সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো |
- বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র ছিল—
(A) হিন্দু প্যাট্রিয়ট
(B) সোমপ্রকাশ
(C) ইন্দুপ্রকাশ
(D) সমাচার দর্পণ ।
Ans: (D) সমাচার দর্পণ ।
- ‘ চুইয়ে পড়া নীতি ’ – র প্রবর্তক হলেন—
(A) মেকলে
(B) রামমোহন রায়
(C) লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক
(D) চার্লস উড ।
Ans: (A) মেকলে
- হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়—
(A) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (C) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে
- মেকলের ‘ মিনিট ’ পেশ করা হয়—
(A) ১৮২৮ খ্রি .
(B) ১৮৩০ খ্রি .
(C) ১৮৩৪ খ্রি .
(D) ১৮৩৫ খ্রি .।
Ans: (D) ১৮৩৫ খ্রি .।
- সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন—
(A) কেশবচন্দ্র সেন
(B) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(C) জ্যোতিরাও ফুলে
(D) নারায়ণ গুরু ।
Ans: (C) জ্যোতিরাও ফুলে
- ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়—
(A) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে
(A) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (D) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ।
- তাইপিং বিদ্রোহের নেতা ছিলেন—
(A) মাও জে দং
(B) মাও সে তুং
(C) হুং সিউ চুয়াং
(D) সান ইয়াৎ সেন ।
Ans: (C) হুং সিউ চুয়াং
- ভারতের ইরাসমাস বলা হয় –
(A) রামমোহনকে
(B) সৈয়দ আহমেদ খানকে
(C) ডিরোজিওকে
(D) বিবেকানন্দকে ।
Ans: (A) রামমোহনকে
- চিনের উপর একুশ দফা দাবি আরোপ করেছিল—
(A) আমেরিকা
(B) জাপান
(C) রাশিয়া
(D) ইংল্যান্ড ।
Ans: (B) জাপান
- ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন—
(A) আলেকজান্ডার ডাফ
(B) স্বামী বিবেকানন্দ
(C) রাজা রামমোহন রায়
(D) মেকলে ।
Ans: (C) রাজা রামমোহন রায়
- তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশ করেন—
(A) রামমোহন রায়
(B) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(C) কেশবচন্দ্র সেন
(D) ডিরোজিও ।
Ans: (D) ডিরোজিও ।
- ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ম্যাগনাকার্টা বলা হয়—
(A) উডের ডেসপ্যাচকে
(B) মেকলে মিনিটকে
(C) হান্টার কমিশনকে
(D) চার্টার আইনকে ।
Ans: (A) উডের ডেসপ্যাচকে
- কার উদ্যোগে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ?
(A) ক্লাইভ
(B) কার্টিয়ার
(C) ওয়ারেন হেস্টিংস
(D) কর্নওয়ালিশ ।
Ans: (C) ওয়ারেন হেস্টিংস
- সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আইন জারি করেন— (A) ওয়ারেন হেস্টিংস
(B) লর্ড বেন্টিঙ্ক
(C) লর্ড ওয়েলেসলি
(D) লর্ড রিপন ।
Ans: (B) লর্ড বেন্টিঙ্ক
- নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করেন—
(A) লর্ড বেন্টিঙ্ক
(B) লর্ড রিপন
(C) লর্ড লিটন
(D) লর্ড নর্থব্রুক ।
Ans: (D) লর্ড নর্থব্রুক ।
- ইলবার্ট বিলের সঙ্গে কোন শাসকের নাম জড়িত ?
(A) লর্ড রিপন
(B) লর্ড লিটন
(C) লর্ড কার্জন
(D) লর্ড বেন্টিঙ্ক ।
Ans: (A) লর্ড রিপন
- কাকে ‘ বাংলা গদ্যসাহিত্যের জনক ‘ বলা হয় ?
(A) রামমোহন রায়কে
(B) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে
(C) বঙ্কিমচন্দ্রকে
(D) শরৎচন্দ্রকে ।
Ans: (B) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে
- কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়— (A) ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (B) ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে
- তুহাফ – উল – মুয়াহিদ্দিন নামে পুস্তকটি রচনা করেন—
(A) ডিরোজিও
(B) সৈয়দ আহমদ খান
(C) বিদ্যাসাগর
(D) রামমোহন রায় ।
Ans: (D) রামমোহন রায় ।
- কে কেশবচন্দ্রকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দেন ?
(A) রামমোহন
(B) বিদ্যাসাগর
(C) বঙ্কিমচন্দ্র
(D) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
Ans: (D) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
- কার উদ্যোগে শুদ্ধি আন্দোলন গড়ে ওঠে ?
(A) শ্রীরামকৃয়
(B) স্বামী বিবেকানন্দ
(C) দয়ানন্দ সরস্বতী
(D) কেশবচন্দ্র সেন ।
Ans: (C) দয়ানন্দ সরস্বতী
- বিধবাবিবাহ আইন কত খ্রিস্টাব্দে পাশ হয় ? (A) ১৮৫৬ খ্রি .
(B) ১৮৫৭ খ্রি .
(C) ১৮৫৮ খ্রি .
(D) ১৮৬০ খ্রি .।
Ans: (A) ১৮৫৬ খ্রি .
- নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়
(A) ১৯১৫ .
(B) ১৯২০ .
(C) ১৯২২ খ্রি .
(D) ১৯২৪ খ্রি .।
Ans: (B) ১৯২০ .
- ‘ সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ‘ নীতি ঘোষণা করেন—
(A) স্ট্যালিন
(B) এটলি
(C) ম্যাকডোনাল্ড
(D) মাউন্টব্যাটেন ।
Ans: (C) ম্যাকডোনাল্ড
- ভাইকম সত্যাগ্রহের অন্যতম নেতা ছিলেন—
(A) কেলাপ্পান
(B) ড . আম্বেদকর
(C) পি.সি. জোশি
(D) কেশব মেনন ।
Ans: (D) কেশব মেনন ।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- পতিদার বলতে কী বোঝো ?
Ans: আদায়কারী মোড়লকে বলা হতো পতিদার ।
- শতদিবসের সংস্কার বলতে কী বোঝো ?
Ans: ১৮৯৮ সালে চিনা সম্রাট কোয়াংসু ঘোষিত এক সংস্কার কর্মসূচি টানা ১০০ দিন ধরে চলেছিল । একে বলা হয় শতদিবসের সংস্কার ।
- ৪ মে চিনে ছাত্ররা কার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখায় ?
Ans: পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন – তু – শিউ – র নেতৃত্বে চিনে ছাত্ররা বিক্ষোভে শামিল হয় । ইংরেজ আমলে গুজরাটে ‘ পতি বা গ্রামের যৌথ মালিকানাধীন জমির জ
- প্রার্থনা সমাজ কে গড়ে তোলেন ?
Ans: মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক আত্মারাম পাণ্ডুরঙ্গ ১৮৬৭ খ্রিঃ গড়ে তোলেন । প্রার্থনা সমাজ ।
- তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা কার সম্পাদনায় , কবে প্রকাশিত হয় ?
Ans: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পাদনায় ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ।
- কে , কবে শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে বক্তৃতা দেন ?
Ans: স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ খ্রিসাব্দে ।
- কে , কবে রামকৃয় মিশন প্রতিষ্ঠা করেন ?
Ans: ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দ ।
- কে , কোথায় , কবে মে ফোর্থ আন্দোলন শুরু করেন ?
Ans: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ ঠা মে চেনতু শিউ – এর নেতৃত্বে ।
- ইন্ডিয়ান লিগ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
Ans: শিশিরকুমার ঘোষ ।
- ‘ দিকু ‘ বলতে কী বোঝো ?
Ans: বহিরাগত জোতদার , বণিক , মহাজন , ঠিকাদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগী ব্রিটিশ আমলে সুবিধা আদায়ের জন্য আদিবাসী এলাকায় ঢুকে পড়ে । আদিবাসীরা এদের বলত দিকু ।
- কে , কবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন ?
Ans: ১৮০০ খ্রিঃ লর্ড ওয়েলেসলি গড়ে তোলেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ।
- সান ইয়াৎ সেন ঘোষিত তিনটি নীতি কী ?
Ans: ১৮৯৮ সালে সান ইয়াৎ – সেন চিনা জনগণের জন্য তিনটি নীতি ঘোষণা করেন । এগুলি হলো – ( ক ) জনজাতীয়তাবাদ ( খ ) জনগণতন্ত্রবাদ ( গ ) জনসমাজবাদ ।
- কবে গড়ে ওঠে কলকাতা স্কুল সোসাইটি ? Ans: ১৮১৮ সালে ডেভিড হেয়ার এটি গড়ে তোলেন ।
- কে , কবে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?
লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ।
- কে , কবে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?
Ans: ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার ও রামমোহন রায় ।
- উডের ডেসপ্যাচ কী ?
Ans: ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উড শিক্ষা সংক্রান্ত যে নির্দেশনামা পেশ করেন তা উডের ডেসপ্যাচ নামে পরিচিত ।
- কে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন ?
Ans: বড়োেলাট লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে আইন করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন । একাজে তাঁকে সহায়তা করেন রাজা রামমোহন রায় ।
- কলকাতা মাদ্রাসা কে , কবে প্রতিষ্ঠা করে ?
Ans: ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস ।
- কে পার্থেনন পত্রিকা প্রকাশ করেন ?
Ans: নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অন্যতম নেতা ডিরোজিও ১৮৩০ সালে পার্থেনন পত্রিকা প্রকাশ করেন ।
- কবে , কারা গড়ে তোলেন থিওসফিক্যাল সোসাইটি ?
Ans: ১৮৫৭ সালে কর্নেল এইচ এস ওলকট , হেলেনা ব্লাভাটস্কি প্রমুখের উদ্যোগে আমেরিকায় এটি গড়ে ওঠে ।
- আর্যসমাজ – এর প্রতিষ্ঠাতা কে ?
Ans: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ১৮৭৫ সালে বোম্বাইয়ে আর্যসমাজ গড়ে তোলেন ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (চতুর্থ অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- আলিগড় আন্দোলনের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
Ans: সূচনা : ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাকালে হিন্দুসমাজ ব্রিটিশ শাসন ও সভ্যতাকে স্বাগত জানিয়ে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে কিন্তু ভারতের মুসলিমরা প্রথম থেকেই এদেশে ব্রিটিশ শাসন ও পাশ্চাত্য শিক্ষাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেনি । এই পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান । তাঁর নেতৃত্বেই পরবর্তীতে আলিগড় আন্দোলনের সূচনাও হয়েছিল ।
আন্দোলনের উদ্দেশ্য : মূলত ভারতীয় মুসলিম সমাজকে আলোকিত করে কুসংস্কার মুক্ত করা এবং মুসলিম ও ইংরেজদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই ছিল আলিগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্য ।
পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার : মুসলিম সমাজে যুক্তবাদী পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য 1864 খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে সৈয়দ আহমেদ একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই বছরই ট্রান্সলেশন সোসাইটি নামে একটি সমিতি গঠন করেন । এরপর 1875 খ্রিস্টাব্দে আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা কালক্রমে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় ।
সমাজ সংস্কার : মুসলিম সমাজের পুনরুদ্ধারে সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা ছিল এইরকম— :
রক্ষণশীলতার বিরোধিতা : মুসলিমদের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তিনি মুসলিম সমাজকে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান ।
কোরানের গুরুত্ব প্রচার : তাঁর মতে , পবিত্র কোরানই জনগণের আধার এবং মুসলিমদের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ । তাঁর মতে , ধর্মের কোনো ব্যাখ্যা যুক্তি ও বিজ্ঞানবিরোধী হলে তা পরিত্যাগ করতে হবে । তিনি জানান— পবিত্র কোরানে ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়নি ।
নারীমুক্তি : নারীস্বাধীনতার ও নারীশিক্ষা বিস্তারের পক্ষে এবং পর্দা প্রথা , বহুবিবাহ ও তালাক প্রথার বিরুদ্ধে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন ।
রাজনৈতিক চিন্তাধারা : সৈয়দ আহমেদ ইংরেজ আনুগত্য এবং জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে মুসলিমদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা ঘোষণা করেন । মূলত শিক্ষায় ও সংখ্যায় হিন্দুদের আধিপত্যের আশঙ্কা থেকে তার এই ধরনের চিন্তাধারার উদ্ভব বলে অনেকে মনে করেন ।
সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি : স্যার সৈয়দ আহমেদ ভারতের স্বায়ত্তশাসন ও ইংল্যান্ড ও ভারতে একসঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার দাবি প্রথম দিকে করলেও পরবর্তীতে কার মতাদর্শগত পরিবর্তন ঘটে । কারণ তিনি পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেস থেকে সমস্ত মুসলিম সমাজকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করেছিলেন ।
মূল্যায়ন : আলিগড় আন্দোলনের দ্বারা ভারতের মুসলিম সমাজের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল । তবে একথা সত্যি যে আলিগড় আন্দোলনের প্রভাবে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং কিছু কিছু ঐতিহাসিক পৃথক পাকিস্তান সৃষ্টির জন্যেও এই আন্দোলনকে দায়ী করেছেন ।
- ১৯৫০ – এর দশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের প্রভাব নিরুপণ করো ।
Ans: সূচনা : চিনের উত্থান কেবলমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটে তা নয় , আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও কমিউনিস্ট চিনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের প্রভাব :
চিনের শক্তিবৃদ্ধি : দ্বিমেরুযুক্ত রাজনীতি অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলি নিয়ে সাম্যবাদী চিন শক্তিশালী হয়ে ওঠে । আবার পরবর্তীতে চিন অন্য কোনো রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই নিজ প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন ।
চিনকে নেতৃত্বভার প্রদান : রাশিয়া চিনকে শিল্প ও সামরিক দিক দিয়ে সাহায্য দান করেছিল । তার কারণই হলো সাম্যবাদী আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলা । এছাড়া রাশিয়া চিনকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নেতৃত্ব ভার প্রদান করেছিল ।
চিন সোভিয়েতে মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতা : আমেরিকায় যে বোষ্টন নীতি ছিল সেই নীতিকে সামাল দেওয়ার জন্য চিন সোভিয়েতের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে ওঠে । চিন যে যুদ্ধ পরাস্ত হয়েছিল সোভিয়েত তাকে আর্থিক , প্রায়োগিক ও সামরিক সাহায্যের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করেছিল ।
চিন ও সোভিয়েত উভয় রাষ্ট্রের বিরোধ : স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপ্রধান হন নিকিতা ক্রুশ্চেভ । তিনি পূর্বের নীতির পরিবর্তন করেন । তিনি শান্তিপূর্ণ অবস্থানের নীতি প্রদান করেন । এরফলে চিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে । যার ফলে চিন ও সোভিয়েতের মধ্যে বিরোধ বাধে । এছাড়া চিনকে সকল রকম সাহায্য দিতে বন্ধ করা । যেমন – আর্থিক , সামরিক ইত্যাদি এর ফলে বিরোধ আরও চরমে ওঠে ।
চিন ও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের তিক্ত সম্পর্ক : চিন ও মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোনো দিনই সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল না । তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিনকে সমর্থন করেছিল । দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সাম্যবাদী বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায় এবং কোরিয়া ভিয়েতনামের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে চিন ভিয়েতনামের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে চিন মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণমূলক নীতি গ্রহণ করে , যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে ।
এশীয় রাজনীতির প্রভাব : আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের উত্থানের ফলে এশীয় রাজনীতিতে আবহাওয়ার কিছুটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সমৃদ্ধ দেশ চিন তাই চিনকে বাদ দিয়ে শাস্তিসাম্য স্থাপন সম্ভব নয় ।
তৃতীয় বিশ্ব ও চিনের মৈত্রী সম্পর্ক : তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক খুবই গভীর ছিল । ভারত , পাকিস্তান , শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি ১২ টি দেশ চিনকে মর্যাদা প্রদান করে । এছাড়া এশিয়া ও আফ্রিকা দেশগুলিকে চিন আর্থিক সাহায্য প্রদান করে ।
বিশ্বশান্তি রক্ষা : চিন বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেছিলেন । চিন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ভারত , ইন্দোনেশিয়া , কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানায় । এছাড়া চিন পঞ্চশীল নীতি , দশশীল নীতি প্রভৃতিকে সমর্থন জানায় ।
1চিনের সামরিক শক্তি : কোরিয়া সংকটের সময় চিন আমোরিকার নেতৃত্বে দক্ষিণ কোরিয়ার বাহিনীকে পরাজিত করে আবার ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বে উত্তর ভিয়েতনামের পক্ষ নিয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে পরাজিত করে ।
পরিশেষে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চিনের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ । চিন যেমন- তার দেশের সম্পদ অন্য দেশকে দিয়ে সাহায্য করেছে ঠিক তেমনি অন্য দেশ থেকে সম্পদ নিয়ে নিজের দেশকে উন্নত করেছে । চিন শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছে ।
- বাংলায় নবজাগরণের প্রকৃতি অলোচনা করো । এর সীমাবদ্ধতা কী ছিল ?
Ans: সূচনা : অষ্টাদশ শতকে বাংলার সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনকে ঐতিহাসিকগণ নবজাগরণ আখ্যা দিয়েছেন । এইসময় ইংল্যান্ডের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাংলার সংস্পর্শের ফলে এই জাগরণ শুরু হয় যা বাংলার সমাজ , ধর্ম , সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে । ইতালির নবজাগরণের সাথে তুলনা করে অনেকে বাংলার এই জাগরণকে ‘ Bengal Renaissance ‘ বা ‘ বঙ্গীয় নবজাগরণ ‘ নামে অভিহিত করেছে ।
নবজাগরণ : উনিশ শতকের মধ্যবর্তী পর্যায়ে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা , জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা , ধর্মীয় উদারতা , সমাজ সংস্কার ও আধুনিক সাহিত্যের বিকাশ শুরু হয় যা উনিশ শতকে বাংলার সমাজ – সংস্কৃতিতে ব্যাপক অগ্রগতি ঘটায় । এই অগ্রগতিকেই ঐতিহাসিকেরা বাংলার নবজাগরণ বলে উল্লেখ করেছেন ।
নবজাগরণের প্রকৃতি ও চরিত্র : বাংলার নবজাগরণের চরিত্র বিচারে পাশ্চাত্যের উদারপন্থী ভাবধারা , প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনবাদ বা ঐতিহ্যবাহী ভাবধারা এবং সমন্বয়বাদী ভাবধারার পরিচয় লক্ষ করা যায় ।
- শহরকেন্দ্রিকতা : বাংলার এই নবজাগরণের প্রভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল কলকাতানির্ভর , কখনো তা পার্শ্ববর্তী শহরতলিতে কিছুটা দেখা গেলেও সমগ্র বাংলা জুড়ে এর কোনো প্রভাবই লক্ষ করা যায়নি ।
- সরকারপ্রীতি : নশ শতকের এই নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবিশেষ সামাজিক সংস্কারেই সীমাবদ্ধ ছিলেন । কিন্তু তাঁরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বললেই চলে । ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার লিখেছেন— “ ইংরেজদের দেওয়া সবচেয়ে বড়ো উপহার হলো আমাদের উনিশ শতকের নবজাগরণ । ” তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠাকে এজন্য ‘ গৌরবময় ভোর ’ বলে উল্লেখ করেছেন ।
- সীমাবদ্ধতা : বাংলার এই নবজাগরণ কেবলমাত্র মধ্যবিত্ত ও কিছু ক্ষেত্রে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এই আন্দোলনকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয় । জওহরলাল নেহরুর মতে , ঔপনিবেশিক শাসনের জ্ঞানদীপ্তি শুধু উচ্চবর্গের হিন্দুদের ওপরই প্রতিফলিত হয়েছিল । সাধারণ জনগণের মধ্যে এর বিশেষ প্রভাব পড়েনি ।
- হিন্দু জাগরণবাদ : বাংলার নবজাগরণ প্রকৃতপক্ষে হিন্দু জাগরণবাদে পর্যবসিত হয় । তাই অনেকে মনে করেন যে উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদের ভূমিকা ছিল খুবই গৌণ ।
মন্তব্য : বঙ্গীয় নবজাগরণের মূলে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির গভীরতা থাকলেও ব্রিটিশ রাজত্বে তার প্রাণশক্তি ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ । তবুও এই নবজাগরণ বাংলার স্তব্ধ হয়ে যাওয়া জীবনে এক নতুন গতি সঞ্চার করেছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
- চিনের চৌঠা মে – এর আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ করো । এই আন্দোলনের প্রভাব বিশ্লেষণ করো ।
Ans: সূচনা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে চিনে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় নতুন প্রগতিশীল আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল । তারা বুঝতে পেরেছিল সাম্রাজ্যবাদী ও থেকে ১৯১৯ খ্রি : ৪ মে – র আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল ।
সামস্ততান্ত্রিক শোষণের অবসান না ঘটলে চিনের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয় ।
এই ভাবনা আন্দোলনের কারণ :
- ইউয়েন – সি – কাই – এর নৃশংসতা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউয়েন – সি – কাই চিনের রাষ্ট্রপতি হয়ে সম্পূর্ণ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি চিনের সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রের অপমানজনক বিভিন্ন সন্ধি স্থাপন করলে চিনা জনসাধারণ তার তীব্র প্রতিবাদ করেন ।
- কুয়োমিন তাং দল নিষিদ্ধ : ১৯১৩ খ্রি : চিনা রাষ্ট্রপতি কুয়োমিন তাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে চিনা জনগণের মধ্যে প্রবল হতাশার সৃষ্টি হয় ।
- বুদ্ধিজীবী – ছাত্রদের ভূমিকা : চিনা বুদ্ধিজীবী ও ছাত্ররা বিদেশি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হন । তাঁরা চিনে ৪ মে – র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনা করেন ।
- ইউথ পত্রিকার ভূমিকা : ১৯১৫ খ্রি : চেন – তু – শিউ ‘ ইউথ ম্যাগাজিন ‘ প্ৰকাশ করেন । এই পত্রিকার মাধ্যমে জরাজীর্ণ ঐতিহ্যমণ্ডিত চিন্তাভাবনা দূর করে নতুন প্রগতিশীল বাস্তববাদী ও সংস্কারমুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় ।
- প্রত্যক্ষ কারণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে প্যারিসের শাস্তি সম্মেলনে চিন জাপানের একুশ দফা দাবি সহ সব অসম চুক্তি এবং শান্টুং প্রদেশে জাপানি কর্তৃত্ব বাতিলের দাবি জানায় । কিন্তু ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ চিনের কথায় কর্ণপাত না করায় চিনা প্রতিনিধিরা খালি হাতে ফিরে আসেন । অবশেষে ১৯১৯ খ্রি : ৪ মে চেন – তু – শিউর ডাকে চিনে হাজার হাজার ছাত্র শুরু করে ঐতিহাসিক ৪ মে আন্দোলন ।
আন্দোলনের ফলাফল :
- দেশাত্মবোধ – এর উদ্ভব : ৪ মে – র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চিনা জনগণের মধ্যে দেখা দেয় গভীর দেশাত্মবোধ যা চিনা জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল ।
- আধুনিকতার উদ্ভব : ৪ মে – র আন্দোলন চিনের প্রাচীন ভাবধারার অবসান ঘটিয়ে পাশ্চাত্যের আধুনিক ভাবধারার জন্ম দিয়েছিল যা চিনকে দ্রুত আধুনিকীকরণের পথে অগ্রসর করেছিল । এইভাবেই চিন নবজাগরণের দিকেও অগ্রসর হয়েছিল ।
- সরকারের নতি স্বীকার : ৪ মে – র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে চিন সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় ।
- কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা : ৪ মে – র আন্দোলনের চাপেই চিনে কুয়োমিন তাং দলের পুনর্গঠন হয়ে কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে ।
- ব্যাপকতা : ৪ মে – র আন্দোলনে চিনের হাজার হাজার মানুষের যোগদান আন্দোলনকে ব্যাপক রূপ দিয়েছিল ।
- চিনের উপর আরোপিত ‘ অসম চুক্তি ‘ বলতে কী বোঝায় ? এই অসম চুক্তি বা বৈষম্য মূলক চুক্তিব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।
অথবা , চিনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো ।
Ans: ঊনবিংশ শতাব্দীতে চিংবংশের শাসনকালে ব্রিটেন , ফ্রান্স , জার্মানি , মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র , জাপান , রাশিয়া প্রভৃতি দেশ যে অসম একতরফা শোষণাত্মক মূলক যে চুক্তি আরোপ করেছিল তাই ‘ অসম চুক্তি ’ বা ‘ বৈষম্যমূলক চুক্তি ‘ নামে পরিচিত । ইউরোপীয় শক্তিগুলির চিনের ওপর অসম চুক্তি আরোপের ফলে চিনের সরকার সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । এই চুক্তির মাধ্যমে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ বিভিন্ন রকম সুবিধা আদায় করেছিল কিন্তু সেই সুবিধাগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো মনোভঙ্গি তাদের ছিল না । যার ফলে চিনের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে । এই যে চিনের ওপর ইউরোপীয় দেশগুলির আরেপিত চুক্তি এই চুক্তিকে অনেকে ‘ Century of Humiliation ‘ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন । পাশ্চাত্য শক্তিগুলি চিন থেকে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদগুলি আরোহণ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল । আর চিনে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল ।
অসম চুক্তিগুলির পরিচয় : বিভিন্ন ঐতিহাসিক চিনের ওপর আরোপিত চুক্তিগুলি সম্পর্কে নানারূপ বৈশিষ্ট্যের সম্মুখীন হয়ে নানা আলোচনা করে বলেছেন 1. চিনের ওপর যে অসম চুক্তি আরোপিত হয়েছিল তা পশ্চিমি শক্তিবর্গের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ভিত্তিক স্বাক্ষরিত হয়নি । এক্ষেত্রে দেখতে হবে চিন পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ অর্থাৎ ব্রিটেন , ফ্রান্স , জার্মানি , জাপান , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া প্রভৃতি দেশগুলির কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল । এই পরাজয়ের কারণে ব্রিটেন সহ ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের চাহিদাগুলি চিনের নিকট থেকে আদায় করতে থাকে বা চিনের ওপর অসম চুক্তিগুলি আরোপিত করে । এক্ষেত্রে চিনা সরকারের মতামত গ্রাহ্য করা হয়নি ।
- পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের কাছে চিনের পরাজয় ঘটার কারণে সেই দেশগুলি চিনের বিভিন্ন অংশগুলির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে যার ফলে চিনা সরকারের ক্ষমতা ও তার দেশের ওপর সে অধিকার তা সম্পূর্ণ ভাবে হারিয়ে ফেলে ।
- ব্রিটেন সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি চিনের আধিপত্য দখল করে চিনের ওপর অসম চুক্তি নিরূপণ করে এর ফলে চিনের যে ক্ষমতা , অধিকার হারিয়ে ফেলে সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে । চিনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নানা সংকট দেখা যায় । চিন ধীরে ধীরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ।
- পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের সঙ্গে চিনের যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে চিনের ওপর সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া ঠিক নয় । দুই তরফের মতামতে যুদ্ধ ঘোষিত হয় । তাতে চিন পরাজয় হয় ঠিকই কিন্তু চিনের পরাজয়ের কারণে অসম চুক্তি তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তা ঠিক নয় । চিনকে পরাজয়ের কারণ বশত বিপুল পরিমাণে অর্থ সম্পাদন করতে হয় ।
- চিনের পরাজয়ের কারণে শুধুমাত্র অর্থই দিতে হয় তা নয় , অর্থ ছাড়াও চিনের ‘ হংকং বন্দর ’ ব্রিটেনকে এবং ‘ ম্যাকাও বন্দর ’ পোর্তুগালকে দান করে দিতে হয়।
- চিন উন্নতশালী ও সমৃদ্ধশালী দেশ অসম চুক্তির কারণে চিনের প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদগুলি পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের দখলে আসে । এর ফলে এই পশ্চিমি দেশগুলি বাণিজ্যের কাজে এই সকল সম্পদ ব্যবহার করে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে আর চিনের আর্থিক সংকট দেখা দেয় ।
- অসম চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন সহ ইউরোপীয় দেশগুলি বিনা শুল্কে বাণিজ্য করতে থাকে আর চিনকে শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য করতে হয় । তাই বাণিজ্যের অসম প্রতিযোগিতায় চিন হেরে যায় ।
চিন সকল দিয়ে যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তখন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাওজে দং এর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে চিনে প্রজাতান্ত্রিক সংগ্রাম সাধিত হয় । যার ফলে PRC সংঘটিত হয় এবং অসম চুক্তিগুলির অবলুপ্তি ঘটে ।
- ঊনবিংশ শতকে বাংলার সমাজজীবনে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো ।
অথবা , সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো ।
Ans: বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের পথিকৃৎ । মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছেন , “ বিদ্যাসাগরের মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো , কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মতো এবং হৃদয়বত্তা ছিল বাঙালি জননীর মতো । ”
- কৌলীন্য প্রথার প্রতিবাদ : সেসময় কুল বা বংশ রক্ষার জন্য হিন্দুসমাজে বালিকা কন্যার সঙ্গে কুলীন বৃদ্ধের বিয়ে দেওয়া হতো । এতে মেয়েটির জীবনে নেমে আসত অকাল বৈধব্য । বিদ্যাসাগর কৌলীন্য প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন । এই প্রথার সুযোগে কুলীনরা কীভাবে মেয়েদের সর্বনাশ করছে , তিনি তা প্রমাণ করেন ।
- বিধবাবিবাহ প্রবর্তনে উদ্যোগ : হিন্দু বিধবাদের করুণ দশা বিদ্যাসাগরকে খুবই ব্যথিত করে । তিনি হিন্দুশাস্ত্র বিশেষত ‘ পরাশর সংহিতা ‘ থেকে প্রমাণ দেন , বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত । তিনি বিধবাবিবাহের সমর্থনে আন্দোলন শুরু করেন ।
- বিধবাবিবাহ আইন পাশ : বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে ১৮৫৫ সালে ১০০০ ব্যক্তির সই সহ আবেদন সরকারের কাছে পৌঁছয় । ১৮৫৬ সালে বড়োেলাট লর্ড ডালহৌসি বিধবাবিবাহ আইন পাশ করেন । এটি বিদ্যাসাগরের অন্যতম সাফল্য ।
- বিধবাবিবাহের আয়োজন : বিদ্যাসাগর নিজের উদ্যোগে বিধবাবিবাহের আয়োজন করেন । সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ১৮৫৬ সালে ১০ বছরের বিধবা কালীমতী দেবীকে বিবাহ করেন । নিজের ছেলে নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে তিনি অষ্টাদশী ভবসুন্দরীর বিবাহ দেন ।
- বাল্যবিবাহের বিরোধিতা : ঊনবিংশ শতকে হিন্দুসমাজে বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল । বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জোর প্রচার ও সোচ্চার প্রতিবাদ শুরু করেন । এর ফলে ব্রিটিশ সরকার মেয়েদের বিয়ের বয়স ১০ বছর ধার্য করে দেয় ।
- বহুবিবাহের বিরোধিতা : এসময় সমাজে বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল । বর্ধমানের মহারাজার সাহায্যে বহু ব্যক্তির স্বাক্ষর সহ একটি আবেদনপত্র ১৮৫৫ সালে সরকারের কাছে পাঠানো হয় । এজন্য বিদ্যাসাগর সহ কয়েকজনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয় । পরবর্তীকালে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে দু’টি পুস্তিকা প্রকাশ করে বিদ্যাসাগর প্রমাণের চেষ্টা করেন , বহুবিবাহ অশাস্ত্রীয় । তাঁর চেষ্টায় বহুবিবাহের প্রকোপ কমে যায় ।
- ভারতের শিক্ষা , সমাজ সংস্কারক হিসেবে রামমোহনের অবদান ব্যাখ্যা করো ।
Ans: ভূমিকা : আধুনিক ভারতে যেসব সংস্কারক জন্মগ্রহণ করেছেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন রাজা রামমোহন রায় । তাঁকে ‘ আধুনিক ভারতের জনক ’ বলা হয় । তিনি ছিলেন ভারতীয় ‘ নবজাগরণের অগ্রদূত ‘ । মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে ‘ রাজা ’ উপাধি দেন ।
রামমোহনের শিক্ষা সংস্কার : ভারতের অতীত ঐতিহ্য এবং পাশ্চাত্যের আধুনিক ভাবধারার সমন্বয় ঘটানোই ছিল রামমোহনের শিক্ষাচিস্তার লক্ষ্য ।
- পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সমর্থন : রামমোহন রায় দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারকে । • সমর্থন করতেন । তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে একটি চিঠিতে ( ১৮২৩ ) ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের অনুরোধ জানান রামমোহন রায় ।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন : স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফকে তিনি ‘ জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন ‘ গড়ে তোলায় সাহায্য করেন ( ১৮৩০ ) । ১৮২২ সালে কলকাতায় ‘ অ্যাংলো হিন্দু স্কুল ’ গড়ে তোলেন । ১৮১৭ সালে কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপনে তিনি সহায়তা করেন । ১৮২৬ সালে রামমোহন বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
- বাংলা গদ্যের জনক : রামমোহনকে বলা হয় ‘ বাংলা গদ্যসাহিত্যের জনক ‘ । তিনি ১৮১৫-২৩ এর মধ্যে প্রায় ২৩ টি গ্রন্থ রচনা করেন । এর মধ্যে আছে— বেদান্ত সার , সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক , ব্রাহ্মণ সেবধি ইত্যাদি ।
- সংবাদপত্র প্রকাশনা : রামমোহন বাংলা , ইংরেজি , ফরাসি ভাষায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— ‘ সম্বাদ কৌমুদী ‘ এবং ফারসিতে প্রকাশিত ‘ মিরাৎ – উল – আখবর ’ ।
রামমোহনের সমাজ সংস্কার :
- জাতিভেদ বিরোধিতা : হিন্দু ধর্মে প্রচলিত জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা প্রথার তীব্র বিরোধিতা করেন রামমোহন । তিনি ‘ বজ্রসূচি ‘ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করে প্রচার করেন যে জাতিভেদ শাস্ত্রসম্মত নয় ।
- সতীদাহ প্রথা বিলোপ : হিন্দুসমাজে উচ্চবর্ণের মধ্যে মৃত স্বামীর চিতায় জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হতো । ভয়াবহ এই ‘ সতীদাহ প্রথা’র বিরুদ্ধে প্রচার চালান রামমোহন । তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ।
- নারীকল্যাণ : রামমোহন মেয়েদের মর্যাদা রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেন । তিনি বিভিন্ন শাস্ত্র ঘেঁটে দেখান , বাবা এবং স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদেরও সমান অধিকার আছে । কৌলীন্য প্রথার অবসান , নারীর বিবাহ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নে সচেষ্ট হন রামমোহন ।
মূল্যায়ন : আধুনিক ভারত গঠনে
রামমোহনের ভূমিকা স্মরণীয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে , “ রামমোহন রায়
ভারতে আধুনিক যুগের সূচনা করেন । ” তাই তিনি রামমোহনকে ‘ ভারত পথিক ‘
বলেছেন ।