সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো
- বার্লিন অবরোধ হয়েছিল –
(A) ১৯৪৪
(B) ১৯৪৬
(C) ১৯৪৫
(D) ১৯৪৮ খ্রিঃ ।
Ans: (C) ১৯৪৫
- দিয়েন – বিয়েন – ফু’র যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল—
(A) ভিয়েতনাম
(B) ফ্রান্স
(C) ইন্দোনেশিয়া
(D) রাশিয়া ।
Ans: (A) ভিয়েতনাম
- বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধিত্ব করেন—
(A) মাও – সে – তুঙ
(B) চৌ – এন – লাই
(C) সান ইয়াৎ – সেন
(D) চেন – তু – শিউ ৷
Ans: (B) চৌ – এন – লাই
- প্রতিষ্ঠার সময়ে ন্যাটোর সদস্যসংখ্যা ছিল—
(A) ৯
(B) ১১
(C) ১২
(D) ২৪ টি দেশ ।
Ans: (C) ১২
- পঞ্চশীল নীতি ঘোষণা করেন—
(A) মাও জেদং
(B) জওহরলাল নেহরু
(C) জিমি কার্টার
(D) মার্শাল টিটো ।
Ans: (B) জওহরলাল নেহরু
- মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ছিল—
(A) ১৬
(B) ২০
(C) ২২
(D) ২৫ ।
Ans: (A) ১৬
- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত বিরোধী যে সামরিক চুক্তি হয়েছিল তা হলো—
(A) ন্যাটো
(B) ব্রাসেলস
(C) সিমেটো
(D) ওয়ারশ ।
Ans: (A) ন্যাটো
- কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল—
(A) আমেরিকা
(B) ব্রিটেন
(C) ফ্রান্স
(D) রাশিয়া ।
Ans: (D) রাশিয়া ।
- ২৭ দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল কোন সম্মেলনে ?
(A) বান্দুং
(B) বেলগ্রেড
(C) তেহরান
(D) নতুন দিল্লি ।
Ans: (B) বেলগ্রেড
- গণপ্রজাতন্ত্রী চিন প্রতিষ্ঠিত হয় –
(A) ১৯৪৫
(B) ১৯৪৭
(C) ১৯৪৮
(D) ১৯৪৯ খ্রিঃ ।
Ans: (D) ১৯৪৯ খ্রিঃ ।
- সিয়াং ফু ঘটনাটি ঘটে –
(A) ১৯৩৬ খ্রিঃ
(B) ১৯৪০ :
(C) ১৯৪২ :
(D) ১৯৪৫ খ্রিঃ ।
Ans: (A) ১৯৩৬ খ্রিঃ
- ‘ মাই লাই ’ ঘটনাটি ঘটে –
(A) ইন্দোনেশিয়ায়
(B) জাপানে
(C) ভিয়েতনামে
(D) কিউবাতে ।
Ans: (C) ভিয়েতনামে
- ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন –
(A) মার্কসবাদী
(B) সমাজবাদী কিউবার রাষ্ট্রপতি
(C) সাম্যবাদী
(D) পুঁজিবাদী ।
Ans: (B) সমাজবাদী কিউবার রাষ্ট্রপতি
- ‘ দিয়েন – বিয়েন – ফু’র ঘটনা ঘটেছিল—
(A) কোরিয়ায়
(B) ভিয়েতনামে
(C) মিশরে
(D) আলজেরিয়ায় ।
Ans: (B) ভিয়েতনামে
- আধুনিক মিশরের জনক –
(A) নাসের
(B) কাস্ত্রো
(C) মাও সে – তুং
(D) ভুট্টো ।
Ans: (A) নাসের
- সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয় –
(A) ১৯৪৩ খ্রি :
(B) ১৯৪৪
(C) ১৯৪৫
(D) ১৯৪৬
Ans: (C) ১৯৪৫
- ইয়মকিপুর যুদ্ধ ( ১৯৭৩ খ্রি . ) কাদের মধ্যে সংঘটিত হয় ?
(A) সিরিয়া – মিশর
(B) আরব – ইজরায়েল
(C) আরব – সিরিয়া
(D) আরব – আমেরিকা
Ans: (B) আরব – ইজরায়েল
- হ্যারি ট্রুম্যান ছিলেন মার্কিন –
(A) পররাষ্ট্র সচিব
(B) বিদেশমন্ত্রী
(C) অর্থমন্ত্রী
(D) রাষ্ট্রপতি ।
Ans: (D) রাষ্ট্রপতি ।
(D) ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ।
- মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল—
(A) রাশিয়া
(B) আমেরিকা
(C) ব্রিটেন
(D) ইতালি ।
Ans: (B) আমেরিকা
- কবে সুয়েজ খাল জাতীয়করণ – এর কথা ঘোষিত হয় ?
(A) ১৯৫৬
(B) ১৯৫৮
(C) ১৯৬০
(D) ১৯৫৯ ।
Ans: (A) ১৯৫৬
- ভিয়েতনামের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-
(A) সুকর্ণ
(B) নগুয়েন গিয়াপ
(C) বাও দাই
(D) হো – চি – মিন –
Ans: (D) হো – চি – মিন ।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগ (সপ্তম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- পঞ্চশীল নীতি কাকে বলে ?
Ans: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির ভিত্তিতে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ – এন – লাই ১৯৫৪ সালে দ্বিতীয়বার ভারতে এসে দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ৫ টি নীতি স্থির করেন । এটাকেই বলা হয় পঞ্চশীল নীতি ।
- লং মার্চ বলতে কী বোঝো ?
Ans: ১৯৩৬ – এর ১৬ অক্টোবর মাও – সে – তুং এবং চু – তের উদ্যোগে কমিউনিস্টদের ঐক্য বৃদ্ধির জন্য কিয়াংসি প্রদেশ থেকে শেনসি পর্যন্ত ৬০০০ মাইল পথ অতিক্রম করার ঘটনা লং মার্চ নামে বিখ্যাত ।
- কেন মার্শাল পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল ?
Ans: এর উদ্দেশ্য ছিল– ( ক ) রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ করা । ( খ ) ইউরোপের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা ( গ ) মার্কিন বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ( ঘ ) কমিউনিস্টদের অগ্রগতি প্রতিহত করা ।
- বুলগানিন কেন বিখ্যাত ?
Ans: সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন বুলগানিন ।
- সুয়েজ সংকট কেন দেখা যায় ?
Ans: মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসেরের ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল জাতীয়করণের কথা ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করেই সুয়েজ সংকট দেখা দেয় ।
- ভিয়েত কং বলতে কী বোঝো ?
Ans: ১৯৬০ খ্রিঃ উভয় ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সামরিক বাহিনীকে বলা হতো ভিয়েত কং ।
- LAFP এর সম্পূর্ণ নাম
Ans: Liberation Armed Force ( PLAF ) I The People’s —
- ট্রুম্যান নীতি গৃহীত হয় কেন ?
Ans: রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী আদর্শের প্রসার রোধে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান ১৯৪৭ সালে ট্রুম্যান নীতি ঘোষণা করেন ।
- কেন্নানের বেষ্টনী নীতি বলতে কী বোঝো ?
Ans: আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ . কেন্নান এক প্রবন্ধে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং রাশিয়াকে সীমাবদ্ধ করে রাখার জন্য যে নীতি পেশ করেন সেটাই কেন্নানের বেষ্টনী নীতি ।
- লেভারে প্ল্যান বলতে কী বোঝো ?
Ans: ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন ভিয়েতমিনদের সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ফরাসি সেনাপতি যে নতুন পরিকল্পনা নেন সেটাকেই বলা হয় নেভারে প্ল্যান ।
- কারা চিনে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন ?
Ans: চৌ – এন – লাই , চু – তে , মাও – সে – তুং , লিও – কাও – চি প্রমুখের উদ্যোগে চিনে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয় ।
- ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয় ?
Ans: এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল– ( ক ) যুদ্ধ – পরবর্তী সময়ে জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ণয় করা ( খ ) পোল্যান্ডকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যা মীমাংসা করা ( গ ) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন ।
- ব্যালফুর ঘোষণাপত্র কী ?
Ans: ইংরেজ বিদেশ সচিব আর্থার ব্যালফু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি ঘোষণাপত্র জারি করেন । এতে বলা হয় , প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় বাসভূমি গড়ে তোলায় সচেষ্ট হবে ব্রিটিশ সরকার ।
- কমিকন কীভাবে গড়ে ওঠে ?
Ans: মার্শাল পরিকল্পনার পাল্টা হিসেবে ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিকন ( Council for Mutual Economic Assistance বা COMECON ) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ গড়ে তোলে ।
- জোটনিরপেক্ষ নীতি বলতে কী বোঝো ?
Ans: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন জোট এর বাইরে থেকে নিরপেক্ষ অবস্থানের নীতিকেই বলা হয় জোটনিরপেক্ষ নীতি ।
- বার্লিন অবরোধ বলতে কী বোঝো ?
Ans: বার্লিনে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাশিয়া ১৯৪৮ – এর ২৪ জুলাই বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথগুলিতে অবরোধ শুরু করে । এটাই বার্লিন অবরোধ নামে বিখ্যাত ।
- ভিয়েতনামের যুদ্ধ বলতে কী বোঝো ? ইন্দোচিনে হো – চি – মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসীর দীর্ঘ লড়াই ভিয়েতনামের যুদ্ধ বলে পরিচিত । ১৯৪৫–৭৫ খ্রিঃ পর্যন্ত চলেছিল এই যুদ্ধ ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস – ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগ (সপ্তম অধ্যায়) প্রশ্ন ও উত্তর | HS History Question and Answer :
- সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । অথবা , সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণগুলি লেখো । আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর ফলাফল বা গুরুত্ব কী ছিল ?
Ans: সূচনা : মিশর দেশের উত্তর – পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হলো সুয়োজ খাল মিশরের সাথে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সুয়েজ খালের জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয় যা ইতিহাসে সুয়েজ সংকট নামে পরিচিত ।
সুয়েজ সংকটের কারণ :
ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের দায়িত্ব : আরব – ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করায় আরব অসন্তুষ্ট হয় । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর অধিক নির্ভরশীল ছিল । এইসময় মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজখাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন সেইসময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি । পরবর্তীতে জাতিপুঞ্জে মিশর এই প্রস্তাব তুলে ধরলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় , যা নাসেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না ।
বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প : রাষ্ট্রপ্রধান নাসের চেয়েছিলেন মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীলনদের ওপর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে । কিন্তু তা তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন , তা বিশ্বব্যাঙ্ক দিতে রাজি হলেও আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররোচনায় বাতিল হয়ে যায় । ফলে নাসের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন ।
নাসেরের পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব : মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান দামাল আবদেল নাসের কখনোই চাননি ইজিপ্টে ইংল্যান্ডের সৈন্যরা অবস্থান করুক । তাই তিনি ইংল্যান্ডকে চাপে রাখার জন্যে সোভিয়েত সামরিক শক্তির সাহায্যে জরুরি বলে মনে করেন । এই লক্ষ্যে তিনি একসঙ্গে জোটনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করেন ও ইঙ্গ – মার্কিন গোষ্ঠীর বিরোধিতা শুরু করেন ।
সুয়েজ খাল জাতীয়করণ : ক্ষুদ্ধ নাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন এবং ঘোষণা করেন— এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসোয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে । কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । আন্তর্জাতিক যোগসূত্র হিসেবে সবদেশের জাহাজ জলপথ ব্যবহার করতে পারবে । এর ঠিক তিনমাস পর 1956 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোপন প্ররোচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে ।
সুয়েজ সংকটের ফলাফল : 1956 খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ সংকট আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । গুরুত্ব ও ফলাফলগুলি হলো—
- আরব দুনিয়ার পশ্চিমি বিদ্বেষ : প্রথম আরব – ইজরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমি শক্তিগুলি নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ইজরায়েলকে সাহায্য স্ট করেছিল । এমতাবস্থায় সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ – ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিশর সহ গোটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিম বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয় ।
- শত্রুতা বৃদ্ধি : সুয়েজ খাল মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে শত্রুতাকে চরমে নিয়ে যায় । ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরো জটিল হয়ে ওঠে ।
- পশ্চিমি শক্তিবর্গের মতভেদ : সুয়েজ সংকট পশ্চিমি দুনিয়ায় ঐক্যে ফাটল ধরায় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিশরে ইঙ্গ – ফরাসি আক্রমণকে সমর্থন করেনি ।
- সোভিয়েত ইউনিয়নের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি : সুয়েজ সংকট থেকে পুরো ফায়দা তোলে সোভিয়েত ইউনিয়ন । আরব – ইজরায়েল সংঘর্ষে নৈতিকভাবে আরবদের পাশে থাকায় আরব দুনিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
- মিশরের কর্তৃত্ব : মিশর কর্তৃক সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দিলে সুয়েজ খালের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
2 ট্রুম্যান নীতি কী ? মার্শাল পরিল্পনার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ?
Ans: ট্রুম্যান নীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সমগ্র বিশ্ব পরস্পর বিরোধী দু’টি পৃথক শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় । এর একদিকে ছিল আমেরিকা এবং অপরদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসের এক বক্তৃতায় আশ্বাস দেন যে যদি কোনো মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা কোনো বিদেশি রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয় তা হলে আমেরিকা তাদের সাহায্য করবে । রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানের এই ঘোষণা ট্রুম্যান নীতি ‘ নামে পরিচিত ।
মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য : মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের আর্থিক পুনরুজ্জীবন – এর এই উদ্দেশ্যগুলি ছিল এই রকম ।
অর্থনৈতিক উজ্জীবন : মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক পুনরুজ্জীবন । এই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৮-৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মোট ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয় । এই আর্থিক সাহায্য পাবার ফলে ইউরোপের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি পূর্বের ন্যায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ।
অর্থ অনুমোদন : মার্শাল পরিকল্পনা অনুসারে রাষ্ট্রপতি টুম্যান কর্তৃক ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মার্কিন কংগ্রেসে ১৭ বিলিয়ন ডলার অর্থ মঞ্জুরের জন্য বিল উত্থাপন করা হলে ১৩ বিলিয়ন ডলার মঞ্জুর করা হয় ।
পরিকল্পনা গ্রহণকারী বিভিন্ন দেশ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে ইউরোপের ছোটো – বড়ো মিলে ১৬ টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । এই পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি একত্রিত হয়ে ‘ European Economic Co – operation ‘ বা EEC নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলে ।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল সেই কারণেই মূলত মার্শাল পরিকল্পনায় ঋণ গ্রহণের পথ খোলা থাকলেও রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী মলটোভ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি । এছাড়া মার্শাল পরিকল্পনা ছিল ‘ ডলার সাম্রাজ্যবাদের ’ পরিকল্পিত রূপ । এর দ্বারা আমেরিকা সাহায্য গ্রহণ করা দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে যা রাশিয়া কখনোই চাইত না ।
পূর্ব ইউরোপের বয়কট নীতি : ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত ছিল ।
- পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েতিকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল ? বিভিন্ন দেশে এর কী প্রভাব পড়েছিল ?
অথবা , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া কীভাবে পূর্ব ইউরোপে তার প্রাধান্য স্থাপন করেছিল ? অথবা , পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে রুশিকরণ নীতি / সাম্যবাদের বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Ans: সূচনা : 1945 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইউরোপে বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে এক অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল যা পূর্ব ইউরোপে এক সামরিক ও রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল । এই অবস্থার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিল সোভিয়েত রাশিয়া । এইসময়ে রাশিয়ার স্ট্যালিনের নেতৃত্বে লাল ফৌজ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে । এই ঘটনা আন্তর্জাতিক ইতিহাসে রুশিকরণ নীতি নামে পরিচিতি ।
রুশিকরণ নীতির উদ্দেশ্য : যেসকল আর্থ – সামরিক ও আদর্শগত কারণে রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদী নীতি বিস্তার করেছিল সেগুলি ছিল এইরকম—
- নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্য : রাশিয়া আক্রমণকারী শক্তিগুলি বারংবার পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে দিয়েই রাশিয়ায় প্রবেশ করত । আর এই কারণেই স্ট্যালিন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতেই নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে রুশিকরণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন ।
- সাম্যবাদের প্রসারে : রাশিয়া নিজেদের সাম্যবাদী আদর্শ বিশ্বজুড়ে বিস্তারের লক্ষ্যে পূর্ব ইউরোপ দিয়ে সাম্যবাদী বিস্তার নীতির সূচনা করেছিল । স্ট্যালিন চেয়েছিলেন পুঁজিবাদী নীতির অবসান করে সমাজতান্ত্রিক নীতির বিস্তার ঘটাতে ।
- অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাশিয়ার যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছিল তার মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে স্ট্যালিন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে সেখানকার সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ।
- সামরিক উদ্দেশ্য : স্ট্যালিন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করে সেখানকার সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করে সমগ্র রাশিয়ায় এক শক্তিশালী নিরাপত্তার বলয় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন ।
রুশিকরণ পদ্ধতি এবং তার প্রভাব :
- রুশ সংবিধানের বিস্তার : স্ট্যালিনের রুশিকরণ নীতির অন্যতম ফলাফল ছিল রুশ সংবিধানের বিস্তার । পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের সংবিধানগুলি সংস্কারের ক্ষেত্রে রুশ সংবিধানের অনুকরণ করতে শুরু করেছিল ।
- নির্বাসিত সরকারের উচ্ছেদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপের যেসকল দেশ নির্বাসনের ফলে নিজ শাসন চালাতে শুরু করেছিল সেখানে রুশিকরণ নীতির ফলে রাশিয়ার শাসন পদ্ধতির প্রচলন হয়েছিল।
- গণভোটের মাধ্যমে প্রচলন : রুশিকরণ নীতির দ্বারা সোভিয়েত রাশিয়ার অনুকরণে নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করে নিয়ন্ত্রিত গণভোটের মাধ্যমে তা প্রবর্তন করা হয় । অর্থাৎ সোভিয়েত সংবিধানের অনুকরণে এই সংবিধান রচনা করা হতো ।
- সামরিক প্রভাব : পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে সামরিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী ওরুশনির্ভর করার জন্য 1952 খ্রিস্টাব্দে একটি সামরিক সংহতি কমিটি গঠিত হয় । রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বুলগানিন ছিলেন এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট ।
- ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝো । ঠান্ডা লড়াইয়ের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করো ।
Ans: সূচনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহৎ শক্তিধর দুই রাষ্ট্র রাশিয়া এবং আমেরিকা নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যে একদিকে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গড়ে তোলে সমগ্র বিশ্বজুড়ে এই দ্বিমেরুকরণের রাজনীতি ঠান্ডা লড়াই – এর সৃষ্টি করে । এম . এস . রজেম – এর মতে , ঠান্ডা লড়াই ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব , আদর্শের সংঘাত , জীবনধারার বিরোধ থেকে উদ্ভূত ।
ঠান্ডা লড়াই – এর প্রধান বৈশিষ্ট্য—
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধান্তে অর্থাৎ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পরবর্তীতে একদিকে আমেরিকা এবং অপরদিকে রাশিয়া হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র এবং প্রত্যেকে সমগ্র বিশ্বে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হলে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই ।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্ব : রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থনলাভের জন্য দ্বন্দ্ব উদ্ভব ঘটায় দ্বিমেরু রাজনীতির ।
রাজনৈতিক মতাদর্শজনিত বিভেদ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও সাম্যবাদের পক্ষে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় ।
সামরিক শক্তি বৃদ্ধি : উভয় রাষ্ট্রেই নিজ নিজ সামরিক শক্তির প্রদর্শনের লক্ষ্যে বিভিন্ন শক্তিশালী মারণাস্ত্র তৈরি করতে শুরু করে যা সমগ্র বিশ্বে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে ।
আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা : দু’পক্ষেরই অনুগত কোনো রাষ্ট্র কোনো অঞ্চলে যুদ্ধরত হলে ঐ যুদ্ধকে ঐ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ রাখতে উভয়েই তৎপর হয়ে ওঠে ।
ঠান্ডা লড়াই : এর প্রভাব
ঠান্ডা লড়াই – এর আবর্তে জড়িয়ে পড়া : দু’টি শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়া ও আমেরিকা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের ঠান্ডা লড়াই – এর পরিবেশ তৈরি করলে কখনোই নিজেদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি অথচ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির পক্ষে ঠান্ডা লড়াই – এর আবর্ত থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়নি ।
আমেরিকা ও রাশিয়ার আধিপত্ত বিস্তারের প্রচেষ্টা : ধনতান্ত্রিক আমেরিকা ও সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার মধ্যে ইউরোপকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াই – এর যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়েছিল এশিয়া মহাদেশের মধ্যে । দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ , সুয়েজ সংকট , আরব – ইজরায়েল বিরোধ , ভিয়েতনাম সংকট , ইরাক – ইরান যুদ্ধ , ইরাক – কুয়েত লড়াই , পাকিস্তান – ভারত যুদ্ধ ইত্যাদি হলো তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
শক্তিজোটগুলির প্রভাব : রাশিয়া ও আমেরিকার ঠান্ডা লাড়াইকে কেন্দ্র করে উভয় রাষ্ট্রই নিজ নিজ স্বার্থে গড়ে তুলেছিল একাধিক সংগঠন । দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার মুক্তি সংস্থা MEDO , মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরক্ষা সংস্থা SEATO , সেন্ট্রাল টিটি অরগানাইজেশন প্রভৃতি ঠান্ডা লড়াইকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিল ।
- সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল ? অথবা , সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো । এই সংকটে ভারতের কী ভূমিকা ছিল ?
Ans: মিশরের উত্তর – পূর্বে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে সুয়েজ খাল খনন করা হয় ১৮৫৯ সালে । ১৮৬৯ সালে এটা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলতে শুরু করে । ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে ৯৯ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজে খালের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় । তবে মেয়াদ পূরণের আগে মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খাল এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির জাতীয়করণ করেন । ফলে সুয়েজ খালকে ঘিরে তৈরি হয় সমস্যা । এটাই ‘ সুয়েজ সংকট ‘ ।
সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব / তাৎপর্য : 1. সুদৃঢ় আরব ঐক্য : সুয়েজ সংকটকে ঘিরে পশ্চিম – বিরোধী মনোভাব আরব দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে । মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত হয় ‘ সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র ‘ । নাসের হন তার প্রথম রাষ্ট্রপতি ।
- নাসেরের মর্যাদা বৃদ্ধি : আরব জাতীয়তাবাদ জয়যুক্ত হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নাসেরের মর্যাদা বেড়ে যায় । তিনি আধুনিক সালাদিন ‘ অভিধা পান । মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র ( UAR । প্রথম রাষ্ট্রপতি হন নাসের ।
- ব্রিটেন – ফ্রান্সের কর্তৃত্ব হ্রাস : সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে যে দ্বিতীয় আরব – ইজরায়েল যুদ্ধ হয় তার জেরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্বের অবসান হয় । পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি ইডেন । অন্যদিকে , আলজেরিয়াও ফ্রান্সের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা ফিরে পায় ।
- শত্রুতা বৃদ্ধি ঃ সুয়েজ সংকটের জেরে মিশর – ইজরায়েলের শত্রুতা বৃদ্ধি পায় । ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক জটিলতা বাড়ে ।
- সুয়েজে মিশরের কর্তৃত্ব ঃ সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করার পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দেয় । ফলে সুয়েজ খালের উপর মিশরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ।
সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা : ভারত সুয়েজ খাল ব্যবহার করত । সেজন্য এই সমস্যা সমাধানে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল ।
- প্রাথমিক প্রচেষ্টা : ভারত মনে করত , সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । তবে এও জানিয়ে দিয়েছিল , খাল যারা ব্যবহার করে তাদের পরামর্শও মিশরের মেনে চলা উচিত ।
- বিদেশমন্ত্রীর মাধ্যমে : ১৯৫৬ সালে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনো প্রতিনিধি যোগ দেননি।ভারতের প্রতিনিধিবিদেশমন্ত্রীকৃয়মেননদু’পক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেন । কৃণ্ণ মেনন পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন । তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের পাশাপাশি মিশরের উপর খাল রক্ষার পরামর্শ দেন ।
- প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে : ব্রিটেন ও ফ্রান্সের উসকানিতে মিশরের উপর ইজরায়েলের আক্রমণের নিন্দা করে ভারত । প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এটিকে ‘ নগ্ন আক্ৰমণ ‘ বলে সমালোচনা করেন ।
- জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপ : জাতিপুঞ্জের সদস্য হিসেবে মিশরে সেনা পাঠায় ভারত । যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণের বিষয়ে জাতিপুঞ্জে আলোচনা চলাকালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
- বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো ।
অথবা , ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থানের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো । Ans: সূচনা : সুদীর্ঘ ৩০ বছর ধরে চিনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব , যা চিনের একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে । গণপ্রজাতন্ত্রী চিনে ৪ মে ( ১৯৪৯ ) আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল তার ফলেই ১৯৪৯ – এ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে । |
চিনা কমিউনিস্ট দলের উদ্দেশ্য : চিনা কমিউনিস্ট দলের উদ্দেশ্য ছিল—
- চিনে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের অবসান ।
- চিনের রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা এবং
- চিনা সমরনায়কদের ( war lords ) বিলোপ সাধন ।
কমিউনিস্ট ও কুয়োমিনটাং প্রতিদ্বন্দ্বিতা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পর চিনে কমিউনিস্ট ও কুয়োমিনটাং দলের মধ্যেকার যুদ্ধকালীন সমঝোতা নষ্ট হয় । কুয়োমিনটাং দল ও চিনা কমিউনিস্ট বাহিনীর মধ্যে জাপান অধিকৃত চিনের ভূখণ্ড দখল করা ও ফেলে যাওয়া বিপুল সমরাস্ত্র লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । উত্তর , দক্ষিণ ও মধ্যচিনের ১৮ টি যুক্তাঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কমিউনিস্টরাই এই দ্বন্দ্বে এগিয়ে যায় ।
লং মার্চ : মাঙ – জে – দঙের নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্টরা দক্ষিণ – পূর্ব চিনের ‘ কিয়াং – শি ’ প্রদেশ থেকে উত্তরে ‘ শেন – সি ‘ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয় । এই পদযাত্রা ইতিহাসে লং মার্চ ( ১৯৩৪ খ্রি নামে পরিচিত ।
পদযাত্রার বর্ণনা : ৩৭০ দিন ধরে ( ১৯৩৪ খ্রি : ১৬ অক্টোবর ১৯৩৫ খ্রি : ২০ অক্টোবর ) পায়ে হেঁটে সুদীর্ঘ ২৫০০ কিমি পথ অতিক্রম করে পদযাত্রীরা ‘ শেন – সি ’ প্রদেশে পৌঁছায় । সরকারি সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে করতে তারা পায়ে হেঁটে অগ্রসর হয় । তবে এক লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ৮ হাজার জন শেষ পর্যন্ত জীবিত ছিল ।
লংমার্চের গুরুত্ব : লং মার্চ নানা কারণে চিনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ । যেমন— 1. এই দীর্ঘ পদযাত্রা চলাকালীন কমিউনিস্ট নেতারা চিনের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন । 2. কষ্টকর দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে চিনা কমিউনিস্টরা কষ্ট সহিয়ুতার শিক্ষা পেয়েছিল । 3. এই দীর্ঘ পদযাত্রার মধ্যে দিয়ে চিনের মাটিতে লালফৌজের অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকাশিত হয়েছিল ।
চিনা প্রজাতন্ত্র গঠন : চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ হয়ে চিয়াং কাইশেক ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নেন । আর চিনের মূল ভূখণ্ডে মাও জে দ – এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী চিন । প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন মাও জে দঙ্ এবং প্রধানমন্ত্রী হন চৌ – এন – লাই ।
কমিউনিস্টদের সাফল্যের কারণ : মাও – জে – দহ্ – এর সাফল্যের কারণ হলো 1. কুয়োমিং তাং সরকারের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা । 2. চিয়াং – কই – শেক শিল্পের বিশেষ উন্নতি ঘটাতে পারেননি এবং বস্ত্রশিল্পে শিশুশ্রমিক বন্ধের ব্যবস্থা নেননি । 3. কৃষকদের দারিদ্র্য দূরীকরণে কুয়োমিং তাং সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি । এছাড়া কমিউনিস্ট সেনাপ্রধান লিন বিয়াও , চৌ তেই ( Chu Teh ) চি – এন – এই ( ch – en – yi ) প্রমুখ কুয়োমিং তাদের চেয়ে অনেক দক্ষ ও দূরদর্শী ছিলেন ।
উপসংহার : ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মাও জে দ – এর নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয়শক্তি হিসেবে নয়া চিনের অভ্যুদয় আধুনিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
- ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি অথবা কোন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লড়াই – এর উদ্ভব হয় ?
Ans: ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি :
ত্বলশেভিক বিপ্লবের বিরোধিতা : ঠান্ডা লড়াই মূলত ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের পরে শুরু হলেও এর পটভূমি তৈরি হয়েছিল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের হাত ধরে । কারণ রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করতে আমেরিকা ষড়যন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায় ।
দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে জাপানের উপর পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে মতভেদ শুরু হয় । এই মতভেদ পরবর্তীতে ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ।
মার্কিন সেনাদপ্তর পেন্টাগনের প্রভাব : মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগনের সদস্যগণ ছিলেন সাম্যবাদ বিরোধী । সুতরাং তাঁরা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যানকে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করতে প্ররোচিত করেন ।
পারস্পরিক সন্দেহ : কিছু ঐতিহাসিকের মতে , পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়া মিলিতভাবে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল । কিন্তু যুদ্ধ শেষে কোনো সাধারণ শত্রুর অবর্তমানে তাদের পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস আবার তীব্র হয় ।
ফুলটন বক্তৃতা : কিছু ঐতিহাসিকের মতে , ১৯৪৬ – এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসে ফুলটন নামক স্থানে বক্তৃতায় আমেরিকাকে সতর্ক করে বলেন যে উত্তরে বার্লিন শহরের বিস্তৃত এলাকা এখন সোভিয়েত রাশিয়ার লৌহ যবনীকার অন্তরালে আচ্ছাদিত । এখন যদি সতর্ক না হওয়া যায় তাহলে রাশিয়া সম্পূর্ণ ইউরোপকে গ্রাস করবে ।
ট্রুম্যান নীতি : গ্রিস , তুরস্ক ও ইরানে রুশ অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিলে এদেশগুলিকে রুশ প্রভাব থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান গ্রিস ও তুরস্ক সহ বিশ্বের যে কোনো দেশে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন । এই ঘোষণা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত ছিল ।
মার্শাল পরিকল্পনা : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন মার্শাল ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য এক পরিকল্পনা প্রকাশ করেন যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে খ্যাত । তবে এই পরিকল্পনায় রাশিয়াকে অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয় ।
জার্মান সমস্যা : জার্মানিকে কেন্দ্র করে ক্রমেই ঠান্ডা লড়াই ব্যাপক আকার ধারণ করে । সমগ্র জার্মানির ঐক্যবদ্ধতার সমাধান না করে সমগ্র জার্মানি দু’টি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেন । দুই জার্মনির দু’ধরনের আর্থ – রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠান্ডা লড়াইয়ের খোরাক জোগাতে থাকে ।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া : মার্শাল পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া তার মিত্র দেশগুলিকে নিয়ে গড়ে তোলে কমিকন । এরপর রাশিয়া বার্লিন অবরোধ করলেও মিত্রশক্তির তৎপরতায় অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয় যা উভয়ের মধ্যে বিদ্বেষের সূচনা করে ।
বিভিন্ন জোট : উভয়পক্ষই এরপর থেকে নিজেদের প্রভাব বুদ্ধিতে সচেষ্ট হয় । ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র NATO গঠন করে । পক্ষান্তরে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার নেতৃত্বে কমিকন গঠিত হয় । এছাড়া দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি নিয়ে গড়ে ওঠে SEATO ।
মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায়
যে কেবলমাত্র ইউরোপে নয় ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাবে সমগ্র বিশ্ব দু’টি
পরস্পর বিরোধী শক্তিজোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে । এর বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়
বার্লিন সংকট , কোরিয়া সংকট ও কিউবা সংকটের মধ্য দিয়ে ।