উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর

 সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো |

  1. কে বাংলায় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান ? 

(A) ক্লাইভ 

(B) ভেরেলেস্ট 

(C) ওয়ারেন হেস্টিংস 

(D) কর্নওয়ালিশ । 

Ans: (C) ওয়ারেন হেস্টিংস 

 

  1. পাঁচসালা বন্দোবস্ত চালু করেন— 

(A) ক্লাইভ 

(B) ভেরেলেস্ট

(C) ওয়ারেন হেস্টিংস

(D) কর্নওয়ালিশ ।

Ans: (C) ওয়ারেন হেস্টিংস

 

  1. মিরকাশিম বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন— 

(A) মুঙ্গেরে

(B) দৌলতাবাদে 

(C) দেবগিরিতে 

(D) পলাশিতে ।

Ans: (A) মুঙ্গেরে

 

  1. অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল— 

(A) ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে 

(B) ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে 

(D) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে । 

Ans: (C) ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে

 

  1. পোর্তুগিজ নাবিকরা প্রথম চিনের কোন বন্দরে তাদের বাণিজ্যঘাটি নির্মাণের অনুমতি পায় ? 

(A) ম্যাকাও 

(B) ক্যান্টন 

(C) পোর্ট আর্থার

(D) হংকং । 

Ans: (A) ম্যাকাও

 

  1. দ্বিতীয় আফিমের যুদ্ধ শুরু হয়— 

(A) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে 

(B) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে 

(D) ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে । 

Ans: (A) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে

 

  1. শিমনোসকির সন্ধি কাদের মধ্যে হয়েছিল ? 

(A) রুশ – চিন 

(B) রুশ – জাপান 

(C) জার্মান – রুশ 

(D) চিন – জাপান । 

Ans: (D) চিন – জাপান ।

 

  1. ক্যান্টন বাণিজ্যের অবসান ঘটে- 

(A) ১৭৫৭ . 

(B) ১৭৫৯ খ্র . 

(C) ১৮৪১ খ্রি . 

(D) ১৮৪২ খ্রি . 

Ans: (D) ১৮৪২ খ্রি .

 

  1. ভারতে সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন— 

(A) লর্ড কর্নওয়ালিশ 

(B) ডালহৌসি 

(C) হেস্টিংস 

(D) লর্ড ক্লাইভ ।

Ans: (A) লর্ড কর্নওয়ালিশ

 

  1. চিন ও ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূত্রপাত হয়— 

(A) ম্যাকাও

(B) সাংহাই 

(C) ক্যান্টন

(D) নানকিং বন্দরের মধ্য দিয়ে । 

Ans: (C) ক্যান্টন 

 

  1. পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল— 

(A) ১৭৫৭  

(B) ১৭৬৫ 

(C) ১৭৭২

(D) ১৭৭৫ খ্রিঃ । 

Ans: (A) ১৭৫৭

 

  1. ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে – 

(A) ১৭৬০ 

(B) ১৭৬৩ 

(C) ১৭৬৫ 

(D) ১৭৭০

Ans: (C) ১৭৬৫

 

  1. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট কবে পাশ হয় ? 

(A) ১৭৮৪ সালে 

(B) ১৭৮২ সালে

(C) ১৭৮০ সালে 

(D) ১৭৭৮ সালে । 

Ans: (D) ১৭৭৮ সালে ।

 

  1. পাঁচসালা বন্দোবস্ত কবে চালু হয় ? 

(A) ১৭৭২ 

(B) ১৭৭৩ 

(C) ১৭৭৭

(D) ১৭৮০ খ্রি .। 

Ans: (A) ১৭৭২

 

  1. ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয়— 

(A) মহারাষ্ট্রে  

(B) পাঞ্জাবে 

(C) মাদ্রাজে

(D) বাংলায় । 

Ans: (A) মহারাষ্ট্রে

 

  1. কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন– 

(A) ক্লেভারিং

(B) হেস্টিংস

(C) ফ্রান্সিস

(D) এলিজা ইম্পে 

Ans: (D) এলিজা ইম্পে । 

  1. বাংলায় স্বাধীন নবাবির সূচনা করেন— 

(A) মুর্শিদকুলি খাঁ 

(B) আলিবর্দি খাঁ

(C) সিরাজউদদৌলা 

(D) মিরকাশিম ।

Ans: (A) মুর্শিদকুলি খাঁ

  1. ব্রিটিশ ভারতে কোন বিষয়কে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের ইস্পাত কাঠামো বলা হতো ? 

(A) পুলিশি ব্যবস্থাকে 

(B) আমলাতন্ত্রকে

(C) সেনাবাহিনীকে 

(D) বিচার ব্যবস্থাকে ।

Ans: (B) আমলাতন্ত্রকে

  1. চিনে আফিম যুদ্ধ হয়েছিল— 

(A) ১ টি 

(B) ৪ টি 

(C) ৩ টি 

(D) ২ টি 

Ans: (D) ২ টি

  1. তাইপিং কথাটির অর্থ হলো – 

(A) মহাশান্তি 

(B) চরম শান্তি

(C) অতি শান্তি

(D) অশান্তি ।

Ans: (A) মহাশান্তি

  1. চিনে বক্সার বিদ্রোহ ঘটেছিল— 

(A) ১৭০০ 

(B) ১৮০০

(C) ১৯০০ 

(D) ২০০০

Ans: (C) ১৯০০

  1. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন— 

(A) ওয়ারেন হেস্টিংস

(B) উইলিয়াম পিট 

(C) উইলিয়াম বেন্টিং

(D) লর্ড ডালহৌসি । 

Ans: (B) উইলিয়াম পিট

  1. ভাস্কো – দা – গামা কোন দেশের নাবিক ছিলেন ? 

(A) পোর্তুগালের 

(B) স্পেনের

(C) জাপানের 

(D) ফ্রান্সের । 

Ans: (A) পোর্তুগালের

  1. স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়— 

(A) ১৭২১

(B) ১৭২৪ 

(C) ১৭২৬ খ্রি :

(D) ১৭২৮ খ্রিঃ ।

Ans: (B) ১৭২৪

  1. সর্বশেষ সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্ট কবে পাশ হয় ? 

(A) ১৭৯৩ খ্রি . 

(B) ১৮১৫

(C) ১৮৩৩ 

(D) ১৮৫৩ 

Ans: (D) ১৮৫৩  

  1. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যাক্ট ( ১৭৮৪ খ্রি . ) কার উদ্যোগে পাশ হয় ?

(A) রিপনের

(B) ক্লাইভের

(C) পিটের 

(D) কর্নওয়ালিশের ।

Ans: (C) পিটের 

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer : 

  1. বিদরার যুদ্ধ কবে , কাদের মধ্যে হয় ? 

Ans: ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজদের সাথে ইংরেজদের । ওলন্দাজরা পরাজিত হয় । 

  1. কবে , কাদের মধ্যে বন্দিবাসের যুদ্ধ হয় ?

Ans: ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ইংরেজ ও ফরাসি কর্তৃপক্ষের মধ্যে হয় । 

  1. দ্বৈত শাসন বলতে কী বোঝো ? 

Ans: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর আইনগত দিক বাংলার নবাবের হাতে থাকলেও শাসনক্ষমতা চলে যায় কোম্পানির হাতে । তা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা নামে পরিচিত । 

  1. কবে , কার দ্বারা দ্বৈত শাসনের অবসান হয় ?

Ans: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর দ্বারা । 

  1. সলবাইয়ের সন্ধি কবে , কাদের মধ্যে হয় ?

Ans: ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সাথে মারাঠা পেশোয়াদের । 

  1. স্যার টমাস রো কবে ভারতে আসেন ?

Ans: ব্রিটিশরাজ প্রথম জেমসের দূত টমাস রো ১৬১৫ খ্রিঃ জাহাঙ্গিরের রাজদরবারে আসেন । মোগল সম্রাটের থেকে বাণিজ্যিক সুযোগ লাভই ছিল তার উদ্দেশ্য । 

  1. অব – শিল্পায়ন বলতে কী বোঝো ? 

Ans: ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন ভারতের বাজারে প্রভূত পরিমাণে ব্রিটিশ শিল্পপণ্য চলে আসায় প্রতিযোগিতার জেরে বাংলার কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় । এটাই অব – শিল্পায়ন । 

  1. এদেশে কোথায় প্রথম পাটকল স্থাপিত হয় ?

Ans: ১৮৫৫ খ্রিঃ ব্রিটিশ কর্মচারী জর্জ অকল্যান্ড রিষড়ায় দেশের প্রথম পাটকল গড়ে তোলেন । 

  1. কবে স্বাক্ষরিত হয় পুরন্দরের সন্ধি ? 

Ans: ১৭৭৬ সালে মারাঠা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ও হেস্টিংসের মধ্যে হয়েছিল পুরন্দরের সন্ধি । 

  1. কবে হয় বেসিনের সন্ধি ? এর দু’টি শর্ত লেখো । 

Ans: দ্বিতীয় বাজিরাও ও ইংরেজদের মধ্যে ১৮০২ সালে হয় বেসিনের সন্ধি । দু’টি শর্ত : 1.  পেশোয়া অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নেন । 2. পুণায় ইংরেজ সেনাবাহিনী নিয়োজিত হয় । 

  1. এজেন্সি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো ? 

Ans: ১৭৫৩– ৭৫ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধীনস্থ কর্মচারীদের এজেন্ট বানিয়ে | তাদের থেকেই পণ্যসামগ্রী কিনত । এটাই এজেন্সি ব্যবস্থা । 

  1. ব্রিটিশ ভারতে ‘ সম্পদের বহির্গমন ‘ কাকে বলা হতো ?

Ans: ব্রিটিশ শাসকরা প্রচুর ভারতীয় সম্পদ শোষণ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান । এটাই ‘ সম্পদের বহির্গমন ’ বলে চিহ্নিত । 

  1. গ্যারান্টি ব্যবস্থা কী ?

Ans: এদেশে রেলপথ নির্মাণে ইংরেজ কোম্পানিকে প্রলুব্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাদের নিখরচায় জমি , বাৎসরিক বিনিয়োগে নির্দিষ্ট সুদ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আশ্বাস দেয় । এটাই গ্যারান্টি ব্যবস্থা । 

  1. কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ? Ans: ১৭৯৩ – এর ২২ মার্চ বাংলা , বিহার , ওড়িশায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিশ । 
  2. ইংরেজরা কার কাছ থেকে , কবে দেওয়ানি লাভ করে ? 

Ans: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে । 

  1. দস্তক বলতে কী বোঝো ? 

Ans: মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানিকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ভারতে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার যে অধিকার দেন তা দস্তক নামে পরিচিত । 

  1. কাও – তাও প্রথা কী ? 

Ans: কোন বিদেশি চিন সম্রাটের দর্শন পেলে তাকে সম্রাটের সামনে ভূমি পর্যন্ত নত | হয়ে যাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম জানাতে হতো এই প্রথাই কাও – তাও প্রথা নামে পরিচিত । 

  1. কে , কবে , কী উদ্দেশ্যে আমিনি কমিশন গঠন করেন ? 

Ans: ওয়ারেন হেস্টিংস – এর উদ্যোগে রাজস্ব সম্পর্কিত তথ্যের জন্য ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক আধিপত্যের প্রকৃতি : নিয়মিত ও অনিয়মিত সাম্রাজ্য (তৃতীয় অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer : 

  1. ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল ? এই বাণিজ্যের অবসান কেনো হয় ? 

Ans: সূচনা : এশিয়া মহাদেশে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বৃহত্তম একটি রাষ্ট্র চিন যেখানে বাণিজ্যের অন্যতম দিক ছিল ক্যান্টন বাণিজ্য । চিনে বিদেশি বণিকের জন্য উন্মুক্ত একমাত্র বন্দর ক্যান্টনকে কেন্দ্র করে এক পৃথক বাণিজ্যপ্রথা গড়ে উঠেছিল যা ক্যান্টন বাণিজ্য নামে পরিচিত । 

বৈশিষ্ট্য : ক্যান্টন বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল এইরকম— 

  1. রুদ্ধদ্বার নীতি : রুদ্ধদ্বার নীতি অনুযায়ী বিদেশি বণিকরা চিনা ভাষা ও আদবকায়দা শিখতে পারত না । চিনের ফৌজদারি আইন ও বাণিজ্যিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য ছিল বিদেশি বণিকরা । এছাড়া কুঠিতে যে কোনো মহিলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । 
  2. মূল শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ : শহরের মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বণিকরা বসবাস করত । তারা শহরে প্রবেশ করতে পারত না । ক্যান্টন বন্দরে বিদেশি বণিকরা স্ত্রী ও সন্তানদের রাখতে পারত না । 
  3. কো – হং প্রথা : বিদেশি বণিকরা ক্যান্টন বন্দরে স্বাধীনভাবে বা সরাসরি বাণিজ্যে অংশ নিতে পারত না । চিনা সরকার ‘ কো – হং ‘ নামক বণিক সংঘকে ক্যান্টন বন্দরে একচেটিয়া বাণিজ্য করতে দিত । বিদেশি বণিকদেরও কো – হং বণিকদের থেকেই পণ্য কিনতে হতো । 
  4. কো – হংদের দুর্নীতি : কো – হং বণিকদের দুর্নীতির অন্ত ছিল না । তারা চিনা রাজ দরবার , আদালত এবং শুষ্ক অধিকর্তাকে উৎকোচ দিত । বাণিজ্যের বেশিরভাগ মুনাফা তারাই আত্মসাৎ করত । বিদেশিদের বাণিজ্যের শর্তও কো – হং বণিকরা নির্ধারণ করত । 
  5. ব্যক্তিগত বাণিজ্য : চিনের ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ সহ ইউরোপীয়রা নানা ধরনের ব্যক্তিগত বাণিজ্যে জড়িত ছিল । এর জন্য চিন সরকারের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে হতো না । 
  6. ইংরেজ বণিকদের প্রাধান্য : ক্যান্টন বন্দরে ব্রিটিশ বণিকদের প্রাধান্য ছিল । এর মধ্যে চা – এর বাণিজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য । চিনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এই বাণিজ্যকে বলা হতো ‘ দেশীয় বাণিজ্য ‘ । 

ক্যান্টন বাণিজ্য অবসানের কারণ : কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে নয় একাধিক কারণের সমন্বয়ে ক্যান্টন বাণিজ্য ধীরে ধীরে অবসানের দিকে এগিয়ে যায় । একারণ ছিল এইরূপ — 

  1. বাণিজ্যিক কার্যকলাপ : ক্যান্টনে ইউরোপীয় দেশগুলির উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বিদেশি শক্তিসমূহ সচেষ্ট হয়েছিল । কিন্তু চিন বিদেশিদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন তো দূরের কথা উপরন্তু সবরকম বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা f জানিয়ে দেয় । 
  2. আফিম যুদ্ধ : উনিশ শতকের প্রথম দিকে চোরাপথে ব্রিটিশ বণিকরা চিনে আফিম পাঠাতে থাকে । আফিম ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে চিন ও ব্রিটেনের মধ্যে হয় প্রথম আফি যুদ্ধ । এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ক্যান্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে । 
  3. অন্যান্য বন্দরের উত্থান : ১৯৪২ – এর নানকিং চুক্তির মাধ্যমে সাংহাই , নানকিং বন্দরে বিদেশিদের প্রবেশ উন্মুক্ত হয় । ফলে বিদেশি বাণিজ্যে ক্যান্টন একাধিপত্য হারায় । ১৮৫৯ সালে ক্যান্টন বাণিজ্য শপিং দ্বীপে স্থানান্তরিত হয় । ১৮৬৬ – এর মধ্যে সব বিদেশি শক্তি ক্যান্টন থেকে ব্যাবসা সরিয়ে নেয় । ক্রমে ক্যান্টন বাণিজ্য প্রথার অবসান ঘটে । 
  4. ভারতে রেলপথ বিস্তারের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো । 

অথবা , ভারতে কে , কবে রেলপথ স্থাপন করেন ? রেলপথ স্থাপনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য কী ছিল ? 

Ans: রেলপথের স্থাপনা : ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব ওঠে , যার শেষ পরিণতি অর্থাৎ ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয় । 

  1. রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য : নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে কোম্পানি ভারতে রেলপথ স্থাপন করে । উদ্দেশ্যগুলি হলো— 

ডালহৌসির উদ্দেশ্য : ডালহৌসির মতে , ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো , যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থার সম্প্রসারণে রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । 

পুঁজি বিনিয়োগ : শিল্পবিপ্লবের ফলে ব্রিটিশ শিল্পপতিরা বিপুল পরিমাণ পুঁজির মালিক হয়ে ওঠে । তারা ভারতে রেলপথ নির্মাণে মূলধন বিনিয়োগ করতে থাকে । কারণ এই বিনিয়োগ তাদের কাছে ছিল প্রচুর মুনাফা লাভের মাধ্যম । 

কাঁচামাল রপ্তানি : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের দরুন প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দ্রুত সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজন ছিল রেলপথের ন্যায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা । ড . সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেছেন— “ এই সব লাভের লোভই ছিল আসল কথা , এদেশের অর্থনীতির আধুনিকীকরণ মোটেই নয় । ” 

বিলেতি পণ্যের সরবরাহ : ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদিত বিপুল পণ্যসামগ্রীর বিক্রির জন্য প্রয়োজন ছিল ভারতের মতো বৃহত্তর বাজার । ভারতের অভ্যন্তরে দূর দুরান্তে এই পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেবার জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত রেল যোগাযোগের । 

রাজনৈতিক প্রয়োজন : বিশাল ভারতীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক তদারকির জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার । আর রেলপথ সেসব অভাব পূরণে সক্ষম ছিল । 

সামরিক উদ্দেশ্য : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিলে দ্রুত সৈন্যবাহিনী পাঠানোর জন্য প্রয়োজন ছিল উন্নত রেল যোগাযোগ ।

অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য : শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উৎপাদিত দ্রব্য দ্রুত ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার জন্য অন্যতম মাধ্যম ছিল রেলপথ । 

ভারতে রেলপথ স্থাপনের ফলাফল / প্রভাব : ভারতীয় উপনিবেশিক অর্থনীতিতে রেলপথ নির্মাণে গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল এইরকম – 

প্রশাসনিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা : ভারতে রেলপথ বিস্তারের ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় । ফলে দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে প্রশাসনিক ঐক্য গড়ে ওঠে ও এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভীত আরও শক্ত হয় ।

পরিবহণ বৃদ্ধি : রেল ব্যবস্থা প্রসারের ফলে ভারতে মানুষ ও পণ্য উভয় পরিবহণের কাজে যোগযোগের মাধ্যম বৃদ্ধি পায় । 

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধি : রেলপথের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং এক অঞ্চলের পণ্য অন্য অঞ্চলে সহজেই সরবরাহ করা সম্ভব হয় ।        

  ভাষা , ধর্ম ও গোষ্ঠীগত বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে রেলপথের প্রসারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও মতামতের আদানপ্রদান দ্বারা জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি পায় ।

  1. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

Ans: সূচনা : কৃষিপ্রধান দেশ ভারতবর্ষের অর্থনীতি সুপ্রাচীন কাল থেকেই কৃষিনির্ভর । রাষ্ট্রীয় আয়ের সিংহভাগ আদায় হয় ভূমিরাজস্ব থেকে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে কৃষককুলের স্বার্থ এদেশে চিরকালই অবহেলিত । কোম্পানির আমলে কৃষক সম্প্রদায় আরও শোষিত হয় ভূমিরাজস্বের মাধ্যমে । 

হেস্টিংস – এর পদক্ষেপ : লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর শাসনকালকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার পরীক্ষা – নিরীক্ষার যুগ বলা হয়ে থাকে । ১৭৭২ খ্রি : তিনি জমি ইজারাদারদের নিলামে দেবার জন্য ‘ ভ্রাম্যমাণ ‘ কমিটি গঠন করেন । : 

  1. পাঁচসালা বন্দোবস্ত : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কোম্পানির আমলে প্রথম তাই এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তকে বলা হয় পাঁচসালা বন্দোবস্ত বা ইজারাদারি বন্দোবস্ত । 

পাঁচসালা বন্দোবস্ত । এই বন্দোবস্ত অনুসারে জমি পাঁচ বছরের জন্য বন্দোবস্ত করা হতো ।

  1. একসালা বন্দোবস্ত : পাঁচসালা বন্দোবস্তের বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিলে তার অবসানে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত – এর প্রবর্তন করেন । হেস্টিংস আমিনি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৯৭৭ খ্রি .
  2. দশসালা বন্দোবস্ত : লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস – এর পরবর্তীতে লর্ড কর্নওয়াি গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর কৃষির উন্নতি , প্রজাপীড়ন বন্ধ করার জন্য এবং কোম্পানির বাৎসরিক আয়ের নিশ্চয়তা দান করতে ১৭৮৯ খ্রি : বাংলায় , ১৭৯০ খ্রি : উড়িষ্যায় দশ বছরের জন্য যে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত করেন তা দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত । 
  3. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ – এর পর পাকাপাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ১৭৯০ খ্রি :। এইসময় লর্ড কর্নওয়ালিশ জমিদারদের সাথে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে এক ভূমিবন্দোবস্ত করেন । এই ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা অনুসারে স্থির হয় জমিদারগণ নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে ভূমিরাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য থাকবে । তা না করতে পারলে তাদের জমিদারি স্বত্ব বাজেয়াপ্ত হবে । এছাড়া স্থির হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় – এর সময়েও রাজস্ব মকুব হবে না , জমিদাররা ইচ্ছামতো জমিদান বা বিক্রয় ও বন্ধক রাখতে পারবে । 
  4. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত : ১৮২০ খ্রি : ক্যাপ্টেন আলেকজান্ডার রিড ও টমাস মনরোর উদ্যোগে ভারতের দক্ষিণ ও দক্ষিণ – পশ্চিম অঞ্চলে যে ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তু প্রবর্তন করা হয় তা রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত । এই বন্দোবস্ত ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতো । এই বন্দোবস্ত অনুসারে কোম্পানি সরাসরি জমিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । 
  5. মহলওয়ারি বন্দোবস্ত : ১৮২২ খ্রি : এলফিনস্টোন ভারতবর্ষের উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত ও গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে কিছু কিছু গ্রাম নিয়ে একটি মহল বা তালুক সৃষ্টি করে ইজারা দেওয়ার যে রীতির প্রচলন ঘটান তা মহলওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত । 
  6. পলাশি ও বক্সার যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা করো । 

Ans: পলাশি যুদ্ধের ফলাফল : ঐতিহাসিক ম্যালেসন বলেছেন , “ পলাশির যুদ্ধের মতো আর কোনো যুদ্ধের ফলাফল এত ব্যাপক ও স্থায়ী হয়নি । ” এই যুদ্ধের ফলে – 

  1. কোম্পানির সার্বভৌমত্ব : পলাশির যুদ্ধে জয়লাভ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি । ভারতে কোম্পানির সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে । 
  2. রাজনীতিতে প্রাধান্য : এই যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার রাজনৈতিক পুতুলে পরিণত হন । ক্ষেত্রে প্রকৃত নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয় কোম্পানি । 
  3. প্রশাসনিক শূন্যতা : পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাবের পরাজয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয় । বাংলায় দেখা দেয় প্রশাসনিক শূন্যতা । কোম্পানি ইচ্ছামতো ব্যক্তিকে নবাব পদে বসায় । 
  4. একচেটিয়া বাণিজ্য : পলাশির যুদ্ধে জিতে কোম্পানি দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক অধিকার প্রয়োগ করে বাংলার বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য স্থাপন করে । ধ্বংস হয় দেশীয় ব্যাবসাবাণিজ্য । 
  5. বাংলার পরাধীনতা : পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজ – উদ – দৌলার পতনের ফলে বাংলা পরাধীন হয়ে পড়ে । ইংরেজরা মিরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজেরা সিংহাসনের পশ্চাৎ শক্তিতে পরিণত হয় । 

বক্সার যুদ্ধের ফলাফল : বক্সার যুদ্ধ ( ১৭৬৪ ) প্রসঙ্গে জেমস স্টিফেন বলেছেন , “ ভারতে ব্রিটিশ শক্তির উৎস হিসেবে বক্সারকে গণ্য করা হয় । ” এর ফলে— 

  1. ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ : বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারত ইতিহাসের ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ । যে কারণে ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র বলেছেন , “ এটি ছিল ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক নিষ্পত্তিমূলক নির্ণায়ক । ”
  2. বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় ব্রিটিশ শক্তির পথ থেকে সব বাধা দূর হলো । বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ হলো সহজ । 
  3. উত্তর ভারতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর কোম্পানি উত্তর ভারতে নজর দেয় । অযোধ্যার নবাব কোম্পানির অনুগত হন । উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় । 
  4. আর্থিক লুণ্ঠন : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে কোম্পানির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় । এই সুযোগে শুরু হয় আর্থিক লুণ্ঠন । মিরকাশিমের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা উপঢৌকন আদায় করা হয় । 
  5. দেওয়ানি লাভ : বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলা , বিহার , উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে কোম্পানি । এতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব লাভের পাশাপাশি কোম্পানির আর্থিক লাভ হয়েছিল । 

মূল্যায়ন : ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে , পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে মধ্যযুগের অবসান হয় এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয় । অবশ্য বক্সার যুদ্ধে জয়লাভের পরই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয় । এ প্রসঙ্গে র্যামসে মুর বলেছেন , “ বঙ্গার বাংলার উপর কোম্পানির শাসন – শৃঙ্খলা চূড়ান্তভাবে স্থাপন করেছিল । 

  1. ভারতে রেলপথ স্থাপনের ঘটনা এদেশের অর্থনীতিতে কী ফেলেছিল ? 

Ans: সূচনা : আধুনিক রেলপথ স্থাপন ভারতবর্ষে কেবলমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থারই যে উন্নতিসাধন করেছিল তা নয় , তৎকালীন ভারতীয় অর্থনীতিতেও এর সুদুরপ্রসারী ফলাফল লক্ষ করা যায় । ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রের মতে— “ The construction of railway had a revolutionary impact on the life , culture and economy of the Indian people . ” 

ভারতের অর্থনীতিতে রেলপথের সুফল : 

  1. বিদেশের বাজারে ভারতের পণ্যে সাফল্য : রেলপথের জন্য পরিবহণ খরচ | কমে যাওয়ায় ভারতের পণ্যগুলি বিদেশের বাজারে সাফল্যের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় । রপ্তানির সাথে আমদানির পরিমাণও বেড়ে যায় । 
  2. অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি : রেলপথ স্থাপনের ফলে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যায় । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে । 
  3. ব্রিটেন – ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিন্যাস : ১৮৮০ খ্রি : মধ্যে ব্রিটেন ভারতের সবচেয়ে বড়ো ক্রেতা ও বিক্রেতার স্থান দখল করে যা ব্রিটেন ও ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিন্যাস ঘটায় । 
  4. নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতির ব্যাপকতা : রেলপথ প্রসারের ফলে বন্দর নগরগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় । নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । এভাবেই গড়ে ওঠে নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি। 
  5. কর্মসংস্থানের সুযোগ : ভারতীয় রেলপথের দ্রুত প্রসার কর্মবিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল । ১৮৬৫ খ্রি : রেলে নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৪০০০ কিন্তু ১৯৮৫ খ্রি : এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৩০০০ – এ । 

ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথের কুফল : 

  1. গ্যারান্টি প্রথার কুফল : গ্যারান্টি প্রথা অনুসারে রেল কোম্পানিগুলিকে প্রভুর ভরতুকি এবং পুঁজির লগ্নির ওপর পাঁচ শতাংশ হারে সুদও দেওয়া হচ্ছিল । 
  2. ধন নিষ্কাশন বৃদ্ধি : ব্যয়বহুল রেলপথ নির্মাণের জন্য ভারতীয় অর্থনীতির ওপর যথেষ্ট চাপ পড়ে । এককথায় বলতে গেলে গ্যারান্টি প্রথার দ্বারা ভারতীয় অর্থনীতির এক বিরাট অংশ বিদেশে চলে যায় । 
  3. জলপথ ও সড়কপথ অবহেলিত : রেলপথ চালু হওয়ায় তা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে পড়ে । ফলে জলপথ ও সড়কপথ অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে । 

মন্তব্য : রেলপথ স্থাপনের ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে গতিশীলতার সঞ্চার হয় । এবং ভারত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয় । তবে এর ক্ষতিকারক দিকগুলিকে অস্বীকার করা যায় না । 

  1. কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন ? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল লেখো । 

Ans: সূচনা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রি : দেওয়ানি লাভের পর ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন । এই পরীক্ষানিরীক্ষার চূড়ান্ত ফলশ্রুতি ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত । ১৭৯৩ খ্রি : মার্চ মাসে লর্ড কর্নওয়ালিশ এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন । এই ভূমিরাজস্ব বন্দোবস্তের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী যা সমকালীন আর্থ – সামাজিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল । 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে কোম্পানি , জমিদার ও কৃষক এই তিনটি শ্রেণিরই কিছু লাভ ও ক্ষতি হয়েছিল । যেমন— 

সুফল : মার্শম্যানের মতে , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু ছিল একটি দৃঢ় সাহসিকতাপূর্ণ ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ । এর সুফলগুলি ছিল— 

  1. বাজেট প্রস্তুতে সহায়ক : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বার্ষিক আয় সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কোম্পানির বাজেট প্রস্তুতে তা সহায়ক হয়েছিল । 
  2. উৎখাতের সম্ভাবনা হ্রাস : কৃষকদের রাজস্বের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকদের সুবিধা হয়েছিল । কারণ তারা ইজারাদারদের শোষণ ও জমি থেকে ঘন ঘন উৎখাতের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পায় । তবে সকল কৃষকেরই যে এমন হয়েছিল একথা বলা যায় না । 
  3. জমি ও প্রজাবর্গের উন্নতিসাধন : জমিদারদের চিরস্থায়ীভাবে জমির মালিকানার অধিকারদানের ফলে জমি এবং প্রজাসাধারণের উন্নতিসাধনের প্রেরণা পেয়েছিল । 
  4. আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশে কৃষিযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ফসলের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায় । 
  5. ব্রিটিশদের অনুগত গোষ্ঠী : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা জমিদাররা সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষার চেষ্টা করে । ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হয় । 

কুফল : ১৭৯৩ খ্রি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি ছিল অধিক প্রকট । যেমন — ঐতিহাসিক হোস চিরস্থায়ী বন্দোবস্তুকে ‘ একটি দুঃখজনক ভুল ’ বলে অভিহিত করেছেন । এডওয়ার্ড থর্নটন বলেন— “ চরম অজ্ঞতা থেকেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সৃষ্টি । ” এই ভূমিবন্দোবস্তের কুফলগুলি ছিল এইরকম— 

  1. কৃষকদের দুর্দশা বৃদ্ধি : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আগে জমির মালিক ছিল প্রজারা কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা এই মালিকানা থেকে তারা বঞ্চিত হয় এবং কৃষকরা ব্যক্তিগতভাবে জমিদারদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । ফলে কৃষকদের জীবন হয়ে ওঠে চরম দুর্দশাগ্রস্ত ।
  2. চড়া হারে খাজনা আদায় : চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্তে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করার পূর্বে জমি প্রকৃতপক্ষে জরিপ করা হয়নি । ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেইসময়ের পক্ষে খাজনা অধিক হারে স্থির হয়েছিল । 
  3. মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব : অনেক জমিদার রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জমি ইজারা দেয় । ফলে ইজারাদার , দর ইজারাদার , পাওনাদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির উদ্ভব হয় ।