A) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
- কবির কাছে সত্যের স্বরূপটি হল –
(A) কঠিন
(B) বাক্য ও মনের অতীত
(C) অনুমেয়
(D) দুরূহ
Ans: (A) কঠিন
15.‘ সত্য যে কঠিন ‘ — কবি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে – অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে –
(A) তা আঘাতে পরিপূর্ণ
(B) তা বেদনায় পরিপূর্ণ
(C) তা আঘাত ও বেদনায় পরিপূর্ণ
(D) তা যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ
Ans: (C) তা আঘাত ও বেদনায় পরিপূর্ণ
- কবির মতে যা কখনও বঞ্চনা করে না , তা –
(A) মিথ্যা
(B) দুর্বোধ্য সত্য
(C) মৃত্য
(D) সত্য
Ans: (D) সত্য
- ‘ সে কখনো করে না বঞ্চনা । ‘ –‘সে ’ বলতে বোঝানো হয়েছে –
(A) কঠিনকে
(B) সত্যকে
(C) মৃত্যুকে
(D) জীবনকে
Ans: (B) সত্যকে
- কবি রবীন্দ্রনাথ কঠিনকে ভালোবেসেছিলেন , কারণ—
(A) কঠিনকে গ্রহণ করা সহজ
(B) কঠিনকে এড়ানো যায় না
(C) সত্য হল কঠিন
(D) কঠিন কাজ করাই জীবনের ব্রত
Ans: (C) সত্য হল কঠিন
- ‘ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম ‘ — এখানে ‘ কঠিন ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে –
(A) সত্যোপলব্ধির পথকে
(B) সত্য অস্বীকার করাকে
(C) মৃত্যুময় জীবনকে
(D) প্রিয়জনের বিচ্ছেদকে
Ans: (A) সত্যোপলব্ধির পথকে
- কবি রবীন্দ্রনাথের মতে , এ জীবন হল আমৃত্যু –
(A) যুদ্ধ ও সংগ্রামের
(B) সুখের তপস্যা
(C) বঞ্চনার তপস্যা
(D) দুঃখের তপস্যা
Ans: (D) দুঃখের তপস্যা
- কবির মতে , মানুষকে আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা করতে হয়—
(A) সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করার প্রয়োজনে
(B) সুখ অর্জন করার জন্য
(C) সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়ার জন্য
(D) অন্যকে অতিক্রম করার জন্য
Ans: (A) সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করার প্রয়োজনে
- কবির মতে , আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা হল –
(A) এ দেশ
(B) এ সমাজ
(C) এ জগৎ
(D) এ জীবন
Ans: (D) এ জীবন
- ‘ সকল দেনা শোধ ‘ হয়—
(A) দুঃখে
(B) মৃত্যুতে
(C) সুখে
(D) জীবনে
Ans: (B) মৃত্যুতে
- মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন—
(A) জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেতে
(B) জন্মান্তরের অন্বেষণ করতে
(C) কালোত্তীর্ণ হতে
(D) সকল দেনা শোধ করতে
Ans: (D) সকল দেনা শোধ করতে
- পাঠ্য ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি মূল কাব্যগ্রন্থের—
(A) ১২ সংখ্যক কবিতা
(B) ১৩ সংখ্যক কবিতা
(C) ৯ সংখ্যক কবিতা
(D) ১১ সংখ্যক কবিতা
Ans: (D) ১১ সংখ্যক কবিতা
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত , তা হলো –
(A) ক্ষণিকা
(B) শেষ লেখা
(C) সোনার তরী
(D) চিত্রা
Ans: (B) শেষ লেখা
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি রচিত হয়—
(A) ৬ জুলাই , ১৯৪১
(B) ২৮ জুন , ১৯৪১
(C) ১৩ মে , ১৯৪১
(D) ১৪ মে , ১৯৪১
Ans: (C) ১৩ মে , ১৯৪১
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি রচিত হয় –
(A) কালিম্পং – এ
(B) কার্সিয়ং – এ
(C) কলকাতায়
(D) শান্তিনিকেতনে
Ans: (D) শান্তিনিকেতনে
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | রুপনারায়নের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Rupnaraner Kule Question and Answer :
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথের ‘ শেষ লেখা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ।
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের কোন সময়ের রচনা ?
Ans: পাঠ্য ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ । ঠাকুরের জীবনের প্রান্তবেলার রচনা । কবি তাঁর মৃত্যুর মাত্র মাস ।
- তিনেক আগে এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন । P ‘ রূপনারানের কূলে ‘ বলতে কবি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ বলতে কবি আসলে প্রবহমান এই রূপময় পৃথিবীকে বোঝাতে চেয়েছেন ।
- ‘ জেগে উঠিলাম ‘ — কবি কোথায় , কীভাবে জেগে উঠলেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং রূপনারানের কূলে জেগে উঠলেন , অর্থাৎ জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে স্বপ্ন – কল্পনার জাল ছিন্ন করে নতুন চেতনায় ঋদ্ধ হলেন ।
- ‘ জানিলাম ’ – বক্তা কী জানতে পেরেছিলেন ?
Ans: কবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারানের কূলে জেগে উঠে জানতে পারলেন , ‘ এ জগৎ স্বপ্ন নয় ‘ । এ জগৎ হল আঘাত – সংঘাতে ভরা কঠিন – কঠোর বাস্তব ।
- ‘ জেগে উঠিলাম ‘ — এমন বলার কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?
Ans: জীবনসায়াহ্নে উপনীত কবি , ঘুম – স্বপ্ন ও আঁধারময় জগতের আচ্ছন্নতা ত্যাগ করে রূপময় পৃথিবীর স্পষ্ট প্রত্যক্ষতায় জেগে ওঠার কথা বলেছেন ।
- ‘ এ জগৎ / স্বপ্ন নয় ।’— কবির চোখে এ জগৎ কেমন ?
Ans: রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি দেখেন , এ জগৎ স্বপ্ন নয় বরং আঘাতে – বেদনায় পরিপূর্ণ এক প্রত্যক্ষ বাস্তব ।
- ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম ‘ বলার কারণ কী ?
Ans: রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি আঘাতে – যন্ত্রণায় বাস্তব অভিজ্ঞতায় নিজের প্রকৃত রূপ আবিষ্কার করাকে ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম ‘ বলেছেন ।
- ‘ চিনিলাম আপনারে ‘ — কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন ?
Ans: রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আঘাতে – বেদনায় নিজের সত্যস্বরূপ উপলব্ধি করার মাধ্যমে , নিজেকে যথার্থভাবে চিনলেন ।
- ‘ চিনিলাম আপনারে ‘ –কে ‘ আপনারে ‘ চিনেছিলেন ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ নিজের প্রকৃত রূপ উপলব্ধির কথা বোঝাতে , ‘ আপনারে ’ বা নিজেকে চেনার কথা বলেছেন ।
- ‘ সত্য যে কঠিন ’ বলার কারণ কী ?
Ans: মানবজীবনে সত্যোপলব্ধির পথ মসৃণ নয় । সত্য অনেক দুঃখ ও দাবি নিয়ে আসে । তাই কবি সত্যকে কঠিন বলে মনে করেছেন ।
- ‘ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম , ‘ — এখানে ‘ কঠিন ‘ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় সত্যকে কঠিন বলে অভিহিত করেছেন ।
- ‘ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম , ‘ — কবি কেন ‘ কঠিন ‘ কে । ভালোবাসলেন ?
অথবা , ‘ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম ‘ — কঠিনকে ভালোবাসার কারণ কী ?
Ans: সত্য কঠিন হওয়া সত্ত্বেও , সত্য কখনও বঞ্চনা করে না , তাই কবি কঠিনকে ভালোবেসেছিলেন ।
- সত্যকে কবি কীভাবে গ্রহণ করেছিলেন ?
Ans: ‘ ব্লু ’ গানের কূলে ‘ কবিতায় কবি সত্য যে কঠিন , তা জানা সত্ত্বেও তাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছিলেন ।
- সে কখনো করে না বঞ্চনা ‘ ।— বক্তা ‘ সে ’ বলতে কাকে বুঝিয়েছেন ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ’ কবিতায় কবি ‘ সে ’ বলতে জীবনসত্যের বা সত্যোপলব্ধির কথা বলতে চেয়েছেন ।
- ‘ সে কখনো করে না বঞ্চনা ‘ — এমন বলার কারণ কী ?
Ans: একমাত্র সত্যই পৃথিবীর বাস্তব রূপকে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে ; যার কখনও কোনো বদল ঘটে না । তাই কবি এমন মন্তব্য করেছেন ।
- এ জীবনকে কবি কী বলে মনে করেছেন ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় কবি আমৃত্যু মানবজীবনকে দুঃখের তপস্যা বলে মনে করেছেন ।
- ‘ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন , ‘ — কবি জীবনকে ‘ দুঃখের তপস্যা ‘ মনে করেছেন কেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুভব করেছেন , জাগতিক নিয়মে বেঁচে থাকতে গেলে প্রতিনিয়ত দুঃখদুর্দশা – যন্ত্রণা – আঘাত ও তীব্র বেদনাকে বরণ করে নিতে হয় । তাই কবির এ জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলে মনে হয়েছে ।
- ‘ সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে , ‘ — ‘ সত্যের দারুণ মূল্য বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
Ans: সত্যানুভূতির পথ দুঃখময় । তা আঘাতে – বেদনায় হৃদয় ও মনকে রক্তাক্ত করে । প্রকৃত সত্যের তীব্র দহন অতিক্রম করলে , আত্মশুদ্ধি ঘটে । আত্মস্বরুপকে আবিষ্কার করা যায় । একেই কবি ‘ সত্যের দারুণ মূল্য ‘ বলেছেন ।
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় ‘ মৃত্যুতে সকল দেনা ‘ কীভাবে শোধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন ?
অথবা , ‘ মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে ।’— ‘ দেনা ’ কীভাবে শোধ করা যায় ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বাস আমৃত্যু দুঃখের সাধনায় সত্যের সকল কাঠিন্যকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করা যায় ।
- ‘ সত্যের দারুণ মূল্য লাভ ’ করবার জন্য কবি কী করেছেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ সত্যের দারুণ মূল্য ‘ লাভ করবার জন্য আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা করেছেন ।
- কবি ‘ মৃত্যুতে সকল দেনা , শোধ করতে চান কেন ?
Ans: জীবনে প্রাপ্ত সমস্ত কিছু নিজের সঙ্গে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করে কবি জীবনের সব দেনা মৃত্যুতে শোধ করবেন বলে মনে করেছেন ।
- ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কোন্ গভীর অর্থ প্রকাশ করে ?
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটির মাধ্যমে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের আত্মানুসন্ধান ও আত্মস্বরূপ উপলব্ধির গভীরতর সত্যকে প্রকাশ করেছেন ।
- আমৃত্যু কবি কীসের অন্বেষণ করেছেন এবং কাকে ভালোবেসেছেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুঃখের তপস্যার মাধ্যমে আমৃত্যু সত্যের অন্বেষণ করেছেন এবং সত্যকেই ভালোবেসেছেন ।
- আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা ‘ — কবি কী সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন ?
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবজীবন সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | রুপনারায়নের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Rupnaraner Kule Question and Answer :
1. রূপ – নারানের কূলে / জেগে উঠিলাম – কে জেগে উঠলেন ? জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে , তা বুঝিয়ে দাও ।
অথবা , ‘ রূপ – নারানের কূলে / জেগে উঠিলাম , ‘ –এই ‘ জেগে ওঠা ” -র আলোকে কবিতাটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করো ।
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতার কবি ঋষিকল্প রবীন্দ্রনাথ জেগে উঠলেন ।
আলোচ্য কবিতায় কবি রূপনারানকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করেছেন । তাই ‘ রূপনারান ’ শব্দটি শুধু কোনো নদীর নাম হিসেবে সীমায়িত না – থেকে , প্রবহমান পৃথিবীর উদ্ভাসিত রূপ হয়ে ফুটে ওঠে । সুদীর্ঘ জীবনপথ পরিক্রমার পর ? স্বপ্ন – কল্পনায় আত্মলীন কবি যেন জীবনপ্রান্তে উপনীত হয়ে অভিনব উপলব্ধির আলোকে সেই রুপময় জগৎ প্রত্যক্ষ করেন । কবি রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নময় আচ্ছন্নতার জগৎকে অতিক্রম করে বাস্তব জীবনের মাঝে এসে দাঁড়ান । সেখানে দৈনন্দিন বেদনা – যন্ত্রণা হতাশা – আঘাত ও দুঃখের সঙ্গে নিত্যপরিচয়েই স্পষ্ট হয় বেঁচে থাকা । সেখানে প্রতিনিয়ত সাহসে ভর করে মানুষকে জীবনসত্যের সম্মুখীন হতে হয় । সত্যদ্রষ্টা কবি বুঝেছেন বাস্তব সত্য বড়ো কঠিন ; সে অনেক দুঃখ ও A দাবি নিয়ে সমস্ত কিছুকে আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরে । তাই প্রকৃত সত্য কখনও মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করে না । মায়ার আড়াল ভেঙে দুঃখের শিক্ষায় সে মানুষকে পরিণত করে তোলে , কঠিনকে ভালোবাসতে শেখায় , অনুভূতির অস্পষ্ট – অন্ধকার দূর করে মানবচৈতন্যকে জাগ্রত করে । মানুষ উপলব্ধি করে বিচ্ছেদে বেদনায় রক্তক্ষরণে আলোড়িত এ জীবন , আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা । জীবননদীর প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ নবচেতনায় সঞ্জীবিত হয়ে ফেলে আসা জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন । কাঙ্ক্ষিত সত্যের সম্মুখীন হয়েই প্রাজ্ঞ কবি যেন জড়তার আবেশ কাটিয়ে নতুনভাবে জেগে উঠেছেন ।
2. জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয় । রূপনারানের কুলে কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখো ।
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় এক সত্যদ্রষ্টা কবি রবীন্দ্রনাথ । ঠাকুরের আত্মজিজ্ঞাসার আশ্চর্য অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে । মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে তিনি যেন জগৎ ও জীবনের সারাৎসার উপলব্ধি করতে চেয়েছেন । স্বপ্নের মায়াচ্ছন্নতা ত্যাগ করে তিনি রূপনারানের কুলে চোখ মেলে দেখেছেন ‘ আপনার রূপ ‘ । সুদীর্ঘ জীবনের যন্ত্রণা , বেদনা , আঘাত ও আলোড়নের রক্তাক্ত বাস্তবিকতায় নিজেকে খুঁজে পেয়েই তাঁর মনে হয়েছে , এ জগৎ স্বপ্ন নয় ‘ । আসলে স্বপ্ন তো বিভ্রম তৈরি করে । স্বপ্নের কুলেহিকায় অস্পষ্ট হয়ে যায় জীবনের স্বরূপ । কিন্তু তার যথাযথ পরিচয় ফুটে ওঠে , সত্যের নির্মমতায় ও কঠিন বিস্তারে । তাই তো কবি মনে করেন , এ জীবন দুঃখের তপস্যামাত্র । কারণ দুঃখের রুক্ষ পথেই মানুষ সত্যের দারুণ মূল্য অর্জন করতে পারে । সমস্ত ক্লান্তি – হতাশা – যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে জীবনকে সত্যের ভিত্তিভূমিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় । তখনই স্বপ্নের মায়া – অন্ধকার কেটে ‘ সত্তার নূতন আবির্ভাব ঘটে । ‘ এভাবে নিজের অন্তরের চেতনায় জীবনসত্যকে অর্জন করলে , আত্মিক সংকট থেকে মুক্তি ঘটে ।
জীবনোপলব্ধি স্বপ্নের বিপরীতে কঠিন সত্য কবি রবীন্দ্রনাথ সত্যকে কঠিন জেনেও , সেই কঠিনকেই ভালোবেসেছেন । কারণ ঘুম স্বপ্ন এবং মায়ার ‘ তিমির দুয়ার ‘ ভেদ করে , বিশ্বজগৎকে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ রূপে উপলব্ধি করাতেই মানবজীবনের সার্থকতা ।
3. ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ , -কবির এমন কথা বলার কারণ আলোচনা করো ।
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ রূপনারানের কুলে ‘ কবিতায় মানবজীবনের যথার্থ রূপটিকে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন । এখানে রূপনারানের কূলে জেগে ওঠার অর্থ মাটি পৃথিবীর আলোকিত বাস্তবতায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠা । জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে কবি চেতনার সেই উদ্ভাসিত পথে হেঁটে উপলব্ধি করেন এ জগৎ স্বপ্ন নয় ‘ ।
স্বপ্ন – অন্ধকার ও ভয়ের বিচিত্র চলচ্ছবিকে অতিক্রম করে কবি রবীন্দ্রনাথ আঘাত ও বেদনায় মুখর জীবনকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন । দুঃখের আঁধার রাত , বেঁচে থাকার যুদ্ধে অনর্থক হার – জিত খেলা এবং জীবনের মিথ্যা কুহকের জাল ভেদ করে , দ্বন্দ্বময় পৃথিবীতে ‘ রক্তের অক্ষরে ‘ যেন তিনি নিজেকে বিকশিত হতে দেখেন । জীবনের আঘাতে যেমন প্রাণধর্ম জেগে ওঠে , তেমনই কঠিন ও নির্মম সত্যরূপও প্রকাশিত হয় । তখন কৃত্রিম কল্পনাবিলাস ত্যাগ করে মানবমন সত্যের আশ্রয় গ্রহণ করে । কারণ সে কখনও বঞ্চনা করে না । ‘ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ ‘ বলতে কবি আসলে দুঃখযন্ত্রণা , প্রিয়জন বিচ্ছেদের বেদনা , নিরন্তর রোগভোগ ইত্যাদির মাধ্যমে হৃদয়ের নিভৃত রক্তক্ষরণের আত্মোপলব্ধিকে বোঝাতে চেয়েছেন । কবি রবীন্দ্রনাথের এই আত্ম – উন্মোচন ঘটেছিল বলেই তো তিনি অন্য একটি কবিতায় লিখেছিলেন , ‘ মনেরে আজ কহ যে / ভালোমন্দ যাহাই আসুক / সত্যরে লও সহজে ।
4. সে কখনো করে না বঞ্চনা । – কে কখনও বর্ণনা করে না ? কবি কীভাবে এমন ভাবনায় উপনীত হয়েছেন ?
অথবা , ‘ সত্য যে কঠিন ‘ — এই উপলব্ধিতে কবি কীভাবে উপনীত হলেন , তা ‘ রূপনারানের কুলে ‘ কবিতা অবলম্বনে লেখো ।
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় কবির উপলব্ধি সত্য , নির্মম ও কঠিন হলেও সে কখনও বঞ্চনা করে না ।
আসলে কবি রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ও জীবনদর্শনের এক সার্থক প্রতিফলন ঘটেছে পাঠ্য কবিতাটিতে । স্বপ্নের কিংবা বিভ্রমের , অস্পষ্টতা – বিচ্ছিন্নতা এবং মায়াময় কুহক অতিক্রম করে তিনি জেগে কবির সত্যোপলব্ধি উঠেছেন , ‘ রূপ – নারানের কূলে । তিনি যেন বলে উঠেছেন , “ প্রথম রৌদ্রের আলো / সর্বদেহে হোক সঞ্চারিত শিরায় শিরায় ; / আমি বেঁচে আছি , তারি অভিনন্দনের বাণী / মর্মরিত পল্লবে পল্লবে আমারে শুনিতে দাও । ” এই রৌদ্রোজ্জ্বল স্পষ্টতায় মানবজীবনের গভীর তলদেশ পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠেছে । যন্ত্রণা – বেদনা এবং রক্তক্ষরণে পূর্ণ রুঢ় বাস্তবতার মধ্যেই তিনি নিজের জীবনকে খুঁজে পেয়েছেন । বাস্তব অভিজ্ঞতায় কবি উপলব্ধি করেছেন , এ জীবন এক সুদীর্ঘ দুঃখের তপস্যা । আর দুঃখের তিমির রাত্রি অতিক্রম করে , মিথ্যার কুহক ছিন্ন করে সত্যকে অর্জন করতে হয় , সে অনেক দুঃখ ও দাবি নিয়ে আসে । সাহসে ভর করে সত্যের দারুণ মূল্যকে লাভ করতে হয় । সত্য কঠিন এবং সেই কঠিনকেই কবি ভালোবেসেছেন । কারণ সত্য কখনও বঞ্চনা করে না । এজন্যই কবি গভীর বিশ্বাসভরে বলেছিলেন , “ সত্যেরে সে পায় / আপন আলোকে ধৌত অন্তরে অন্তরে । ”
5. ‘ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন , জীবনকে ‘ দুঃখের তপস্যা ‘ বলে কবি মনে করেছেন কেন আলোচনা করো ।
Ans: ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতা থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে । কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঠ্য কবিতাটিতে জগৎ ও জীবনের স্বরূপ উন্মোচন করতে চেয়েছেন । কবি রবীন্দ্রনাথ এখানে ব্যক্তিসত্তাকে খুঁজে পেয়েছেন আঘাতে বেদনায় পূর্ণ এ জীবনের অভিজ্ঞতায় । আর এই অভিজ্ঞতা অর্জনের রুক্ষ বাস্তব পথে তিনি টের পেয়েছেন প্রকৃত সত্য নির্মম ও কঠিন । জীবন হল । ব্যক্তিজীবনের স্বপ্নময় বিভ্রমের বোধ দূর হয় , ‘ দুঃখের তপস্যা সত্যের অগ্নিস্পর্শে । কিন্তু আগুনের মতোই সত্যের স্পর্শ যেমন আমাদের উদ্ভাসিত করে , ঠিক তেমনই তার দহনও আমাদের সহ্য করতে হয় । সে দুঃখের শিক্ষায় জীবনের প্রকৃত ঐশ্বর্যকে প্রকাশ করে । স্বপ্নের মিথ্যা কুহেলিকা , ব্যবধান ও সীমানা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে সত্যের চিরায়ত মহিমায় । তবে তার দারুণ মূল্য অর্জিত হয় দুঃখের জীবনব্যাপী তিমির সাগরে অবগাহন করে । স
সত্যস্রষ্টা কবির ‘ দুখের আঁধার রাত্রি অতিক্রম করে জীবনপ্রাস্তে উপনীত হয়ে অন্তরের একান্ত অনুভব — ‘ আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন ‘ । বাস্তবিকই মানবজীবন তপস্বীর ন্যায় দুঃখের তপস্যায় কবির অন্তিম উপলব্ধি ডুবে সত্যানুসন্ধানের প্রয়াস ছাড়া কিছু নয় । কবি জানেন , যা – কিছু মহৎ , যা – কিছু সত্য তাকে ত্যাগের মাধ্যমে , দুঃখের অবিচল সাধনায় ব্রতী থেকে পেতে হয় । আলোচ্য অংশে মানবজীবনের শাশ্বত সত্য দার্শনিক ভাবনায় ঋদ্ধ কবির হৃদয়সঞ্জাত চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে ।
6. “ মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে – বক্তা কে ? ‘ মৃত্যুতে সকল দেনা ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? সে দেনা ‘ কীভাবে শোধ করতে চেয়েছিলেন কবি ?
Ans: উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন স্বয়ং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
মৃত্যুর মাধ্যমে এ জগতের সব ঋণ শোধের কথাই বলা হয়েছে ।
কবি জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার শেষে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করেছেন । আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় নিজেকে চিনেছেন । তিনি জেনেছেন— “ এ জগৎ স্বপ্ন নয় । ‘ দীর্ঘ জীবনে সুখ – দুঃখ , আনন্দ – বেদনার স্বরূপ চিনেছেন । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু দুঃখের তপস্যা । এই সত্যকে তিনি জেনেছেন । সত্য কখনও কাউকে বঞ্চনা করে না । কঠিন সত্যের কাছে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে হয় । জীবিত অবস্থায় এই জগতের কাছ থেকে অনেক কিছু কবি গ্রহণ করেছেন , তাই তিনি জগতের কাছে ঋণী । সেই ঋণ শোধ করার সাধ থাকলেও সাধ্য কবির নেই । মহাকালের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে কবি সকল ঋণ শোধ করতে চান ।
7. ‘ মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে । -সত্যের দারুণ মুল্য লাভ করার জন্য কীভাবে মৃত্যুতে সমস্ত দেনা শোধ করা যায় , তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো ।
Ans: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি তাঁর জীবনদর্শনের এক অসামান্য কাব্যিক প্রকাশ । ‘ রূপ – নারানের কূলে ’ জেগে ওঠার অর্থই প্রবহমান বাস্তবের ভিত্তিভূমিতে উপনীত হওয়া , যেখানে রক্তের অক্ষরে ‘ অর্থাৎ দৈনন্দিন বাস্তবতার যন্ত্রণা বেদনা ও আঘাতে ব্যক্তিজীবনে গতি ও প্রাণ আসে । এভাবেই জীবনসত্যের নির্মম এবং প্রাণবন্ত রূপ উদ্ভাসিত করে কবির জীবন হল ব্যক্তিস্বরুপকে । দুঃখের আঘাত অবিরত সহ্য করেও বেঁচে থাকা আসলে জীবনকে যথার্থ রূপে তার সত্যমূল্যে চেনার নিরন্তর প্রয়াস ছাড়া তো আর কিছুই নয় । কবি জীবনের সেই স্বধর্ম পালন করার জন্যই সত্য যে কঠিন তা উপলব্ধি করেও , সত্যকেই ভালোবেসেছেন । কারণ জীবন সম্পর্কে সমস্ত বিভ্রম দূর করে সে জগৎকে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ করে তোলে । সে কখনও বঞ্চনা করে না ।
সত্যোপলব্ধির পথে নিয়ত বাধা – বিভ্রান্তি । এই সব কিছুকে দুঃখের তপস্যা দিয়ে অতিক্রম করতে হয় । তখন জীবনসায়াহ্নে উপনীত কবি শোনেন , “ সেথা সিংহদ্বারে বাজে দিন অবসানের রাগিনী / যার মূর্ছনায় মেশা এ জন্মের যা – কিছু সুন্দর , / স্পর্শ যা করেছে প্রাণ এ দীর্ঘ যাত্রাপথে / পূর্ণতার ইঙ্গিত জানায়ে । ” — মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ হয় এভাবে জীবনের কাছে , পূর্ণতার কাছে সত্যের দাবি পুরণের মধ্য দিয়ে । একমাত্র সত্যের আশ্রয়ে ভর করেই জীবন ও মৃত্যুর বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় ।
8. ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটির নামকরণের প্রশ্ন সার্থকতা বিচার করো ।
Ans: ‘ নামকরণের তাৎপর্য ‘ অংশটি দ্যাখো ।
9. ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটির অন্তর্নিহিত ভাব নিজের ভাষায় আলোচনা করো ।
Ans: রোগ – অসুস্থতা এবং বার্ধক্যের ভারে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষ দিনগুলি ছিল নিশ্চল ও তন্দ্রাচ্ছন্ন । কবিতাটি ভোররাত্রের রচনা । তাই কবি যেন ঘুমে – স্বপ্নে – অন্ধকারে জড়িত রাত্রির কুহেলিকায় ঢাকা জগৎ থেকে জেগে প্রাককথন উঠেছেন রূপনারানের কূলে , অর্থাৎ প্রবাহিত রূপময় পৃথিবীর স্পষ্ট প্রত্যক্ষতায় । তিনি উপলব্ধি করেছেন এ জগৎ স্বপ্ন নয় ।
সকালের আলোর স্পর্শ , বাস্তব জীবনের আঘাতে – বেদনায় ফুটিয়ে তুলেছে কবির সত্তার প্রকৃত রূপ । তিনি উপলব্ধি করেছেন , কবির সত্যরূপ দর্শন দুঃখ ও যন্ত্রণার বাস্তব রূপের মধ্যেই জীবনের সত্য উদ্ভাসিত হয় । আর এই সত্য কঠিন । কারণ বেদনা – যন্ত্রণার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতাই এই সত্যের পরম অবলম্বন । তবু তাকেই ভালোবেসেছেন কবি । কারণ সত্য কখনও বঞ্চনা করে না । সে অনেক দুঃখ ও দাবি নিয়ে আসে । তাই তো এ জীবন আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা ছাড়া আর কিছুই নয় । মানবজীবনের অনিবার্য ধর্ম হল – দুঃখযন্ত্রণাময় কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে আমৃত্যু লড়াই করে সত্যোপলব্ধির প্রয়াসে অবিচল থাকা । কবির ধারণা , জীবনের কাছে সত্যের যে – ঋণ পরিশোধের দাবি তার সব কিছু লেনদেন শেষ হয় মৃত্যুতেই ।
10. ‘ সকল দেনা শোধ করে দিতে — দেনা কীসের ? কীভাবে তা শোধ করা যাবে বলে কবি মনে করেছেন ? তাঁর এই মনোভাবটি কোন্ বিশেষ মূল্যবোধকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে ?
Ans: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ শেষ লেখা ’ কাব্যগ্রন্থের এগারো সংখ্যক কবিতা ‘ রূপনারানের কূলে ’ কবিতা থেকে দেনার পরিচয় প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে । কবি এখানে ‘ দেনা ’ বলতে তাঁর সারা জীবনের যা কিছু অর্জন তাকেই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ।
কবি জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার শেষে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করেছেন । আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় নিজেকে চিনেছেন । তিনি জেনেছেন— ‘ এ জগৎ স্বপ্ন নয় । ‘ দীর্ঘ জীবনে সুখ – দুঃখ , আনন্দ – বেদনার স্বরূপ চিনেছেন । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু দুঃখের তপস্যা । এই সত্যকে তিনি জেনেছেন । দেনা শোধের উপায় সত্য কখনও কাউকে বঞ্চনা করে না । কঠিন সত্যের কাছে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে হয় । জীবিত অবস্থায় এই জগতের কাছ থেকে অনেক কিছু কবি গ্রহণ করেছেন , তাই তিনি জগতের কাছে ঋণী । সেই ঋণ শোধ করার সাধ থাকলেও সাধ্য কবির নেই । মহাকালের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে কবি সকল ঋণ শোধ করতে চান ।
কবি উপলব্ধি করেনে , দুঃখ ও যন্ত্রণার বাস্তব রূপের মধ্যেই জীবনের সত্য উদ্ভাসিত হয় ; আর এই সত্য কঠিন । কবির মূল্যবোধ বেদনা – যন্ত্রণার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতাই এই সত্যের পরম অবলম্বন । কবির ধারণা , জীবনের কাছে সত্যের যে ঋণ পরিশোধের দাবি তার সব কিছু লেনদেন শেষ হয় মৃত্যুতেই ।