সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো |
- কে বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান ?
(A) ক্লাইভ
(B) ভেরেলেস্ট
(C) ওয়ারেন হেস্টিংস
(D) কর্নওয়ালিশ ।
Ans: (C) ওয়ারেন হেস্টিংস
- পাঁচসালা বন্দোবস্ত চালু করেন—
(A) ক্লাইভ
(B) ভেরেলেস্ট
(C) ওয়ারেন হেস্টিংস
(D) কর্নওয়ালিশ ।
Ans: (C) ওয়ারেন হেস্টিংস
- মিরকাশিম বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন—
(A) মুঙ্গেরে
(B) দৌলতাবাদে
(C) দেবগিরিতে
(D) পলাশিতে ।
Ans: (A) মুঙ্গেরে
- অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল—
(A) ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (C) ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে
- পোর্তুগিজ নাবিকরা প্রথম চিনের কোন বন্দরে তাদের বাণিজ্যঘাটি নির্মাণের অনুমতি পায় ?
(A) ম্যাকাও
(B) ক্যান্টন
(C) পোর্ট আর্থার
(D) হংকং ।
Ans: (A) ম্যাকাও
- দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধ শুরু হয়—
(A) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (A) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে
- শিমনোসকির সন্ধি কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
(A) রুশ – চিন
(B) রুশ – জাপান
(C) জার্মান – রুশ
(D) চিন – জাপান ।
Ans: (D) চিন – জাপান ।
- ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসান ঘটে-
(A) ১৭৫৭ .
(B) ১৭৫৯ খ্র .
(C) ১৮৪১ খ্রি .
(D) ১৮৪২ খ্রি .
Ans: (D) ১৮৪২ খ্রি .
- ভারতে সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন—
(A) লর্ড কর্নওয়ালিশ
(B) ডালহৌসি
(C) হেস্টিংস
(D) লর্ড ক্লাইভ ।
Ans: (A) লর্ড কর্নওয়ালিশ
- চিন ও ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয়—
(A) ম্যাকাও
(B) সাংহাই
(C) ক্যান্টন
(D) নানকিং বন্দরের মধ্য দিয়ে ।
Ans: (C) ক্যান্টন
- পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল—
(A) ১৭৫৭
(B) ১৭৬৫
(C) ১৭৭২
(D) ১৭৭৫ খ্রিঃ ।
Ans: (A) ১৭৫৭
- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে –
(A) ১৭৬০
(B) ১৭৬৩
(C) ১৭৬৫
(D) ১৭৭০
Ans: (C) ১৭৬৫
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট কবে পাশ হয় ?
(A) ১৭৮৪ সালে
(B) ১৭৮২ সালে
(C) ১৭৮০ সালে
(D) ১৭৭৮ সালে ।
Ans: (D) ১৭৭৮ সালে ।
- পাঁচসালা বন্দোবস্ত কবে চালু হয় ?
(A) ১৭৭২
(B) ১৭৭৩
(C) ১৭৭৭
(D) ১৭৮০ খ্রি .।
Ans: (A) ১৭৭২
- ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়—
(A) মহারাষ্ট্রে
(B) পাঞ্জাবে
(C) মাদ্রাজে
(D) বাংলায় ।
Ans: (A) মহারাষ্ট্রে
- কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন–
(A) ক্লেভারিং
(B) হেস্টিংস
(C) ফ্রান্সিস
(D) এলিজা ইম্পে
Ans: (D) এলিজা ইম্পে ।
- বাংলায় স্বাধীন নবাবির সূচনা করেন—
(A) মুর্শিদকুলি খাঁ
(B) আলিবর্দি খাঁ
(C) সিরাজউদদৌলা
(D) মিরকাশিম ।
Ans: (A) মুর্শিদকুলি খাঁ
- ব্রিটিশ ভারতে কোন বিষয়কে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ইস্পাত কাঠামো বলা হতো ?
(A) পুলিশি ব্যবস্থাকে
(B) আমলাতন্ত্রকে
(C) সেনাবাহিনীকে
(D) বিচার ব্যবস্থাকে ।
Ans: (B) আমলাতন্ত্রকে
- চিনে আফিম যুদ্ধ হয়েছিল—
(A) ১ টি
(B) ৪ টি
(C) ৩ টি
(D) ২ টি
Ans: (D) ২ টি
- তাইপিং কথাটির অর্থ হলো –
(A) মহাশান্তি
(B) চরম শান্তি
(C) অতি শান্তি
(D) অশান্তি ।
Ans: (A) মহাশান্তি
- চিনে বক্সার বিদ্রোহ ঘটেছিল—
(A) ১৭০০
(B) ১৮০০
(C) ১৯০০
(D) ২০০০
Ans: (C) ১৯০০
- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন—
(A) ওয়ারেন হেস্টিংস
(B) উইলিয়াম পিট
(C) উইলিয়াম বেন্টিং
(D) লর্ড ডালহৌসি ।
Ans: (B) উইলিয়াম পিট
- ভাস্কো – দা – গামা কোন দেশের নাবিক ছিলেন ?
(A) পোর্তুগালের
(B) স্পেনের
(C) জাপানের
(D) ফ্রান্সের ।
Ans: (A) পোর্তুগালের
- স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়—
(A) ১৭২১
(B) ১৭২৪
(C) ১৭২৬ খ্রি :
(D) ১৭২৮ খ্রিঃ ।
Ans: (B) ১৭২৪
- সর্বশেষ সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট কবে পাশ হয় ?
(A) ১৭৯৩ খ্রি .
(B) ১৮১৫
(C) ১৮৩৩
(D) ১৮৫৩
Ans: (D) ১৮৫৩
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট ( ১৭৮৪ খ্রি . ) কার উদ্যোগে পাশ হয় ?
(A) রিপনের
(B) ক্লাইভের
(C) পিটের
(D) কর্নওয়ালিশের ।
Ans: (C) পিটের
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- বিদরার যুদ্ধ কবে , কাদের মধ্যে হয় ?
Ans: ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজদের সাথে ইংরেজদের । ওলন্দাজরা পরাজিত হয় ।
- কবে , কাদের মধ্যে বন্দিবাসের যুদ্ধ হয় ?
Ans: ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ইংরেজ ও ফরাসি কর্তৃপক্ষের মধ্যে হয় ।
- দ্বৈত শাসন বলতে কী বোঝো ?
Ans: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর আইনগত দিক বাংলার নবাবের হাতে থাকলেও শাসনক্ষমতা চলে যায় কোম্পানির হাতে । তা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত ।
- কবে , কার দ্বারা দ্বৈত শাসনের অবসান হয় ?
Ans: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর দ্বারা ।
- সলবাইয়ের সন্ধি কবে , কাদের মধ্যে হয় ?
Ans: ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সাথে মারাঠা পেশোয়াদের ।
- স্যার টমাস রো কবে ভারতে আসেন ?
Ans: ব্রিটিশরাজ প্রথম জেমসের দূত টমাস রো ১৬১৫ খ্রিঃ জাহাঙ্গিরের রাজদরবারে আসেন । মোগল সম্রাটের থেকে বাণিজ্যিক সুযোগ লাভই ছিল তার উদ্দেশ্য ।
- অব – শিল্পায়ন বলতে কী বোঝো ?
Ans: ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন ভারতের বাজারে প্রভূত পরিমাণে ব্রিটিশ শিল্পপণ্য চলে আসায় প্রতিযোগিতার জেরে বাংলার কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় । এটাই অব – শিল্পায়ন ।
- এদেশে কোথায় প্রথম পাটকল স্থাপিত হয় ?
Ans: ১৮৫৫ খ্রিঃ ব্রিটিশ কর্মচারী জর্জ অকল্যান্ড রিষড়ায় দেশের প্রথম পাটকল গড়ে তোলেন ।
- কবে স্বাক্ষরিত হয় পুরন্দরের সন্ধি ?
Ans: ১৭৭৬ সালে মারাঠা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ও হেস্টিংসের মধ্যে হয়েছিল পুরন্দরের সন্ধি ।
- কবে হয় বেসিনের সন্ধি ? এর দু’টি শর্ত লেখো ।
Ans: দ্বিতীয় বাজিরাও ও ইংরেজদের মধ্যে ১৮০২ সালে হয় বেসিনের সন্ধি । দু’টি শর্ত : 1. পেশোয়া অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নেন । 2. পুণায় ইংরেজ সেনাবাহিনী নিয়োজিত হয় ।
- এজেন্সি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো ?
Ans: ১৭৫৩– ৭৫ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধীনস্থ কর্মচারীদের এজেন্ট বানিয়ে | তাদের থেকেই পণ্যসামগ্রী কিনত । এটাই এজেন্সি ব্যবস্থা ।
- ব্রিটিশ ভারতে ‘ সম্পদের বহির্গমন ‘ কাকে বলা হতো ?
Ans: ব্রিটিশ শাসকরা প্রচুর ভারতীয় সম্পদ শোষণ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান । এটাই ‘ সম্পদের বহির্গমন ’ বলে চিহ্নিত ।
- গ্যারান্টি ব্যবস্থা কী ?
Ans: এদেশে রেলপথ নির্মাণে ইংরেজ কোম্পানিকে প্রলুব্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাদের নিখরচায় জমি , বাৎসরিক বিনিয়োগে নির্দিষ্ট সুদ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আশ্বাস দেয় । এটাই গ্যারান্টি ব্যবস্থা ।
- কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ? Ans: ১৭৯৩ – এর ২২ মার্চ বাংলা , বিহার , ওড়িশায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিশ ।
- ইংরেজরা কার কাছ থেকে , কবে দেওয়ানি লাভ করে ?
Ans: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে ।
- দস্তক বলতে কী বোঝো ?
Ans: মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানিকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ভারতে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার যে অধিকার দেন তা দস্তক নামে পরিচিত ।
- কাও – তাও প্রথা কী ?
Ans: কোন বিদেশি চিন সম্রাটের দর্শন পেলে তাকে সম্রাটের সামনে ভূমি পর্যন্ত নত | হয়ে যাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম জানাতে হতো এই প্রথাই কাও – তাও প্রথা নামে পরিচিত ।
- কে , কবে , কী উদ্দেশ্যে আমিনি কমিশন গঠন করেন ?
Ans: ওয়ারেন হেস্টিংস – এর উদ্যোগে রাজস্ব সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেনো হয় ?
Ans: সূচনা : এশিয়া মহাদেশে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বৃহত্তম একটি রাষ্ট্র চিন যেখানে বাণিজ্যের অন্যতম দিক ছিল ক্যান্টন বাণিজ্য । চিনে বিদেশি বণিকের জন্য উন্মুক্ত একমাত্র বন্দর ক্যান্টনকে কেন্দ্র করে এক পৃথক বাণিজ্যপ্রথা গড়ে উঠেছিল যা ক্যান্টন বাণিজ্য নামে পরিচিত ।
বৈশিষ্ট্য : ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল এইরকম—
- রুদ্ধদ্বার নীতি : রুদ্ধদ্বার নীতি অনুযায়ী বিদেশি বণিকরা চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিখতে পারত না । চিনের ফৌজদারি আইন ও বাণিজ্যিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য ছিল বিদেশি বণিকরা । এছাড়া কুঠিতে যে কোনো মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল ।
- মূল শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ : শহরের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বণিকরা বসবাস করত । তারা শহরে প্রবেশ করতে পারত না । ক্যান্টন বন্দরে বিদেশি বণিকরা স্ত্রী ও সন্তানদের রাখতে পারত না ।
- কো – হং প্রথা : বিদেশি বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে স্বাধীনভাবে বা সরাসরি বাণিজ্যে অংশ নিতে পারত না । চিনা সরকার ‘ কো – হং ‘ নামক বণিক সংঘকে ক্যান্টন বন্দরে একচেটিয়া বাণিজ্য করতে দিত । বিদেশি বণিকদেরও কো – হং বণিকদের থেকেই পণ্য কিনতে হতো ।
- কো – হংদের দুর্নীতি : কো – হং বণিকদের দুর্নীতির অন্ত ছিল না । তারা চিনা রাজ দরবার , আদালত এবং শুষ্ক অধিকর্তাকে উৎকোচ দিত । বাণিজ্যের বেশিরভাগ মুনাফা তারাই আত্মসাৎ করত । বিদেশিদের বাণিজ্যের শর্তও কো – হং বণিকরা নির্ধারণ করত ।
- ব্যক্তিগত বাণিজ্য : চিনের ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ সহ ইউরোপীয়রা নানা ধরনের ব্যক্তিগত বাণিজ্যে জড়িত ছিল । এর জন্য চিন সরকারের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে হতো না ।
- ইংরেজ বণিকদের প্রাধান্য : ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ বণিকদের প্রাধান্য ছিল । এর মধ্যে চা – এর বাণিজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য । চিনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এই বাণিজ্যকে বলা হতো ‘ দেশীয় বাণিজ্য ‘ ।
ক্যান্টন বাণিজ্য অবসানের কারণ : কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে নয় একাধিক কারণের সমন্বয়ে ক্যান্টন বাণিজ্য ধীরে ধীরে অবসানের দিকে এগিয়ে যায় । একারণ ছিল এইরূপ —
- বাণিজ্যিক কার্যকলাপ : ক্যান্টনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বিদেশি শক্তিসমূহ সচেষ্ট হয়েছিল । কিন্তু চিন বিদেশিদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন তো দূরের কথা উপরন্তু সবরকম বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা f জানিয়ে দেয় ।
- আফিম যুদ্ধ : উনিশ শতকের প্রথম দিকে চোরাপথে ব্রিটিশ বণিকরা চিনে আফিম পাঠাতে থাকে । আফিম ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিন ও ব্রিটেনের মধ্যে হয় প্রথম আফি যুদ্ধ । এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ।
- অন্যান্য বন্দরের উত্থান : ১৯৪২ – এর নানকিং চুক্তির মাধ্যমে সাংহাই , নানকিং বন্দরে বিদেশিদের প্রবেশ উন্মুক্ত হয় । ফলে বিদেশি বাণিজ্যে ক্যান্টন একাধিপত্য হারায় । ১৮৫৯ সালে ক্যান্টন বাণিজ্য শপিং দ্বীপে স্থানান্তরিত হয় । ১৮৬৬ – এর মধ্যে সব বিদেশি শক্তি ক্যান্টন থেকে ব্যাবসা সরিয়ে নেয় । ক্রমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে ।
- ভারতে রেলপথ বিস্তারের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো ।
অথবা , ভারতে কে , কবে রেলপথ স্থাপন করেন ? রেলপথ স্থাপনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য কী ছিল ?
Ans: রেলপথের স্থাপনা : ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব ওঠে , যার শেষ পরিণতি অর্থাৎ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয় ।
- রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য : নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে কোম্পানি ভারতে রেলপথ স্থাপন করে । উদ্দেশ্যগুলি হলো—
ডালহৌসির উদ্দেশ্য : ডালহৌসির মতে , ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো , যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্প্রসারণে রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।
পুঁজি বিনিয়োগ : শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শিল্পপতিরা বিপুল পরিমাণ পুঁজির মালিক হয়ে ওঠে । তারা ভারতে রেলপথ নির্মাণে মূলধন বিনিয়োগ করতে থাকে । কারণ এই বিনিয়োগ তাদের কাছে ছিল প্রচুর মুনাফা লাভের মাধ্যম ।
কাঁচামাল রপ্তানি : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের দরুন প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দ্রুত সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজন ছিল রেলপথের ন্যায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা । ড . সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেছেন— “ এই সব লাভের লোভই ছিল আসল কথা , এদেশের অর্থনীতির আধুনিকীকরণ মোটেই নয় । ”
বিলেতি পণ্যের সরবরাহ : ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদিত বিপুল পণ্যসামগ্রীর বিক্রির জন্য প্রয়োজন ছিল ভারতের মতো বৃহত্তর বাজার । ভারতের অভ্যন্তরে দূর দুরান্তে এই পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেবার জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত রেল যোগাযোগের ।
রাজনৈতিক প্রয়োজন : বিশাল ভারতীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক তদারকির জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার । আর রেলপথ সেসব অভাব পূরণে সক্ষম ছিল ।
সামরিক উদ্দেশ্য : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিলে দ্রুত সৈন্যবাহিনী পাঠানোর জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত রেল যোগাযোগ ।
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য : শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উৎপাদিত দ্রব্য দ্রুত ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার জন্য অন্যতম মাধ্যম ছিল রেলপথ ।
ভারতে রেলপথ স্থাপনের ফলাফল / প্রভাব : ভারতীয় উপনিবেশিক অর্থনীতিতে রেলপথ নির্মাণে গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল এইরকম –
প্রশাসনিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা : ভারতে রেলপথ বিস্তারের ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় । ফলে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রশাসনিক ঐক্য গড়ে ওঠে ও এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভীত আরও শক্ত হয় ।
পরিবহণ বৃদ্ধি : রেল ব্যবস্থা প্রসারের ফলে ভারতে মানুষ ও পণ্য উভয় পরিবহণের কাজে যোগযোগের মাধ্যম বৃদ্ধি পায় ।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধি : রেলপথের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং এক অঞ্চলের পণ্য অন্য অঞ্চলে সহজেই সরবরাহ করা সম্ভব হয় ।
ভাষা , ধর্ম ও গোষ্ঠীগত বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে রেলপথের প্রসারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও মতামতের আদানপ্রদান দ্বারা জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি পায় ।
- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
Ans: সূচনা : কৃষিপ্রধান দেশ ভারতবর্ষের অর্থনীতি সুপ্রাচীন কাল থেকেই কৃষিনির্ভর । রাষ্ট্রীয় আয়ের সিংহভাগ আদায় হয় ভূমিরাজস্ব থেকে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে কৃষককুলের স্বার্থ এদেশে চিরকালই অবহেলিত । কোম্পানির আমলে কৃষক সম্প্রদায় আরও শোষিত হয় ভূমিরাজস্বের মাধ্যমে ।
হেস্টিংস – এর পদক্ষেপ : লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর শাসনকালকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার পরীক্ষা – নিরীক্ষার যুগ বলা হয়ে থাকে । ১৭৭২ খ্রি : তিনি জমি ইজারাদারদের নিলামে দেবার জন্য ‘ ভ্রাম্যমাণ ‘ কমিটি গঠন করেন । :
- পাঁচসালা বন্দোবস্ত : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কোম্পানির আমলে প্রথম তাই এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তকে বলা হয় পাঁচসালা বন্দোবস্ত বা ইজারাদারি বন্দোবস্ত ।
পাঁচসালা বন্দোবস্ত । এই বন্দোবস্ত অনুসারে জমি পাঁচ বছরের জন্য বন্দোবস্ত করা হতো ।
- একসালা বন্দোবস্ত : পাঁচসালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিলে তার অবসানে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত – এর প্রবর্তন করেন । হেস্টিংস আমিনি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৭৭ খ্রি .
- দশসালা বন্দোবস্ত : লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর পরবর্তীতে লর্ড কর্নওয়াি গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর কৃষির উন্নতি , প্রজাপীড়ন বন্ধ করার জন্য এবং কোম্পানির বাৎসরিক আয়ের নিশ্চয়তা দান করতে ১৭৮৯ খ্রি : বাংলায় , ১৭৯০ খ্রি : উড়িষ্যায় দশ বছরের জন্য যে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত করেন তা দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত ।
- চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ – এর পর পাকাপাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ১৭৯০ খ্রি :। এইসময় লর্ড কর্নওয়ালিশ জমিদারদের সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে এক ভূমিবন্দোবস্ত করেন । এই ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা অনুসারে স্থির হয় জমিদারগণ নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে ভূমিরাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য থাকবে । তা না করতে পারলে তাদের জমিদারি স্বত্ব বাজেয়াপ্ত হবে । এছাড়া স্থির হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় – এর সময়েও রাজস্ব মকুব হবে না , জমিদাররা ইচ্ছামতো জমিদান বা বিক্রয় ও বন্ধক রাখতে পারবে ।
- রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত : ১৮২০ খ্রি : ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার রিড ও টমাস মনরোর উদ্যোগে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পশ্চিম অঞ্চলে যে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তু প্রবর্তন করা হয় তা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত । এই বন্দোবস্ত ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতো । এই বন্দোবস্ত অনুসারে কোম্পানি সরাসরি জমিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ।
- মহলওয়ারি বন্দোবস্ত : ১৮২২ খ্রি : এলফিনস্টোন ভারতবর্ষের উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত ও গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে কিছু কিছু গ্রাম নিয়ে একটি মহল বা তালুক সৃষ্টি করে ইজারা দেওয়ার যে রীতির প্রচলন ঘটান তা মহলওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত ।
- পলাশি ও বক্সার যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করো ।
Ans: পলাশি যুদ্ধের ফলাফল : ঐতিহাসিক ম্যালেসন বলেছেন , “ পলাশির যুদ্ধের মতো আর কোনো যুদ্ধের ফলাফল এত ব্যাপক ও স্থায়ী হয়নি । ” এই যুদ্ধের ফলে –
- কোম্পানির সার্বভৌমত্ব : পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । ভারতে কোম্পানির সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে ।
- রাজনীতিতে প্রাধান্য : এই যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার রাজনৈতিক পুতুলে পরিণত হন । ক্ষেত্রে প্রকৃত নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয় কোম্পানি ।
- প্রশাসনিক শূন্যতা : পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাবের পরাজয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয় । বাংলায় দেখা দেয় প্রশাসনিক শূন্যতা । কোম্পানি ইচ্ছামতো ব্যক্তিকে নবাব পদে বসায় ।
- একচেটিয়া বাণিজ্য : পলাশির যুদ্ধে জিতে কোম্পানি দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক অধিকার প্রয়োগ করে বাংলার বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য স্থাপন করে । ধ্বংস হয় দেশীয় ব্যাবসাবাণিজ্য ।
- বাংলার পরাধীনতা : পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজ – উদ – দৌলার পতনের ফলে বাংলা পরাধীন হয়ে পড়ে । ইংরেজরা মিরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজেরা সিংহাসনের পশ্চাৎ শক্তিতে পরিণত হয় ।
বক্সার যুদ্ধের ফলাফল : বক্সার যুদ্ধ ( ১৭৬৪ ) প্রসঙ্গে জেমস স্টিফেন বলেছেন , “ ভারতে ব্রিটিশ শক্তির উৎস হিসেবে বক্সারকে গণ্য করা হয় । ” এর ফলে—
- ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ : বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারত ইতিহাসের ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ । যে কারণে ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র বলেছেন , “ এটি ছিল ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক নিষ্পত্তিমূলক নির্ণায়ক । ”
- বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় ব্রিটিশ শক্তির পথ থেকে সব বাধা দূর হলো । বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ হলো সহজ ।
- উত্তর ভারতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর কোম্পানি উত্তর ভারতে নজর দেয় । অযোধ্যার নবাব কোম্পানির অনুগত হন । উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় ।
- আর্থিক লুণ্ঠন : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে কোম্পানির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় । এই সুযোগে শুরু হয় আর্থিক লুণ্ঠন । মিরকাশিমের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা উপঢৌকন আদায় করা হয় ।
- দেওয়ানি লাভ : বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলা , বিহার , উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে কোম্পানি । এতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব লাভের পাশাপাশি কোম্পানির আর্থিক লাভ হয়েছিল ।
মূল্যায়ন : ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে , পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে মধ্যযুগের অবসান হয় এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয় । অবশ্য বক্সার যুদ্ধে জয়লাভের পরই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয় । এ প্রসঙ্গে র্যামসে মুর বলেছেন , “ বঙ্গার বাংলার উপর কোম্পানির শাসন – শৃঙ্খলা চূড়ান্তভাবে স্থাপন করেছিল ।
- ভারতে রেলপথ স্থাপনের ঘটনা এদেশের অর্থনীতিতে কী ফেলেছিল ?
Ans: সূচনা : আধুনিক রেলপথ স্থাপন ভারতবর্ষে কেবলমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থারই যে উন্নতিসাধন করেছিল তা নয় , তৎকালীন ভারতীয় অর্থনীতিতেও এর সুদুরপ্রসারী ফলাফল লক্ষ করা যায় । ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রের মতে— “ The construction of railway had a revolutionary impact on the life , culture and economy of the Indian people . ”
ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের সুফল :
- বিদেশের বাজারে ভারতের পণ্যে সাফল্য : রেলপথের জন্য পরিবহণ খরচ | কমে যাওয়ায় ভারতের পণ্যগুলি বিদেশের বাজারে সাফল্যের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় । রপ্তানির সাথে আমদানির পরিমাণও বেড়ে যায় ।
- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি : রেলপথ স্থাপনের ফলে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যায় । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে ।
- ব্রিটেন – ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিন্যাস : ১৮৮০ খ্রি : মধ্যে ব্রিটেন ভারতের সবচেয়ে বড়ো ক্রেতা ও বিক্রেতার স্থান দখল করে যা ব্রিটেন ও ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিন্যাস ঘটায় ।
- নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির ব্যাপকতা : রেলপথ প্রসারের ফলে বন্দর নগরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় । নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । এভাবেই গড়ে ওঠে নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি।
- কর্মসংস্থানের সুযোগ : ভারতীয় রেলপথের দ্রুত প্রসার কর্মবিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল । ১৮৬৫ খ্রি : রেলে নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৪০০০ কিন্তু ১৯৮৫ খ্রি : এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৩০০০ – এ ।
ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথের কুফল :
- গ্যারান্টি প্রথার কুফল : গ্যারান্টি প্রথা অনুসারে রেল কোম্পানিগুলিকে প্রভুর ভরতুকি এবং পুঁজির লগ্নির ওপর পাঁচ শতাংশ হারে সুদও দেওয়া হচ্ছিল ।
- ধন নিষ্কাশন বৃদ্ধি : ব্যয়বহুল রেলপথ নির্মাণের জন্য ভারতীয় অর্থনীতির ওপর যথেষ্ট চাপ পড়ে । এককথায় বলতে গেলে গ্যারান্টি প্রথার দ্বারা ভারতীয় অর্থনীতির এক বিরাট অংশ বিদেশে চলে যায় ।
- জলপথ ও সড়কপথ অবহেলিত : রেলপথ চালু হওয়ায় তা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে পড়ে । ফলে জলপথ ও সড়কপথ অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে ।
মন্তব্য : রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে গতিশীলতার সঞ্চার হয় । এবং ভারত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয় । তবে এর ক্ষতিকারক দিকগুলিকে অস্বীকার করা যায় না ।
- কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন ? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল লেখো ।
Ans: সূচনা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রি : দেওয়ানি লাভের পর ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন । এই পরীক্ষানিরীক্ষার চূড়ান্ত ফলশ্রুতি ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । ১৭৯৩ খ্রি : মার্চ মাসে লর্ড কর্নওয়ালিশ এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন । এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী যা সমকালীন আর্থ – সামাজিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল ।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে কোম্পানি , জমিদার ও কৃষক এই তিনটি শ্রেণিরই কিছু লাভ ও ক্ষতি হয়েছিল । যেমন—
সুফল : মার্শম্যানের মতে , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু ছিল একটি দৃঢ় সাহসিকতাপূর্ণ ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ । এর সুফলগুলি ছিল—
- বাজেট প্রস্তুতে সহায়ক : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বার্ষিক আয় সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কোম্পানির বাজেট প্রস্তুতে তা সহায়ক হয়েছিল ।
- উৎখাতের সম্ভাবনা হ্রাস : কৃষকদের রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকদের সুবিধা হয়েছিল । কারণ তারা ইজারাদারদের শোষণ ও জমি থেকে ঘন ঘন উৎখাতের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায় । তবে সকল কৃষকেরই যে এমন হয়েছিল একথা বলা যায় না ।
- জমি ও প্রজাবর্গের উন্নতিসাধন : জমিদারদের চিরস্থায়ীভাবে জমির মালিকানার অধিকারদানের ফলে জমি এবং প্রজাসাধারণের উন্নতিসাধনের প্রেরণা পেয়েছিল ।
- আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশে কৃষিযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ফসলের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায় ।
- ব্রিটিশদের অনুগত গোষ্ঠী : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা জমিদাররা সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষার চেষ্টা করে । ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয় ।
কুফল : ১৭৯৩ খ্রি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি ছিল অধিক প্রকট । যেমন — ঐতিহাসিক হোস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তুকে ‘ একটি দুঃখজনক ভুল ’ বলে অভিহিত করেছেন । এডওয়ার্ড থর্নটন বলেন— “ চরম অজ্ঞতা থেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সৃষ্টি । ” এই ভূমিবন্দোবস্তের কুফলগুলি ছিল এইরকম—
- কৃষকদের দুর্দশা বৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগে জমির মালিক ছিল প্রজারা কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা এই মালিকানা থেকে তারা বঞ্চিত হয় এবং কৃষকরা ব্যক্তিগতভাবে জমিদারদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । ফলে কৃষকদের জীবন হয়ে ওঠে চরম দুর্দশাগ্রস্ত ।
- চড়া হারে খাজনা আদায় : চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্তে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করার পূর্বে জমি প্রকৃতপক্ষে জরিপ করা হয়নি । ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেইসময়ের পক্ষে খাজনা অধিক হারে স্থির হয়েছিল ।
- মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব : অনেক জমিদার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জমি ইজারা দেয় । ফলে ইজারাদার , দর ইজারাদার , পাওনাদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব হয় ।