উচ্চমাধ্যমিক দর্শন – আরহমুলক দোষ (চতুর্থ অধ্যায়) আরোহমূলক তর্কবিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর

  1. সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষ ।

Ans: কারণ হলো কার্যের শর্তহীন নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা । কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা নিয়ত পূর্বগামী ও নিয়ত অনুগামী দু’টি ঘটনাকে দেখি এবং সিদ্ধান্ত করি যে ঘটনা দু’টির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে । এই ঘটনা দু’টির মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে । এই ঘটনা দু’টির পেছনে কোনো পূর্ব শর্ত কাজ করছে কি না , অর্থাৎ এই দু’টি নিয়ত পূর্বগামী অনুগামী ঘটনা অন্য কোনো ঘটনার সহকার্য কি না এদিকে আমরা লক্ষ রাখি না । 

  কিন্তু সত্যই যদি দু’টি ঘটনা নিয়ত পূর্বগামী – অনুগামী ঘটনা হয় , অথচ যদি তারা শর্ত নির্ভর হয় , অর্থাৎ শর্তজনিত অন্য কোনো ঘটনার সহকার্য হয় , তা হলে তারা নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা হলেও তাদের কার্য – কারণ বলা যাবে না । এইভাবে পূর্ব শর্তকে অগ্রাহ্য করে একই কারণের দু’টি কার্যকে বা সহকার্যকে কার্যকারণ বলে মনে করলে আরোহ যুক্তিতে দোষ দেখা যায় । এই দোষের নাম হলো একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষ । 

উদাহরণ : জোয়ার হলো ভাটার কারণ , কেননা জোয়ার হলো ভাটার নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা । এই আরোহ যুক্তিটি সহ – কার্যকে কারণ বলার দোষে দুষ্ট । একথা খুবই সত্য যে জোয়ারের পরেই আসে ভাটা । অর্থাৎ জোয়ার হচ্ছে ভাটার নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা । কিন্তু জোয়ার ভাটার নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা হলেও শর্তান্তরহীন পূর্ববর্তী ঘটনা নয় । আসল ব্যাপার হলো – জোয়ার ও ভাটা দু’টিই কার্য ; চন্দ্রের আকর্ষণের জন্যই জোয়ার ও ভাটা হয় । তাই জোয়ার ও ভাটা হলো চন্দ্রের আকর্ষণের সহ – কার্য । কাজেই সহ – কার্যের একটিকে অন্যটির কারণ বলে গণ্য করার জন্য যুক্তিটিতে দোষ ঘটেছে । 

অ – পর্যবেক্ষণ দোষ : কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য যে বিষয় পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল তা যদি পর্যবেক্ষণ করা না হয় , তবে যে দোষ ঘটে তাকে বলে অ – পর্যবেক্ষণ দোষ । এই অ – পর্যবেক্ষণ দোষ হলো দুই রকম । যথা-  

  1. নঞর্থক বা প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্তের অ – পর্যবেক্ষণ 2. প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অ – পর্যবেক্ষণ দোষ। 
  2. নঞর্থক দৃষ্টান্তের অ – পর্যবেক্ষণ দোষ : ব্যক্তিগত রুচি ও বহুদিনের সম্ভিত কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে আমরা অনেকসময় পর্যবেক্ষণের সদর্থক দৃষ্টান্তগুলির প্রতি আকৃষ্ট হই এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে উপেক্ষা করি । এভাবে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে উপেক্ষা করে কেবলমাত্র সদর্থক দৃষ্টান্তগুলির উপর ভিত্তি করে যদি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা হলে যে দোষ ঘটে , তাকেই বলা হয় প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্তের অ – পর্যবেক্ষণ ।

উদাহরণ : কয়েকদিন বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা করে অশুভ লক্ষণ দেখা দিয়েছে । 

.. সিদ্ধান্ত করা যায় যে বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা অশুভ । 

বিচার : এখানে আমরা ঘটনার কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করেছি । এখানে কোনো নঞর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে যাত্রা করে যে সমস্ত ক্ষেত্রে অশুভ সংকেত পাওয়া যায়নি , সেগুলি উপেক্ষা করা হয়েছে বা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । অথচ আরোহ অনুমানটি গঠনের ক্ষেত্রে এগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল , সে কারণেই এরূপ যুক্তিটি নঞর্থক জনিত অ – পর্যবেক্ষণজনিত দোষে দুষ্ট হয়েছে । 

  1. প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অ – পর্যবেক্ষণ : কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে পর্যবেক্ষণ না করে যদি অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে কারণ হিসাবে গণ্য করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তা হলে যে দোষ ঘটে তাকে বলা হয় । প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অ – পর্যবেক্ষণ । 

উদাহরণ : পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষক ছাত্রকে পড়াতে আসেননি এবং ছাত্রটির পরীক্ষায় ফল ভালো হয়নি । সুতরাং অনুমান করা যায় যে পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি হলো ছাত্রটির পরীক্ষায় ভালো ফল না করার কারণ । 

বিচার : এরুপ অনুমানটিতে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তাতে কোনো ছাত্রের পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়া নামক কার্যটির কারণ হিসেবে শুধুমাত্র একটি অবস্থার তথা পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে । এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আর যে সব সমস্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থা আছে , সেগুলির কথা আদৌ উল্লেখ করা হয়নি অর্থাৎ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে । যেমন প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া , ভালো করে প্রস্তুতি না নেওয়া , পরীক্ষার হলে দেরিতে পৌঁছানো প্রশ্ন পেয়ে মাথা ঘোরা ইত্যাদি অবস্থাকে আদৌ F উল্লেখ করা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি । সে কারণেই এইরূপ অনুমানটি প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অ – পর্যবেক্ষণজনিত দোষ । 

  1. বহুকারণবাদ ।

Ans: একটি ঘটনা থেকে অন্য একটি ঘটনা যখন অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় , তখন পূর্বগামী ঘটনাটিকে ‘ কারণ ‘ এবং অনুগামী ঘটনাটিকে ‘ কার্য ‘ বলা হয় । 

  এই লক্ষণ অনুযায়ী , একটি ঘটনার একটি ‘ কার্য ‘ এবং একটি কারণ থাকবে । অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে না । কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি যে , একটি ক্ষেত্রে একটি কারণ থেকে একটি কার্য উৎপন্ন হলো । অন্য একটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পৃথক একটি কারণ 4 থেকে সেই একই কার্য উৎপন্ন হলো । একেই বলে ‘ বহুকারণবাদ ‘ । বহুকারণবাদ অনুসারে একই কার্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণের দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে । যুক্তিবিজ্ঞানী মিল বহুকারণবাদের অন্যতম সমর্থক । 

সমর্থন : যুক্তিবিদ মিল মনে করেন , একটি বিশেষ কারণ থেকে একটি বিশেষ কার্য উৎপন্ন হয়– একথা সত্য । কিন্তু ঐ বিশেষ কার্যটি অন্যান্য নানা কারণ থেকেও উৎপন্ন হতে পারে । যেমন — বিষপান করলে মৃত্যু হয় । কিন্তু বিষপান না করলেও মৃত্যু হতে পারে । অর্থাৎ মৃত্যু বিষপান ছাড়াও অন্যান্য কারণ থেকে ঘটতে পারে । যেমন — দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা থেকেও মৃত্যু হয় । অর্থাৎ একটি কার্যের একাধিক কারণ থাকা সম্ভব । সমালোচনা : বহুকারণবাদে কারণকে বিশেষভাবে এবং কার্যকে সাধারণভাবে দেখা হয়েছে । কার্যকেও যদি বিশেষভাবে নেওয়া হয় , তাহলেই বহুকারণবাদের ভুল ধরা পড়বে । আবার কারণ ও কার্য উভয়কে সাধারণভাবে দেখা হলে সহজেই বোঝা যাবে একটি কার্যের একটিই কারণ হতে পারে । বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি থেকে দেখলে , একটি বিশেষ কার্যের কারণ হিসেবেও একটি বিশেষ পূর্বগামী ঘটনা সর্বদা উপস্থিত । বহুকারণ স্বীকার করলে কারণকে কার্যের ‘ অনিয়ত ’ পূর্বগামী ঘটনা বলতে হবে । 

  1. কাকতালীয় দোষ ।

Ans: কারণকে কার্যের নিয়ত বা অপরিবর্তনীয় শর্তান্তরহীন পূর্বগামী ঘটনা বলা হয় । 

ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলে এরূপ দোষ ঘটে থাকে । আমাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কারের মূলে রয়েছে কাকতালীয় দোষ যা ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগ থেকে উৎপন্ন হয় । 

উদাহরণ : কাকটি তালগাছ থেকে উড়ে যাওয়ার পরই তালটি পড়ল । সুতরাং কাকের উড়ে যাওয়াই তাল পড়ার কারণ । 

বিচার : এক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগ করা হয়েছে । কারণ তালগাছ থেকে ওড়েনি , তালও পড়েনি । আবার কাকটি উড়ে গেল , তালও পড়ল । এভাবে একটি নঞর্থক ও একটি সদর্থক দৃষ্টাস্তের দ্বারা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে কাকের উড়ে যাওয়াই তাল পড়ার কারণ । এখানে কাকতালীয় দোষ ঘটেছে । ( ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করতে গেলে একটি বিষয়ের পার্থক্য ছাড়া আর অন্যান্য সব বিষয়ের মিল থাকা দরকার । কেবলমাত্র একটি পূর্বগামী ঘটনার পরিবর্তন ঘটিয়ে অনুগামী ঘটনার পরিবর্তন ঘটছে কি না দেখতে হবে । এজন্য পরীক্ষণের প্রয়োজন ) কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ নির্ভর হলে ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের জন্য কাকতালীয় দোষ ঘটতে পারে । 

  1. মন্দ উপমা 

Ans: দুই বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য দেখে এবং সেই সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যখন তাদের মধ্যে কোনো নতুন সাদৃশ্যের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় , তখন তাকে বলে উপমাযুক্তি । যেমন—পৃথিবী ও মঙ্গল উভয়ের মধ্যে মাটি , জল , তাপ ইত্যাদি বিষয়ের সাদৃশ্য দেখে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করে যদি মঙ্গলগ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব অনুমান করা হয় তবে যুক্তিটিকে বলা হবে উপমাযুক্তি । 

  উপমাযুক্তির মূল্য প্রত্যক্ষিত সাদৃশ্যের সংখ্যা ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে । সাদৃশ্যগুলি সংখ্যা ও গুরুত্বের দিক থেকে অধিক হলে সেই উপমাযুক্তি সবল বা ভালো উপমাযুক্তি হিসাবে গণ্য হয় । অন্যদিকে , সাদৃশ্যের সংখ্যা ও গুরুত্ব কম হলে সেই উপমাযুক্তিতে যে দোষ ঘটে তার নাম দুষ্ট বা মন্দ উপমাযুক্তি । যেমন একটি দড়ি সবসময় জলে ভিজে থাকলে নষ্ট হয়ে যায় দেখে যদি আমরা সিদ্ধান্ত করি যে আমাদের রোজ স্নান করা উচিত নয় , তবে যুক্তিটি হবে দুষ্ট বা মন্দ উপমাযুক্তি । কেননা সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দড়ি ও আমাদের দেহের মধ্যে যে সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করা হয়েছে সেটি আদৌ প্রাসঙ্গিক নয় । সুতরাং এই যুক্তিতে দুষ্ট বা মন্দ উপমাযুক্তির দোষ ঘটেছে । 

  1. আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ হিসেবে গণ্য করার দোষ । 

Ans: তর্কবিদ মিলের মতে , কারণ হলো সদর্থক ও নঞর্থক শর্তের সমষ্টি । এখন কোনো কার্যের কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে যদি আমরা শর্ত সমষ্টির কোনো একটি শর্তকে সমগ্র কারণ হিসেবে গ্রহণ করি , তাহলে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ বলে গণ্য করার দোষ ঘটেছে । 

উদাহরণ : বারুদে অগ্নিসংযোগ করতেই বিস্ফোরণ হলো । সুতরাং বারুদে অগ্নিসংযোগ বিস্ফোরণের কারণ । 

ব্যাখ্যা : এক্ষেত্রে বারুদে অগ্নিসংযোগ নিশ্চয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিস্ফোরণ হওয়ায় । কিন্তু যদি আমরা বিস্ফোরণের কারণ খুঁজতে গিয়ে শুধুমাত্র অগ্নিসংযোগকেই কারণ বলি , তাহলে দোষ হবে । কেননা , আবহাওয়া ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ । 

নীচের আরোহী যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো | উচ্চমাধ্যমিক দর্শন – আরহমুলক দোষ (চতুর্থ অধ্যায়) আরোহমূলক তর্কবিদ্যা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Philosophy Question and Answer :

  1. শীতের পরেই বসস্ত আসে কাজেই শীত হলো বসন্তের কারণ । 

Ans: দোষ : সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষ । 

বিচার : শীত ও বসন্ত — দু’টির মূলে একটি শর্ত কাজ করছে । এটি হলো পৃথিবীর বার্ষিক গতি । অর্থাৎ শীত ও বসন্ত হলো পৃথিবীর বার্ষিক গতি থেকে উৎপন্ন দু’টি সহকার্য । অর্থাৎ এই যুক্তিতে শীতকে বসন্তের কারণ বলা হয়েছে । 

ফলে যুক্তিটি সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষে দুষ্ট হয়েছে । 

  1. এই ঔষধটি নিশ্চয় বিশেষ ফলপ্রদ । কেননা সমস্ত প্রশংসাপত্রও ঔষধটির আশ্চর্য নিরাময় ক্ষমতার সাক্ষ্য দেয় ।

Ans: দোষ : অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ । 

বিচার / ব্যাখ্যা : উপরিউক্ত আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট । কারণ এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি অবাধ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে টানা হয়েছে । কার্যকারণ সম্পর্কের কথা বিবেচনা করা হয়নি । প্রশংসাপত্র এবং ঔষধটির নিরাময় ক্ষমতার মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্ভব থাকা সম্ভব নয় । 

  1. উপনিবেশগুলি ফলের মতো । কারণ ফলগুলি পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায় , তেমনই উপনিবেশগুলির উন্নতি হলে মূল দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । 

Ans: দোষ : মন্দ উপমার দোষ । 

বিচার : এই যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট । কারণ এক্ষেত্রে দোষে উপমান এবং উপমেয় সমজাতীয়রূপে গণ্য নয় । অথচ আমরা জানি যে উপমা বা সাদৃশ্য গঠন করা হয় । সমজাতীয় ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে । কিন্তু এখানে তা করা হয়েছে বিষমজাতীয় বস্তুদ্বয়ের মধ্যে । ফল এবং উপনিবেশ হলো ভিন্নজাতীয় , সমজাতীয় নয় । ফলত এরূপ উপমা বা সাদৃশ্যকে বলা হয় মন্দ উপমা । গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য করা হয়েছে । 

  1. প্রায়ই জলে অবগাহন করো না , কেননা একটুকরো দড়ির মতো শরীরেও পচনের আশঙ্কা আছে । 

Ans: দোষ : মন্দ উপমা বা দুষ্ট উপমা । 

বিচার / ব্যাখ্যা : এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ বা দুষ্ট উপমা যুক্তির দৃষ্টান্ত । এইক্ষেত্রে যে দু’টি বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়েছে , সেই দু’টি বস্তুর সাদৃশ্যটি প্রাসঙ্গিক নয় । শরীরের সঙ্গে দড়ির কোনো সম্পর্ক নেই । কাজেই জলে দীর্ঘদিন থাকলে দড়ির পচন ধরলেও তার সঙ্গে শরীরের পচন ঘটার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না । এই দুই – এর মধ্যে সাদৃশ্য কল্পনা করার জন্য সাদৃশ্যমূলক অনুমানটি দোষযুক্ত হয়েছে । 

  1. সমস্ত কাক নিশ্চয় কালো । কারণ অন্য কোনো রঙের কাক আমি এ পর্যন্ত দেখিনি । 

Ans: দোষ : অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ । 

বিচার / ব্যাখ্যা : এই আরোহ অনুমানটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট । কারণ এই ক্ষেত্রে অপূর্ব গণনামূলক আরোহানুমান বা অবৈজ্ঞানিক আরোহানুমানের সাহায্যে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে সব কাকই কালো । এই ক্ষেত্রে একাধিক অভিজ্ঞতারই বে সাহায্যে নেওয়া হয়েছে , কাকের সঙ্গে কালো রঙের কোনোরূপ কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনের বিচার করা হয়নি । তাই সিদ্ধান্তটি সম্ভাব্য , সুনিশ্চিত নয় । 

  1. এক ব্যক্তি মই থেকে পা ফসকে মাটিতে পড়ে মারা গেল । সুতরাং মই থেকে পড়ে যাওয়াই মানুষটির মৃত্যুর কারণ । 

Ans: দোষ : একটি মাত্র শর্তকে সমগ্র কারণ মনে করা সংক্রান্ত দোষে দুষ্ট । 

বিচার / ব্যাখ্যা : এই যুক্তিটি একটি মাত্র শর্তকে সমগ্র কারণ মনে করা সংক্রান্ত দোষে দুষ্ট । কারণ এই ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি মই থেকে পা ফসকে মাটিতে পড়ে মারা গেলেন । কেবল সদর্থক শর্তকে লক্ষ করে এখানে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে । কোনোরুপ নঞর্থক শর্তকে গ্রহণ করা হয়নি । তাছাড়া এই ক্ষেত্রে কেবল পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা হয়েছে । কারণটি কার্যের অব্যবহিত শর্তান্তরহীন নয় । কারণে কারণে এই ক্ষেত্রে কাকতালীয় দোষও ঘটেছে । 

  1. সুরা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে না । কারণ ক্ষতিকারক হলে চিকিৎসকরা এর ব্যবস্থাপত্র দিতেন না । 

Ans: দোষ : অ – পর্যবেক্ষণ দোষ । 

বিচার / ব্যাখ্যা : উপরিউক্ত যুক্তিটি অ – পর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট । কেননা কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে সুরা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয় । পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুরার মতো ঔষধের প্রশংসাপত্র দিয়ে থাকেন ) সিদ্ধান্ত করা হয়েছে সকল ক্ষেত্রে সুরা পান ক্ষতিকারক নয় । 8. যুদ্ধের পর মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা গেল । সুতরাং মহামারির কারণ হিসেবে যুদ্ধকে চিহ্নিত করা যেতে পারে । 

Ans: দোষ : কাকতালীয় দোষ । 

বিচার : উপরিউক্ত যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট । কারণ ‘ যুদ্ধ ’ মহামারির শর্তান্তরহীন অপরিবর্তনীয় ঘটনা নয় । তাই যুক্তিটি দোষযুক্ত । এছাড়া এই ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির লৌকিক প্রয়োগের ফলেও এই দোষের উদ্ভব হয়েছে । 

  1. মাদুলি ধারণ করার পরেই তার রোগ সারল । সুতরাং মাদুলি ধারণই রোগ সারার কারণ । 

Ans: দোষ : কাকতালীয় । 

বিচার : এই যুক্তিতে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করে মাদুলি ধারণ ও রোগ সারা — দু’টি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক দেখানো হয়েছে । কারণ হলো কার্যের নিয়ত পূর্বগামী ঘটনা । কিন্তু ‘ মাদুলি ধারণ ’ ‘ রোগ সারা ’ – র অনিয়ত পূর্বগামী ঘটনা । এক্ষেত্রে কারণ নির্ণয়ের পিছনে অন্ধ কুসংস্কার কাজ করছে । তাই যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট হয়েছে । 

  1. সূর্য নিশ্চয়ই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে । কারণ আমরা সূর্যকে পূর্বদিকে উঠতে দেখি এবং পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখি । 

Ans: দোষ : ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষ । 

বিচার : এই যুক্তিটি ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট । আমরা সবাই সূর্যকে পূর্বদিকে উঠতে এবং পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখি । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সূর্য স্থির – সূর্য উদিত হয় না এবং অস্তমিতও হয় না । পৃথিবীর গতির জন্য আমরা এইরূপ ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ করি । বস্তুত পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে বলেই আমাদের এই রকমের ভুল হয় । 

  1. তাপমান যন্ত্রের পারদ নীচে নেমে গেলেই জল জমে যায় সুতরাং তাপমান যন্ত্রের পারদ নীচে নামাই জল জমার কারণ । 

Ans: দোষ : সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষ । পারদ নীচে নামা ও জল জমা দু’টি ঘটনার মূলে একটি শর্ত কাজ করছে — এটি হলো অত্যধিক ঠান্ডা অর্থাৎ পারদ নীচে নামা ও জল জমা হলো অত্যাধিক ঠান্ডা থেকে উৎপন্ন দু’টি সহকার্য । 

  অথচ এই যুক্তিতে পারদ নীচে নামাকে জল জমার কারণ বলা হয়েছে । ফলে যুক্তিটি সহকার্যের একটিকে অন্যটির কারণ হিসেবে গ্রহণ করার দোষে দুষ্ট হয়েছে । 

  1. আজকাল শিক্ষিত মহিলারা গৃহকর্মে বিমুখ । সুতরাং নারীশিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয় ।

Ans: দোষ : অ – পর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট । 

বিচার / ব্যাখ্যা : উপরোক্ত যুক্তিটি অ – পর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট । কারণ এই ক্ষেত্রে কেবল নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে । কিন্তু সদর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি অর্থাৎ গৃহকর্মে নিপুণা এমন অনেক শিক্ষিত মহিলা আছে যাদের দৃষ্টান্ত উপেক্ষা করা হয়েছে ।