সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো |
- ইয়ান্দাবুর সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়—
(A) ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (A) ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে
- সগৌলির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়—
(A) ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (A) ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে
- ‘ মার্কেন্টাইলবাদ ‘ কথাটি ব্যবহার করেন—
(A) অ্যাডাম স্মিথ
(B) কার্ল মার্কস
(C) ভি . আই . লেনিন
(D) ডেভিড হরোউইজ ।
Ans: (A) অ্যাডাম স্মিথ
- নানকিং – এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল—
(A) ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (B) ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে
- ভারতের কোন রাজ্যে প্রথম ইংরেজরা রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ?
(A) বম্বে
(B) গুজরাট
(C) মাদ্রাজ
(D) বাংলা ।
Ans: (D) বাংলা ।
- ‘ Wealth of Nations ‘ গ্রন্থটির লেখক হলেন—
(A) হাসন
(B) অ্যাডাম স্মিথ
(C) মেকলে
(D) লেনিন ।
Ans: (B) অ্যাডাম স্মিথ
- আফ্রিকাতে প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করেছিল
(A) ইংরেজরা
(B) ফরাসিরা
(C) পোর্তুগিজরা
(D) ওলন্দাজরা ।
Ans: (B) ফরাসিরা
- ‘ নয়া সাম্রাজ্যবাদ ’ কথাটি কে ব্যবহার করেন ?
(A) ডেভিড টমসন
(B) কার্ল মার্কস
(C) আর্নল্ড টয়েনবি ও
(D) লেনিন ।
Ans: (A) ডেভিড টমসন
- আমেরিকা মহাদেশকে ‘ নতুন বিশ্ব ‘ নামকরণ করেন—
(A) কলম্বাস
(B) ভাস্কো – দা – গামা
(C) আমেরিগো ভেসপুচি
(D) কোল ।
Ans: (C) আমেরিগো ভেসপুচি
- Colonia যে শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা হলো –
(A) ফরাসি
(B) লাতিন
(C) জামান
(D) ইংরেজি ।
Ans: (B) লাতিন
- Realpolitik- নীতির প্রবক্তা হলেন—
(A) কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম
(B) বিসমার্ক
(C) টুম্যান
(D) হিটলার ।
Ans: (B) বিসমার্ক
- কোন দেশের বর্তমান নাম মায়ানমার ?
(A) সিংহল
(B) ব্রহ্মদেশ
(C) বোর্নিও
(D) সুমাত্রা ।
Ans: (B) ব্রহ্মদেশ
- শিল্পবিপ্লব সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়—
(A) ইংল্যান্ডে
(B) ফ্রান্সে
(C) জার্মানিতে
(D) ইতালিতে ।
Ans: (A) ইংল্যান্ডে
- উদিয়মান সূর্যের দেশ কোনটি ?
(A) আমেরিকা
(B) চিন
(C) জাপান
(D) ইংল্যান্ড ।
Ans: (C) জাপান
- অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয় –
(A) এশিয়াকে
(B) ইউরোপকে
(C) আফ্রিকাকে
(D) অস্ট্রেলিয়াকে ।
Ans: (C) আফ্রিকাকে
- ‘ Imperialism : A Study ‘ গ্রন্থটি রচনা করেন—
(A) লেনিন
(B) হবসন
(C) অ্যাডাম স্মিথ
(D) ডেভিড টমসন ।
Ans: (B) হবসন
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – উনবিংশ ও বিংশ শতকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- বাণিজ্যিক পুঁজি কাকে বলে ?
Ans: উৎপাদনের জন্য নয় , কেবলমাত্র ব্যাবসাবাণিজ্য পরিচালনার জন্য যে পুঁজি কাজে লাগানো হয় সেটাই বাণিজ্যিক পুঁজি । ব্যবসায় বাড়তি লাভ হলে এধরনের পুঁজি বাড়ানো সম্ভব ।
- উপনিবেশবাদ -এর অর্থ কী ?
Ans: Colonialism বা উপনিবেশবাদ শব্দের উৎস লাতিন শব্দ Colonia । এর অর্থ হলো বিশাল সম্পত্তি বা এস্টেট ।
- আফ্রিকাকে কেন বলা হয় ‘ অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ ‘ ?
Ans: উনিশ শতকের মধ্যভাগের আগে পর্যন্ত আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চলই ইউরোপের মানুষের কাছে অচেনা ও অনাবিষ্কৃত ছিল । তাই একে বলা হতো অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ ।
- কোন সময়কাল ‘ নব সাম্রাজ্যবাদের যুগ ’ বলে পরিচিত ?
Ans: ১৮৭০–১৯১৪ খ্রিঃ মধ্যবর্তী পর্যায় ‘ নব সাম্রাজ্যবাদের যুগ ’ হিসেবে পরিচিত ।
- কোন কোন অঞ্চল নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া বা ইস্ট ইন্ডিজ গঠিত হয় ?
Ans: জাভা , সুমাত্রা , বালি ও বোর্নিও দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত হয় ।
- হবসনের মতে কী কারণে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটে ?
Ans: হবসনের মতে , পুঁজিবাদের বণ্টন ব্যবস্থার ত্রুটির জন্যই সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয় ।
- ‘ ওয়েল্থ অব নেশন্স ‘ কার লেখা ?
Ans: ‘ ওয়েল্থ অব নেশন্স ‘ রচনা করেন অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ।
- ক্যাপ্টেন কুক কোন কোন দেশ আবিষ্কার করেন ?
Ans: হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ , নিউজিল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ আবিষ্কার করেন ক্যাপ্টেন কুক ।
- সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লব কোথায় শুরু হয়েছিল ?
Ans: ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় । 10. কার নেতৃত্বে , কবে বার্লিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ?
Ans: জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্কের নেতৃত্বে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।
- আমেরিকা ছিল কাদের উপনিবেশ ?
Ans: আমেরিকা ছিল ব্রিটিশদের উপনিবেশ ।
- ‘ নীলজল নীতি ‘ কী ?
Ans: পোর্তুগিজ শাসনকর্তা আলবুকার্কের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ‘ নীলজল নীতি ‘ নামে পরিচিত ।
- মুক্ত বাণিজ্য নীতির প্রবক্তাদের কী বলা হতো ? এই নীতির অন্যতম সমর্থক কে ছিলেন ?
Ans: ফিজিওক্র্যাটস বলা হতো । এই নীতির অন্যতম সমর্থক হলেন অ্যাডাম স্মিথ ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – উনবিংশ ও বিংশ শতকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রসার (দ্বিতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- ঔপনিবেশিক সমাজে জাতি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার প্রভাব আলোচনা করো । অথবা , জাতিবৈষম্য বলতে কী বোঝো ? ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে জাতিবৈষম্যের প্রভাবগুলি লেখো ।
Ans: জাতিবৈষম্যের ধারণা : জাতি ও জাতিবৈষম্যের ধারণাটি মূলত পশ্চিমি উন্নত রাষ্ট্র থেকেই প্রকট হয়েছে । পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিতে জাতি , বংশ , ধর্ম , সম্প্রদায় , সামাজিক স্তরবিন্যাস ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে জাতিবৈষম্যের সূত্রপাত । প্রাচীন কাল থেকে বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে । ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনে শাসিত জাতিগুলি নানান ধরনের বঞ্চনার শিকার হয় । এই সকল শ্বেতাঙ্গ শক্তিশালী জাতিগুলি নিজেদের প্রয়োজনে জাতিগত বৈষম্যের সূত্রপাত করেছিল ।
ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে জাতিগত ব্যবধানের প্রভাব :
ইতিবাচক প্রভাব :
( i ) সাংস্কৃতিক অগ্রগতি : ইউরোপীয় শিক্ষা – সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে সংস্কৃতিতে বিশেষ করে শিল্প স্থাপত্য , ও ভাস্কর্যে নবযুগের সূচনা হয় এবং সামাজিক কুসংস্কারের অবসান ঘটে ।
( ii ) জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি : প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের জ্ঞানবিজ্ঞানের সংমিশ্রণে জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির পথ সুপ্রশস্ত হয় । শুরু হয় ঔপনিবেশিক শক্তি কর্তৃক উপনিবেশের সভ্যতা , সংস্কৃতি ও জীবন সম্পর্কে চর্চা এবং গবেষণা । ফলে নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানের গবেষণা বৃদ্ধি পায় এবং জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
( iii ) যুক্তিবাদের বিকাশ ও নবজাগরণের সূচনা : পাশ্চাত্যের দেশগুলি তাদের বিজ্ঞান , প্রযুক্তি , ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সাথে উপনিবেশগুলিতে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটায় । ভৌগোলিক আবিষ্কারের এবং সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে প্রাচ্য – পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটে যা যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটিয়ে নবজাগরণের পটভূমি তৈরি করে ।
নেতিবাচক প্রভাব : 1. শোষণ ও অত্যাচার : জাতিগত ব্যবধানের ফলে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে শুরু হয় সীমহীন শোষণ ও অত্যাচার , শ্বেতাঙ্গ শাসকরা কুয়াঙ্গ শাসিতের ওপর বিপুল পরিমাণ করের বোঝা চাপিয়ে দেয় নিজেদের আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় । এতে দেশীয় শিল্প ও কৃষিব্যবস্থা ধ্বংসের পথে বা বাড়ায় , দেখা যায় বিপুল সংখ্যক বেকার ।
- জাতিগত দ্বন্দু : ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের মানুষদের ঘৃণা ও অবজ্ঞার চেখে দেখত । তারা নিজেদের শ্বেতাঙ্গ জাতিতে শ্রেষ্ঠ জাতি বলে মনে করত । এতে শুরু হয় শ্বেতাঙ্গ শাসক ও কৃষ্ণাঙ্গ শাসিতের মধ্যে যুক্তি সংগ্রামের পরিবেশ ।
- শ্রমিক রপ্তানি : জাতিগত বৈষম্যের অপর একটি বিভেদমূলক দিক ছিলঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলি থেকে শ্রমিকদের রপ্তানি , উপনিবেশগুলি থেকে ক্রীতদাসদের অন্যত্র রপ্তানি করা হতো । এরপর তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো ।
- উপনিবেশবাদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করো ।
Ans: ‘ কলোনি ‘ শব্দ থেকে উপনিবেশ শব্দের উৎপত্তি । জনসমাজের সেই স্থানান্তরিত অংশ যারা নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য কোনো দেশে উপনিবেশ গড়ে তোলে ও শোষণ করে সেটাই হলো উপনিবেশবাদ । একটি রাষ্ট্র যখন নিজের স্বার্থে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিয়ে সেই দেশ বা জাতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সেটাই হলো সাম্রাজ্যবাদ ।
উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ : একটি দেশ যখন অন্য কোনো দেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা , বসতি গড়ে তোলা বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে তাকে বলে উপনিবেশবাদ । সাম্রাজ্যবাদেও প্রায় একই ঘটনা ঘটে । সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রেও শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল কোনো দেশের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে । সাম্রাজ্যেরই অংশ হলো উপনিবেশ । তাই সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ পরস্পর নিকট সম্পর্কে আবদ্ধ । উপনিবেশবাদেই ঘটে সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ । অর্থাৎ , সাম্রাজ্যবাদ ছাড়া উপনিবেশবাদের অস্তিত্ব নেই । এ বিষয়ে রবার্ট ইয়ং বলেছেন , সাম্রাজ্যবাদ হলো কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি রাষ্ট্রনীতি , অর্থনৈতিক কারণে আদর্শগতভাবে যার বিস্তার । অন্যদিকে , উপনিবেশবাদ হলো বসতি স্থাপন , এর উদ্দেশ্য বাণিজ্যপ্রণোদিত । ইয়ং আরো বলেছেন , সাম্রাজ্যবাদ হলো একটি নীতি বা ধারণা , উপনিবেশবাদ তার বাস্তবায়ন । সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরেই উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠা পায় এবং ধনতন্ত্র প্রসারিত হয় । পুঁজিবাদী অর্থনীতি সাম্রাজ্যের শক্তি বাড়ায় । উপনিবেশবাদের ভিত রচনা করে বলে সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক রয়েছে । লেনিন বলেন , উপনিবেশবাদ হলো সাম্রাজ্যবাদের মূল কারণ । কারণ সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদের | হাত ধরে ধনতান্ত্রিক একাধিপত্য অর্জন করতে চায় । উপনিবেশবাদ শব্দটি সাম্রাজ্যবাদের সমার্থক হলেও সাম্রাজ্যবাদ বলতে প্রথাগত বা অপ্রথাগত নিয়ন্ত্রণ বোঝায় । এককথায় , অন্য দেশে বসতি গড়ে তোলা , দেশের অংশ বিশেষ দখলের নাম উপনিবেশবাদ । দেশের রাজনীতি অর্থনীতির উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন হলো সাম্রাজ্যবাদ ।
- সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝায় ? সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ লেখো ।
Ans: সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা : যদিও সাম্রাজ্যবাদের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই তা সত্ত্বেও বলা যায় যে সাম্রাজ্যবাদ বলতে প্রকৃতপক্ষে সামরিক কর্তৃত্ব স্থাপনকে বোঝানো হয় । কিন্তু পরবর্তীতে সাম্রাজ্যবাদ বলতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র দ্বারা দুর্বল রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিনাশকে বোঝানো হয়ে থাকে ।
সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণ : সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের কারণটি এক বিতর্কিত বিষয় ৷ কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয়নি । সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের একাধিক কারণের মধ্যে বলা যায় –
অর্থনৈতিক কারণ : উনিশ শতকে সাম্রাজ্যবাদের উত্থানের পশ্চাতে অর্থনৈতিক কারণগুলি হলো—
- কাঁচামাল সংগ্রহ : ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লব ও শিল্প উন্নতির ফলে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলিতে বৃহৎ আয়তন কলকারখানা স্থাপন এবং দ্রুত উন্নতি বৃদ্ধির ফলে কাঁচামালের প্রয়োজন দেখা দেয় , এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে এই কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদী লড়াই ।
- বাজার দখল : অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করার জন্য ইউরোপের প্রত্যেক রাষ্ট্রই নিজ নিজ দেশের শিল্প বৃদ্ধিকল্পে সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করে । ফলে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে । সুতরাং এইসমস্ত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য বৃহত্তর বাজার প্রয়োজন হয় ।
- বেকারত্ব : কলকারখানা স্থাপিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুটিরশিল্প বিনষ্ট হয় এবং কৃষিকার্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা , খাদ্য সংকট ও বেকারত্বের চাপ বহিঃবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ।
রাজনৈতিক কারণ :
- জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা : জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকেও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য দায়ী করা যেতে পারে ।
- রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা : অনেক সময় বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র সাম্রাজ্য স্থাপনকে জাতীয় দস্ত বা জাতিগত গৌরব বলে মনে করত । আসলে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা জাহির করার জন্য দুর্বল রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণে লিপ্ত থাকত ।
সামাজিক কারণ :
- উদবৃত্ত জনসংখ্যার পুনর্বাসন : ঊনিশ শতক থেকে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ সামলানো ও বাড়তি জনগণের পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থানের জন্য অনেক সময় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নতুন নতুন ভূখণ্ড দখলে লিপ্ত হতে শুরু করেছিল যা সাম্রাজ্যবাদের উত্থানে সহায়ক ছিল ।
- জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা : অনেক সময় জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দোহাই দিয়ে বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্র দখলে ব্যস্ত থাকত যা সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটাতে সাহায্য করেছিল ।
অন্যান্য কারণ :
সাংস্কৃতিক কারণ : অনেক সময় পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অংশে সভ্যতা ও সংস্কৃতির 1 আলো পৌঁছে দেওয়ার বাণী শুনিয়ে সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপোষকরা সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ঘটায় ।
- নব সাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝো ? “ নব সাম্রাজ্যবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল ” – লেনিনের উত্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।
Ans: নব সাম্রাজ্যবাদ : ১৮৭০ সালের পর থেকে ইউরোপের বৃহৎ বা শিল্পোন্নত জাতিগুলি ইউরোপের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ায় উপনিবেশ দখলের জন্য মারাত্মক প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে । ফলে অনাবিষ্কৃত , কাঁচামালে পরিপূর্ণ এবং সম্ভাব্য বিশাল বাজারসমৃদ্ধ দেশগুলি ইউরোপীয় জাতিগুলির উপনিবেশে পরিণত হয় । এই সামগ্রিক প্রক্রিয়াই নব সাম্রাজ্যবাদ বলে পরিচিত ।
লেনিনের মতে নব সাম্রাজ্যবাদ : রুশ কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইরিচ লেনিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য এই নব সাম্রাজ্যবাদকে দায়ী করেছেন । তিনি তাঁর রচিত ‘ সাম্রাজ্যবাদ : পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর ’ গ্রন্থে বলেন , পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার পরিণতি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ । লেনিন ধনতন্ত্রকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে তা এইরূপ :
- মূলধনি উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন এবং লভ্যাংশ অর্জনের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না ।
- মুনাফা অর্জনের জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি চাহিদার অতিরিক্ত শিল্পদ্রব্য উৎপন্ন করে ।
- এর পরিণতিতে বাজার দখলের লোভে পুঁজিবাদীরা নিজ দেশের সরকারকে | উপনিবেশ দখলে চাপ দেয় ।
মূল্যায়ন : ডেভিড টমসন লেনিনের তত্ত্বকে দু’ভাবে সমালোচনা করেন । প্রথমে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন— 1. কেবল অর্থনৈতিক কারণে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয়নি । 2. এর মূল কারণ রাজনৈতিক । কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের সকলে যুদ্ধে যোগ দেয়নি । 3. ঔপনিবেশিক বিরোধিতার জন্যই ইউরোপ ত্রিশক্তি জোট বনাম ত্রিশর্ষি আঁতাত— এই দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায় ।
- ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলিতে জাতিগত ব্যবধানের প্রভাবগুলি লেখো ।
Ans: জাতিত্বের কোনো সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই । জাতিত্ব হলো বিশেষ ধরনের বিশ্বাস , প্রচলিত চর্চা , এক ধরনের ব্যবস্থাদি যা সময়ে সময়ে সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকে । জাতিগত প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটি দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে মানুষকে গুণ , কর্ম , সক্ষমতা , গায়ের রং , নৈতিকতা , সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ইত্যাদির তফাতের ভিত্তিতে আলাদা জাতিতে ভাগ করা হয় ।
জাতিত্ব প্রশ্নটি নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয় । শ্বেতাঙ্গদের কিছু পূর্ব ধারণা এবং অনুমান জাতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্য নির্দেশ করে । জাতিগত দিক দিয়ে বংশ , ধর্ম , জাতি , সম্প্রদায় , সামাজিক স্তরবিন্যাস ইত্যাদির ভিত্তিতে এক বিভেদের আচরণ ও বিশ্বাসের পরম্পরা তৈরি হয় ।
ইতিহাসের সময় বিচারে , দাস শাসনের আমলে জাতিত্ব বিষয়টি ভূমিকা নিয়েছিল । উনিশ – বিশের দশকে আমেরিকায় জাতিভেদ ইস্যু জ্বলন্ত আকার নেয় । দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে কৃয়াঙ্গদের লড়াই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে । জার্মানিতে জাতিগত কারণে নিকৃষ্ট হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল । আফ্রিকা , এশিয়া বা অস্ট্রেলিয়াতে ইউরোপীয়রা উপনিবেশ স্থাপনের কালে জাতিভেদ প্রশ্নটি মাথাচাড়া দেয় । ঔপনিবেশিক দেশের মানুষ মানেই নিকৃষ্টতর এবং উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রের জাতি শ্রেষ্ঠতর — এই জাতিগত ধারণা উপনিবেশবাদ এবং বিদেশি শাসকদের অবনতির প্রধান কারণ ।
ইউরোপীয় দেশগুলি উপনিবেশ বিস্তারের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ জাতিকে শ্রেষ্ঠতর বলে প্রচার করত । কোনো রেস্তরাঁতে খাওয়া , রেলে উচ্চতর শ্রেণিতে ভ্রমণ , সিনেমা হলে প্রবেশ , স্কুলে ভর্তি – সর্বক্ষেত্রেই কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ছিল না । চামড়ার রং – এর ভিত্তিতেও উপনিবেশের মানুষের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গরা বিভেদমূলক আচরণ করত । সরকারি চাকরিতে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়কে নিয়োগ করা হতো । কালো , বাদামি রঙের দেশীয় অধিবাসীদের তারা নীচু চোখে দেখত । শাসন – বিচার – সংস্কৃতি সব স্থানে বিভেদমূলক আচরণ চোখে পড়ত । জাতিগত বিভেদের ইস্যুতে উপনিবেশবাদীদের অবজ্ঞার মনোভাব উপনিবেশগুলিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উৎসাহ দেয় ।
- মার্কেন্টাইল অর্থনীতি বলতে কী বোঝো ? শিল্পপুজির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।
অথবা , মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝো ?
এই মতবাদের প্রধান বক্তব্যগুলি কী ?
Ans: সূচনা : ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের দুর্বল রাষ্ট্রগুলির দখলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাসী সাম্রাজ্যবাদ শব্দটির সাথে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র পরিবর্তিত হয় , যা ন সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত । এই সাম্রাজ্যবাদের সময়েই মার্কেন্টাইল মূলধনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ।
মার্কেন্টাইল মূলধন : ষোড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধ f পর্যন্ত বহির্দেশের ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির বাণিজ্য পদ্ধতির একটি বিশেষ দিক হলো মার্কেন্টাইলবাদ ৷
- সম্পদ অর্জন : রাষ্ট্রের ভৌগোলিক – রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধির উপায় হলো সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বৃদ্ধি । তাই উপনিবেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন এবং অর্থসম্পদ আহরণ ও শোষণ হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রনীতির মূল অঙ্গ । এই কারণেই উপনিবেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক একাধিপত্য স্থাপন ও উপনিবেশের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন জরুরি হয়ে উঠেছিল ।
- নেভিগেশন অ্যাক্ট : ইংল্যান্ডের নেভিগেশন অ্যাক্টে বলা হয়েছিল , ইংল্যান্ডের বণিক সম্প্রদায়কে ওলন্দাজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আমদানির পরিবর্তে নিজ নিজ জাহাজ ব্যবহার করতে হবে । এরই সূত্র ধরে ১৬৯০ – এর দশকে ইংল্যান্ডের আমদানি বাণিজ্যে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় ।
- কোম্পানি গঠন : সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতকে একচেটিয়া অধিকারযুক্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয় । বহির্দেশে সরকারের প্রতিনিধি রূপেই কোম্পানিগুলি ব্যাবসাবাণিজ্যের অধিকারী হয় । এই নীতি অনুসারে ইউরোপের স্পেন , পোর্তুগাল , ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে যে ধরনের মূলধন সৃষ্টি হয় তা মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত ।
প্রধান বক্তব্য :
- ফিজিওক্র্যাটস : মার্কেন্টাইল মূলধনকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে উত্থান হয় কিছু অর্থনীতিবিদের যারা ফিজিওক্র্যাটস নামে পরিচিত । তাঁদের মতে , বাণিজ্য হয় সম্পদের উৎস এবং ভৌগোলিক ও সামরিক ক্ষমতার ভিত্তি । তাই রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের পরিবর্তে তাঁরা মুক্ত বাণিজ্যের তত্ত্বে বিশ্বাসী ।
- মুক্ত বাণিজ্য : মার্কেন্টাইল মতবাদের মূল বিষয় হলো মুক্ত বাণিজ্য অর্থাৎ ইংল্যান্ড যেমন নেভিগেশন অ্যাক্টের দ্বারা ব্রিটিশ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বন্দরগুলিকে সকলের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল , এখানে সেই বিষয়কেই তুলে ধরা হয়েছে ।
- নতুন বাণিজ্যনীতি : মার্কেন্টাইলবাদী মনোভাবকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে এক নতুন বাণিজ্যরীতি যেখানে বিভিন্ন দেশের বণিক সংগঠনগুলি নিজেদের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিকে উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছিল এবং যা বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে । বিশেষ করে ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , স্পেন , পোর্তুগাল সহ বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্য রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের দ্বারা যে মূলধন সঞ্চয় করেছিল তা – ই মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত ।
মন্তব্য : এভাবেই অষ্টাদশ শতকের
শেষার্ধ থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত উপনিবেশ দখল ও সম্প্রসারণের
পরিবর্তে সামরিক ও কূটনৈতিক পথে বাণিজ্যিক আধিপত্য স্থাপনের নীতি গৃহীত হয়
এবং মুক্ত বাণিজ্যভিত্তিক সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয় ।