সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো |
- মুসলিম লিগের কোন অধিবেশনে পাকিস্তান দাবি করা হয় ?
(A) লাহোর
(B) লখনউ
(C) মাদ্রাজ
(D) কলকাতা ৷
Ans: (A) লাহোর
- “ The Indian Musalman’s’- গ্রন্থটির রচয়িতা কে ছিলেন ?
(A) সৈয়দ আহমেদ হান্টার
(B) রিজলে
(C) উইলিয়াম
(D) ডেনিসন রস ।
Ans: (C) উইলিয়াম হান্টার
- কংগ্রেসের কোন অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের দাবি ওঠে ?
(A) দিল্লি
(B) লাহোর
(C) গুজরাট
(D) কলকাতা ৷
Ans: (B) লাহোর
- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ভাইসরয় ছিলেন—
(A) মন্টেগু
(B) চেমসফোর্ড
(C) লর্ড কার্জন
(D) লর্ড মিন্টো ৷
Ans: (D) লর্ড মিন্টো
- ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট পাশ হয় কার সময়ে ? (A) লর্ড লিটন
(B) লর্ড রিপন
(C) লর্ড নর্থব্রুক
(D) লর্ড ময়রার সময়ে ।
Ans: (A) লর্ড লিটন
- ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন—
(A) মন্টেগু
(B) ক্লিমেন্ট এটলি
(C) ওয়েলিংটন
(D) ম্যাক ডোনাল্ড ।
Ans: (D) ম্যাক ডোনাল্ড
- কত খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে ?
(A) ১৮৫৮ খ্রি .
(B) ১৮৬১ খ্রি .
(C) ১৮৯২ .
(D) ১৯১০ খ্রি .
Ans: (A) ১৮৫৮ খ্রি .
- ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুসারে ‘ ভাইসরয় ’ উপাধি পান-
(A) ব্রিটিশ সম্রাট
(B) ভারত সচিব
(C) গভর্নর
(D) গভর্নর জেনারেল ।
Ans: (D) গভর্নর জেনারেল ।
- মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তিত হয়—
(A) ১৯১৯
(B) ১৯২০
(C) ১৯২১
(D) ১৯২২ খ্রিঃ ।
Ans: (A) ১৯১৯
- সাইমন কমিশন ভারতে আসে—
(A) ১৯২৫
(B) ১৯২৬
(C) ১৯২৭
(D) ১৯২৮ খ্রিঃ ।
Ans: (D) ১৯২৮ খ্রিঃ ।
- রাওলাট আইনকে কে “ উকিল নেহি , দলিল নেহি , আপিল নেহি ” বলে মন্তব্য করেন ?
(A) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(B) মহাত্মা গান্ধি
(C) মহম্মদ আলি জিন্না
(D) বিপিনচন্দ্র পাল ।
Ans: (B) মহাত্মা গান্ধি
- জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কে ‘ কাইজার – ই – হিন্দ ’ উপাধি ত্যাগ করেন ?
(A) মহাত্মা গান্ধি
(B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(C) মহম্মদ আলি জিন্না
(D) চিত্তরঞ্জন দাশ ।
Ans: (A) মহাত্মা গান্ধি
- প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের প্রধান কোন দলটি যোগদান করেনি ?
(A) কমিউনিস্ট পার্টি
(B) হিন্দু মহাসভা
(C) মুসলিম লিগ
(D) কংগ্রেস ।
Ans: (D) কংগ্রেস ।
- নবান্ন নাটকের রচয়িতা—
(A) ভবানী ভট্টাচার্য
(B) অমলেন্দু চক্রবর্তী
(C) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
(D) বিজন ভট্টাচার্য ।
Ans: (D) বিজন ভট্টাচার্য
- মলে – মিন্টো শাসন সংস্কার আইন পাশ হয়—
(A) ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (B) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কোন তারিখে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল ?
(A) ১৩ এপ্রিল
(B) ২৩ জানুয়ারি
(C) ১৭ জুলাই
(D) ১২ সেপ্টেম্বর ।
Ans: (A) ১৩ এপ্রিল
- রাওলাট আইন কবে পাশ হয় ?
(A) ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ।
Ans: (B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
- কোন দেশীয় রাজ্যের রাজা প্রথম অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন ?
(A) সাঁতারা
(B) নাগপুর
(C) হায়দ্রাবাদের নিজাম
(D) মারাঠা নেতা ।
Ans: (C) হায়দ্রাবাদের নিজাম
- মুসলিম লিগ গঠিত হয়—
(A) ১৯০৬
(B) ১৯০৭
(C) ১৯০৮
(D) ১৯০৯ খ্রিঃ ।
Ans: (A) ১৯০৬
- মুসলিম লিগের প্রথম অধিবেশন বসে—
(A) দিল্লিতে
(B) কলকাতায়
(C) ঢাকায়
(D) লাহোরে ।
Ans: (C) ঢাকায়
- মুসলিম লিগের প্রথম সভাপতি ছিলেন –
(A) মহম্মদ আলি জিন্না
(B) সলিম উল্লাহ
(C) আগা খ
(D) আবুল কালাম আজাদ ।
Ans: (B) সলিম উল্লাহ
- রাওলাট কমিশনের অপর নাম হলো—
(A) সিডিশন কমিশন
(B) সাইমন কমিশন
(C) অ্যাকওয়ার্থ কমিশন
(D) শিল্প কমিশন ।
Ans: (A) সিডিশন কমিশন
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- মন্টেগু চেমসফোর্ড আইনের একটি শর্ত লেখো ।
Ans: এই আইনে কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা এবং আয় যথাযথভাবে বণ্টিত হয় । 2. গোলটেবিল বৈঠকের পর কী নামে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয় ?
Ans: ১৯৩৩ সালে সরকার ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ ‘ নামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে ।
- মলে – মিন্টো আইনের দু’টি অসংগতি উল্লেখ করো ।
Ans: প্রথমত , এই আইনে ভারতে কোনো দায়বদ্ধ প্রশাসন গঠনে জোর দেওয়া হয়নি । দ্বিতীয়ত , নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতামত গুরুত্ব পেত না ।
- রাওলাট কমিশন কাকে বলে ?
Ans: ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে ১৯১৮ সালে স্যার সিডনি রাওলাট – এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় । এটাই রাওলাট কমিশন ।
- মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজনের নাম লেখো ।
Ans: মুজাফ্ফর আহমেদ , ধরণী গোস্বামী , পি সি জোশি , অমৃত শ্রীপাদ ডাঙ্গে , গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ ।
- স্বত্ববিলোপ নীতির দু’টি শর্ত লেখো ।
Ans: কোনো দেশীয় রাজ্যের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তিনি দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবেন না । ফলে সেই রাজ্য কোম্পানির অধীনে চলে যাবে ।
- কোন দেশীয় রাজ্যের রাজা প্রথম স্বত্ববিলোপ নীতি গ্রহণ করেছিলেন ?
Ans: সাঁতারা , ঝাসি , নাগপুর প্রভৃতি ।
- ভারতে সর্বপ্রথম কোথায় ‘ বিভাজন ও শাসন ‘ নীতি কার্যকর হয় ?
Ans: পাঞ্জাবের সেনাবাহিনীতে জন লরেন্স সর্বপ্রথম এই নীতি প্রয়োগ করেন ।
- ‘ সিমলা দৌত্য ‘ বলতে কী বোঝো ?
Ans: আগা খাঁ – র নেতৃত্বে ১৯০৬ খ্রিঃ ১ অক্টোবর ৩৫ জন অভিজাত মুসলিম সিমলায় বড়োলাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করেন । মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি মিস্টোকে দেওয়া হয় । এটিই সিমলা দৌত্য নামে পরিচিত ।
- রাওলাট আইনের একটি শর্ত লেখো ।
Ans: এই আইন অনুসারে ইংরেজ বিরোধী যাবতীয় প্রচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ।
- লখনউ চুক্তির ২ টি শর্ত লেখো ।
Ans: প্রথমত , কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ একত্রে সরকারের কাছে শাসন সংস্কারের দাবি জানাতে একমত হয় । দ্বিতীয়ত , মুসলিম লিগের স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবির সঙ্গে কংগ্রেস একমত হয় ।
- মলে – মিন্টো সংস্কার আইনের প্রধান শর্ত কী ছিল ?
Ans: মুসলিম সম্প্রদায়ের পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া ।
- কে , কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন ?
Ans: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ – এর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ নাইট উপাধি ত্যাগ করেন ।
- মুসলিম লিগ কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
Ans: ঢাকার নবাব সলিম উল্লাহ মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা করেন ।
- ব্রিটিশ ভারতের কয়েকটি বৃহত্তম দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো ।
Ans: হায়দ্রাবাদ , কাশ্মীর , মহীশূর ।
- কেন গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন ?
Ans: ১৯২২ আন্দোলন চলাকালীন উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরায় কিছু আন্দোলনকারী একদল পুলিশকে পুড়িয়ে মারে । সহিংস আচরণের জেরে ক্ষুব্ধ গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করেন ।
- কবে ‘ চোদ্দো দফা দাবি ’ ঘোষিত হয় ? এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?
Ans: ১৯২৯ সালে মুসলিম লিগের দিল্লি অধিবেশনে লিগ নেতা মহম্মদ আলি জিন্না তার চোদ্দো দফা দাবি পেশ করেন । উদ্দেশ্য ছিল ভারতে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষা ।
- ভাইকম সত্যাগ্রহ কবে শুরু হয় ?
Ans: কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ১৯৪২ সালের ২ মার্চ ত্রিবাঙ্কুরের ভাইকম মন্দিরে দলিতদের প্রবেশের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করে সেটাই ভাইকম সত্যাগ্রহ ।
- ১৯১৬ সালের লখনউ কংগ্রেসের গুরুত্ব উল্লেখ করো ।
Ans: এই অধিবেশনে চরমপন্থী নেতৃবর্গ পুনরায় দলে ফিরে আসায় নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে ঐক্য রচিত হয় । এতে কংগ্রেসের শক্তি বাড়ে ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন (পঞ্চম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল ? গান্ধিজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন ?
Ans: সূচনা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী গণআন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দেবার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের ‘ সিডিশন কমিশন ‘ – এর সুপারিশে 1919 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে যে আইন প্রবর্তিত হয় তা রাওলাট আইন নামে পরিচিত ।
আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য :
- বিপ্লবী আন্দোলন দমন : ভারতবর্ষে সরকার – বিরোধী যে বৈপ্লবিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা দমনের জন্য রাওলাট আইন প্রবর্তিত হয় ।
- মুসলিম ক্ষোভের প্রশমন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার পরাজিত তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ ঘটালে এবং তুরস্কের খলিফার ক্ষমতা খর্ব করলে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ।
- গণআন্দোলন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি , খরা , মহামারি , বেকারত্ব বৃদ্ধি প্রভৃতির ফলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় , আর এইজন্যে সর্বত্র গণআন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ে ।
- রাওলাটের আইনের বিভিন্ন দিক / ধারা :
- i) প্রচারকার্যে বাধা দান : সরকার – বিরোধী সব ধরনের কার্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয় ।
- ii) বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার : সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে এবং বিচারে অনির্দিষ্টকাল আটক করেও রাখা যাবে ।
iii) বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি : সরকার যেকোনো ব্যক্তির বাড়ি বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি করতে পারবে ।
- iv) আপিলে নিষেধাজ্ঞা : রাওলাট আইনের দ্বারা সম্পন্ন হওয়া বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চতর আদালতে আপিল করা যাবে না ।
- v) সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না ।
এই আইনে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া :
- দেশব্যাপী প্রতিবাদ : অত্যাচারী রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় । কেন্দ্রীয় আইনসভায় এই আইনের বিরোধিতায় সকলে গর্জে ওঠে ।
- আইন পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ : রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মহম্মদ আলি জিন্না , মদনমোহন মালব্য আইন পরিষদের সদস্য পদত্যাগ করেন । লালা লাজপত রায় বলেন— “ এই আইনের ফলেই আবার নতুন করে বিপ্লবী কার্যকলাপ শুরু হবে । ”
- গান্ধিজির ভূমিকা : গান্ধিজি অত্যাচারী রাওলাট আইনের সমালোচনা করে বলেন যে এই আইনে— “ উকিল নেহি , দলিল নেহি , আপিল নেহি । ” এই আইনের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে রাওলাট সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিলেন । এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগ করেন , গান্ধিজি কাইজার – ই – হিন্দ উপাধি ত্যাগ করেন ।
মূল্যায়ন : রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা একাধিক প্রতিক্রিয়ামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করলে ব্রিটিশ সরকার কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে এই আইন বহাল রাখে ।
- মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইন ( 1919 ) -এর বৈশিষ্ট্য লেখো । এই আইনের বিরোধিতা বা ত্রুটিগুলি আলোচনা করো । এই আইনের ধারাগুলি কী ?
Ans: সূচনা : ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে একাধিক আইন প্রবর্তন করেছিল । অনুরূপভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ভারতে একাধিক বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক ঘটনা এবং ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে – মিন্টো সংস্কার আইন ভারতীয়দের কোনো আশা – আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি । তাই পুনরায় ভারতীয়রা শাসনতান্ত্রিক অধিকারে দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে । আর সেইসময় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের জন্য শাসনতান্ত্রিক সুবিধার্থে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইন প্রবর্তনের পথে পা বাড়ায় ।
আইন প্রবর্তনের কারণ : ১৯১৯ – এর মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইন প্রবর্তনের কারণে বলা যায়
মর্লে – মিন্টো সংস্কার আইনের ব্যর্থতা : মলে – মিন্টো সংস্কার আইন ভারতীয়দের দাবি পূরণ করতে পারেনি এবং ভারতীয় জনবিক্ষোভেরও অবসান ঘটাতে পারেনি ।
চরমপন্থী ও নরমপন্থী কংগ্রেসের মিলন : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসে চরমপন্থী ও নরমপন্থীদের মধ্যে আদর্শগত বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় কংগ্রেস পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ।
কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে সমঝোতা : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে পুনর্মিলনও মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইনের পথ প্রশস্ত করেছিল ।
ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের দাবি : হোমরুল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরালো হতে শুরু করলে ব্রিটিশ সরকার তার নিষ্পত্তি ঘটানোর জন্য ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন ।
মন্টেগু চেমসফোর্ট আইনের ধারা : ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু – চেমসফোর্ট সংস্কার আইনের প্রধান ধারাগুলি ছিল এইরকম—
প্রথমত , ভারত সচিবের কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে অন্তত ১০ জন এবং অনধিক ১২ জন করা হয়।
দ্বিতীয়ত , ভারত সচিবের বেতন , ভাতা ব্রিটিশ সরকার বহন করবে বলে ঠিক হয় ।
তৃতীয়ত , ভারতের রাজস্ব সংক্রান্ত প্রস্তাব অধিকাংশের ভোটে পাশ করা বাধ্যতামূলক করা হয় ।
চতুর্থত , ভারতের শাসন ব্যবস্থার অন্তর্গত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক দুই ভাগে ভাগ করা হয় ।
পঞ্চমত , প্রাদেশিক আইনসভার শতকরা ৭০ জন সদস্য নির্বাচিত এবং ৩০ জন সদস্য মনোনীত করার ব্যবস্থা করা হয় ।
ষষ্ঠত , নতুন আইনে কেন্দ্রে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হয় ।
সপ্তমত , কেন্দ্রীয় আইনসভার হাতে সমগ্র ভারতের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয় ।
এই আইনের ত্রুটি : মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কার আইনের দ্বারা যথার্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ত্রুটি লক্ষ করা যায় । যেমন –
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ : কার্যনির্বাহ পরিষদকে আইনসভার নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা হয় । কেন্দ্রে সব ক্ষমতা বড়োলাটের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ভারতবাসীর আশা – আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণ থেকে যায় ৷
প্রতিবন্ধকতা : প্রাদেশিক শাসনকার্য সংরক্ষিত এবং হস্তান্তরিত এই দুই ভাগে • বিভক্ত করে একদিকে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব ও অন্যদিকে দায়িত্বহীন ক্ষমতা অর্পণ করার ব্যবস্থা করা হয় । ফলে সুষ্ঠভাবে শাসনকার্য পরিচালনার পক্ষে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয় ।
অপর্যাপ্ত : জাতীয় কংগ্রেস মন্টেগু চেমসফোর্ট সংস্কারকে অপর্যাপ্ত , অসন্তোষজনক ও নৈরাশ্যকর বলে মন্তব্য করেছিল । অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থীরা এই সংস্কার আইনকে একটি সঠিক ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বলেছেন ।
স্বায়ত্তশাসনের অভাব : এই আইনে প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি । কেননা প্রদেশের গভর্নর ছিলেন চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী । তাই বলা যায় , এই আইনের দ্বারা ব্রিটিশ শাসনের শক্তি আরো মজবুত হয়েছিল ।
ভোটাধিকার : মন্টেগু – চেমসফোর্ট আইনে সর্বসাধারণের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়নি , যা একাধারে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে ভারতবর্ষে দীর্ঘস্থায়ী করে তুলেছিল।
- জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । এই ঘটনার গুরুত্ব কী ছিল ?
Ans: সূচনা : ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষে সর্বাধিক পৈশাচিক , ভয়াবহ এবং অমানবিক হত্যাকাণ্ড ছিল 1919 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্চাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড । এই ঘটনা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ইংল্যান্ডের অপশাসনকে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছিল ।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট :
প্রথমত , প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমনমূলক নীতি ও সীমাহীন অত্যাচার । এইসময় সৈন্য ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ইংরেজ সরকার যে নির্যাতন শুরু করেছিল তা এই ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী ।
দ্বিতীয়ত , প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং শিল্প ধ্বংসের ফলে দেশজুড়ে বেকারের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যা ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোকে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করে ।
তৃতীয়ত , 1919 খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন পাশ করা হয় । কিন্তু এই আইন ভারতীয়দের দাবিদাওয়া পূরণে ব্যর্থ হয় যা জনমানসে হতাশার সৃষ্টি করে ।
চতুর্থত , প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের জন্য কুখ্যাত রাওলাট আইন পাশ করে । এই আইনের ভয়াবহতা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য অনেকাংশে দায়ী ।
পঞ্চমত , রাওলাট আইনের বিরোধিতা করে গান্ধিজির নেতৃত্বে রাওলাট সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয় । এইসময়ে 1919 খ্রিস্টাব্দের 10 এপ্রিল রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে মদত দেবার অপরাধে ড . সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড . সত্যপালকে গ্রেপ্তার করা হলো পাঞ্জাবে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড : এই পরিস্থিতিতে পাঞ্জাবে জেনারেল মাইকেল ও ডায়ার এক সমারিক আইন জারি করেন , এরই প্রতিবাদে 13 এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের বাগানে ঘেরা এক স্থানে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ সমবেত হলে জেনারেল ডায়ার – এর নির্দেশে 1600 রাউন্ড গুলি চালানো হলে সেখানে শতাধিক মানুষ নিহত এবং অজস্র মানুষ আহত হন । এই কলঙ্কিত ঘটনা ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত ।
গুরুত্ব : প্রথমত , জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সমগ্র ভারতবর্ষে তথা বিশ্ববাসীর কাছে ব্রিটিশ সরকারের নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী ছবি ফুটিয়ে তুলেছিল । ব্রিটিশ সরকারের বর্বরতাকে চিহ্নিত করেছিল ।
দ্বিতীয়ত , এই ঘটনার প্রতিবাদে সমাজের সকল স্তরের মানুষ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমবেত হতে শুরু করেছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন । গান্ধিজি লেখেন— “ এই শয়তানের সরকারের সংশোধন অসম্ভব , একে ধ্বংস করতেই হবে । ”
তৃতীয়ত , এই ঘটনার প্রতিবাদ ভারতের বাইরে ইংল্যান্ডেও হয় । প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যামকুইন মন্তব্য করেন— “ One of the worst outrages in the whole of our history ” , এর পরিপ্রেক্ষিতে হান্টার কমিশন গঠিত হয় এবং জেনারেল ডায়ারকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ।
চতুর্থত , জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল এই নৃশংস ঘটনা ও অন্যায়ের সুবিচার করা ।
- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি ব্যাখ্যা করো । এই আইনের ত্রুটিগুলি কী ছিল ?
Ans: পটভূমি : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন , জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরোধ এবং বৈপ্লবিক সন্ত্রাসবাদীদের উত্থানের মতো ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড বালফোর এক কৌশলী আপস নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন । তিনি লর্ড কার্জনের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মিন্টোকে ভারতের গভর্নর জেনারেল করে পাঠান । এইসময় ভারত সচিব ছিলেন লর্ড মলে । লর্ড মলে ও লর্ড মিন্টো এক শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দ্বারা কংগ্রেসের নরমপন্থী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে ও নরমপন্থী – চরমপন্থী বিবাদ দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লিগের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হন । তাঁদের উদ্যোগে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ভারতের শাসন সংস্কারের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি খসড়া আইন পেশ করা হয় । ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে এই খসড়া আইন আইনের রূপ পায় । এই আইন মর্লে – মিন্টো আইন , ১৯০৯ নামে পরিচিত ।
আইনের বৈশিষ্ট্য : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে – মিন্টো শাসন সংস্কার আইনের প্রকৃত নাম ছিল ভারত শাসন আইন । এই আইনের দু’টি দিক ছিল ।
( ক ) কার্যনির্বাহী পরিষদ ,
( খ ) আইন পরিষদ ।
( ক ) কার্যনির্বাহী পরিষদ :
- গভর্নর জেনারেলের কার্যনির্বাহী পরিষদে একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি দল গঠন করা হয় । কার্যনির্বাহী পরিষদে প্রথম ভারতীয় প্রতিনিধি ছিলেন ব্যারিস্টার লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ । তিনি এই পরিষদে আইন সদস্যরূপে নিযুক্ত হন ।
- বোম্বাই , মাদ্রাজ ও বাংলার গভর্নরদের কার্যনির্বাহী পরিষদে সদস্যসংখ্যা ২ জন থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয় ।
আইন পরিষদ : আইন পরিষদে চার ধরনের নির্বাচকমণ্ডলী রাখার কথা বলা হয় । যথা –
- প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি দল ,
- সংখ্যালঘু মুসলিমদের পৃথক নির্বাচনের জন্য নির্বাচক দল ,
- দেশীয় শাসক ও জমিদারদের জন্য প্রতিনিধি দল এবং
- বিশ্ববিদ্যালয় , বণিক সংগঠন প্রভৃতি সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধি দল ।
মলে – মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটি : ভারতীয়দের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে মলে – মিন্টো আইন পাশ হলেও এই আইনের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল । যেমন –
( ক ) অধিকারহীনতা : এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় রাজ্য , সামরিক বিভাগ , বিদেশনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনার অধিকার আইনসভার হাতে ছিল না ।
( খ ) দায়িত্বশীলতার অভাব : মলে – মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রে এবং প্রদেশে নির্বাচিত ভারতীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ কোনো গুরুত্ব স্বীকৃত হয়নি । ফলে এই আইন ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় ।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারণগুলি কী ছিল ? বাংলায় পঞ্চাশের মন্বস্তরের ফলাফল লেখো ।
অথবা , ১৯৪৩ সালে বাংলায় মন্বন্তর – এর কারণ কী ছিল ?
Ans: খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়া ১৯৪০-৪১ সালে বাংলায় সীমিত আকারে খাদ্য সংকটে গরিবের সঞ্চয় ফুরিয়ে যায় । ১৯৪২ – এর অক্টোবরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে ধানের ফলন কমে যায় । মারা যায় প্রায় দু’লক্ষ গবাদি পশু । মানুষের সঞ্চিত খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৯৪৩ সালে দেখা দেয় মন্বন্তর ।
বাংলায় পঞ্চাশের মন্বস্তরের কারণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারের তীব্র অর্থনৈতিক শোষণে অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৩ সালে ( ১৩৫০ বঙ্গাব্দ ) এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হয় । এই মন্বন্তর বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করে । এর বিভিন্ন কারণ ছিল—
খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত : ১৯৪২ – এর বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাগুলি ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় । ফলে দূর দুরান্তে খাদ্যশস্য পাঠানোয় অসুবিধা দেখা দেয় ।
বার্মা থেকে চাল আমদানি ব্যাহত : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বার্মা থেকে কলকাতা তথা বাংলায় চাল আসত । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বার্মা দখল করে নেওয়ায় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায় ।
জাপানি আক্রমণের আশঙ্কা : জাপান যেকোনো সময় বাংলা হয়ে ব্রিটিশ ভারতে আক্রমণ করতে পারে , এই আশঙ্কা করেছিল ব্রিটিশ সরকার । এজন্য পোড়ামাটির নীতি অনুসারে বার্মার নিকটস্থ চট্টগ্রাম ছেড়ে আসার সময় সেখানকার নৌকা , মোটর যান , গোরুর গাড়ি প্রভৃতি ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় । ফলে বাংলার সীমান্তে খাদ্য সরবরাহ অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
চার্চিলের ভূমিকা : বাংলায় খাদ্যাভাবের সময় অস্ট্রেলিয়া , কানাডা , আমেরিকা জাহাজে করে বাংলায় খাদ্যশস্য পাঠাতে চেয়েছিল । কিন্তু যুদ্ধের জন্য জাহাজ লাগবে এই যুক্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল কোনো জাহাজ দিতে রাজি হননি ।
সেনার জন্য খাদ্য রপ্তানি : বাংলায় খাদ্যভাবের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধের সময় সেনাদের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বাইরে পাঠায় । এতে বহু খাদ্য অপচয় হয় । বেড়ে যায় খাদ্যসংকট ।
বাণিজ্য গণ্ডি : ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য গণ্ডি চালু করে । ফলে ব্যবসায়ীরা অন্য প্রদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারেনি ।
মজুতদারি : জাপানের আক্রমণের আশঙ্কায় ইংরেজ সরকার বাংলা থেকে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুত করে । দুর্ভিক্ষের পরে ৯০ হাজার টন চাল নষ্ট হয়েছিল । খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ী চাল কিনে গুদামে মজুত করে এবং দুর্ভিক্ষের সময় চড়া দামে বিক্রি করে।
সংকটকে উপেক্ষা : বাংলায় খাদ্য সংকট শুরু হলে তা মোকাবিলায় তৎপর হয়নি ব্রিটিশ সরকার । মৃত্যু – মিছিল শুরু হলেও ত্রাণকার্য হয়েছে ধীর গতিতে ।
পঞ্চাশের মন্বস্তরের ফলাফল : মন্বন্তরের বিভিন্ন ফলাফল দেখা যায়—
ব্যাপক প্রাণহানি : মন্বন্তরে মৃতের সংখ্যা ব্রিটিশ সরকার ইচ্ছা করেই প্রকাশ করেনি । দুর্ভিক্ষে অন্তত ৪০-৭০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল বলে অনুমান । মৃতদেহ সৎকারের লোক ছিল না । মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মৃত মানুষের মাংসে শকুন , শিয়াল কুকুরেরও অরুচি ধরে ।
অর্থনৈতিক বিপর্যয় : মন্বন্তরে বাংলায় ঘটে যায় চূড়ান্ত অর্থনৈতিক বিপর্যয় । সর্বস্বান্ত মানুষকে দুর্ভিক্ষের সময় থালা – বাটি হাতে রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় । শেষপর্যন্ত অনাহারে রাস্তার ধারে পড়ে থাকত এদের মৃতদেহ ।
মানবিক বিপর্যয় : মন্বন্তরে চূড়ান্ত মানবিক বিপর্যয় দেখা যায় । কুকুরের সঙ্গে লড়াই করে ডাস্টবিন থেকে মানুষ খাদ্য খেতে শুরু করেছিল । মানুষ তার প্রিয়জনকে মৃত্যুদশায় ফেলে রেখে বাঁচার তাগিদে বাড়ি ছাড়ে । অভাবের জ্বালায় অনেকে স্ত্রী – সন্তানকে বিক্রি করে ।
কমিশন গঠন : দুর্ভিক্ষের কারণ খুঁজতে সরকার ‘ দুর্ভিক্ষ অনুসন্ধান কমিশন ‘ গঠন করে । ১৯৪৫ সালে কমিশন রিপোর্ট জমা দেয় । রিপোর্টে সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয় ।
সাহিত্য সৃষ্টি : মন্বন্তরের পটভূমিকায় বিজন ভট্টাচার্য লেখেন ‘ নবান্ন ‘ নাটক । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘ অশনি সংকেত ‘ উপন্যাসে , চিত্তপ্রসাদ তার ‘ ক্ষুধার্ত বাংলা : ১৯৪৩ – এর নভেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় ভ্রমণ – ফুটিয়ে তোলেন দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী বিবরণ ।
গ্রন্থ নিষিদ্ধকরণ : চিত্তপ্রসাদের ‘ ক্ষুধার্ত বাংলা : ১৯৪৩ – এর নভেম্বরে মেদিনীপুর জেলায় ভ্রমণ ’ গ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয় । ৫০০০ কপি বাজেয়াপ্ত করে সরকার ।
মূল্যায়ন : পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে গবেষণা আজও চলছে । এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন , এই সময়ের ঘটনা ও তথ্য অনুসরণে পরবর্তীকালে দেশে কোনো বঙ্কিমচন্দ্র জন্মগ্রহণ করলে হয়তো আর একটি ‘ আনন্দমঠ ‘ সৃষ্টি হবে ।
- ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী প্রভাব পড়েছিল ?
অথবা , ভারতের উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?
অথবা , যুদ্ধ – পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট ভারতের কৃষকদের উপর কী প্রভাব ফেলে ? Ans: ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইংল্যান্ড যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে । যুদ্ধে ভারতের অর্থসম্পদ ও সেনাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগায় ব্রিটিশ সরকার । এর ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতীয় অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়ে । এ বিষয়ে নীচে বলা হলো—
আর্থিক সংকট : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের প্রচুর পরিমাণ অর্থ – সম্পদ ব্যয় করা । হয় । যুদ্ধের সময় দেশের কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যায় । ফলে রপ্তানি হ্রাস পায় , এতে ভারতে দারিদ্র্য বাড়ে ।
ঋণ সংগ্রহ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থিক দুর্দশা কাটাতে ব্রিটিশ সরকার বিপুল পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করে । এতে জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এই ঋণ ছিল ২৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এটা ৮৮৪.২ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছয় ।
মূল্যবৃদ্ধি : যুদ্ধের প্রভাবে কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদন কমলেও পণ্যের চাহিদা কমেনি । ফলে এসময় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায় । ১৯১৪-১৯২০ – এর মধ্যে বস্ত্র , চিনি , লবণ কেরোসিন ইত্যাদির দাম একলাফে দ্বিগুণ হয়ে যায় ।
দরিদ্রদের দুর্দশা : কৃষি উৎপাদন হ্রাস , দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশের দরিদ্র মানুষদের অবস্থা সঙ্গীন হয় । কারণ জিনিসের দাম বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়ানো হয়নি । ফলে শ্রমিকরা তাদের উপার্জন দিয়ে এবং কৃষকরা কৃষিপণ্য বিক্রি করে জীবন কাটাতে ব্যর্থ হয় ।
কর বৃদ্ধি : কৃষক ও শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করে ব্রিটিশ সরকার আর্থিক ভার লাঘব করতে কৃষকদের উপর করের বোঝা চাপায় এবং তা জোর করে আদায়ও শুরু হয় ।
কৃষকদের উপর অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব : কৃষকদের উপর প্রভাব ছিল এইরূপ—
খাদ্য উৎপাদন হ্রাস : আর্থিক সংকট কাটাতে সরকার খাদ্যশস্যের বদলে কৃষককে রপ্তানিযোগ্য ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে বাধ্য করে । ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যায় ।
খাদ্যসংকট : কৃষি জমিতে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল চাষের ফলে কৃষক পরিবারে দেখা দেয় খাদ্যসংকট । দেশের বহু স্থানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।
কর বৃদ্ধি : দেশে খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার কৃষকের করের বোঝা বাড়িয়ে দেয় । বাড়তি কর আদায় করতে কৃষকদের উপর অত্যাচার বেড়ে যায় ।
মূল্যায়ন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
পর দেশজুড়ে অর্থনেতিক সংকটের প্রভাব অনুভূত হয় । সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা
হয় গুজরাট সহ পশ্চিম ভারতে । এর প্রতিবাদে গুজরাটে ১১১৮ ও ১৯২৮
খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে ।