রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর |
- ভাষাবিজ্ঞান বলতে কী বোঝো ? ভাষাবিজ্ঞানের বহুল প্রচলিত শাখাগুলির নাম উল্লেখ করো এবং সংক্ষেপে যে কোনো দুটি শাখার পরিচয় দাও ।
Ans: ভাষাবিজ্ঞান হলো ভাষার বিজ্ঞান অর্থাৎ ভাষা নিয়ে বিজ্ঞান সমস্ত আলোচনা করে যে গ্রন্থ থেকে তাকে বলে ভাষাবিজ্ঞান ।
ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনা নানান রকমের হতে পারে । কিন্তু তার মধ্যে বহুল প্রচলিত শাখা গুলি হলো তিনটি ।
যথা ( ক ) তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান । ( খ ) ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান । ( গ ) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ।
তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান : তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান এর সূত্রপাত করেছিলেন স্যার উইলিয়াম জোস । ১৭৮৬ সালে কলকাতার রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি তৃতীয় বার্ষিক প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত ভাষণে তুলনামূলক ভাষা তত্ত্বের উপরে আলোকপাত করেন । ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক সূত্র সন্ধানে উইলিয়াম জোন্স ভাষাকে একমাত্র মাধ্যম রূপ দেখেছিলেন । তার মনে হয়েছিল ইন্দো – ইউরোপীয় ভাষার বিজ্ঞান এর উৎপত্তি হয়েছিল সংস্কৃত , গ্রীক , লাতিন ইত্যাদি থেকে ।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লেখেন ‘ The Origin and Development of the Bengali Language ‘ বা ODBL নব্য ভারতীয় আর্যভাষার তুলনামূলক অভিধান রচনা করেন R.L. TARNANE . তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের কাজ হলো
( ক ) সমগোত্রজ ভাষাগুলির মধ্যে তুলনা করা । ( খ ) মূল ভাষাকে ভাষাপূর্ণ নির্মাণ করা । ( গ ) বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সাদৃশ্য চিহ্ন করা ।
ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান : ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় কোনো প্রচলিত রূপ ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান । থেকে আধুনিক রূপ পর্যন্ত ধারাবাহিক বিবর্তনের রূপরেখা আলোচিত হয় তাকে বলে এইতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ।
তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সঙ্গে এই শাখার পার্থক্য বেশ সুস্পষ্ট । তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান যেখানে বিভিন্ন শাখার মধ্যে তুলনা করে সেখানে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা কীভাবে বিভিন্ন স্তর যেমন- পালি , প্রাকৃত , অপভ্রংশ , অবহট্টের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা জন্ম নিয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করে । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার যে বিবর্তন হয় এবং সেই বিবর্তনের ফলে যে পরিবর্তন ভাষার সংগঠনে দেখা যায় তা নির্দেশ করাই ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ । বিশেষ করে শব্দ ও পদমধ্যস্থ ধ্বনি পরিবর্তন ভাষার কালগত রূপান্তরের অন্যতম কারণ । ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এই ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ ও বিভিন্ন ধরনের ধ্বনিপরিবর্তন যে ভাষার মধ্যে ক্রিয়া করে তা অনুসন্ধান করে ।
- ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির উল্লেখ করে যে কোনো একটি শাখার আলোচনা করো ।
Ans: ভাষাবিজ্ঞানের মূল আলোচনার বিষয় হলো মানুষের ভাষা এবং সেই সঙ্গে মানবজীবনের বিভিন্ন দিকের পারস্পরিক সম্পর্ক । এই ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান দুই শাখা হলো ( ক ) প্রধান ভাষাবিজ্ঞান এবং ( খ ) ফলিত ভাষাবিজ্ঞান ।
ভাষার সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক এবং ভাষার সঙ্গে অন্যান্য বিদ্যার সম্পর্ক ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় বিচার বিশ্লেষণ করা হয় , তাই হলো ফলিত ভাষাবিজ্ঞান । ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের ছটি শাখা । যথা- ( ক ) সমাজ ভাষাবিজ্ঞান ( খ ) মনোভাষাবিজ্ঞান ( গ ) স্নায়ু ভাষাবিজ্ঞান ( ঘ ) নৃ ভাষাবিজ্ঞান ( ঙ ) শৈলিবিজ্ঞান ( চ ) অভিধান বিজ্ঞান ।
সমাজ ভাষাবিজ্ঞান : একই অঞ্চলের মধ্যে বসবাসকারী একই ভাষা গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে সামাজিক অবস্থান ভেদে কথার যে তারতম্য লক্ষ্য করা যায় তাকেই সমাজ ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । যে শাস্ত্র এই সমাজভাষা নিয়ে আলোচনা করে তাই হলো সমাজ ভাষাবিজ্ঞান । বর্তমানে সমাজ ভাষবিজ্ঞান ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখারুপে চিহ্নিত হয়েছে । ফিশম্যান সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের তিনটি ক্ষেত্র নির্দেশ করেছেন । সেগুলি হলো- বর্ণনামূলক , প্রয়োগমূলক ও বিবর্তনশীল । বর্ণনামূলক সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের মধ্যে বক্তা , শ্রোতা ও উপলক্ষ্যের দিকটি প্রধানত আলোচনা করা হয় । বিবর্তনশীল সমাজ ভাষা বিজ্ঞানে ইতিহাসের দিক থেকে সমাজ ভাষার উদ্ভব । বিবর্তন এবং ব্যবহারের দিকটি আলোচিত হয় । প্রয়োগমূলক সমাজ ভাষাবিজ্ঞানে সামাজিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সমাজ ভাষার ব্যবহারের দিকটি বিশ্লেষিত হয় । এছাড়াও মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা শেখানোর উন্নত পদ্ধতি , ভাষা শিক্ষার আবশ্যিকতা , অনুবাদ নীতি – নির্ধারণ প্রভৃতি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় ।